সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 25

উনি একদম স্তব্ধ হয়ে রইলেন।কোনো কথা বললেন না।আমি বারবার উনার কাছে জানতে চাইলাম, আমি কি আর বাঁচবো না আহান? উনি কোনো উত্তর দিলেন না।উনাকে ছেড়ে দিয়ে আমি ডাক্তার আন্টির দিকে ঘুরে তাকালাম।ডাক্তার আন্টির কাছে জানতে চাইলাম, বলুন না আন্টি আমি কি আর বাঁচবো না? আমার সন্তান! তাকে তো আসতে হবে।কিন্তু সেও মাথাটা নিচু করে রইলেন।কোনো উত্তর দিলেন না।উনাদের এই নিরাবতা আমি আর নিতে পারলাম না।আমি চিৎকার করে উঠে বললাম, বলুন আমি কি সত্যিই আর বাঁচবো না? এখনো তারা নিশ্চুপ।আমি একটানে আন্টির টেবিলের থেকে সবকিছু নিচে ফেলে দিলাম।উনি আমাকে টেনে হাত দুটো চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন, কি করছো কি আরু? আমি উনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। দেখলাম উনার চোখদুটো ছলছল করছে।হাতটা টেনে আমার পেটের রেখে বললেন উনি, কিচ্ছু হবে না তোমার আর না হবে আমাদের সন্তানের কিছু।ডাক্তার আন্টির দিকে তাকিয়ে বললেন, অপারেশনের ব্যাবস্থা করুন ডাক্তার।ডাক্তার আন্টি চোখ তুললেন।বিস্ময় নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললেন, সত্যি কি আপনি রাজি মিঃআহান? ভেবে দেখুন! অপারেশনে আপনার স্ত্রী মারাও যেতে পারে।তার কাছে আর যেই কয়টা মাস সময় আছে সেটা অপারেশন থিয়েটারে শেষ হয়ে যেতে পারে। উনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন, আমি রাজি।ডাক্তার আন্টি বেল বাজালেন।সঙ্গে সঙ্গে একজন নার্স ছুটে আসলো।নার্সটাকে বললেন আন্টি, বন্ড পেপার রেডি করতে।উনার সিগনেচার নিয়ে অপারেশনটা করা হবে।বন্ড পেপারে লেখা থাকবে অপারেশন থিয়েটারে যদি আমার মৃত্যু হয় তার জন্য হসপিটাল কতৃপক্ষকে কোনো ভাবে দোষারোপ করা যাবে না।
🍁
কেবিনের মধ্যে বসে আছি।আর কিছুক্ষণ পরই অপারেশন। উনার মুখটাকে বেশ ভালো ভাবে দেখে নিচ্ছি আমি।শ্বাশুড়ি মা উনাকে অনেক বোঝানোর চেস্টা করেছেন উনি বুঝতে চান নি।উনি বলেছেন অপারেশন হবে।আজই হবে।কেবিনের বাইরে থেকে মায়ের কান্নার আহাকার কানে আসছে আমার।কি অদ্ভুত তাই না? বোনটাও নেই। মায়ের কস্ট যেন দ্বীগুণ হয়ে গেলো।একজন নার্স এসে বলল আমার মাথার সব চুল কাটতে হবে। উনি আমার এতো সুন্দর ঘন কালো চুল কিছুতেই কাটতে দেবেন না তাকে।নার্সটাকে বকুনি দিয়ে বের করে দিলেন কেবিন থেকে।ডাক্তার আন্টি আসলেন উনাকে বোঝাতে।আন্টি খুব সুন্দর করে বুঝালেন উনাকে।ব্রেইন টিউমার হয়েছে আমার।মাথার চুল রেখে অপারেশনটা কি করে হবে? উনাকে অনেক বোঝানোর পর উনি কাটতে দিলেন আমার চুল।
🍁
নার্স বেড়িয়ে গেলেন।কেবিনের ভেতর শুধু আছি উনি আর আমি।উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি উনার হাতটা চেপে ধরে বললাম, আচ্ছা আহান এখন কি আমায় খুব বাজে দেখতে লাগছে? আমার লম্বা ঘন কালো চুল এখন আর নেই।উনি নিশ্চুপ। অঝোরে উনার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।আমি উনার থুতনিটা ধরে আমার দিকে ঘুরিয়ে নিলাম।ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে উনাকে বললাম, চিন্তা করবেন না।ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হবে।আমার কিছু হলেও সময়ের সাথে আপনি ঠিক নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবেন।সুপারস্টার আহান খান আপনি।কত মেয়ে আপনার জন্য পাগল।কথাটা বলতেই উনি আমাকে টেনে নিয়ে দু’বাহু শক্ত করে চেপে ধরলেন।আজ আমার কথায় উনার চোখে মুখে কোনো রাগ দেখতে পেলাম না।উনি যেন খুব কস্ট পেলেন যা উনার মলিন করা মুখটা দেখে বুঝতে পারলাম আমি।এভাবে কতোক্ষণ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম যানি না।হঠাৎ এসে একজন নার্স আমাকে নাম ধরে ডেকে উঠলেন।উনি আমাকে ছাড়তেই চাচ্ছিলেন না।আমি উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠলো ব্যাথায়।এটাই কি আমাদের শেষ দেখা? কি যানি হলো এমন মুহূর্তে মাথাটা ঝিনঝিন করে উঠলো।ধীরে ধীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো মাথাতে।আমি উনার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলাম।উনি আমার দিকে তাকালে আমি উনার হাতটা ছেড়ে দিয়ে নিজের মাথাটা দু’হাতে চেপে ধরে উনাকে বললাম, আবারও সেই তীব্র ব্যাথা আহান।আমার খুব কস্ট হচ্ছে।উনি আমাকে ধরে কান্না জুড়ে দিলেন। উনার কান্নায় শ্বাশুড়ি মা, আমার মা কেবিনের ভেতরে ছুটে আসলেন।আমি উনার মুখের দিকে তাকালে সব কিছু ঝাপসা দেখতে পেলাম।মায়ের আর উনার কান্নার আওয়াজ আমার কানে এসে বাঢ়ি খেতে লাগলো।আস্তে করে চোখ দু’টো বন্ধ হয়ে গেলো আমার।অচেতন অবস্থা আমি ঢলে পরলাম বেডে।তারপর আর কিছু মনে নেই আমার।যখন চোখ খুললাম তখনও সেই একই ব্যাথা।আস্তে করে মাথাটা চেপে ধরে উঠে বসতে চেস্টা করলাম।কিন্তু মাথায় হাতই রাখতে পারছি না আমি।চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখলাম উনি বসে আছেন।অন্য দিকে ঘুরে বসে কিছু একটা কাজ করছেন। উনি খেয়াল করেন নি আমি উঠেছি।কিন্তু একি! আমি কি ঠিক দেখছি? উনার মাথায় চুল নেই কেন?
🍁
আজ চুমপুয়িং রান্না ঘড়ে ঢুকেছে।নিজের হাতে চা বানাচ্ছে।চা খাওয়া নিত্যদিনের অভ্যাস ডিসুজার।পাশ থেকে গরম কড়াইয়ে খুন্তি নাড়িয়ে চাড়িয়ে বলল মেয়েটা, আচ্ছা চুমকি আপু আপনি কি ডিসুজাকে ভালোবাসেন? মেয়েটার কথায় চুমপুয়িং সোজা হয়ে দাড়ালেন।শক্ত গলায় মেয়েটার দিকে তাকিয়ে শুদ্ধ বাংলায় বললেন, চুমকি না চুমপুয়িং আমার নাম।সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।মেয়েটা খুন্তি ছেড়ে গালে হাত দিয়ে চুমপুয়িং এর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।চুমপুয়িং ভ্র কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বাঁকা ঠোঁটের হাসি দিলেন।মেয়েটা নড়েচড়ে উঠে চুমপুয়িং কে ধরে জোড়ে একবার ঘুরে ছেড়ে দিল। তাল সামলাতে না পেরে চুমপুয়িং পরে যেতে নিলেন। এমন সময়ে কেউ এসে চুমপুয়িং এর কোমড়টা চেপে ধরলেন। চুমপুয়িং চোখ মেলে দেখলেন সে নিচে পরে নি।কেউ তাকে ধরে আছেন।
বাহ্ হেব্বি জুটিতো আপনাদের।বিয়ে করে নিলেই তো পারেন।মেয়েটার মুখের কথা শুনে ডিসুজা চুমপুয়িং কে ছেড়ে দিলেন।চুমপুয়িং নিচে পরে যাবার আগেই মেয়েটা ধরে নিলো।ডিসুজাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ভালোবাসলে একটু যত্ন নিতে হয়।এভাবে কেউ ফেলে দেয়? কোথায় আমার স্বামীটা।কত্ত ভালোবাসতো আমাকে।আমিই চলে এসেছি।কারণ আমি চাই না আমার জন্য সে তার মা, বোনের কাছ থেকে দূরে সরে আসুক।আমি তো খারাপ বউ না তাই না? কথাটা বলতেই মেয়েটার চোখে পানি চলে আসে।চুমপুয়িং মেয়েটার কাঁধে হাত রেখে শান্ত হতে বললেন।ডিসুজা মেয়েটার বাংলা কথার অর্থ কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।তবে এটুকু বুঝতে পারছেন কিছু একটা ভেবে মেয়েটা কস্ট পাচ্ছে।
চলবে,,,,