The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2)

The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 40

রিপোর্টটা হাত থেকে পড়ে গেলো ইয়ারাবীর।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।হৃদয়টার স্পন্দন ও খুব বেড়ে গিয়েছে।এ কি করে ফেললো ও?শরীর ভীষন ভার লাগছে ইয়ারাবীর।রিপোর্ট টা আবার ও উঠিয়ে নিলো ইয়ারাবী।সেটাকে আবার ও পড়তে চেষ্টা করলো ও।রিপোর্টটা ভিজে যাচ্ছে ইয়ারাবীর চোখ বেয়ে পড়া বিন্দু বিন্দু অশ্রুতে।
মিস ইয়ারাবী চৌধুরী আর ইউ ওকে?জিজ্ঞেস করে গাইনোকোলোজিস্ট ফারজানা আলম।
জি আমি ঠিক আছি।মলিন কন্ঠে বলল ইয়ারাবী।
তোমরা আজকের জেনারেশন খুব কম সময়ের সম্পর্কে ফিজিক্যাল রিলেশনে চলে যাও বিয়ের আগেই।একবার কি বাবা মার কথা ভেবেছো তাদের কেমন লাগবে।তোমার তো মনে হয় বয়স কম।আঠারো ও হয়নি।কি করবে এখন বেবিটাকে নিয়ে?শুনো বয়স কম তোমাদের তাই হয়ত ভালো খারাপ বিবেচনা করতে পারোনা।যতোদ্রুত সম্ভব তোমার মা বাবা জানাও।অন্তত ওনারা কোন একটা সমাধান বের করবেন।বলে উঠে ফারজানা আলম।ইয়ারাবী থ্যাংকস জানিয়ে বেরিয়ে এলো।
ঐদিনের পর থেকে আবার ও কেমন যেন হয়ে গেছে ইয়ারাবী।খুব চুপচাপ শুধু কান্না কাটি করে সবার অগোচরে।দুইদিন ধরে কলেজে ও যায়নি।একা একা থাকে।
আরাবীর অফিসে যাওয়ার পর ইয়ারাবীর ছোট বেলার বান্ধুবী ইস্পিতা রোয়েনের বাসায় এলো।ইস্পিতাকে দেখে নিজেকে সংবরন করতে পারেনি ইয়ারাবী।দৌড়ে এসে ইস্পিতাকে জড়িয়ে কেঁদে দিলো।ইয়ারাবীর কান্নায় অবাক হয় ইস্পিতা।ইয়ারাবীকে খাটে বসিয়ে ওর দিকে এক গ্লাস পানি ধরলো ইস্পিতা।ইয়ারাবী পানি খেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।মাঝে মাঝে শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
-ইরু কি হলো তোর?কাঁদছিস কেন?জিজ্ঞেস করে ইস্পিতা।
-এমনি। তোকে এতোদিন পর দেখলাম।চোখ মুছে বলল ইয়ারাবী।
-একদমই না।কোন কারন তো আছে।কলেজে ও যাচ্ছিস না শুনলাম।বল কি হয়েছে?
-ইস্পিতা আমি প্রেগন্যান্ট।কেঁদে দিয়ে বলল ইয়ারাবী।
-হোয়াট!!!কি বলিস এসব?কি করে হলো এসব?জিজ্ঞেস করে ইস্পিতা।
-ইয়ারাবী সব খুলে বলল।খুব কাঁদছে ইয়ারাবী।
-ইরু একটা কথা বলি?এমন ছেলেরা কখনো ফিরে আসেনা।একটা মেয়ের সাথে যখন একটা ছেলে বিয়ের আগে ইন্টিমেট হয় তারপরই ছেলেটা মেয়েটাকে ছেড়ে দেয়।কিন্তু আরাভ ভাইয়া তোকে ফিরে পেতে চায়।নিজের কাজে লজ্জ্বিত ওনি।আমার মনে হয় ওনাকে মাফ করে ওনার কাছে ফিরে যা।
-ইয়ারাবী কাঁদছে।জানি না আমি কি করবো ইস্পিতা।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
ইয়ারাবী কে আরো বেশ কিছুক্ষন বুঝিয়ে বেরিয়ে এলো ইস্পিতা।বাহিরে এসে আরাভকে কল দিলো ও।
অপরপাশে অারাভের কল রিসিভ হতেই ইস্পিতা বলল ভাইয়া ইরু খুব কাঁদছিলো।ওকে বুঝিয়ে দিয়েছি আমি।অপরপাশ থেকে আরাভ বলল ইয়ারাবী কি বলেছে।
কিছুই বলেনি।খুব কান্না কাটি করছিলো।ওকে ঘুমপাড়িয়ে এসেছি।হুম আচ্ছা ঠিক আছে।আর থ্যাংকস আমার কাজটা করে দেয়ার জন্য।বলে উঠে আরাভ।ভাইয়া ও আমার ছোটবেলার বান্ধুবী।ওর জন্য আমার নিজেরই টেনশন হচ্ছিলো।আর আপনার কথা শুনে থাকতেই পারলামনা।ইস্পিতার কথায় মলিন হাসে আরাভ।ওকে আমি রাখছি তাহলে।বলে কল কেঁটে দিলো আরাভ।
রোয়েনের পাশে বসে আছে রুহী।রোয়েনের নিথর হয়ে যাওয়া হাতের ওপর হাত রাখলো ও।রোয়েন চোখ খুলে রুহীকে দেখে।রুহী রোয়েনের গালে হাত রেখে চোখের পানি ছেড়ে দিলো।
রুহী প্লিজ কাঁদেনা।আমি ঠিক আছি।ক্ষীনস্বরে বলল রোয়েন।রুহী কান্নার দমক কমিয়ে বলল আট ঘন্টা আমার ওপর দিয়ে কিভাবে যে গেছে বিশ্বাস করবানা।রোয়েন দূর্বল হাত উঠিয়ে রুহীর চোখের পানি মুছে দিলো।তারপর বলল আরাবীর সাথে কথা হয়েছে।মেয়েদুটো তো চিন্তা করবে।
রুহী বলল কথা হয়েছে।তবে তোমাকে তখনো ওটি থেকে বের করেনি।
ওহ।এখন একবার কল দাও।দেখি ওদের একটু।আস্তে করে বলল রোয়েন।রুপন্তী পাশের খাটে ঘুমিয়ে আছে।বেচারী খুব ক্লান্ত।দুদিন ওর ঘুম হয়নি একদমই।
রুহী আরাবীকে কল দিয়ে রোয়েন আর রুহী আরাবী ইয়ারাবী দুজনের সাথে কথা বলল।
আর্ভিন প্রায় প্রত্যেকদিন আরাবী আর ইয়ারাবীকে দেখে যায়।আরাবীর সাথে বেশখানিকটা সময় কাঁটিয়ে দেয়।
আরাবীর জন্য আজ ছোট্ট একজোড়া কানের দুল নিয়ে এসেছে।আরাবী বেশ রেগে গেছিলো।কিন্তু আর্ভিন নিজ হাতে জোর করে পরিয়ে দিয়েছিলো কানের দুল গুলো।আরাবী আয়নার সামনে বসে কানের দুল গুলো দেখছে আর পিছে দাঁড়ানো আর্ভিন কে আড় চোখে দেখছে।আর্ভিন নিচু হয়ে আরাবীর সাদা কাঁধে আলতো করে কামড় দিতেই আরাবী লাফিয়ে উঠে।কি করছো আর্ভিন?রক্তচোষক তুমি?আর্ভিন আরাবীর গলা জড়িয়ে বলল তোমাকে দেখলে নিজেকে সংবরন করতে পারিনা আরাবী।আর্ভিনের কথায় একটু লজ্জা পায় আরাবী।আর্ভিন আরাবীর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে ওর গালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেলো।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
ইস্পিতাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে ইয়ারাবী।আজ সাতদিন অপেক্ষা করে ও ভেবেছে এবরশনের কথা।তবে বুকটা ফেঁটে যেতে চাইছে।তারপর ও বাবা মার সম্মান যদি এতোটুকু ও বাঁচে ওর এই কাজে।ইস্পিতা বেশ অবাক।ইরু হাসপাতালে কি করছি আমরা?
ইয়ারাবী বলল আমি এবরশন করবো ইস্পিতা।হোয়াট ইরু পাগল তুই?আরো একবার চিন্তা কর।কাজটা পাপ।ভুল তোদের হয়েছে সেটার শাস্তি বাবুটাকে কেন বলতো?আমি অনেক ভেবেছি ইস্পিতা।আর পারছিনা ভাবতে।পাপা মাম্মা কোথাও মুখ দেখাতে পারবেনা।তাদের আমি কেমনে মুখ দেখাবো বলতো।আমার ও খুব খারাপ লাগছে বাচ্চাটার জন্য।কিন্তু আমি ওকে রাখতে পারছিনা।অশ্রুসজল চোখে কথা গুলো বলে ভিতরে চলে যায় ইয়ারাবী।তখনই ইস্পিতা আরাভকে কল দিলো।আরাভ ইস্পিতার কথায় থমকে গেলো।তারপর ও নিজেকে আরাভ জানালো ওর আসতে দেরি হবেনা।কাছেই আছে।আরাভের মাথা কাজ করছেনা।ইয়ারাবী ওদের ভালোবাসার চিহ্নকে নিঃশেষ করতে চাইছে।
ইয়ারাবীকে শোয়ানো হয়েছে খাটে।ওর সামনে যন্ত্রপাতি এনে রাখছে ডাক্তার। ইয়ারাবী দেখতে পাচ্ছে ওর চেখের ছোট্ট একটা মাথা ছোট্ট হাত হাতের ছোট্ট আঙ্গুল গুলো আলাদা আলাদা করছে।ছোট্টবাচ্চার কান্না ইয়ারাবীর কানে ভেসে আসছে।ইয়ারাবী পারছেনা শুয়ে থাকতে।কি করতে যাচ্ছে ও?ওর নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে ও কি করে শেষ করে দিবে?নাহ পারবেনা ও।কোনমতেই পারবেনা।
আরাভ দৌড়ে ওটির সামনে এলো।ওটি খালি।ইস্পিতার নম্বরে কল দিলো আরাভ।ইস্পিতা ফোন ধরে বলল ভাইয়া ইয়ারাবী আমার সাথে ক্যাফেটেরিয়ায় পানি খেতে এসেছে।আরাভ দৌড়ে ক্যাফিটেরিয়ায় আসে।ইয়ারাবীকে দেখতে পাচ্ছে ও।আরাভের কঠিন মুখ মুহূর্তে মলিন হয়ে আসে।ওকি ওর ছোট্টজানটাকে তাহলে হারিয়ে ফেলেছে?ইয়ারাবী কাঁদছে আর বলছে পারলামনা ইস্পিতা।আমি মা।কি করে আমার বাচ্চাকে মারতে পারি।আমি তো আরাভকে খুব ভালোবাসিরে।কিভাবে আমাদের বাচ্চাটাকে শেষ করবো।আরাভের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠে।
এদিকে রোয়েনের আসার সময় হয়ে এলো।রেহান গিয়েছে ওদের রিসিভ করতে।রোয়েন একটু সুস্থ হয়েছে।একমাস আমেরিকায় থেকে ফিরছে ওরা।রোয়েন বাসায় আসার পর গেস্টদের আনাগোনা লেগেই আছে।আরাভ আর আর্ভিন এসেছে দেখতে।
আরাবী ঠিক করলো রোয়েনের সুস্থ হওয়ার খুশিতে পার্টি দিবে।আরাভ আর্ভিনকে ও বলা হয়েছে।ঘর টাকে সাজানো হয়েছে।রোয়েন অবশ্য শুয়ে থাকে বেশির ভাগ সময়।বেশি নড়াচড়া কিংবা কোন ধরনের ভারি কাজ করতে পারবেনা ও।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
গেস্টরা আসতে শুরু করেছে।ইয়ারাবী এসেই রোয়েনের কাছে চলে যায়।রোয়েন মেয়ের সাথে অনেক সময় পর্যন্ত কথা বলল।অনুষ্টানের মাঝেই খেতে ডাকা হলো সবাইকে।ইয়ারাবী খাওয়ার টেবিলে বসতেই ওর মনে হলো খাবারের গন্ধ ওর পুরো শরীর গুলিয়ে এসেছে।আর বসতে পারলোনা ইয়ারাবী।মাকে বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো ও।বমি করে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আরাভ কে দেখতে পায় ইয়ারাবী।ইয়ারাবীকে দেখে অারাভ বলল,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
-Are you ok?
-মাথা ঝাঁকিয়ে ইয়ারাবী বলল জি।
-বিয়ের আগে মা হতে যাচ্ছো?কি করে ঠিক থাকতে পারো তুমি?
-ইয়ারাবী অবাক হয়ে তাকায় আরাভের দিকে।
-আমি সব জানি ইয়ারাবী।তোমার ওপর আমার পুরো নজর ছিলো।তুৃমি গাইনোকোলোজিস্টের কাছে গেছিলে সেটা জানি আমি।বলে উঠে আরাভ।
-ইয়ারাবী কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।তখনই আরাভ বলল দেখো তুমি বিয়ের আগে প্রেগন্যন্ট সেটা ভালো দেখায়না তাইনা।তারওপর আবার তোমার জেঠুর এ অবস্থা ওনি জানতে পারলে কি অবস্থা হবে ওনার ভেবে দেখেছো কি?তোমার বাবা মার তো মানসম্মান থাকলোনা।ওনারা সমাজে মুখ দেখাবেন কি করে?বাংলাদেশে একটা মেয়ের বিয়ের আগে প্রেগন্যান্সিটা লোকে খুব খারাপ চোখে দেখে।সেটা তুমি জানো ভালো।এখন কি করবা তুমিই জানো।বলে হেঁটে হেঁটে অন্যদিকে চলে যায় আরাভ।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
ইয়ারাবী কি করবে ভেবে পায়না।কারন আরাভের কথা গুলো একদম ঠিক।কিন্তু মাম্মা পাপাকে কেমনে মুখ দেখাবে ও?সামনে তারা তো জেনেই যাবে তখন!!!!
ইয়ারাবীর পুরো শরীর ভারি হয়ে গেলো।মাথা কাজ করছেনা।দ্রুত মায়ের কাছে এলো ইয়ারাবী।রুপন্তী রুহী রোয়েনের সাথে কথা বলছিলো।ইয়ারাবী মাকে একটু সরিয়ে আনলো ওদের সামনে থেকে তারপর বলল মাম্মা আমি বাসায় যাবো।কেন ইয়ারাবী?খেয়ে নে মা।তারপর যা।বলে উঠে রুপন্তী।
না মাম্মা ভালো লাগছেনা।একটু ঘুমোবো আমি প্লিজ বাসায় যাবো আমি।জোর করতে লাগলো ইয়ারাবী।ওকে নে গাড়ির চাবি ধর।খালামনি আর জেঠুকে বলে যা।মেয়ের দিকে গাড়ির চাবি এগিয়ে দিয়ে বলল রুপন্তী।ওকে মাম্মা।ইয়ারাবী রুহী আর রোয়েনের কাছে এলো।খালামনি আর জেঠু আমি বাসায় যাবো।
রুহী ইয়ারাবীর কাছে এসে বলল কেন আম্মু?খাওনি তো তুমি।আর পার্টি ও তো শেষ হয়নি।রোয়েন বলল বাবা খেয়ে নাও। আর পার্টি শেষ হোক তারপর।ইয়ারাবী বলল না জেঠু সত্যিই খারাপ লাগছে।শুতে হবে আমার।রোয়েন কিছুক্ষন ভেবে বলল ওকে যাও।আবার এসো আম্মু।ওকে জেঠু বলে ইয়ারাবী বাসায় চলে গেলো।
চলবে