সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 12
-দরজা খুলুন মা।প্লিজ দরজা খুলুন।কি করেছি আমি আমাকে একবার বলুন। আমি সত্যি জানি না কি করেছি।কিসের এতো রাগ উনার আমার উপর? আমাকে বলুন মা? আমাকে বলুন? প্লিজ মা বলুন? দরজাটা খুলুন।
শ্বাশুড়ি মাকে ডাকতে ডাকতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পরেছি।তার রুমের দরজার সাথে মাথা আর পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছি আমি।তিনি বের হলেন না নিজের রুম থেকে। তিনি যেটা বললেন যদি সেটা সত্যি হবে তাহলে কিসের জন্য উনি আমার সাথে এমন করেন? আমাকে ভালোবাসলে কস্ট কেন দেন? উনার রাগ হিংস্রতা এগুলো আমার উপর কেন?
ছোট বোন মাইশার কান্না জড়িত কন্ঠ ভেসে আসছে।আপু আপু করে ডাকছে আমাকে।আমি চোখ মুখ মুছে উঠে নিচে গিয়ে দেখি বোন সার্ভেন্টদের কাছে অনুরোধ করছে আমাকে ডেকে দেবার জন্য।আমি কিছুটা এগিয়ে যেতেই আমাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো বোন।
-এই মাইশা কাঁদছিস কেন?
আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো মাইশা।তারপর আমার কাঁধ ধরে বলল,
-আমি মরে যাবো আপু।
ওর কথাটা শুনে আমার বুকের ভেতরটা ধপ করে উঠলো।আমি ওর কাছে জানতে চাইলাম,
-এমন কথা কেন বলছিস বোন?
-আপু তুমি তো জানো আমাদের পাড়ার বকাটে রাজু মাস্তান আমাকে রাস্তায় বের হলেই ডিস্টার্ব করতো। ওর কাছ থেকে মা দশ লক্ষ টাকা নিয়েছিলো।সেই টাকা ও আজকের ভেতরই পরিশোধ করতে বলেছে।আর না পারলে আমাকে তুলে নিয়ে যাবে।
-এসব কি বলছিস বোন? মায়ের কাছে তো অনেক টাকা।বিয়ের সময় উনার কাছে আমাকে বিক্রি করে দিয়েছিলো মা।তুই তো মায়ের খুব আদরের মেয়ে দশ লক্ষ টাকা মা ঠিক দিতে পারবে।
-না আপু।মায়ের কাছে এই মুহূর্তে কোনো টাকা নেয়।মা অনেক কাঁদছে।বলছে নিজের ভুলের শাস্তি পাচ্ছে এখন।দুলা ভাইয়ের কাছ থেকে মা যেই টাকার চেক নিয়েছিলো আজ শুক্রবার থাকায় ব্যাংক বন্ধ তাই সেই চেক ভাঙাতে পারছে না।আর ওদিকে রাজু নগদ টাকা চাচ্ছে।কত মানুষের কাছে মা গিয়েছে কিন্তু কেউ দেয় নি।সবাই বলেছে আগের টাকা পরিশোধ না করে আবার টাকা চাইতে এসেছো? মেয়েটাকে তো বিক্রি করেই দিয়েছো।যাও না! তোমার সুপারস্টার জামাইয়ের কাছে গিয়ে চাও।আজ মায়ের ভুলের মাশুল আমাকেই দিতে হবে।কিছু না ভেবে ছুটে এসেছি এখানে।আর এই সার্ভেন্ট গুলো আমাকে তোর কাছে আসতে দিচ্ছে না। আমার পোশাক দেখে ওদের বস্তির মেয়ে মনে হচ্ছে।আমি নাকি তোর বোন না।ওদের বলে দে আপু আমি তোর বোন।
আমি মাথা ঝাকিয়ে সার্ভেন্টদের দিকে তাকালাম।তাদের বললাম,
-হ্যাঁ এ আমার বোন।তোমরা দেখও নি বিয়ের দিন এসেছিলো আমার সাথে?
একজন সার্ভেন্ট বলল,
-ওহহ বুঝতে পারি নি ম্যাম ছরি।আসলে বিয়েতে এতো মানুষ বাড়িতে এসেছিলো যে মুখটা খেয়াল করি নি।আর সেদিনের পোশাকের সাথে আজকের পোশাকের অনেক তফাত।ক্ষমা করবেন মাইশা ম্যাম।
সার্ভেন্টরা মাইশাকে ছরি বলল।আমি পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলাম দরজার কাছে উনি দাড়িয়ে আছেন।মনে হচ্ছে আমাদের দুজনের কথা সবটা শুনে নিয়েছেন।উনি খুব দ্রুত গতিতে হেঁটে এসে মাইশার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলেন।মাইশাকে নিয়ে আগালেন দরজার দিকে।আমি ছুটে গিয়ে
উনার হাতটা পেছনের থেকে ধরে বসলাম।উনাকে করুন চোখে তাকিয়ে বললাম,
-কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমার বোনকে? প্লিজ ওকে এই সময়ে এবাড়ি থেকে বের করবেন না।আপনার কাছে অনুরোধ আমার।
উনি মাইশাকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে ধরলেন,
-মাথা খারাপ হয়েছে তোমার? আমি মাইশাকে বাড়ি থেকে বের কেন করবো?
-তাহলে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ওকে?
-বিয়ে করাতে?
-মানে?
-বিয়ে হবে মাইশার আজ।যে ওকে ভালোবাসবে। তার সাথে ও সুখে থাকবে।তার এতো পাওয়ার যে রাজু মাস্তান কেন? দেশ কাঁপানো মাস্তানও ওর ধারে কাছে আসতে পারবে না।
কথাটা বলে বিদ্যুৎ এর গতিতে মাইশাকে নিয়ে চলে যান উনি।আমার খুব ভয় করছে।তাহলে কি উনি মাইশাকে বিয়ে..নাহ নাহ এসব কি ভাবছি আমি? কিন্তু উনি যে বলল, তার অনেক পাওয়ার যার সাথে মাইশার বিয়ে দিবে।
সারাদিন উনাকে নিয়ে ভেবেছি।বোনকে নিয়ে কোথায় গেলেন উনি? আমি যা ভাবছি যেন সেটা সত্যি না হয়।রাত দশটার পর উনি ফিরলেন। উনার হাতে আজও মদের বোতল।সারাদিন কি কি করেছেন কে জানে?
রুমের মধ্যে ঢুলতে ঢুলতে আমার পায়ের কাছে এসে বসলেন উনি।করুণ গলায় বললেন আমাকে,
-জানো আরু মাইশার বিয়ে দিয়ে দিয়েছি।রকস্টার রুহানের সাথে। যার কন্ঠে সারা পৃথিবী পাগল। আমাদের বিয়েতে ইনভাইট করেছিলাম তাকে।আসতে পারবে কিনা শিওর ছিলো না।কিন্তু যখন এসেছিলো রুহানের চোখ তোমার বোনকে দেখে আটকে গিয়েছিলো।তোমার বোনের কথা বলা, হাসি।আর সিম্প্রল সাজ পোশাক তাকে পাগল করে দিয়েছিলো।যেই রুহানের একটা কনসার্টের টিকিটের জন্য দেশে বিদেশের বড় বড় সেলিব্রেটিরা মরিয়া হয়ে ওঠে।সেই রুহান তোমার বোনের জন্য আমাকে দিনে ৩০/৪০ বার কল করতো।তোমার বোনের খোঁজ খবর নিতো।আসলে ভালোবাসা এমনই হয়।মানুষের সুখ, শান্তি, ভালো থাকা সব ওই একজনকে ঘিরেই থাকে।আমার ভালোবাসাটা হয়তো তোমার যোগ্য না।তোমার উপর যেই অধিকার বোধটা খাটিয়েছি এতোদিন সেটার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও।তুমি তো আমাকে ঘৃণা করও।তবুও একটু ধৈর্য ধরে থাকো আমার সাথে।তোমাকে আমি মুক্তি দিয়ে দেবো।আমাকে শুধু একটু সময় দাও প্লিজ।
কথাগুলো বলে উঠে গিয়ে ঢুলতে ঢুলতে উনি বিছানার একপাশে উল্টো ঘুরে শুয়ে পরলেন।আমি উনাকে ডাকলাম কিন্তু উনার কোন সাড়া পেলাম না।হয়তো ঘুমিয়ে পরেছেন।নিজে ঘুমিয়ে আমাকে জাগিয়ে রেখেছেন।এমন কেন এই মানুষটা? আমার মনের ভেতরে কি চলছে সেটা কিভাবে বোঝাবো?
ফজরের নামাজ পড়ে মোনাজাত শেষে উনার কাছে এসে বসলাম।উনার মুখটা দেখছি।কত মায়া এই মানুষটার মধ্যে।অথচ তাকে আমি ভালো করে যানিও না।যার আত্না, শরীরের শিরা উপশিরায় আমি নিজেকে খুঁজে পাই তার এই বুকটায় জমে থাকা কস্টের কারণ আমার অজানা।
আজ উনি বেরিয়ে যাবেন শুটিং এর জন্য অন্য দেশে।না জানি এই মুখটা আর কবে দেখবো।বেলা হচ্ছে উনাকে ডাকলাম।মুখে হাসি ফুটিয়ে উনার কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে ডাকলাম,
-আহান? আহান? সাতটা বাজে উঠবেন না? আপনার ফ্লাইটের দেরি হয়ে যাবে তো। ব্যস্ত উঠুন। আপনার সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছি আমি।উঠে সাওয়ার সেড়ে নিন।
সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
উনাকে ডেকে চলেছি কোনো সাড়া শব্দ নেয়।ভাবছি কি হলো উনার?
-আমার কিন্তু এবার ভয় করছে আহান। প্লিজ উঠুন। আহান?
নাহ আমি আর পারলাম না চিৎকার শুরু করে দিলাম।উনি এখনো উঠছেন না।বাড়িতে থাকা সকলে আমার চিৎকার শুনে ছুটে আসলো।শ্বাশুড়ি মা রুমের মধ্যে ঢুকে আমাকে সরিয়ে দিয়ে উনার পাশে এসে বসলো।উনাকে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু কোনো সাড়া পেলও না।মা উত্তেজিত হয়ে পরলো।উনাকে ডাকতে ডাকতে ঢলে পরলো মাটিতে।হয়তো ধাক্কাটা সহ্য করতে পারে নি।জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন মা।কেউ কেউ এসে শ্বাশুড়ি মাকে উঠিয়ে নিয়ে তার রুমে শুইয়ে দিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে।আর কেউ কেউ উনাকে ধরে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে।আমি গেলাম উনার সাথে হসপিটালে।
ও.টির সামনে দু’ঘন্টা ধরে বসে আছি।আমার সামনে মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পরেছেন।অনেকগুলো গার্ড তাদেরকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখছেন।ফাঁকা পেলে কেউ কেউ আবার ছুটে আসছেন কাছে।আর মাইক ধরে তারা আমার সামনে প্রশ্ন ছুড়ছেন এতো হাসিখুশি আর ছটফটে থাকা মানুষটির সাথে কি এমন ঘটলো যে হার্ট অ্যাটাক করলো? তার হার্ট অ্যাটাক এর কারণ আমি নাকি অন্য কিছু?
ছোট বোন মাইশা আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো।ওর সাথে এসেছে রক স্টার রুহান।এবার সবাই আমাকে ছেড়ে রুহানকে নিয়ে পড়েছে।রিসিপশনের টিভির স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি সরাসরি ব্রেকিং নিউজ চলছে।লাইভ ভিডিওতে আমাকেই দেখাচ্ছে।সাথে রুহান মাইশাকেও।রুহানের সাথে যেই মেয়েটা এসেছে সে কে? আর মেয়েটার সাথে সুপারস্টার আহান খানের স্ত্রীর কি সম্পর্ক? একটার পর একটা প্রশ্ন করে চলেছে রুহানকে তারা।
চলবে,,,,,