ভাড়াটে বউ

ভাড়াটে বউ —পর্ব –০৮

কিন্তু রাইসার উওরে রিয়ান কোনো জবাব,না দিয়ে
নিশ্চুপ ভাবে দাড়িয়ে রইলো। ব্যাপারটা রাইসার খুব
বেশি খারাপ লাগে, একটু আবেগীপ্রবন হয়ে,
রাইসা বিছানার উপর বসে অন্যমনমনস্ক হয়ে মুখ
ফসকে রিয়ানকে বলে ফেললো— টাকার জন্য
বিয়ে করেছি বিধায় কী বন্ধু হিসেবে ভেবে ও
একটি বার ও বলা যায়না কোথায় গিয়েছেন।
রাইসার এমন প্রশ্নে রিয়ানের চোখে- মুখে একটা
ছায়া নেমে আসে যে ছায়া রাইসাকে অনেক কথা
বলতে চাচ্ছে কিন্তু কোথায় যেনো কথাগুলো
বারবার হারিয়ে যাচ্ছে, অনেকক্ষণ অবদি রাইসা
রিয়ানের মায়াযুক্ত মুখের পানে তাকিয়ে রইলো,
আর রিয়ান হয়তো একটি বারের জন্য ভুলে
গিয়েছিলো যে — রাইসা ওর ভাড়া করা বউ তাই বোধ
হয় ও রাইসার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো
কিছুসময় তারপর হঠ্যাৎ রাইসাকে বলে উঠলো—
আচ্ছা আপনি বলতে পারবেন, ভালোবাসার
মানুষগুলো কেন হারিয়ে যায়?

রিয়ানের এই প্রশ্নটার কোনো উওর রাইসা দিতে
পারেনি কেননা রাইসা জিবনে কখনোই কারো
ভালোবাসা পায়নি তাই বোধ হয় জানে ও না
ভালোবাসার মানুষগুলো হারিয়ে গেলে কিংবা দূরে
চলে গেলো কতটা কষ্টে একটা মানুষ এমন
আজগুবি প্রশ্ন করে।
রিয়ান রাইসার থেকে এই প্রশ্নটার উওর না পেয়ে
গম্ভীরতর ভাবে বারান্দার দিকে চলে যেতে
লাগলো, ঠিক তখনি রাইসা টপটপ করে চোখের পানি
ছেড়ে রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে
উঠলো— রাগ করেছেন? কী করবো বলুন
কেউ তো কখনো ভালোবাসেনি, তাই জানিনা
ভালোবাসার মানুষগুলো কেন হারিয়ে যায়। তবে এই
টুকু বলতে পারি যে ভালোবাসার মানুষগুলো
কখনোই হারিয়ে যায়না বরং তারা সময়ের সাথে- সাথে
আমাদের শরীরের প্রতিটি শিরায়- শিরায় ও মিশে যায়,
হয়তো বাস্তবতার খাতিরে তাদের অস্তিত্বটা
সময়ের সাথে সাথে আমাদের ছেড়ে কোনো
কারনে চলে যায়, কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের যে
অনুভূতি, ভালোবাসা তা কখনো চলে যায়না। আর
আমাদের প্রতিটা নিশ্বাস আর প্রশ্বাস বারবার আমাদের
বলে এইতো সে আমার নিকট অতি নিকট।

রাইসার কথাগুলো শুনে রিয়ান রাইসার অতি নিকটে
এসে রাইসার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে
উঠলো— আপনে কে বলুন তো?
রিয়ানের প্রশ্নে রাইসা আবারো আমতাআমতা
করতে লাগলো
— কী ব্যাপার কথা বলছেন না কেন? আপনার
চোখে- মুখে বারবার কিছু একটা লুকানোর চেষ্টার
ছায়া দেখা যাচ্ছে, কে আপনে?
— আমি, আমি মানুষ।
রাইসার উওরটা শুনে রিয়ান আবার রেগে যায় — আবার
আপনে সেই আলতু- পালতু কথা বলছেন? আসলে
আপনার সাথে কথা বলা মানে নিজের সময় নষ্ট করা।
এই বলে রিয়ান ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।

কিছুসময় পর ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রিয়ান
রুমে আসতেই দেখে রাইসা বিছানার উপর
অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। রিয়ান একটু অবাক
হয়ে বিস্মিত কন্ঠে রাইসাকে বললো– কী ব্যাপার
আপনে এখন ও জেগে আছেন কেন?
ঘুমিয়ে পড়ুন।
রিয়ানের প্রশ্ন রাইসা আকুতি ভাবে রিয়ানকে বললো
— ঘুম যে আসছেনা?
— কেন?
–কিছু খাইনি তো তাই ক্ষুদায় ঘুম আসছেনা?
— তো আপনে খাননি কেন?
— আপনার জন্য ।
রাইসার উওরে রিয়ান বিরক্তিকর ভাবে বললো— এসব
বাজে কথা বলা একদম বন্ধ করুন আর আমার জন্য
আপনাকে কেউ না খেয়ে থাকতে বলেছে?
আর তাছাড়া , আমি রাতে খাই না। আর আপনে
দেখেন না বাড়ির কেউ আমার জন্য খাবার নিয়ে
ওয়েট করা কিংবা আমাকে নিয়ে চিন্তা করে না।
তবে, মা একটা সময় করতো কিন্তু এখন আর
করেনা কারন মা বুঝে ফেলেছে আমার জন্য
ওয়েট করা মানে বৃথা সময় নষ্ট করা। সো
আপনাকে ও বলে দিচ্ছি আজকের পর যেনো
এই ভুল কখনো আর না করেন। যান গিয়ে
খেয়ে নিন।

এই বলে,
রিয়ান বারান্দায় চলে আসে, অপলক দৃষ্টিতে
দূরে আকাশপ্রদীপের আলোকে উজ্জ্বল
আকাশের মনোরম দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে থাকে।
হঠ্যাৎ রিয়ানের অনুভূতি হলো কেউ একজন পিছন
থেকে তার শার্ট ধরে টানছে।
পিছনে তাকাতেই রিয়ান দেখলো রাইসা দাড়িয়ে
রয়েছে.
— কী ব্যাপার আপনে?
— আসলে আমার না ভীষন ক্ষুদা লেগেছে।
— আজিব তো কয়বার বলবো খেয়ে নিন।
— আমাকে একটু খায়িয়ে দিবেন।
রাইসার এমন আবদারে শুনে রিয়ান বলে উঠলো–
মানে? আমি আপনাকে খায়িয়ে দিবো এই প্রশ্নটা
করার সাহস পেলেন কী করে?
— প্লিজ রাগ করবেন না, আসলে হাতে অনেক
ব্যাথা পেয়েছিলাম সেদিন আপনে যখন হাত
চেপে ধরেছিলেন,
তার উপরে আজকে পড়ে গিয়ে ব্যাথাটা আর ও
বেশি বেড়ে গিয়েছে।
রাইসার এমন আকুতি কন্ঠের কথাগুলো শুনে রিয়ান
একটু নিজেকে অপরাধী মনে করে রাইসাকে নিচু
স্বরে বলে উঠলো— খুব বেশি লেগেছে
তাইনা ?
— হুম।
— স্যরি আসলে রাগ হলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা।
— কী এখন খায়িয়ে দিবেন না?
— ইয়ে মানে।
— ওকে দরকার নেই খায়িয়ে দেওয়ার, আমি
ঘুমোতে গেলাম।
রাইসা বারান্দা থেকে অভিমান করে চলে যেতে
চাইলে রিয়ান হাতটা ধরে বললো— এতো অভিমান
করার কী আছে আর তাছাড়া না খেয়ে শুয়ে
পড়লে তো পরে
বলবেন ভাড়াটে বউ বলে খাবার ও দেইনি , আসুন,
আসুন খায়িয়ে দিচ্ছি।
এই বলে রিয়ান রাইসার হাতটা ধরে…….
(চলবে)