গিরগিটি বর তাও আবার চুক্তি —পর্ব-১২ (শেষ)
আরে তুমি এখানে তা কি করে হয়? তাহলে আপনি কি
আমাকে এত দিন মিথ্যাকথা বলছেন? আপনি তো
আমাকে বলছেন। তন্নি হোস্টেলে থাকে,
তাহলে তন্নি এখানে কি করছে? আমি।
সৌরভ:- তোমাকে না বলছি কথা না বলতে? আচ্ছা
তন্নি মামুনি তুমি কবে আসছো এখানে?
তন্নি:- আম্মু আমাকে গত কালকে গিয়ে নিয়ে
আসে।
সৌরভ:- তোমার আম্মু কোথায়?
তন্নি:- ঐ তো আম্মু। তন্নি একটা মেয়ের দিকে
আংগোল দিয়ে দেখিয়েছে। মেয়েটা কাছে
এসে,,
মেয়ে:- সৌরভ কেমন আছো তুমি?
সৌরভ:- হ্যা আমি ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?
মেয়ে:- এইত কোন রকম ভাল আছি। আমাকে
দেখিয়ে বলে এই মেয়েটা কে?
সৌরভ:- ওর নাম ঐশি তাবাসুম। ঐশি ওনি তন্নির আম্মু রিপা।
আমি:- হায়।
রিপা:- হ্যাল্লো।
সৌরভ:- চলো রিপা আমার সাথে বাড়ীতে ফিরে
যাবে?
রিপা:- কার বাড়ীতে যাবো?
সৌরভ:- তোমার বাড়ীতে। তখনি একজন ভদ্র
লোক এসে বলছে,
আসলে আজ তোমাদের এখানে ডাকা হইছে একটা
কথা বলার জন্য।
সৌরভ:- কি কথা।
রিপা:- আমি আর ঐ বাড়ীতে ফিরে যেতে চাইনা।
আর আমার নিজের একটা জীবন আছে।
সৌরভ:- হ্যা তা আছে। তবে তুমি চাইলে আমার সাথে
যেতে পারো। যখন সৌরভ রিপাকে এই কথাটা
বললো তখন আমার বুকের ভীতরটা ভেঙে চুর
মার হইতে লাগলো।
রিপা:- না থাক নতুন করে আর কোন জামেলা
জড়াতে চাইনা। তুমি তোমার নতুন বউকে নিয়ে
অনেক সুখে থাকো। আমার জন্য চিনতা করোনা।
তবে আমার একটা রিকুয়েস্ট আছে, আমার সোনা
মনি তন্নিকে তোমার সাথে নিয়ে যাবে।
আমি:- তন্নিকে আমার কাছে দিয়ে দেন। আমি
তন্নিকে নিজের মেয়ের মত করে লালন পালন
করবো।
সৌরভ:- তাহলে তুমি কি করবে এখন? তখনি ঐ ভদ্র
লোকটা আবার বলছে,,
বাবা সৌরভ তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছ। রাজু
এক্সিডেন্টে মারা জাবার পর থেকে আমাদের সব
খরচ বহন করেছো। আর আমাদের জন্য কিছু
করতে হবেনা। আমি চাই রিপা আমার পসন্দের
ছেলেকে বিয়ে করুক। তাই আজ তোমাকে
এখানে ডেকে এনেছি তুমি যদি তন্নিকে তোমার
সাথে নিয়ে যেতে।
সৌরভ:- ঠিক আছে রিপা যদি সূখে থাকে তাহলে আমার
আর কিছু বলার নেই।
রিপা:- সৌরভ তোমার সাথে আমার আলাদা করে কিছু
কথা আছে। যদি তুমি একটু আমার রুমে আসতে।
সৌরভ:- এক বার আমার দিকে তাকিয়ে তারপর বলে।
ঠিক আছে চলো। আর আমাকে বলে গেছে,
ঐশি তাবাসুম তুমি তন্নির সাথে দুষ্টমি করো আমি কথা
বলে আসছি।
আমি:- ঠিক আছে যান। তারপর সৌরভ আর রিপা দুজনে
উপরে চলে গেছে। আমি তন্নির সাথে কথা বলছি
আর দুষ্টমি করছি। তখনি ভদ্র লোকটা আমাকে তার
পরিচয়টা দিল ওনি হচ্ছেন রিপার বাবা।
আংকেল:- তুমি সৌরভের কি হও মা?
আমি:- সত্যি কথা না বলে বলছি আমি ওর অফিসে চাকরি
করি।
আংকেল:- সৌরভ ছেলেটা অনেক ভাল ওর এই
পৃথিবীতে আপন বলতে কেও নেই। যা কিছু
দেখছো সব কিছু,,, তখনি,,
সৌরভ:- আংকেল আপনাকে রিপা ডাকছে উপরে
যেতে। তারপর আংকেল চলে গেল,
আমি:- রিপা যেতে রাজি হইছে?
সৌরভ:- না।
আমি:- আমার জন্য রিপা আপনার জীবন থেকে
দুরে চলে গেল। তার জন্য সরি, আমি জানি
এইটুকুতে আপনার মন ভরেনি। আপনি চাইলে একটা
কশিয়ে থাপ্পড় দিতে পারেন।
সৌরভ:- এখানে তুমি শুরু করে দিলে? তখনি রিপা নিছে
নেমে এসেছে।
রিপা:- তাহলে তুমি আমার সব কথা মেনে নিয়েছো
সৌরভ।
সৌরভ:- হ্যা আমি তোমার সব কথা মেনে নিলাম।
তাহলে আমরা এখন যাই।
রিপা:- ঠিক আছে যাও।
আমি:- তন্নি যাবেনা আমাদের সাথে?
তন্নি:- আম্মু আমি তো আগে রেডি হয়ে আছি।
রিপা:- যদি কিছু মনে না করো তাহলে তোমাকে
লাস্ট বারের মত জড়িয়ে ধরতে দিবে?
(মনে মনে আমি আল্লাহকে ডাকছি যাতে করে
সৌরভ রাজি না হয়। কিন্তু কি এইটা কি হলো?)
সৌরভ:- ঠিক আছে। তখনি রিপা দৌরে এসে সৌরভের
বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল। (আমার যে কি পরিমান
কষ্ট হচ্ছে তা বলে বুঝাতে পারবোনা
আপনাদের।)
রিপা:- তোমাকে আমি খুব মিস করবো।
সৌরভ:- ভালো থেকো বাই। বলে সৌরভ আর আমি
সাথে তন্নিকে নিয়ে বেড়িয়ে এলাম। আমার মুড
অফ হয়ে গেলো কারন আমার সামনে সৌরভকে
রিপা জড়িয়ে ধরছে তাই।
আমি:- শোনেন আমাকে একটু আমাদের বাড়িতে
নামিয়ে দিবেন।
সৌরভ:- তোমার চুক্তির মেয়াদ এখনো শেষ হইনি?
আরো এক (১) মাস বাকি আছে।
তন্নি:- আম্মু চুক্তি কি?
সৌরভ:- মামুনি তুমি এসব বুজবেনা। আমার সাথে তোমার
যেই চুক্তিটা হইছে সেইটা নিশ্চয় মনে আছে।
আমি:- আছে কিন্তু তাতে কি হইছে। আমি আমার
নিজের বাড়ীতে যেতে পারবোনা নাকি?
সৌরভ:- সময় হলে যাবে। এখন চুপ করে বসো।
তানা হলে গাড়ির স্পীর্ড বাড়িয়ে দেব।
আমি:- এই ঠোটে আংগোল দিলাম। আর একটা কথা
বলবোনা। তারপর কিছুক্ষন পরে গাড়িটা বাসার সামনে
এসে থামলালো।
সৌরভ:- ঐশি তুমি তন্নিকে সাথে নিয়ে ভীতরে যাও।
আমি একটু অফিস থেকে ঘুরে আসি।
আমি:- ঠিক আছে। তারপর আমি তন্নিকে কোলে
নিয়ে বাসার ভীতরে ডোকলাম। দেখি তাহমি আপু
আর শ্বশুড় শ্বাশুড়ি ওরা সবাই বসে আছে। তন্নিকে
দেখে ওনারা অনেক খুশি হইছে। শ্বশুড় মসাই
তন্নিকে সাথে করে নিয়ে গেছে। আমি তাহমি
আপুকে বলে রুমে চলে এলাম। তবে আমার খুব
খারাপ লাগছে এক মাস পরে এই বাড়ীটা ছেরে
চলে যাবো। আজ আমাকে সবটা জানতে হবে, যা
হবার হবে। একটু রেস্ট নিয়ে নিছে নামলাম। সন্ধা
হয়ে গেছে।
তাহমি:- ঐশি খানা খাবেনা?
আমি:- আপু তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
তাহমি:- হ্যা বল কি কথা?
আমি:- তুমি কিছু মনে করবেনা তো?
তাহমি:- না কিছু মনে করবোনা? বলো কি বলবে?
আমি:- সৌরভ তোমার কেমন ভাই? চোখ বুজে
বলে ফেলে। আমি ভয়ে একদম দম বন্ধ হয়ে
আসছে। যখন আমি চোখ খোললাম। তাকিয়ে
দেখি তাহমি আপু হাসতেছে।
তাহমি:- মানে তুমি জানতে চাইছো সৌরভ আমার
কেমন ভাই।
আমি:- ঠিক তানা আসলে আমার বান্ধবী তাসলি বলছে
সৌরভ নাকি তোমাদের কেও নয়? এবার হাসি মাকা মুখটা
মলিন করে,,।
তাহমি:- হ্যা তুমি ঠিকই শুনেছো। তুমি আর কি কি
শুনছো?
আমি:- আসলে আপু আমি এমন করে কথাটা বলতে
চাইনি।
তাহমি:- তুমি আমার সাথে আসো। তারপর আমার হাত
ধরে তাহমি টেনে ওর রুমে নিয়ে গেছে। নিয়ে
গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
আমি:- আপু আপনি আমার কথাটা একটু শোনেন প্লিজ।
তাহমি:- ঐশি তাহলে তুমি শোন? সৌরভ আমাদের
রক্তের সম্পর্কে কেও নয়। রাজু হচ্ছে আমার
ভাই, আর যাদের সৌরভ বাবা মা বলে তারা সৌরভের
কেও নয়। তারা আমার বাবা মা, রাজু প্রথম সৌরভের
সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেই। সৌরভ রাজুর
অনেক ভাল বুন্ধ ছিল।
আমি:- আপু আমি রাজুর ভাল বুন্ধ ছিলাম। রাজু আমাকে
সৌরভের কথা বলছিল।
তাহমি:- এই যা কিছু দেখছো সব কিছু সৌরভের।
আমাদের কিছু ছিলনা। ওর বাবা মা কার এক্সিডেন্ট মারা
যাই। তারপর থেকে ও অনাত হয়ে যাই। রাজু এক বড়
লোক মেয়েকে বিয়ে, কিন্তু তারা রাজুকে
মেনে নেইনি। তারপর সৌরভ তার সব কিছু রাজুর নামে
লিখে দেই। তারপর রাজুকে মেনে নেই।
আমাদের ভাগ্যটা খারপ তাই রাজু আমাদের ছেরে না
ফেরার দেশে চলে গেছে। মারা জাবার সময় রাজু
সৌরভকে বলে গেছে তার মেয়েকে আর
আমাদেরকে দেখে শোনে রাখতে। তাই সৌরভ
আমাদের সবাইকে নিজের আপন করে নিয়েছে।
আমি:- তাহলে রাজুর মেয়েটা কোথায়? আর রাজু
বিয়ে করে ছিল?
তাহমি:- হ্যা রাজু বিয়ে করে ছিল। আর তন্নি তো
রাজুর মেয়ে। আর রিপা রাজুর বউ।
আমি:- মানে কি বলছো আপু? তাহলে তোমরা
আমাকে এই বাড়ীর ছোট বউ বললে কেন?
তাহমি:- হ্যা তুমি তো এই বাড়ীর ছোট বউ। কারন
রাজু সৌরভের খেকে বড় ছিল।
আমি:- কিন্তু রাজু আমাকে কোন দিন বলেনি। তবে
বল ছিল আমাকে সার্পাইজ দিবে।
তাহমি:- হই তো তাই। তাহলে তুমি এখন সবটা জেনে
গেছ এখন তুমি যেতে পারো।
আমি:- আমার কথায় যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকো
তাহলে আমাকে তোমার ছোট বোন মনে
করে ক্ষমা করে দিও। বলে আমি রুমে এসে
দেখি সৌরভ বসে আছে।
সৌরভ:- কোথায় গেছিলে?
আমি:- তাহমি আপুর রুমে ছিলাম।
সৌরভ:- ঐশি চলো একটু ছাদে যাই। বলে আমার হাত
ধরে টেনে ছাদে নিয়ে এসেছে। তোমাকে
আজ কিছু কথা বলবো বলে এখানে নিয়ে এসেছি।
আজ আমি সবটা সত্যি জানতে পারছি, রিপা আমাকে সব
সত্যি বলে দিয়েছে।
আমি:- কোন সত্যি?
সৌরভ:- রাজুর এক্সিডেন্ট মারা যাওয়ার সত্যিটা, প্রথমি সরি
বলে নেই। এত দিন তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার
করার জন্য। ঐদিন তাসলিকে বাচাতে গিয়ে রাজুর
এক্সিডেন্ট মারা যাই। এইটা রিপা আমাকে বলে
দিয়েছে। রাজু আর রিপা আগে রাস্তা পার হইছিল
কিন্তু তাসলি রাস্তা পার হইতে ছিল তখনি একটা গাড়ি
এসে দাক্কা মারতে ছিল তখন রাজু তাসলিকে বাচাতে
গিয়ে রাজু নিজে মরে যায়। আর রাজু মারা জাবার সময়
আমাকে তোমাদের ছবিটা দিয়ে কি জেন বলতে
চাই ছিল কিন্তু আর বরা হইনি। আর আমি কিন্তু বিভাহিত
নই।
আমি:- হলে আমার কি? আর না হলে কি? এক মাস
পরে আমি তো চলে যাবো।
সৌরভ:- তুমি মনে হই কাগজ গুলো ভাল করে পড়নি?
আমি:- মানে?
সৌরভ:- হ্যা কাগজে লিখা আছে তুমি আমার জীবন
থেকে চাইলে যেতে পারবেনা। আমি যাদের বাবা
মা আর আপু বলি তুমি তাদেরকে ঠিক ঐ ভাবে
ডাকবে। আর তন্নিকে নিজের মেয়ের মত
ভালবাসবে।
আমি:- কই দেখি।
সৌরভ:- কাগজে যা লিখা থাকুক না কেন? আমি এখন যা
বলছি তা তুমি মেনে নিবে প্লিজ। এই কাগজ ছিরে
নিলাম। বলে সৌরভ সব চুক্তির কাগজ ছিরে দিল।
আমি:- তবে আমার একটা রিকুয়েস্ট আছে।
সৌরভ:- ঠিক আছে বলো।
আমি:- আপনার অফিসে যে নতুন মেয়েটা রাখছেন।
তাকে বিদায় করে একটা ছেলে রাকবেন।
সৌরভ:- আমার ক্যারেক্টার এতটা খারাপ নই। বলে
আমাকে টান মেরে ওর বুকে নিয়ে নিল। তখনি,,
তন্নি:- আম্মু তোমরা ছাদের উপর কোলা কুলি
করছো কেন?
সৌরভ:- ওরে দুষ্ট মামুনি তুমি এখানে কেন?
তন্নি:- তোমাদের আন্টি ডাকছে নিছে যেতে
চলো।
আমি:- হ্যা চলো। আমি সৌরভ, দুজনে নিছে নেমে
এসেছি। তখনি,,
তাহমি:- তন্নি তুমি চলো আমার সাথে ঘুমাবে। আর
আমি সব কিছু শুনে ফেলছি ছাদের উপরের কথা
গুলো। আমি আর তন্নি দুজনে সিড়িতে দাড়িয়ে
ছিলাম। তখনি তোদের সব কথা শোনছি। যা এখন
তোরা রুমে যা।
সৌরভ:- একটু পরে যাই।
আমি:- না তা হবেনা, বলে টান মেরে রুমে নিয়ে
এসেছি। তখনি তাহমি আপু বাহির দিয়ে দরজা লাগিয়ে
দিল।
সৌরভ:- কি হচ্ছে এমন করছো কেন?
আমি:- কি করছি? এখন খালি দেখবেন। বলে
সৌরভকে জড়িয়ে নিলাম। একদম আপন করে নিয়েছি।
এখন আমার সাথে সৌরভ আর আগের মত খারাপ
ব্যাবহার করেনা। আমাকে অনেক ভালবাসে,
তন্নিকে আমি রোজ স্কুলে নিয়ে যাই আর নিয়ে
আসি। পরিবারের সবাই আমাকে অনেক ভালবাসে।
অনেক দিন পর অফিসে গেছিলাম গিয়ে দেখি সজল
নেই, কারন সজল নাকি আমার সমন্ধে সব জানতে
পেরে চাকরিটা ছেরে চলে গেছে। যাক এখন
সৌরভ আমার সব আর একটা মেয়ে তো আছেই।
ভালোই যাচ্ছে আমাদের ভালোবাসা। আর তন্নির
সাথে দুষ্টিমিতে আমার দিন এখন ভালোই কাটছে।