তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 08

চিত্রাকে সামনে এগিয়ে যেতে বলে চারপাশে তাকিয়ে সেই চোখে দুটোর সন্ধান করছি।কিন্ত কোথাও কেউ নেই।তবু কেনো যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না মনে হচ্ছে কেউ একজন তো আছে যে,, গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখে চলেছে আমায়।।একহাতে শাড়ির কুঁচিগুলো ধরে ডানপাশের রাস্তাটির দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে ডেকে উঠলো কেউ। পেছনে তাকিয়ে দেখি সাহেল ভাইয়া উনিও নীল রঙের পাঞ্জাবী পড়েছেন।বেশ সুন্দর লাগছে।।উনাকে দেখা হালকা হাসলাম।উনিও হালকা হেসে বলে উঠলেন…
.
কেমন আছো সানশাইন?
.
জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো,আপনি?
.
এইতো বেশ আছি।শাড়িতে তোমাকে বেশ মানিয়েছে আজ আর বাচ্চা লাগছে না তোমায়।(মুচকি হেসে)
.
উনার কথায় হাসলাম কিছু বললাম না।।আমারও জানতে ইচ্ছে করছে সেই গোপন ছেলেটা আসলে কে?? উনি??আমি উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমার চোখে হাজারও প্রশ্ন থাকলেও উনার চোখে কোনো উত্তর খুঁজে পেলাম না একদম শান্ত এক জোড়া চোখ।।আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলেন উনি….

চলো হাটঁতে হাটঁতে কথা বলি?
.
জি চলুন…
.
কথাটা বলেই হাঁটা দিলাম উনার পাশাপাশি।। এখনও সেই একই অনুভূতি!! কেউ দেখছে আমায়!!হঠাৎই উনি বলে উঠলেন…
.
শুভ্রর কথায় কিছু মনে করো না সানশাইন।ওর যে কি হয়েছে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।।ও আমার ছোট্ট বেলার ফ্রেন্ড,,ওকে কখনো মজা করেও মেয়েদেরকে হার্ট করতে দেখি নি।।ও খুবই ভদ্র একটা ছেলে বিশেষ করে মেয়েদের প্রতি।।তুমিই একমাত্র মেয়ে যার সাথে ও এতোটা বাজে বিহেভ করে।সেদিন যে কথাগুলো ইউজ করলো সেগুলো সে কোনো বাজে মেয়েকেও কোনোদিন বলতে পারবে না বলে আমার ধারনা ছিলো।।কিন্তু আমি হতাশ।।তোমার প্রতি ওর ব্যবহার খুবই অগোছালো।আমরা রেগিং করি বাট মেয়েদের রেসপেক্টটা রেখেই করি বাট ও….
.
এসাইনমেন্টটা কি আপনি করে দিয়েছিলেন?
.
আমার হঠাৎ এমন কথায় অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন উনি।।তারপর ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন…
.
এসাইনমেন্টটা সত্যি তোমায় কেউ করে দিয়েছিলো??
.
আপনি করেন নি??
.
আমি উত্তরের বদলে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম উনাকে।।উনি সাবলিলভাবেই বলে উঠলেন…
.
না।আমি কেনো করতে যাবো বলো তো?শুভ্রও আমায় সন্দেহ করছে।আমার হেল্প যতটুকু করার সবার সামনেই করার চেষ্টা করেছি।।আমি শুভ্রর মতো এতো ব্রিলিয়ান্ট নই আর তাছাড়া আমার যদি এসাইনমেন্ট দেওয়ারই হতো তাহলে সরাসরিই দিতাম এতো লুকুচুরির তো কিছু নেই।।শুভ্রর বিহেভিয়ারটা তোমার প্রতি বেশি বাজে হয়ে যাচ্ছিলো তাই ওকে কন্ট্রোল করার জন্য এমন একটা শাস্তি দিতে বলি বাট দেখো ব্যাপারটা আরো উল্টো হলো।।তোমার প্রতি ওর বিহেভ খারাপ হয়েই চলেছে দিন দিন।।
.
আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি কিছু বলছি না।।কি বলবো বুঝতেও পারছি না।।বারবার হতাশ হতে হচ্ছে আমায়।।কে সে?সাহেল ভাইয়া কি মিথ্যা বলছে আমায়?মিথ্যা বলে লাভই বা কি উনার।।উফফ…চিন্তায় করতে পারছি না আর।।সাহেল ভাইয়া আবারও বলে উঠলো…
.
কিছু বলছো না যে?
.
না এমনি(মুচকি হেসে)
.
একটা জিনিস খেয়াল করেছো??কাকতালীয় ভাবে হলেও আমাদের ড্রেসের কালারটা কিন্তু বেশ ম্যাচিং হয়ে গেছে।।তোমার বান্ধবীকেও দেখলাম সেইম কালার শাড়ি পড়েছে।।
.
হুম দুজন প্ল্যানিং করেই পড়েছি।
.
আমি আর শুভ্রও প্ল্যান করে পড়েছি।।ও হ্যা আজ শুভ্রও নীল পাঞ্জাবী পড়েছে।
.
ওহ

শুভ্রর নামটা শোনার সাথে সাথে বিতৃষ্ণায় ভরে গেলো মন।এই একটা মানুষকে আমার অসহ্য লাগে।।আমি কাউকে ঘৃনা করতে পারি না যদি পারতাম তাহলে উনিই সেই লিস্টে প্রথম হতেন।।সাহেল ভাইয়া আমাকে বাই বলে নিজের কাজে চলে গেলেন।।সামনে বেশ ভীর। চিত্রা স্টেজের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ওখান থেকেই হাতের ইশারায় ডেকে চলেছে আমায়।তাকে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে আমি ওর কাছে না গেলে সে মরেও যেতে পারে।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাড়ির কুঁচিগুলো ধরে ভীরের মধ্যেই হাঁটা দিলাম সেদিকে।।কিছুটা ভেতরের দিকে যেতেই কারো হাতের স্পর্শ পেলাম আমার পেটে সাথে আঁচড় লাগার মতো ব্যাথা।।আশেপাশে প্রচুর মানুষ,, কে এমনটা করতে পারে বুঝতে পারছি না,,তবে স্পর্শটা চেনা।।তাড়াতাড়ি ভীর থেকে বেরিয়ে এসে পেটে হাত দিয়ে দেখলাম রক্ত বেরিয়ে গেছে।।কেউ নখ দিয়ে খুব শক্ত করে আচঁড় কেটে দিয়েছে।।জায়গাটা প্রচুর জ্বলছে।।হঠাৎই একটা পিচ্চি ছেলে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।। ছেলেটাকে আমি এর আগেও দেখেছি ভার্সিটির পাশের চায়ের দোকানটাতে।।আমি ছেলেটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সে আমার দিকে এগিয়ে দিলো মলম, টিস্যু আর একটা কাগজ।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম এসব কে দিয়েছে তোমায়??ছেলেটা গম্ভীর মুখে উত্তর দিলো…”নীল পাঞ্জাবী পড়া ভাইজান” “নীল পাঞ্জাবী” কথাটা শুনেই সাহেল ভাইয়ার কথা মাথায় এলো।।তারপর আবার মনে হলো শুভ্র ভাইয়ার কথা।।আশেপাশে তাকিয়ে দেখি অনেক ছেলেই নীল পাঞ্জাবী পড়েছে।।কার কথা বুঝবো আমি,??তাই আবারও ছেলেটির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম-
.
নাম কি তোমার ওই নীল পাঞ্জাবী ওয়ালা ভাইজানের?
.
নাম কইতে মানা করছে।।
.
কথাটা বলেই ওগুলো আমার হাতে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো সে।।আমি ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়িটা উঁচু করে দেখলাম তিনটা নখের আচড়।।টিস্যু দিয়ে রক্তটা পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিলাম।।এই ভূতের মতো কাঁধে নেচে বেড়ানো মানুষটাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে।। এর সাহস কি করে হয় আমার শরীরে হাত দাওয়ার??হাউ ডেয়ার হিম।।হাতের কাগজের দিকে নজর যাওয়ায় কাগজের ভাজটা মেলে ধরলাম।।সেখানে লেখা-
.
“” শাড়ি পড়েছো ঠিক আছে। তোমার ফর্সা পেটটা কি সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতে হবে?শাড়ি ঠিক না রাখতে পারলে পড়ো কেন??নাকি দেখাতে চাও সবাইকে যে তুমি কতো সুন্দর?ছেলেরা কিভাবে তাকাচ্ছিলো সে খেয়াল আছে??কেনো দেখবে তোমায় অন্যকেউ??খবরদার আবার এমন হলে খুন করে ফেলবো তোমায়।।রাগ লাগছিলো খুব তাই এমনটা করেছি বেশি ব্যাথা লাগলে সরি।।তোমার মন খারাপের জন্য আমি দায়ী সেটাও আমি জানি তাই আবারও একটা সরি।। শাড়িটা ঠিক করে নিও প্লিজ “””
.
চিঠিটা পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।।এই চিঠি পড়ার পড় ইচ্ছে হচ্ছে সম্পূর্ণ শাড়ি খুলে তারপর বাইরে বের হই।।এরা আমাকে পেয়েছেটা কি??নিজের প্রোপার্টি নাকি??সরি?হোয়াট সরি?তোর সরি দিয়ে কি আমি জুস বানিয়ে খাবো নাকি? ডাফার।।রাগ আর বিরক্তি নিয়ে বেরিয়ে এলাম ওয়াশ রুম থেকে।।অনুষ্ঠান যেদিকে হচ্ছে সেদিকে যেতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া আর চিত্রা কথা বলছে।।।দুজনেই যেনো হেসে গড়িয়ে পড়ছে।।শুভ্রকে দেখেই রাগ উঠে গেছে মাথায়।।আর চিত্রার এমন দাঁত কেলানো দেখে ইচ্ছে হচ্ছে ওর কানের নিচে কয়েকটা লাগায়।।ডাফার কোথাকার।।আমাকে যে এতো অপমান করে তার সাথে এতো দাঁত কেলানোর কি আছে বুঝলাম না।।মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।।এই মুহূর্তে সব কিছু বিষাক্ত লাগছে আমার কাছে।।আর কিছু না ভেবে ঘুরে দাঁড়ালাম বাসায় ফিরবো বলে।।পেছনে তাকাতেই দেখি অভ্র ভাইয়া।।আমাকে দেখে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে উঠলেন…
.
বাহ,, আজ আমাদের বীরবালিকাকে তো খুব মিষ্টি লাগছে কিন্তু মুখটা পেঁচার মতো হয়ে আছে কেন?
.
এমনি।
.
ওহ্।মন খারাপ বুঝতে পেরেছি।তো কোথায় যাওয়া হচ্ছিলো??(ভ্রু নাচিয়ে)
.
বাসায় যাবো ভালো লাগছে না।।কিন্তু আপনি এখানে?
.
বাবার সাথে আসছি।বাবা তো এই ভার্সিটিরই স্টুডেন্ট ছিলেন।।দুই তিন বছর অধ্যাপনাও করেছেন।।সেই সুবাদে উনাকে ইনভাইট করা হয়েছে।।বাবা সাথে করে এসিস্ট্যান্ট হিসেবে আমাকেও নিয়ে এলেন হাহাহাহা।।।আচ্ছা,, এসব ছাড়ো অনুষ্ঠান তো শুরুই হয় নি তো এখনই বাসায় যাচ্ছো কেন?
.
ভালো লাগছে না।।চলে যাবো।দম বন্ধ লাগছে এখানে।
.
আচ্ছা তাহলে এট লিস্ট বাবার সাথে দেখা করে যাও।তোমার ভালো লাগবে।।ওই তো বাবা…

আমার পেছনের দিকে ইশারা করে বলে উঠলেন কথাটা।।আমি পেছন ফিরে মামুকে দেখতে পেলাম।উনি আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে শুভ্রর সাথে গল্প করছেন।শুভ্রও বত্রিশ দাঁত বের করে বেশ ভদ্রভাবে কথা বলে চলেছে।।শুভ্রকে দেখে মামুর সাথে কথা বলার ইচ্ছেটাই চলে গেলো।।তাই অভ্র ভাইয়াকে কোনোরকম বুঝিয়ে চলে এলাম সেখান থেকে।।একা একা হাঁটছি রাস্তা ধরে।।পেটের কাঁটায় হালকা পুড়াচ্ছে।।চুলগুলো ছাড়া থাকায় গরমও করছে হালকা।।সেই সাথে চেপে ধরছে হাজারও বিরক্তি।।আজ মনটাকেই আমার বড্ড বিরক্তিকর লাগছে।।ইচ্ছে হচ্ছে মনটাকে বের করে ঘষে মেজে আবার বসিয়ে দিতে পারলে মন খারাপ ভাবটা একটু কমে যেতো হয়তো।।আকাশ-পাতাল কল্পনায় ভর করে আগোছালো পায়ে হেঁটে চলেছে ব্যস্ত রাস্তায়।আজ রিক্সার অভাব নেই।।চারদিকে কতো টুংটাং শব্দ!!!কিন্তু আফসোস আজ এই রিক্সার আমার কোনো প্রয়োজনই নেই….
.
.
#চলবে….