একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 44
আরিফের আর নীলার বিয়ে আজ।নিভ্রকে একটানা কলের পর কল করে চলেছে দু’জনেই।ভিন্ন জায়গা থেকে ভিন্ন ভাবে কল করছে তারা।কিন্তু নিভ্র??নিভ্র কোথায়??প্রতিদিনের মত আজও তার হৃদয় খালি বিষন্নতা নিয়ে উপুত হয়ে ফ্লোরে পরে আছে সে।সূর্যের কিরন উঠেছে ঠিকই কিন্তু নিভ্রর জীবনের আলো আসেনি।নিভ্র ফ্লোরে শুয়েই এদিক ওদিক মোড় ঘুড়িয়ে ফোন খুঁজে।ফোনটা তাকে প্রচন্ড ভাবে বিরক্ত করছে।ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে হয়।নিভ্র হাতরে হাতরে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে।সঙ্গে সঙ্গেই আরিফ চেঁচিয়ে বলে উঠে,
—” স্যার কল কাঁটবেন না প্লিজজজ।আজকে আমার বিয়ে আপনি আসবেন বলেছেন এখনো আসেন নাই।আমি কিন্তু সত্য বিয়েটা কবো না।এখন আপনার বাসায় এসে হাজির হবো।বলে দিলাম কিন্তু।”
নিভ্র চরম বিরক্ত। মাথা ভার ভার হয়ে আছে।মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসে নিভ্র।বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে আসে তার।রাগও হচ্ছে খুব।বিরক্ত নিয়েই সে বললো,
—” দেখো আরিফ এখন তুমি আর আমার পিএ না।সো স্যার স্যার করে ঘেনঘেন করবে না।এত সকাল সকাল ফালতু কথা বলার জন্য ফোন দিলা কেন??তোমার বিয়ে করলে করো না করলে নাই আমার কি??আমি যাবো না ব্যস।”
নিভ্র কল কেটেঁ দেয়।আরিফের খুব কান্না পাচ্ছে।বলে তো দিয়েছে বিয়ে করবে না।কিন্তু এবারও যদি বিয়ে ভাঙে নীলা তার গলা টিপে মেরে ফেলবে নিশ্চিত। এ নিয়ে তিনবার বিয়ে করবে বলে সব ঠিক করেও নিভ্র আসে নাই বলে বিয়ে করে নাই।এবার নিভ্র আসবে বলেছে কিন্তু এখন এমন পাল্টি মারলে তো আরিফ শেষ।ভয়ে আরিফের শেরওয়ানীর গলার পাশ ঘামে ভিঁজে যাচ্ছে। সে পরেছে দোটানায়।নীলাকেও চাই সাথে নিভ্রকেও।আরিফ পাশে থাকা টেবিল থেকে গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে ডগডগ করে খেয়ে নেয়।নীলা তো কিছু মনে করবে না।কিন্তু তার বাবা মা নিশ্চিত তাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবে।তখন তার কি হবে??কথাটা ভেবেই আরিফের গলা শুকিয়ে গেছে।তবুও সাহস নিয়ে আর একবার নিভ্রকে কল করে।নিভ্র রিসেভ করে না।কয়েক বার দিতেই আবার ঝাঁঝালো গলায় নিভ্র বললো,
—” আরিফ আমার এগুলো ভালো লাগে না।এত মানুষ, গিজগিজ করা,তার উপর মেয়ে,গায়ে হামলে পড়ে।এসব আমার জাস্ট বিরক্ত লাগে।রং বিহিন দুনিয়া আমার।তাই বিয়ের মত রংমহল জায়গা আমার ভালো লাগে না।বুঝতে কেনো পারছো না??”
আরিফ বিনিত সুরে বললো,
—” স্যার সব বুঝলাম।তবুও আপনাকে ছাড়া নীলা বিয়ে করতে চায় না।তাই আর…”
নিভ্র আর বলতে না দিয়ে নিজেই বললো,
—” এই তোমাদের সমস্যা কি বলো তো??নীলা বলে আরিফ আমাকে ছাড়া বিয়ে করতে চায় না।আর তুমি বলো নীলা চায় না।আসল কারন বলো তো??”
আরিফ দীর্ঘ করে একটা শ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করে বললো,
—” আপনাকে ছাড়া আমরা দুজনেই বিয়ে করবো না।আপনি কি চান না আমরা বিয়ে করি?? প্লিজজ স্যার তিন তিনবার বিয়ে ভাঙছে আমার আর ভাঙিয়েন না।আসেন না প্লিজজজজ।আপনি না আসলে এবারো বিয়ে করবো না। শেষ কথা আমার।”
নিভ্র কিছু বলার আগেই আরিফ কল কেটেঁ দিলো।নিভ্রর মেজাজ চড়কগাছ। রাগে ফোন ছুঁড়ে দিয়ে আবার ভাবে তার জন্য আশেপাশের সবাই কত কষ্টে আছে।কিন্তু সে কি করবে তার এসব ভালো লাগে না।নিভ্র উঠে দাঁড়ায়।আরিফের বিয়ে এবার ভাঙ্গুক সে চায় না।নিভ্র সামনের রুম থেকে পর্দা ঠেলে ভিতরে যায়।আলমারি থেকে নিজের জামা কাপড় বের করে। হঠাৎ চোখ যায় সাফার সাদা একটা উড়নার দিকে।সাফার এখানে যত জামা কাপড় ছিলো সব নিভ্র নিজের আলমারিতে সুন্দর করে গুঁছিয়ে রেখেছে।নিজের আলমারির বেশিরভাগ জায়গা সাফার জন্য খালি করে ফেলেছে।সব সাফার শাড়ি দিয়ে ভড়াবে।নিভ্র উড়নাটা হাতে নেয়।ডুলো ডুলো পায়ে বিছানার সাথে ঠেসে বসে নিভ্র।উড়নাটা নিজের মুখের উপড় মেলে দেয়।চোখবুজে।চোখবুজেতেই সাফা তাকে হকিস্টিক দিয়ে বারি মেরে উড়না উড়িয়ে ছিলো সে দৃশ্য তার চোখের সামনে ফুটে উঠে।নিভ্র হাঁসে। নিজেকে উজাড় করে শ্বাস নেয়।সাফার গায়ের গন্ধ মেখে আছে উড়নায়।নিভ্র উড়না গুটিয়ে নেয়।আলমারিতে সুন্দর করে ভাঁজ করে রাখে।একটা চুমুও দেয় উড়নার উপড়ে।তারপর ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ায়।সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়ে বেড়িয়ে আসে।ইন করে না।এলোমেলো হয়েই সাফার ছবির সামনে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাকে। তারপর বলে,
—” আরিফ বিয়ে করছে।আমাদেরও এতদিনে বিয়ে হয়ে যেতো তাই না??”
—” হাসছ কেনো??সত্যিই হয়ে যেতো।ফিরে এসো।তোমার সব দোষ ক্ষমা করে দিবো।এত কষ্ট দিয়েছ তাও মাপ করে দিবো।বিশ্বাস করো সব ভুল ক্ষমা করে দিবো।ফিরে এসো।তুমি যানো না?? তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসে!!তবুও কেনো এত দূরে তুমি??আমার নিঃশ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হয় সাফারানী।বড্ড বেশি এই কষ্ট।তুমি হীনা হৃদয় নামক যন্ত্রে ভাঙ্গচুর হয় প্রকট ভাবে।তুমি ছাড়া আমার সব অন্ধকার সাফারানী।ফিরে কি আসবে না??আবার আলোয় ভরিয়ে দিবে না??আমার আকাশ অন্ধকার তুমি নামক জোনাকির আলো ছাড়া।ফিরে এসো।”
নিভ্র সাফার ছবিতেই তার কপালে চুমু খায়।ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে অনেক্ষন। বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।তারপর চাবি নিয়ে বেড়িয়ে যায়।
__________________
—” আহ কি কপাল আমার কত ভালো ভার্সিটি রেখে এখন ন্যাশনালে পড়তে হচ্ছে।”
ঝুমার এমন কথা শুনে সাফা বিরক্তি প্রকাশ করে।মাথা পাশ ফিরিয়ে বলে,
—” তোকে কে আসতে বলেছে??আমি তো বলিনি।নিজেই কেনো পিছন পিছন আসতে গেলি।”
ঝুমা মন খারাপ করে বললো,
—” স্যরি দোস্ত। এমনেই মজা করছি।তোর কি আজকেও মুড অপ?”
সাফা টেবিল থেকে বইগুলো নিতে নিতে বললো,
—” আমার কখনোই মন খারাপ থাকে না।পরীক্ষা শেষ এবার চল।আরো কি থাকার ইচ্ছা আছে নাকি??আমার টিউশন আছে। চল।”
ঝুমা সাফার পিছনে পিছনে হাঁটে। তারা এখানে একটা সরকারী কলেজে পড়ে।প্রথমেই সাফারা এখানে এসেছিলো।পরে জায়গা পরিবর্তন করলেও কলেজ পরিবর্তন করে নাই।ঝুমার বাবা মা নেই তাই তার খবর রাখাও কেউ নেই।মামার বাসায় থাকতো এখন তো সাফার কাছেই থাকে।সাফা কলেজে তেমন আসে না।কারো সাথেই কথা বলে না।ঝুমা আর সাফা মাথা নিচু করে যায় আবার চলে আসে।সাফাকে কলেজে কেউ তেমন চিনেও না।আর সাফা সব সময় আড়ালে থাকতে চায়।ঝুমা বুঝে কিন্তু তার এসব ভালো লাগে না।কিন্তু মনে মনে ধীরভাবে চায় নিভ্র সাফার সামনে দাঁড়াক।রিকশায় উঠতেই পাশে ফুচকার দোকান দেখে ঝুমা বলে,
—” চল আজ ফুচকা খাই।”
প্রতিবারের মতই সাফার জবাব হয়,
—” না।তুই চাইলে খেতে পারছ।
ঝুমা মুখ ফুলিয়ে বলে,
—” চাচা চলেন।দরকার নাই খাওয়া।
সাফার কষ্ট লাগে ঝুমার জন্য তাই রিকশা থামাতে বলে ফুচকার দোকানে যায়।ঝুমা নাচতে নাচতেই দুই প্লেট ফুচকা দিতে বলে।সাফা খাবে না বলেছে তবুও ঝুমার ফারাফারিতে খেতে বসে।কিন্তু ফুচকা দেখেই পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে।একটা ফুচকা মুখে দিতেই সাফা কেঁদে দেয়।চোখের পানিতে আর ঝাঁলে সাফা লাল হয়ে যায়।আর খেতে পারে না।শেষবার নিভ্রর সাথেই সাফা ফুচকা খেয়েছে।লোকটাকে কি মারনা মেরেছে নিভ্র।কথাটা মনে পড়তেই সাফা হেঁসে দেয়।ঝুমা ভ্রুকুঁচকে প্রশ্ন করে,
—” একবার কান্দস আবার হাসোস।দোস্ত তুই কি দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছিস?”
সাফা নিশ্চুপ হয়েই হাঁসে।
দরজাটা খোলাই।সাফার ব্যাপারটা অবাক লাগছে।মাথার ঘাম মুছতে মুছতে সাফা ভিতরে ডুকে।তার পিছন পিছন ঝুমা।সামনের রুমেই চেয়ারে বসা এক সুদর্শন যুবকে দেখেই সাফার মাথা গরম।আগের জায়গাটা ছেড়েছে এই রকম ছেলেদের বিয়ে বিয়ে করে মাথা খাওয়ার অভিযোগে।এবার আবার??সাফা রেগে এদিক সেদিক না দেখেই চেঁচিয়ে বলে,
—” বিয়ে করবো না আমি।”
ছেলেটা চমকে তাকায়।যেনো সে এমন কোনো প্রস্তাব আনেনি।উল্টা সাফার কথায় সে চরম অবাক।সাফার বাবা এগিয়ে এসে মেয়েকে চুপ করতে ইশারা করে।কিন্তু সাফা চরম রেগে আছে।তার মোটেও বিয়ে নিয়ে কিছু শুনতে ভালো লাগে না।তার উপড় ছেলেটা তার বাসায় চলে এসে বসে পরেছে।চিনানেই যানা নেই এভাবে বাসায় আসার মানে কি??সাফা বাবার দিকে চোখ রাঙিয়ে বললো,
—” বাবা তুমি চুপ করো।এসব বখাটে ছেলেদের আমি ভালো করেই চিনি।মহল্লায় নতুন দেখেছে তাই নাচতে নাচতে বিয়ের নাম করে ঘরে চলে এসেছে।বেরিয়ে যান এখনি!!আর যাতে ত্রিসীমানায় না দেখি।অসভ্য লোক কথাকার।”
সাফার বাবা চোখ কিটমিটিয়ে বললেন,
—” সাফা কি সব বলছ??তুমি যা ভাবছো তা না।উনি তেমন ছেলেই না।”
সাফা সারিকের কথায় পাত্তা দিলনা।আরো রেগে বললো,
—” তুমি চুপ থাকো বাবা।বয়স্ক মানুষ দেখলেই আরো আশকারা পায় এরা।আপনাকে দরজা দেখিয়ে দিচ্ছি দেখছেন না?অসভ্য লোক কোথাকার?”
ছেলেটা হেঁসে দেয়।মেয়েটাকে যতটা শান্ত ভেবেছে ততটা না।সাফার রাগ রি রি করে বেরে গেছে।কি অসভ্য লোক??এত অপমানের পরেও হাঁসে লজ্জা নাই নাকি??সাফা নাক মুখ ফুলিয়ে আবার কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছেলেটা বললো,
—” আপনি বুঝি খুব সভ্য??”
সাফা চুপসে যায়।এমন একটা কথা আশা করে নি সে।থতমত খেয়ে একটু দমে যায় সে।ছেলেটা ঠোঁটে হাসি রেখেই বললো,
—” আপনাদের বাসায় মেহমান এলে এভাবে আপ্যায়ন করেন বুঝি??”
সাফা একটা থাক্কা খায়।ছেলেটা আসলে কি বলতে চায় সেটাই সাফা বুঝতে পারছে না।সাফা নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি রেগে আছে।কাহিনী কি??ছেলেটা নিজেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলো।বললো,
—” বিয়ে তো করতে আসিনি।কিন্তু আপনার ভাব মূর্তি দেখে মনে হচ্ছে আমার জীবনেও এই কাজ করা উঁচিত না।”
সাফা আবার তার বাবার দিকে তাকায়।তিনি এগিয়ে এসে বললো,
—” আরে উনি আমার ক্লাইন্ড। এভাবে উল্টাপাল্টা কথা না বললেও হত তোমার।”
সাফা অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকায়।ছেলেটা আগের নেয় হাঁসে। সাফা কাচুমাচু হয়ে ছোট করে বললো,
—” স্যরি।
—” এতক্ষণ তোমাকে এটাই বলতে চেয়েছি। কথা না শুনেই আজেবাজে কিছু কথা শুনিয়ে দিলে।কিছু মনে করিয়েন না মিস্টার সিফাত।”
মিস্টার সিফাত মৃদু হেঁসে বললো,
—” না কিছু মনে করিনি।
সাফা ভিতরে চলে যায়।মাথা কাজ করে না তার। সব সময় উল্টাপাল্টা কাজ করে সে।কিন্তু এই সিফাতের মাঝে তার বিস্তর গাফলা মনে হচ্ছে। তা না হলে এত অপমানের পরেও রাগলো না!!অতি ভদ্র যারা দেখায় তারা কখনোই অতি ভদ্র হয় না।কি যেনো মিলাচ্ছে সাফার সাথে এমন চাহনি দিয়ে তাকিয়ে ছিলো ছেলেটা।হাসি তো সেটা আড়ল করার জন্য ছিলো।সাফা চিন্তায় পরে যায়।রহস্যময় মনে হচ্ছে তার লোকটাকে।
____________________
নিভ্র গেটে ডুকতেই তার সামনে হুমড়ি খেয়ে অনেকে পড়েছে।সবাই অবাক চোখে তাকে দেখছে।আজ অনেক দিন পরে নিভ্রর দেখা মিলেছে।অনেকেই এগিয়ে এসেছে।কিন্তু নিভ্রর রাগি মুখ দেখে কেউ এগিয়ে আসতে পারলো না।নিভ্র নিজের মত হেঁটে ভিতরে ডুকতেই আরিফ লাফিয়ে উঠে। সে ভাবতে পারছে না নিভ্র আসবে।খুশির ঠেলায় আরিফ এস্টেজ থেকে নেমেই নিভ্রকে জড়িয়ে ধরে।নিভ্র ধরলো না।বিরক্তির রেখা ফুটিয়ে সে কপলা কুঁচকে ফেলে।আরিফ ছেড়ে নিভ্রর মুখামুখি তাকায়।তাকে দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো সময় নিভ্রর উপড় হামলে পড়ে চুমু খাবে।তার আগেই নিভ্র সরে এসে বললো,
—” একদম চুমু টুমু খাবে না বলে দিলাম।তোমার না বিয়ে।যাও তাড়াতাড়ি বিয়ে করে আমাকে উদ্ধার করো।”
আরিফ শুনলো না।খুশিতে নিভ্রর মুখ টেনে গালে একটা চুমু বসিয়ে দিলো।নিভ্র চেঁচিয়ে গাল মুছতে মুছতে বলে উঠল,
—” ছিইইইই। ”
আরিফের ভাবান্তর হল না।সে হেঁসে দিলো।খুশিতে তার কি যে ভালো লাগছে বলে বুঝাতে পারবে না।তাই করে দেখালো।নিভ্রর ফ্যামিলির সবাই এসেছে।আরিফের কান্ডে সবাই অবাক হয়ে হেঁসে দিলো।নিভ্র পারছে না আরিফকে একটা লাথি দিয়ে উড়িয়ে দিতে। কিন্তু আজ বিয়ে বলে কথা।তাই সব মাপ।নিভ্র আরিফকে ঠেলে বললো,
—” দূরে যাও।ছিইইইই। আমার পিচ্চি বউ ভাগ্যিস এখানে নেই থাকলে নিশ্চিত সেন্সলেস হয়ে পরতো।ডিজগাস্টিং। ”
আরিফ হেঁসে হেঁসে বললো,
—” সাফা যখন আসবে আমি না হয় আবার চুমু খেয়ে ওকে দেখিয়ে সেন্সলেস করবো।কিন্তু আজকের খুশি একটু বেশিই।তাই নো স্যরি স্যার।”
নিভ্র সোফায় বসে পরে।সবাই কত খুশি তার পরিবার আরিফের পরিবার সবাই।তার বন্ধুরাও।তাকে পেলে সবাই এত খুশি হবে এটা নিভ্র বুঝতে পারেনি।তবুও তার ভালো লাগছে না।এত জাঁকজমক তার ভালো লাগে না।এত আলোও তার চোখে বড্ড জ্বালা করে।নিভ্র পকেট থেকে একটা ফোন বের করে।সাফার ছবি জুম করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে।তার আর কোনো কাজ নেই।এই একটা কাজেই তার ভালো লাগে।সাফার মুখের রগ গুলোও সে খুজে নিয়েছে।কতটা দেখা যায় তাও যানে।এত নিখুঁত ভাবে দেখে জানারই কথা।
রুহি আরিফের মামাত বোন।নিভ্রকে প্রথম থেকেই সে নিখুঁত ভাবে দেখছে।এলোমেলো সিল্কি ভিঁজা চুল,ইন ছাড়া শার্ট,সবুজ চোখ।রুহি বিস্মিত হয়ে আরিফের বোনকে বলছে,
—” সামনের ছেলেটাকে আমি কোথাও দেখেছি??”
আরিফের বোন হেঁসে বললো,
—” আপু উনি নিভ্রনীল। শুধু তুমি না অনেকেই দেখেছে উনাকে ম্যাগাজিন,ছবি, ফাংশনে, ক্যাটওয়ার্কে করতে, আরো কত জায়গায়।আরে মডেল উনি।”
রুহি মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
—” আরে না।কোনো একটা মেয়ের কাছে ছবি দেখেছি।ডায়রির ভাঁজে। ”
—” আপু হাজারো মেয়ের ডায়রির ভাঁজে উনি মানে উনার ছবি থাকে।এমন কি আমারও আছে।তুমিও বিদেশে ছিলে তাই তোমার ডায়রিতে নাই।তবে কাল থেকে তুমিও রাখবে আমি নিশ্চিত। কত কিউট হেন্ডস্যাম বয় না??”
রুহি বিরক্তিতে বললো,
—” আরে ভাই সবইত বুঝলাম কিন্তু আমি একে সমুদ্রের কিনারে এক মেয়ের ডায়রির ভাঁজে দেখেছি।খুব যত্নে রাখা।কিছু স্পেশাল কথাও লিখা ছিলো কবিতা টাইপের কিছু হবে হয় ত।”
আরিফের বোন নাক মুখ কুঁচকে বললো,
—” এটাতে এত অস্বাভাবিক বিহেভ করছ কেনো আপু।সবই ত স্বাভাবিক কথা।এত হাইপার হচ্ছ কেনো বুঝলাম না।”
রুহির মন মানছে না।সে আরো আগ্রহের সাথে নিভ্রর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কাছ থেকে দেখার জন্য।সেদিন সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা মেয়ের সাথে রুহির ধাক্কা লাগে।তার হাতে টিয়া রং এর একটা ডায়রি ছিলো।সেখানেই নিভ্রর ছবি দেখেছে সে।রুহি বিদেশে থাকে।পড়ালেখা করছে সেখানে ছোট থেকে।আরিফের বিয়ের নামেই সে দেশে এসেছে।সমুদ্রেও কিছুদিন আগেই ঘুরতে গিয়েছে।নিভ্রর ছবিটা তার কাছে একটা অতিমাত্রায় আগ্রহের বস্তু।তাই সে বেশিই আগ্রহ দেখাচ্ছে।কিছু তো একটা ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার আছে ছবির মাঝে।কি সেটা??
.
.
#চলবে________________