একঝাঁক জোনাকির আলো

একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 43

৪৩.
________________
নিভ্রর জ্ঞান ফিরে চার ঘন্টা পরে।চোখ টিপ টিপ করে খুলেই চারদিকে চোখবুলায় সে।ডান পাশের ইজেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র।অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে সামনের ছবির দিকে।নিভ্র উঠে বসে।বুকে এখনো ব্যথা তার।অভ্রকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিভ্র বলল,
—” এত দেখিস না আমার জিনিস নজর লাগতে পারে।”
অভ্র ভড়কে যায়।সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিভ্রর দিকে তাকায়।নিভ্র হাঁসে। শুকোনো ঠোঁটের হাসি ঝুলে আছে তার ঠোঁটে।সব হাঁসিতে মনে হয় হাজারো কষ্ট লুকিয়ে।অভ্রর প্রচন্ড খারাপ লাগে এই কষ্ট দেখে।এতটা কষ্ট তার আগে কখনোই হত না।অভ্র জোড়পূর্বক ঠোঁটে হাসি এনে বললো,
—” তোর জিনিসে আমার নজর লাগবে না।দেখার সময়ই চোখজোড়াকে বলেদি এটা নিভ্রর নজর দিবি না।তারাও দেয় না।”
নিভ্র অপলক তাকিয়ে হাঁসে। তারপর বলে,
—” ছবিটায় ওকে একদম জীবন্ত লাগে তাই না?”
অভ্র আর তাকায় না।না তাকিয়েই বলে,
—“হুম।নীল শাড়ি কানের পাশে জবা।কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম।তুই সব দিকেই এগিয়ে।এত কিছু কিভাবে পারছ বলবি??”
—“ওকে দেখানো হয় নি ছবিটা।যখন দেখবে কি বলবে যানছ??বলবে আপনি এত কিছু কিভাবে পারেন একবার ভিলেন,একবার মডেল-ফডেল, একবার ডাক্তার, এখন আবার আর্টিস্ট।আমার মাথা ঘুড়ছে।হতে পারে সেন্সলেস হয়ে যাবে।এটা ও ভালোই পারে।
কথাটা বলেই নিভ্র প্রান কাড়া হাসি দেয়।সাফার কথা হলেই এভাবে হাসে সে।হাতে সেলাইনের নল দেখে সে বিরক্তি নিয়ে তা খুলে ফেলে।বাড়ির সবাই তাকে রোগী বানিয়ে ফেলেছে।জাস্ট বিরক্ত কর।অভ্র নিভ্রর পাশে এসে বসে।সেলাইন পাশের টেবিলে রেখে শান্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।নিভ্র প্রতিবারের মত হেঁসে বললো,
—” এভাবে দেখছ কা??পরে প্রেমে পড়ে যাবি।তুই তো আবার বিয়ে করবি না ঠিক করেছিস।মনে হয় তোরও হিরনের মত সমস্যা।এগুলো হলে দূরে যা।সাফা এগুলো শুনলে আর আমাকেও দোষি করবে।”
অভ্র চোখ গরম করে তাকায়।পিঠে চাপড় মেরে বললো,
—“ফাইজলামি ছাড়।এমন করলি কেনো বল??তুই এসব না করলে হয় না??”
নিভ্রর হাসি মুখ মুহুর্তেই রাগী হয়ে উঠে।চোখগুলো লাল লাল হয়ে উঠে।পাশের গ্লাস ছুঁড়ে ফেলে দেয়।সাথে সাথেই ঠাসস করে শব্দ হয়।অভ্র বুঝতে পেরেছে নিভ্রর রাগ হচ্ছে। তাই হাত ধরে রেখেছে।নিভ্র চিৎকার করে বললো,
—” ওই মেয়েকে আমার রুমে কেনো পাঠানো হলো??আম্মুরে জিজ্ঞেস কর??”
অভ্র শান্ত কন্ঠে বললো,
—” আচ্ছা সেই চাপ্টার ক্লোজ কর।আর পাঠাবে না।কিন্তু তুই এভাবে থাকলে কারোরই ভালো লাগে না।কাকিমার কি দোষ।ভেবেছে হয় তো তোর কোনো মেয়েকে পছন্দ হয়ে যাবে আর জীবনে এগিয়ে যাবি।তাই তিনি এসব করেছে।এতে তার দোষ কোথায়??”
নিভ্র হঠাৎ করেই শব্দ করে হেঁসে উঠে।তারপর বললো,
—” কোনো মেয়ে আমার জীবনে জায়গা পাবে এটা ভাবলো কি করে?? আমি বুঝিনা।এই নিভ্রর সব জুড়ে শুধু সাফা। কারো জন্য কিছু অবশিষ্ট নেই আমার কাছে।কারো জন্যই নেই।সরি।এসব কথা আর হলে আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না।কেউ না।”
অভ্র দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো।তারপর ঔষুধের পাতা থেকে ঔষুধ ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললো,
—” ঠিক আছে ।কিন্তু তুই কি সত্যি হার্টসার্জেন??
—” তোর সন্দেহ আছে নাকি??”
—” এত দিন ছিলো না এখন আছে।”
—” কেনো??”ভ্রুকুঁচকে প্রশ্ন করে নিভ্র।
—” তোর হার্ট দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। তুই এটা যানোছ?? ”
নিভ্র জবাব দিলো না।উঠে দাঁড়িয়ে পরলো।এদিক সেদিক খুজে মদের বোতলটা পাশের শেল্ফ থেকে নিলো।টেবিলের উপড় থেকে সিগারেট নিলো।আজ বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে তার। অনেক অনেক বেশি।নিভ্র হেটে বারান্দায় চলে গেলো।ব্যালকুনির আনাচেকানাচে সব সাদা গোলাপ আর সাদা গোলাপ।চারপাশে গাছ মাঝে গোল টেবিল তার পাশেই সোফা।নিভ্র টেবিলের উপড় এগুলো রেখে দিলো। সোফায় পা তুলে বসে পরে।ফুলগুলো একটু পর পর ছুঁয়ে দিচ্ছে। মদের বোতলটা খুলে চুমুক দেওয়া শুরু করে সে।সিগারেট ধরায়।মুখের ভিতরে নিয়েই একটান দেয় আর উপরে তাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে।অভ্র শুধু তাকিয়ে দেখে।নিভ্র ডান হাতে সিগারেট নিয়ে বাম হাতে ফুল ছুঁয়ে দেয়।অভ্র পাশে বসে।দুজনেই নিশ্চুপ। অভ্র নিভ্রকে পর্যবেক্ষণ করছে।সবুজ চোখগুলো কেমন ঘোলাটে হয়েগেছে। ঘুমের ঔষুধেও ঘুম হয় না।ইনজেকশন দিতে হয় প্রায়।মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে নিচেই শুয়ে পরে।চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়েগেছে। চুলগুলো আবার কেটেঁ দিতে হবে।নিভ্র আচমকা হেঁসে ধোয়াঁ উড়াতে উড়াতে বলে,
—” ভাই তুই আছস বলে আমি আজ এক বছর দশ মাস বিশ দিন পরেও হসপিটালে গিয়ে ওয়াওও নিভ্রনীল কত হেন্ডস্যাম কথাটা শুনেছি।”
অভ্র কিছু বললো না।নিভ্রর নিজের প্রতি বিন্দু মাত্র যত্ন নেই।সেই সব করে নিভ্রর হয়ে।নিভ্রকে সে নিজেই গুঁছিয়ে রাখে।তাই নিভ্র এগুলো বলছে।মদের বোতল এগিয়ে দিয়ে অভ্রকে বললো,
—” খাবি??”
অভ্র নিভ্রর হাত দেখেই আতঁকে উঠে।ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে থাকে নিভ্রর দিকে।নিভ্রর সেদিকে মনোযোগ নেই।সে সিগারেট, ফুল আর মদের দিকে বেশি মনোযোগী। অভ্র ভয়াত্নক গলায় বললো,
—” হাত কাটলি কবে নিভ্র??এগুলো কি??তুই কিন্তু কথা দিয়েছিস এভাবে নিজের ক্ষতি করবি না তাহলে এগুলো কি??কবে কাঁটলি??নিশ্চুই আজ।তাঁজা রক্ত।”
নিভ্র বিরক্তির সাথে বললো,
—” এত হাইপার হসকা।কাটঁতে মন চেয়েছে কেটেঁছি এত চিল্লাস কা। ”
—” নিভ্র এবার কিন্তু তুই সিরিয়স হ।আর ভালো লাগছে না।দেবদাস হয়ে গেছিস জানি।ওর মত মরতে যাবি কেন??ভালোবাসা কি শুধু তুই যানোস আর কেউ যানে না?ফালতু। ”
—” এত চিন্তা করছ কেন??একটুই কেটেছি।দম বন্ধ লাগছিলো তাই এসব করেছি।শান্ত হ।”
অভ্র এবার জাপ্টে ধরে নিভ্রকে।নিভ্র ধরে না।সিগারেট একটার পর একটা শেষ করে সে।অভ্র ছেড়ে দেয়।তারপর বললো,
—” সিরিয়েস হবি না??”
—” আমি সাফাকে এটাই বলতাম।সিরিয়েস হবে না??ও হাসতো না হয় মুখ ফুলিয়ে বসে থাকত।কত কিউট লাগতো।যানছ।ও তোকে যানতে হবে না।আমি জানলেই হবে।
অভ্র জবাবে কিছু বলে না।নিভ্র একটা ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে ফেলে চেঁচিয়ে বলে,
—” ও শেট এটা কি করলাম।ফুলটা ব্যথা পেয়েছে।মানে সাফাও।তোর জন্য এসব হয়েছে।”
—” ফুলগুলোর মত নিজেরেও যে এভাবে ছিঁড়ছ, এটা সাফা দেখলে কষ্ট পাবে না??”
নিভ্র এবার শান্ত হয়ে বসে।তাচ্ছিল্য করে বলে,
—” ও কেনো কষ্ট পাবে??একটুও ভালোবাসে না।ভালোবাসলে ছেড়ে যেতে পারতো না।কখনোই না।ওকে সামনে একবার পাই তারপর দেখাবো নিভ্রনীল কি??”
অভ্র নিভ্রর মুখে ঔষুধ দিতে দিতেই বললো,
—” কি করবি?? থাপড়াবি নাকি ঘুষি দিয়ে নাক ফাটাবি??নাকি চড় মেরে গালের দু’পাশ লাল করবি??”
নিভ্র পানি খেতে খেতে হেঁসে দেয়।হাঁসতে হাঁসতেই বললো,
—” ওর তো গাল এমনেই লাল। চড় থাপ্পড় দেওয়া লাগে না।তবে কি করবো জানি না। ”
—” আজও ওদের বাড়িতে গেছিলি না??”
—” হুম।”
—” দিনে কয়বার যাওয়া হয়??”
—” জানি না।যদি ও আসে।তাই প্রতি ঘন্টায় একবার যাই।”
—” সারাদিন থাকলেই পারছ।রাতের দুইটা, তিনটা, চারটা, এভাবে যাওয়ার কি আছে।এত রাতে ও নিশ্চুই আসবে না।আর এত দিনেও ওই বাড়িতে ওদের দেখা যায় নি।তাহলে কেনো যাছ ভাই!!”
নিভ্র নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে।উঠে দাড়াঁতে চায়।অভ্র বসিয়ে দিয়ে নিজেই রুম থেকে সাফার একটা ছবি নিয়ে এসে সামনে দেয়।নিভ্র ছবিটা কয়েক পলক দেখে তারপর বুকে জড়িয়ে ধরে।অভ্র সোজা হয়ে বসে বলে,
—” তোর হার্টের প্রতি যত্নবান হতে হবে নিভ্র।”
নিভ্র চোখবুজে ছবি বুকে জড়িয়ে মাথা কাত করে সোফার পিঠে রাখে।তারপর বলে,
—” হৃৎপিন্ড তো আমার কাছে নেই??থাকলে অবশ্যই যত্ন নিতাম।”
অভ্র বিচলিত হয়ে বলে,
—” নেই মানে??”
—” ওটা তো সাফাকে দিয়ে দিয়েছি।ওর কাছেই আছে।আমার কাছে যেটা আছে সেটা হল যন্ত্র। আর এই যন্ত্র নিয়ে মহা মুশকিলে আছি বুঝলি।হঠাৎ হঠাৎ প্রচন্ড ব্যথা করে।দম বন্ধ হয়ে আসে।মনে হয় মরে যাই।”
কথাগুলো বলতে বলতেই নিভ্র উঠে বসে।অভ্রর দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,
—” ভাই!আমার না সুইসাইড করতে ইচ্ছে করে!!”
অভ্রর বুক কাঁপে।এটা নিভ্র বহু বার করতে চেয়েছে।কিন্তু এভাবে কখনোই বলে নি। অভ্র আতংকিত গলায় বললো,
—” এগুলো কেমন কথা নিভ্র?দেখ এসব করা মহা পাপ।আমাদের ধর্মে হারাম।এগুলো বললে সব শেষ হয়ে যাবে। আর বাড়ির সবার কি হবে??তোর সাফা যদি সত্যি ফিরে আসে তখন কি হবে??তোর সাফা এই জীবনে অন্যকারো হবে এটা তুই কিভাবে সজ্য করবি??”
অভ্র এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে দম ফেলে।নিভ্র হেঁসে দেয়।তারপর বলে,
—” সেটাই তো।সেই জন্যই বেচেঁ আছি।কিন্তু বিশ্বাস কর আমার না দম বন্ধ দম বন্ধ লাগে।সব অন্ধকার লাগে।নিঃশ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হয় ভাই।আমি কি করবো??আমার সাথেই কেনো এমন হয়??বল??ওকে এত ভালোবাসলাম কি ভাবে??জানি না??মনে হয় আমার রগে যে রক্ত প্রবাহ হয় তাও ওর নামে।এই চোখের পলকও পরে ওর নামে।আমি কি করবো?? আমার সব জুড়ে ও সুধুই ও।বাঁচতে পারছিনা।আচ্ছা ওর কি আমার কথা মনে পরে না??পড়লে কোথায়ও??এত খুঁজলাম তবুও পেলাম না কেনো??”
অভ্র কিছু বলে না।নিভ্র আবার বলে,
—” ওর সেই টোল পড়া গাল কতদিন ছোঁয়া হয় না।কত দিন দেখিনা ওকে??কত দিন ওর চুলগুলো কানে গুঁজে দিনা,কতদিন ওর কন্ঠ শুনি না।আমি এভাবে বাচঁতে পারছি না।সাফার কি আমার কথা মনে পড়েনা??বলনা অভ্র??”
নিভ্র কাদঁছে। অভ্র চোখবুজে আছে। এত কষ্ট সে নিতে পারেনা।নিভ্রর আর্তনাদ দিন দিন মনে হয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।কমছে না।অভ্র নিজেও অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায়নি। যেখানে নিভ্র পাচ্ছে না।অভ্র কিভাবে পাবে??নিভ্রর ফোন বাজে। অভ্র উঠে ফোনটা হাতে দিতেই নিভ্র উত্তেজিত হয়ে কল রিসিভ করে।অপর পান্ত থেকে এমন কিছু হয় তো শুনেছে যা নিভ্রর মোটেও পছন্দের ছিলো না।তাই চেঁচিয়ে উঠে বলল,
—” খুঁজে পাওনি মানে কি??কত বার বলেছি খুঁজে বের করতে হবে মানে হবে।তোমাদের আমি শুধু শুধু টাকা দিচ্ছি। একটা দিনও ঠিক ভাবে কাজ করতে পারছ না।সমস্যাটা কি?? কিসেট স্পেশাল ফোর্স তোরা।আমি লাস্ট বার বলছি আমার ওকে চাই।”
নিভ্র ফোন ছুঁড়ে দিয়েছে। রাগে তার হাত পা কাপঁছে। হঠাৎ করেই চেঁচিয়ে উঠে সে।সোফায় বসে পরে আবার।অভ্র বুঝতে পারে এটা ইনফরমেশন দেওয়ার লোক ছিলো।এবারো নিরাশ করেছে নিভ্রকে।তাই তার রাগ হচ্ছে। নিভ্র কেঁদে দেয়।তার প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে।ইদানীং সে কান্না আটকাতে পারে না।ছেলেরা নাকি কাদেঁ না কিন্তু তাকে দেখলে কেউই এই কথাটা বলবে না।আগে নিভ্র কাদঁত না।ছোট বেলায় একবার কেঁদেছে বোনের মৃত্যুর কথা শুনে।আর কখনো কাদেঁও নি।কিন্তু এখন তার বুক ফেঁটে কান্না পায়।এভাবে কেনো তার জীবনটা সব সময় এলোমেলো হয়ে যায়?? কেনো ভালোবাসায় এত কষ্ট??নিভ্র চিৎকার করে কেঁদে উঠে।অভ্র ঝাপিয়ে ধরে তাকে।নিভ্র কাঁদতে কাদঁতে বললো,
—” আমি কি করবো বলে দে প্লিজজ??আমার বুক ছিড়ে যাচ্ছে। কলিজার খাঁজে খাঁজে যন্ত্রনা।আমি আর পারছিনা।আমি এত কষ্ট নিতে পারছি না।মনে হচ্ছে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।দম আঁটকে আসছে।আমি ঘুমাতে পারিনা।চোখ বন্ধ করতে পারিনা।দম নিতেও পারিনা।এতটা কষ্টে আমি কখনো আগে পড়িনি।আমার ভালোবাসা কি মূল্য হিন??এতটা কেনো ভালোবাসতে গেলাম??কেনো?? কেনো সাফা এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে আমাতে জড়িয়ে এখন হারিয়ে গেলো??আমার সব অন্ধকার লাগে অভ্র।সব।একটা সেকেন্ড ওকে ছাড়া আমার ভাবনার জগৎ কাজ করে না।”
—” শান্ত হ নিভ্র।প্লিজজজ।শান্ত হ।”
নিভ্রর ছন্নছাড়া জীবনটা কিভাবে ঠিক হবে তাই ভাবছে অভ্র।মনে প্রানে দোয়া করছে আল্লাহ কাছে যাতে সাফাকে ফিড়ে পায় নিভ্র।নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যজনের জন্য চাওয়া বড্ড কষ্টের।তবুও সে চায়। এমন পাগলা প্রেমিকের জন্য এটা না চেয়ে পারেনা সে।কতটা ভালোবাসে নিভ্র তা তার চেয়ে ভালো আর কে জানে।নিভ্রর প্রতিটা কান্নার সাক্ষী যে সে।এটাও বড্ড কষ্টের।অভ্র গোপনে কিছু দীর্ঘশ্বাস নেয়।জীবনটা সবার কেমন এলোমেলো হয়েগেছে।
________________________
—” তুমি দূরে যাবে শুনলেই খুব কষ্ট হয় আমার।মনে হয় দম বন্ধ হয়েগেছে। আমি মনে হয় না তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো।”
কথাটা মনে পড়তেই সাফার চোখবেয়ে কয়েক ফোটা পানি নিজের অজান্তেই বেয়ে পরে।কত ভালোবাসার রাত ছিলো। ইশশ কত আবেগ নিয়ে উনি কথাগুলো বলতো।কত ভালোবাসায় মাখামাখি ছিলো কন্ঠ।পুরানো দিন আসলেই মধুর হয়।নিভ্র কেমন আছে??তার কথা কি মনে আছে??তাকে বিলিয়ে দেওয়া সেই বুক কি আদো তার নামেই আছে??নাকি সত্যি অন্যকারো হয়েগেছে?? সাফা ডুকরে কেঁদে উঠে।সামনে থাকা ছবিটা ভিঁজে যায় তার চোখের পানিতে।সাফা দ্রুত পানি গুলো ছবি থেকে মুছে নেয়।তারপর আবার তাকিয়ে থাকে সেই ছবির দিকে।দীর্ঘশ্বাস গুলো আসতে চেয়েও আসে না।দম বন্ধ করা সব অনুভুতি। সাফা এখন আর প্রেমের উপন্যাস পড়ে না।প্রেম কাহিনি শুনে না।প্রেমের গল্পে মনোযোগ দেয় না।এসব শুনলে তার ক্ষত আরো গভীর হয়।ভালোবাসা আসলেই বড্ড ভয়ংকর। কত কষ্ট এর প্রহারে।নিভ্রর বলা প্রতিটি কথা আজও তার মনে গেঁথে আছে।মনে পড়লেই সাফার গম্ভীর মুখে হাঁসে ফুটে।নিয়তি, ভাগ্য বড়ই বিচিত্র।সাফা জানালার পাশ ঘেঁষে বসে আছে।রাত গভীর।ঝুমা হন্তদন্ত হয়ে রুমে ডুকে।দরজার দিকে তাকিয়েই সাফা ছবি লুকাতে চায়।ঝুমাকে দেখে তা আর লুকায় না।ঝুমা সাফার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
—” অনেক দিন উনাকে নিয়ে কোনো ছবি দেয় না ম্যাগাজিন। তাই না??”
সাফা নিজের চুল সরাতে সরাতে বলে,
—” হুম।”
—” তুই প্রতিদিন খবরের কাগজে উনার ছবি খুঁজছ না??”
সাফা উত্তর দেয় না।ছবিটা যত্নে আলমারিতে রেখে দেয়।চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে ঝুমাকে বলে,
—” কাল ভার্সিটিতে পরীক্ষা আছে।তাই তাড়াতাড়ি ঘুমা।”
ঝুমা কথা বাড়ায় না।সাফা বালিশে মাথা রাখে।চোখে তার প্রতিদিনের মত পানি।নিয়তি কি আবার একবার দেখা করাবে তাদের??তাকে লুকানোর সুযোগই দিবে না।এমন ভাবে নিভ্র তার সামনে এসে হাজির হবে।যদি হতো।সরাসরি একবার তাকে ছুঁয়ে দিতো।ইশশ্ কত ভালো হতো।সাফা মুহূর্তেই নিজের ইচ্ছে ফিরিয়ে নেয়।নিভ্রর সামনে দাঁড়ানোর সাহস তার নেই।সে পারবে না।কিছুতেই না।দুজনের পথ আলাদা।তাই আলাদা হওয়াই ভালো।উনি না হয় ভালো থাকুক।
.
.
#চলবে________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *