জীবনের গল্প

চন্দ্রাবতী আসছে ! Part- 07

কিছুক্ষণ পর ফেরত আসলেন আর বললেন

-মিসেস অধরা চন্দ্রাবতী এখন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।কিন্তু সুখী এখন চন্দ্রাবতীকে কোন নির্দেশনা দেয় নি তাই চন্দ্রাবতী এখন প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করে নি।তাই চন্দ্রাবতী প্রতিশোধ প্রবণ হওয়ার আগেই চন্দ্রাবতীকে শেষ করতে হবে।

চন্দ্রাবতীকে শেষ করার কথা বলাতে নিজের বুকে যেন একটা চরম আঘাত পেলাম মনে হচ্ছে।কেন জানি চন্দ্রাবতীর প্রতি একটা অদ্ভূত মায়া কাজ করে সবসময়।মনে হয় চন্দ্রাবতী আমার মেয়ে।কিন্তু মায়া কাজ করলেও বাস্তবতার সাথে তা হেরে গিয়েছে।তাই প্রফেসর বিশ্বাসকে বললাম

-কিন্তু চন্দ্রাবতী বারবার অরণ্যকে আঘাত করতে চেয়েছে কেন?এর কি কোন উত্তর আপনি জানেন?

প্রফেসর বিশ্বাস জাবাব দিলেন

-চন্দ্রাবতী এখনো আপনাকে মা মনে করছে।ভাবছে আপনি সুখী আর অরন্যকে সে তার পিতা ভাবছে।তাই সে বারবার অরন্যকে আঘাত করছে।আর এজন্য আপনি স্পর্শ করায় চন্দ্রাবতী শান্ত হয়ে যাচ্ছে কারন সে আপনাকে মা ভাবছে।আমাদের যা করতে হবে চন্দ্রাবতীর জ্ঞান ফিরার আগে। আর আমরা যদি চন্দ্রাবতীর জ্ঞান ফিরার আগে কিছু করতে না পারি তাহলে হয়ত চন্দ্রাবতীর হাতে অরন্যের মৃত্যু ঘটবে।তাই যা করার চন্দ্রাবতীর জ্ঞান ফিরার আগে করতে হবে।আজকের দিনের প্রথম প্রহর কেটে গেলে শেষ প্রহরে চন্দ্রাবতী অনেক শক্তিশালী হয়ে যাবে।

আমি ভয় পেয়ে প্রফেসর বিশ্বাসকে বললাম

-এটা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় তো বলেন একটা। কি করতে হবে বলেন।আমি অরন্যকে হারাতে চাই না।

প্রফেসর বিশ্বাস একটু নিশ্চুপ হয়ে বললেন

-এরজন্য আমাদের সবাইকে একটা কাজ করতে হবে।কিন্তু কাজ টা একটু রিস্কি হয়ে যায়।

আমরা সবাই একতা হয়ে জবাব দিলাম

-আপনি বলুন কি কাজ করতে হবে আমরা সবাই করতে রাজি আছি।

উনি উত্তর দিলেন

-আমি এখন সারা ঘরটা পূর্বের ন্যায় মোমবাতি দিয়ে সাজাব আর একটা চেক বোর্ড দিয়ে সুখীর আত্নাকে ডাকব।এবং সুখীর কাছে এর উপায় জানব।আর কি হলে সুখী চিরদিনের মত চলে যাবে সেটা জানব।কিন্তু….

আমরা সবাই চেঁচিয়ে বললাম

-কিন্তু কি প্রফেসর বিশ্বাস?

-কিন্তু চেক বোর্ডে যখন সুখীর আত্নাকে ডাকব তখন কেউ যদি ভুল ক্রমে চেকবোর্ড থেকে হাত সরিয়ে ফেলে তাহলে সুখীর আত্না তার উপর ভর করবে।তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে একটু মুশকিল হয়ে যাবে।

এবার প্রফেসর বিশ্বাসের কথা শোনে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম।তবুও নিজেদের মনে সাহস জুগিয়ে সবাই বললাম

-আপনি সব রেডি করুন।আমরা প্রস্তুত।

আমাদের কথা শুনে প্রফেসর বিশ্বাস সবকিছু রেডি করল।সারা ঘর মোমবাতি দিয়ে আলোকিত করল।একটা চেকবোর্ড নিল।আমাদের সবাইকে বলল

-আপনারা সবাই এ চেকবোর্ডে হাত রাখুন।আর চোখ বন্ধ করে রাখবেন।ভুলেও চেকবোর্ড থেকে কেউ হাত সরাবেন না।

আমরা সবাই ভয়ে ভয়ে চেক বোর্ডে হাত দিলাম।১ মিনিট পরেই সবাই অণুভব করলাম সারা ঘর কাঁপছে।এত বিকট আওয়াজ হচ্ছে যা আমরা কেউ এর আগে শুনি নি।সারা ঘরে অদ্ভূত অদ্ভুত আওয়াজ হচ্ছিল আর কাঁপছিল।বুঝতে পারছিলাম না কি করব?ভয়ে বুকের ভিতর টা বেশ কাপঁতে লাগল।হঠাৎ করে খেয়াল করলাম ডাক্তার সায়মা শূন্যে ভাসছে আর চিৎকার দিয়ে উঠেছে।আমি আর অরন্য ডাক্তার সায়মাকে শূণ্যে ভসতে দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম।প্রফেসর বিশ্বাস বললেন

-মনে শক্তি রাখুন।পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে।এখন সবাই মনোবল হারিয়ে ফেললে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব না।

আমি আর অরন্য নিজেদের মনকে একটু শক্ত করে বললাম

-কিন্তু ডাক্তার সায়মা এভাবে শূণ্যে ভাসছে কেন?ডাক্তার সায়মার কি হল?

প্রফেসর বিশ্বাস হতাশ হয়ে জবাব দিলেন

-ডাক্তায় সায়মা ভয় পেয়ে চেক বোর্ড থেকে হাত সরিয়ে ফেলেছিল।এজন্য সুখীর আত্না ডাক্তার সায়মার শরীরে ভর করেছে।কি হবে বলা যাচ্ছে না।তবে যে করে হোক পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।

ঠিক এ মুহূর্তে খেয়াল করলাম ডাক্তার সায়মা শূণ্যে ঘুরছে সাথে সাথে চন্দ্রাবতীও জেগে উঠেছে।চন্দ্রাবতীর চোখ যেন আগুনের মত জ্বলছে।ডাক্তার সায়মা শূণ্য থেকে আচড়ে নীচে পড়ল।একটা বিকট শব্দ হতে লাগল।চারদিকে কম্পন হতে লাগল।ডাক্তার সায়মা এবার উঠে তেড়ে বসল আর প্রফেসর বিশ্বাসকে বলল

-আমাকে ডেকেছিস কেন বল?আমার কাজে বাধা দিতে চেয়েছিস কেন বল?

প্রফেসর বিশ্বাস জবাব দিল

-আমি তোমার প্রতিশোধ নেওয়াতে সাহায্য করতে চাই।তুমি কি চাও বল।

সুখী আত্ন চিৎকার দিয়ে বলল

-আমি? “রক্ত চাই রক্ত।”

প্রফেসর বিশ্বাস বলল

-কার রক্ত চাও বল?

সুখী খিল খিল করে হেসে বলল

-অরন্যের।

অরন্যের নামটা এভাবে শুনে আমি চমকে গেলাম।আমার বুকের ভিতরটা যেন ব্যাথা হতে লাগল।বুঝতে পারছিলাম না অরন্যের প্রতি সুখীর এত রাগ কেন?প্রফেসর বিশ্বাস সুখীর এ কথা শুনে বলল

-কিন্তু অরন্য তো তোমার কোন ক্ষতি করে নি তাহলে অরন্যকে মারতে চাচ্ছ কেন?অরন্য তো অর্জুন না সুখী।আর অরন্যকে মারার জন্য তুমি চন্দ্রাবতীকে কেন এ দুনিয়ায় এনেছ?

সুখী এবার বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল

-আমার কাউকে মারার শক্তি নেই বোকা।তাই চন্দ্রাবতীকে এনেছি।আমার সব শক্তি চন্দ্রাবতীর মধ্যে আছে।আর অরন্য তো অর্জুন এর বংশধর।আমি অর্জুন এর বংশকে নির্বংশ করতে চাই।তাই অরন্যকে হত্যা করতে চাই।আর অধরা এতদিন মা হতে পারে নি শুধু আমার অভিশাপে।

সুখীর কথা শুনে আমি বেশ চমকে গেলাম।আমার মাথাটা ঘুরে যেতে লাগল।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।কোন উপায় ও পাচ্ছিলাম না।প্রফেসর বিশ্বাস ও বুঝতে পারছে না কি করবে?এর মধ্যে খেয়াল করলাম চন্দ্রাবতী অরন্যকে ধরে শূণ্যে তুলে ফেলেছে।আমি এটা দেখে ভয়ে কুকরে গেলাম।চিল্লাতে চিল্লাতে বললাম

-চন্দ্রাবতী ছাড় অরন্যকে।আমার অরন্যকে মের না।আমি তোমার পায়ে ধরতেছি।কি ক্ষতি করেছে ও।

পাশ থেকে সুখী হেসে হেসে বলল

-মিসেস অধরা চন্দ্রাবতী আপনার কথা শুনবে না তো।ও তো আমার বশে।অরন্যকে মেরে সে আমার প্রতিশোধ নিবে।

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম

-অরন্য তো তোমার কোন ক্ষতি করে নি তাহলে কেন অরন্যকে এভাবে শেষ করতে চাচ্ছ?দোহাই লাগে অরন্যকে ছেড়ে দাও।

সুখী একটা চিৎকার দিল কথাটা শুনে।সুখীর চিৎকার শুনে মনে হল সারা ঘর কম্পিত হচ্ছে।চিৎকার দিয়ে বলল

-অরন্যকে ছাড়লে তো আমি শান্তি পাব না।

আমি প্রফেসর বিশ্বাসের দিকে তাকিয়ে বললাম

-আপনি কিছু একটা করুন।আমার অরন্যকে মেরে ফেলবে।অরন্যকে ছাড়া আমি থাকব কি করে।

প্রফেসর বিশ্বাস নিরাশ হয়ে বলল

-আমি কোন উপায় পাচ্ছি না।

এ কথা শুনে আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না।সব কিছু এলোমেলো হতে লাগল।খেয়াল করলাম চন্দ্রাবতী অরন্যকে আঘাতের উপর আঘাত করতে লাগল।অরন্য আঘাত পেয়ে চিল্লাতে লাগল।সুখীও এবার হাসতে লাগল।চারদিকে ভিষণ বাতাস বইতে লাগল।চারদিক আস্তে আস্তে অন্ধকার হতে লাগল।আমার মাথায় খুব পেইন হতে লাগল।নিজের চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষের মৃত্যু দেখতে হবে এটা ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠল।তাই কিছু না পেয়ে আমি একটা….

লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *