ধ্রুবতারা

ধ্রুবতারা !! Part- 08

(আমি vs আমার মোবাইল)ঃ
মোবাইলঃকিরে কি এতো লিখস?
আমিঃডাক্তার এর কাছে যামু তাই রেডি হইতাসি।
মোবাইলঃ মানে??
আমিঃ আমি এখন গল্প দিমু আর লগে লগে কয়জন লিখবো next. Next.
তখন মোর মনে হয় আমি হাসপাতালে ওয়েটিং এ আছি। আর ডাক্তার এর সহচর আসি যেমনে বলেnext next এরাও তেমন করে।
মোবাইলঃ now I understand.(বেশ ভাব নিয়া)
আমিঃ আরে তোর কথা শুইনা মনে পড়লো কয়জন আছে যারা আমার গল্পের ১ম পর্ব থেকে শুরু কইরা শেষ পর্ব পর্যন্ত একটা শব্দ লেখে হেইডা হলো nice.আর কিছু আছে এমন যারা আলসে কইরা খালি “N” লেখে।
মোবাইলঃ চিন্তার বিষয়।তো কি আর করবি?
আমিঃ কি আর করা কয়জন ভালো মানুষ আছে যারা ভালোই কমেন্ট করে। খারাপ লাগলে খারাপ বলে ভালো হইলে ভালো বলে আর এমন ই ভালো।আমি চাই এমন ই হোক।
মোবাইলঃ হুমম আশা করতে থাক। আশায় মিলাই বস্তু।
আচ্ছা আমার না ঘুম আইতাসে তুই কাম কর।
আমিঃতুই ঘুমাইলে আমি কেমনে কাম করুম?😕😕
মোবাইলঃ 😴😴😴😴😴😴)
(কিছু বুঝলে বুঝপাতা নইলে তেজপাতা😎😎😎)

।।।বৃষ্টি থেমে গেছে।
চারদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। প্রকৃতি আজ শান্ত সুবোধ বালকের মতো ঘুমিয়ে আছে। বিরাণ রাস্তায় এগিয়ে যাচ্ছে ধ্রুবর গাড়ি।
হাতে ব্যাথা থাকা সত্ত্বেও গাড়ি চালাচ্ছে ধ্রুব। গাড়িতে থাকা ফার্স্ট এইড বক্স দিয়ে তারা প্রাথমিক চিকিৎসাটা দিলো বাকিটা হসপিটাল থেকে করানো হবে।ধ্রুব মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। তারা মাথা নিচু করে বসে আছে।

ধ্রুবও চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে। তারা আর ধ্রুব উভয়েরই মনে এক ধরনের দন্ধ কাজ করছে। অনেক কিছু বলতে মন চাইছে,কিন্তু বলতে পারছেনা। এটাই মানুষের সমস্যা যত যুদ্ধ,বিদ্বেষ, ঝগড়া, আজেবাজে সব কথা কোনো প্রকার সংশয় ছাড়া বলতে পারলেও মনের আসল কথা বলতে যত সংশয় আছড়ে পড়ে।

তারা চুপচাপ দেখে ধ্রুব মনে মনে বললো-
“কি হলো কোনো কথা বলছে না কেনো?চড়টা কি বেশি জোরে হয়ে গেলো? কিন্তু বেশ করেছি দিয়েছি আরও কয়টা দেওয়া,দরকার ছিলো এভাবে কেউ যায়?)
তারাঃ( শালা ধুমকেতু কি জোরে মারলো গালটা গরম হয়ে আছে?খোদা লাইট থাকলে দেখতাম লাল হয়সে,কিনা?😭😭
জ্বলতাসে তো😢😢😢 ধুমকেতুর হাতটা চেক করা দরকার ছিলো এটা হাত নাকি লোহা। আমার নরম কিউট গালটারে ফাটাই দিলো😭😭😭😭)

ধ্রুব হটাৎ গাড়ি থামালো।
গাড়ি থামায় তারার ধ্যান ভাঙলো।
ধ্রুবঃনেমে পড়ো। তোমার বাসায় চলে এসেছি।
তারা চুপচাপ নেমে পড়লো।
তারাঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার। আসি।
বলে তারা চলে যেতে চাইলে ধ্রুব বললো- তারা, একটু দাড়াও একটা কথা ছিলো।
তারাঃ কি কথা স্যার?
ধ্রুব গাড়ি থেকে৷ নেমে তারার সামনে আসলো।
ধ্রুবঃআসলে বলতে চাচ্ছিলাম যে..
তারাঃ হুমমম
ধ্রুবঃ ঐ….
সরি তারা। আসলে আমার তোমাকে চড় দেওয়াটা উচিত হয়নি। কিন্তু কি করবো বলো?তোমাকে ওখানে আমি নিয়ে গিয়েছিলাম। তুৃমি তখন আমার দায়িত্ব ছিলে। তাই তোমাকে ঘরে সেফলি পৌছে দেওয়া এটা আমার দায়িত্ব ছিলো। তাই তোমাকে না পাওয়ায় এমন রিয়েক্ট করেছিলাম।তাই সরি।
তারাঃ ইটস ওকে স্যার। আপনি যা করেছেন ঠিকই করেছেন। আসলে আমারও দোষ ছিলো আপনাকে এভাবে না বলে যাওয়ার ব্যাপারটা ভালো হয়নি তাই আমিও সরি😊
ধ্রুবঃ ইটস ওকে। বাট এটা আমার দায়িত্ব ছিলো। তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও হয়তো আমি এটাই করতাম।

ধ্রুবর এমন কথায় তারার মনে কোথায় যেনো কিঞ্চিৎ ব্যাথা অনুভব করলো।
তারাঃ( যে কেউ থাকলেই এমন করতো?তাহলে জরিয়ে ধরে ওভাবে কান্না করাটাও কি স্বাভাবিক??তার মানে ঐ জড়িয়ে ধরায় কোনো অনুভূতি ছিলো না?তাহলে আমার কেনো মনে হয়েছিলো ঐ লোকটা যাকে আমি তখন দেখেছি যে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো সে অন্য কোনো ধ্রুব অন্য ধরনের মানুষ।
হয়তো আমারই ভুল। অনেকটায় বেশি আশা করে ফেলেছিলাম। না এটা ঠিক হয়নি আমার। তারা তুই বেশি ভাবিস। 😤😤😤)
আমি বুঝতে পেরেছি স্যার। আচ্ছা স্যার দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি যাচ্ছি। বাই স্যার।

তারা চলে গেলো।তারার মাথাটা কেমন ঘোলাটে লাগছে।

.
.
.
.
.
.
.
.ধ্রুব ওর রুমের খাটে বসে আছে। হাতে নতুন ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। ধ্রুব একা খাটে শুয়ে আছে। মনে কেমন এক রকম বিচলন হচ্ছে। কিন্তু কেনো?
আচ্ছা আজ যদি তারার বদলে অন্য কেউ থাকতো তখনও কি আমি এমন রিয়েক্ট করতাম?এমন ভাবে কান্না করতাম?
জানি না হয়তো না। তাহলে তারার জন্য কেনো এমন রিয়েক্ট করলাম?
ধ্রুব হটাৎ শোয়া থেকে উঠে বসে পড়লো।
ধ্রুবঃআমি কি তারাকে….?? কিন্তু কি করে আমি তো কখনও কাউকে ভালোবাসা………….

ধ্রুব ভাবতে পারছেনা। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে।
না এই মহুর্তে পানি খাওয়া প্রয়োজন। জরুরিভাবে প্রয়োজন।
ধ্রুব তাড়াতাড়ি খাট থেকে উঠে রুমের বাইরে চলে এলো।
ডাইনিং রুমে এসে টেবিলা রাখা পানির জগ থেকে গ্লাসে পানি ভরে গটগট করে পানি পান করতে শুরু করলো।
২গ্লাস পানি শেষ করলো এক নিমিষেই। ৩নং পানির গ্লাসে পানি ভরে মুখে দিতেই চোখ গেলো ডাইনিং রুমের জানালার দিকে। জানালা দিয়ে বাড়ির বাগান এর কিছু অংশ দেখা যায়। ধ্রুব দেখলো বাগানে সজ্জিত বেঞ্চ এ কে যেনো বসে আছে?

ধ্রুবঃ এতো রাতে কে বাগানে গেলো?বাবা?????
ধ্রুব বাগানের দিকে গেলো।

ধ্রুব বেঞ্চের কাছে যেতেই দেখলো ফরিদ সাহেব বসে আছেন।
ধ্রুবঃ বাবা? তুমি এতো রাতে এখানে?
বাবাঃ আরে তুই। আয় আয় বস আমার পাশে।😊😊
ধ্রুব বসে পড়লো।
ধ্রুব বসতেই ফরিদ সাহেবের হাতের দিকে নজর গেলো।
ধ্রুবঃবাবা এটা তো মায়ের প্রিয় শাড়িটা তাই না??
ফরিদ সাহেবঃ হুমমমম। তোর মনে আছে?
ধ্রুবঃ কি যে বলো না বাবা। মনে থাকবে না কেনো?
বাবা তোমার কি মায়ের কথা মনে পড়ছে?
ফরিদ সাহেবঃ না। তোর মায়ের কথা আমার মনে পড়ে না কারণ মনে তো তাকে পড়ে যাকে ভোলা যায় কখনো। তোর মাকে তো আমি কখনো ভুলতেই পারিনি। তাকে মনে করবো কি করে?

ধ্রুব মুচকি হাসি দিলো।
ধ্রুবঃআচ্ছা বাবা তুমি মাকে অনেক ভালোবাসতে তাই না?
ফরিদ সাহেব ঠোঁটে স্মিত হাসি দিয়ে বললেন-ভালোবাসা???
হাসালি রে?
ধ্রুব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
ফরিদ সাহেবঃ তোর মায়ের সাথে আমার বিয়ে পারিবারিকভাবে হয়। তখন আমার কাছে এতো কিছু ছিলো না। খুব সামান্য একটা চাকরি করতাম। তোর মাকে ঐ চাকরি দিয়ে তেমন কিছুই দিতে পারতাম না। বছর শেষে হয়তো তিনেক শাড়িই দিতাম। এরপর তুই হলি।এতো অল্প কিছুতেও তোর মার কোনো দুঃখ ছিলো না। সবসময় মুখে হাসি। কাজ শেষে তোর মায়ের হাসিমাখা মুখ দেখলে সব ক্লান্ত দূর হয়ে যেতো। ধীরে ধীরে যখন কাজ বাড়তে থাকলো তোর মায়ের সাথে সময়,কাটানো,দু একটা ভালোবাসার কথাও কমে যেতে লাগলো। মাঝে মাঝে মনে হতো আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েনি এরপর তো সময় আছে তাকে সব সময় দিবো। যত বড়লোক হতে লাগলাম ততই ব্যাস্ততা বাড়লো। জানিস তোর মা কখনও আমার কাছে সময় চেয়ে আমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। যখন রাতে অনেক কাজ করে বাড়ি ফিরতাম চিরকালের মতো সেই চিরচেনা হাসি দেখতে পেতাম। বুঝতাম মনে অনেক কষ্ট লুকিয়ে আছে,কিন্তু ভাবতাম সময় তো আছে কোনো এক সময় সব রাগ ভেঙে দিবো৷ কিন্তু…………….. (ফরিদ সাহেব আকাশের পানে তাকিয়ে আছে। চোখে পানি টলমল করছে।
ধ্রুব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

ফরিদ সাহেবঃজানিস তোর মা অনেক স্বার্থপর। আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। জানতো ওকে ছাড়া আমার কষ্ট হবে তবুও চলে গেলো। আমাকে একা করে দিলো ।
ধ্রুবর চোখের জল গাল বেয়ে পড়ছে।
ফরিদ সাহেবঃজানিস প্রিয় মানুষটাকে কখনো অবহেলা করিস না, মনে যখন যে কথা আসবে সঙে সঙে তাকে জানিয়ে দিবি৷ নইলে সময়ের অপেক্ষা করতে করতে এক সময় তাকে হারিয়ে ফেলবি আর কখনো পাবি না। তখন তোর কাছে বেঁচে থাকাটাও একটা শাস্তিস্বরূপ হবে। এখন তোর মায়ের স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছি। জানিস এই বাগানটা ওর নিজের হাতে গড়া। এখানে এসে তোর মাকে অনুভব করি। ভালোবাসা নিয়ে কত ছবি কত কিছু হলো৷ কিন্তু ভালোবাসা কি জানিস??অদৃশ্য অনুভুতি যা একজন মানুষের জীবনে এক দৃশ্যমান পরিবর্তন নিয়ে আসে। একজন সাধারণ মানুষের জন্য অসাধারণ অনুভূতি যোগায়। যা একজন মানুষকে বিশেষ একজনের প্রতি দূর্বল করে দেয় কিন্তু মনটাকে শক্তিশালী করে তোলে। ভালোবাসা হলো যাকে ভোলা যায় না, যে মরণের পরও মনের কোণায় কোণায় বসবাস করে মানুষটাকে বাঁচিয়ে রাখে।ভালোবাসা…………
এক কথায় একজন মানুষের অদৃশ্য ছোঁয়া যা অন্য ব্যাক্তির মনে স্পর্শ করে। কালো মেঘলাময় আকাশের আলোকিত কিরণ।

ধ্রুব অবাক হয়ে শুনছে আজ কেনো যেনো অন্যরকম লাগছে বাবাকে।

ফরিদ সাহেব উঠে পড়লেন।
ধ্রুবঃবাবা?
…আমি ঘুমাতে যাচ্ছি। তুই ও যা।

ফরিদ সাহেব যেতে যেতে থেমে গেলেন।পিছনে ফিরে বললেন-ধ্রুব তুই যদি কোনোদিন কাউকে ভালোবাসিস তাকে জানাতে দেরী করিস না। মনের কথা না বলতে পারা যে কত কষ্টকর তা তুই বুঝবিনা। নিরব ঘাতক তিলে তিলে শেষ করে দেই।
ধ্রুব স্পষ্ট দেখতে পেলো বাবার চোখে কোনো এক অবসাদ এর ছোঁয়া । বাবার অনুতাপে সিক্ত চোখ, এড়ালো না ধ্রুবর কাছে। শাড়ি নিয়ে চলে গেলেন ফরিদ সাহেব।
ধ্রুব বসে রইলো। বারবার কানে বেজে উঠছে বাবার কথাগুলো।
কেমন কষ্ট বাবা এতোদিন নিবরে সইলো কিন্তু কেউ জানতেও পারলো না।
না, আমি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিবো না। আমি তারাকে চাই, কোনো মূল্যেই ওকে আমি হারাতে চাই না। আমি তারাকে ভালোবাসি। ওকে আমি হারাবো না। খুব শীঘ্রই ওকে আমি বলবো। ওকে আমি কতটা চাই।

কিন্তু যদি ও অন্য কাউকে……
না যাই হোক তারাকে আগে আমি আমার মনের কথা বলবোই এরপর ওর ডিসিশন। ও যা চায় তাই হবে।

চলবে………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *