ধ্রুবতারা !! Part- 07
৭দিন পর……………..
তারার বাবা মাকে ধ্রুবর বাবা বুঝানোর পর বুঝতে পেরেছে এবং তারা আর ধ্রুবকে মাফ করে দিয়েছে।
তারা এখনও ধ্রুবকে সম্পূর্ণভাবে মাফ না করতে পারলেও এখন নিজেকে মানিয়ে নিতে চাচ্ছে। ধ্রুবও চেষ্টা করছে তারাকে মানানোর।
ধ্রুব অফিসে যাওয়ার জন্য রেডী হচ্ছিলো এমন সময় একটা কল আসে।
ধ্রুবঃহ্যালো?
…….
ধ্রুব মুচকি হেসে বললো -গুড জব।আমি এখনি আসছি।
ধ্রুব ফোনটা রেখে দিলো।ধ্রুবর মুখে কেমন যেনো জয়ের হাসি।
তারা রুমে ঢুকতেই দেখলো ধ্রুব আপন মনে হাসছে। তারা ভ্রু কুচকালো আর বললো কি হয়েছে কি ভেবে হাসছেন?
ধ্রুবঃওহহ তুমি এসেছো?তোমার সাথে খুব জরুরি কথা ছিলো।
তারাঃহুমম বলেন।
ধ্রুবঃএখন না। এসে বলবো।
তারাঃকি এমন বলবেন?
ধ্রুবঃসব বলবো তোমায়।শুধু এটা জেনে রাখো সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
তারাঃমানে???
ধ্রুবঃএখন যাচ্ছি পরে বলবো।
বলে ধ্রুব হাতে কোর্টটা নিলো আর তারার কাছে গিয়ে ওর কপালে ভালোবাসার পরশ দিলো।
তারা তো টাসকি খেলো।
ধ্রুব মুচকি হেসে তারার গালে হাতের পরশ দিয়ে চলে গেলো। তারা এখনো থাম দাড়িয়ে আছে। কি হলো এটা।, ধ্রুব কখনো এমন করে না আজ কি হলো। এমন কেনো করলো? আর আমিও কেনো কিছু বললাম না কেনো থামাতে পারলাম না।
তারা এসব ভাবতে ভাবতে সোফায় বসে পড়লো।
তারাঃ সেদিনও আপনি বলেছিলেন আমার জন্য এক বিশেষ উপহার অপেক্ষা করছে কিন্তু সেদিন তো সব পাল্টে গেলো । এখন আপনার প্রতি বিশ্বাস করতে ভয় হয়।
অতীত……………..
ধ্রুব কেবিনে বসে কাজ করছিলো।
এমন সময় তারা আসলো।
তারাঃমেই আই……
ধ্রুবঃকাম ইন।
তারাঃ খোদা আমারে কি এই বাক্য পূরণ করার সৌভাগ্য হবে? (মনে মনে)
তারা কেবিনে ঢুকলো।
তারাঃ স্যার কাল আমাদের অফিসে নতুন দুজনু এমপ্লয় নেওয়া হবে। তাদের ম্যানেজার স্যার আর আমি সিলেক্ট করে ফেলেছি। এখন আপনি জাস্ট এপ্রুভাল দিবেন😊
ধ্রুবঃ ওকে। ধ্রুব ফাইল চেক করে সাইন করে দিলো।
তারাঃ ধন্যবাদ স্যার।
ধ্রুবঃ😊😊
তারাঃ স্যার এই দুজন কাল থেকেই জয়েন করবে।
ধ্রুবঃ ওকে।
তারা চলে যেতে লাগলে।
ধ্রুব ডাক দিলো।
তারাঃ জ্বি স্যার।
ধ্রুবঃএকটু পর আমার সাথে তোমাকে একটু বের হতে হবে। আমাদের একটা প্রজেক্ট এর জন্য যে জমি দেখা হয়েছে তাতে একটা একটা প্রবলেম হয়েছে তাই আমাকে যেতে হবে। আমাদের সাথে ম্যানেজার সাহেবের যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু ওনাকে আরেকটা কাজের জন্য এখানে থাকতে হচ্ছে তাই তুমি আর আমি যাচ্ছি। সো আমরা ১৫ মিনিট পর বের হচ্ছি।
তারাঃওকে স্যার ।
.
।
.
।
.
।
.
।
তারা আর ধ্রুব সাইটে পৌছে গেছে। ধ্রুব আর তারা সব কিছু চেক করছে। সব কাজ শেষ করতে করতে দুপুর পেরিয়ে বিকাল।
তারা আর ধ্রুব গাড়িতে উঠলো।
ধ্রুবঃঅনেকটায় লেট হয়ে গেছে। এখন তো আর অফিসে যাওয়া যাবে না মনে হয়।
তারাঃজ্বি স্যার এখন রওনা দিলে সন্ধ্যার দিকে পৌছাবো। অলরেডী ৪টা বেজে গেছে।
ধ্রুবঃহুমম আচ্ছা এক কাজ করি যেহেতু লেট হয়ে গিয়েছি। এখন ডিরেক্ট বাসায় যাওয়া,যাক।
তারাঃজ্বি স্যার।
ধ্রুব গাড়ি স্টার্ট করলো। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। এখনও জোরে বৃষ্টি
অনেক পথ আসার পর একটা জায়গায় তারা হটাৎ করেই ধ্রুবকে গাড়ি থামাতে বললো।
ধ্রুব গাড়ি থামিয়ে বললো কি হয়সে?
তারাঃ স্যার আমি তো এখন ভালো করে কাজ করি তাই না?
ধ্রুবঃ মানে?? তুমি মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে এসব বলছো আমায়?
তারা ঃ আরে স্যার,বলেন না আমি ভালো করে কাজ করি তো?
ধ্রুবঃ হুমমম করো।
তারাঃ তাহলে স্যার আমার ভালো কাজের জন্য আপনার উচিত আমাকে পুরুষ্কার দেওয়া তাই না?
ধ্রুবঃ হোয়াট??
তারাঃ আরে স্যার হোয়াট এর পলিথিন পুরি আমারে আমার ভালো কাজের জন্য,পুরুষ্কার দিতে হবে প্লিজজজজজজজজজজজজজজজজজ
ধ্রুবঃ ওকে ওকে দিবো। বলো কি লাগবে তোমার?
তারাঃ দিবেন তো?
ধ্রুবঃ হ্যা দিবো বলো। কি চাই?
তারাঃ ফুচকা😋😋😋
ধ্রুবঃফুচকা???😮😮😮😮
তারাঃ জ্বি স্যার।ওই দেখেন ওখানে একটা দোকানে ফুচকা বিক্রি করছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার এটা। জানেন স্কুল কলেজ লাইফে টাকা জমিয়ে জমিয়ে অনেক খেয়েছি। এখনও খায়। আর এখন এই ফুচকার দোকান দেখে আমার ফুচকা খাওয়ার হেব্বি ইচ্ছা হয়েছে । কিন্তু…
ধ্রুবঃ কিন্তু কি??
তারাঃ আসলে স্যার আমি না কোনো টাকা আনি নাই। আর ঐ ফুচকাওয়ালা তো আমার খালতো ভাই না যে আমারে ফ্রিতে দিবে। তাই স্যার আপনার দোহায় লাগে আমারে এক প্লেট ফুচকা খাওয়ান। প্রমিস টাকাগুলা আপনি আমার বেতন থেকে কেটে নিয়েন। আমি কিছু বলমু না। প্লিজ স্যার আমারে খাইতে দেন ঐ ফুচকা আমাকে ডাকতাসে।স্যার প্লিজ ।
ধ্রুব কিছুক্ষন তারার দিকে তাকিয়ে রইলো এরপর খুব জোরে হাসতে শুরু করলো😂😂😂😂😂
তারাঃ😕😕😕
ধ্রুবঃ তারা তুৃমি এতো ফানি কেনো? তোমার ফুচকা খেতে মন চাইছে বললেই হতো তাই বলে 😂😂😂😂😂
তারাঃস্যার খাওয়াবেন??
ধ্রুবঃ চলো খাওয়াচ্ছি।
তারাঃ টিংকু স্যার আপনি কতোওওও ভালো। তারা জলদি গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।
ধ্রুবঃ এই আজিব শব্দ কোথা থেকে যে পায়?😄😄😄
হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। চারপাশে ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজমান। রাস্তা প্রায় জনশূন্য হয়ে আছে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় সব কিছুতে কেমন যেনো তৃপ্তি দেখা যাচ্ছে। হালকা বৃষ্টি ধীরে ধীরে মুষলধারে পরিণত হচ্ছে।
ফুচকার দোকানে…..
তারা দোকানে ঢুকেই টেবিলে বসে পড়লো।
ধ্রুবও তারার পিছন পিছন এলো আর বসলো।
তারাঃএই যে ভাই??
লোকটি আসলো।
তারাঃদুইপ্লেট ফুচকা বেশি ঝাল,দিবেন আর টকের মধ্যে শুকনা মরিচ এর গুড়োটার পরিমাণ একটু বেশি দিবেন।
ধ্রুবঃতারা এসব কি বলছো?এতো ঝাল খেলে তোমার অবস্থাটা কি হবে একবার ভেবেছো তুমি?
তারাঃস্যার don’t understimate the power of বাঙালি মাইয়া। আমরা ছোট থেইকা ঝাল খাইতাসি৷ আমি আপনার মতো হ্যালাল্যালা নাকি?
ধ্রুবঃ হ্যালাল্যাালা মানে?😒😒
তারাঃ আরে মানে মানে কইরেন না তো। এটা মানে হলো ছেলেরা কম ঝাল খেতে পারে সর্টকাট কথা। 😇😇
ধ্রুবঃ কি এতো বড় কথা?
যাও আমিও ফুচকা খাবো। দেখি কে বেশি খেতে পারে।
তারাঃ ওকে অর্ডার দেন।
ধ্রুবঃ মানে কি তুমি অর্ডার দিলা না?
তারাঃ জ্বি না স্যার । ঐটা আমার জন্য আপনি অর্ডার দেন।
ধ্রুবঃতুমি ২ প্লেট….
তারাঃ খবরদার আমার খাবারে নজর দিবেন না।
ধ্রুবঃ হু..
ধ্রুবও অর্ডার দিলো।
শুরু হলো ফুচকা খাওয়া..
প্রথম ফুচকা মুখে দিতেই ধ্রুবর প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অনেক কষ্টে গিলে ফেললো ফুচকাটা। এরপর দ্বিতীয়টাও এভাবে খেতে শুরু করলো।
ঐদিকে তারা তো খেয়েই যাচ্ছে। ধ্রুবর অবস্থা খারাপ। ঘাম ছুটে যাচ্ছে। তবুও খাচ্ছে।
তারা খেতে খেতে খেয়াল করলো ধ্রুবর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তবুও খাচ্ছে।
তারা খাওয়া থামিয়ে বললো- স্যার থামেন আপনি আর খাইয়েন না।। ধ্রুব তবুও খাচ্ছে।
তারাঃ স্যার আপনার চোখ লাল হয়ে পড়েছে খাইয়েন না।
ধ্রুব থামছে না।
তারাঃ স্যাররররর হয়সে।( কান্নাসুরে)
ধ্রুব খাওয়া,থামিয়ে বললো- আমি জিতেছি। আমার ফুচকা শেষ। এবার বলো ছেলেরা ঝাল খেতে পারে।
তারপর টেবিলে রাখা পানি খেতে শুরু,করলো। পানি খাওয়া শেষে,
তারাঃ স্যার আপনি কি পাগল নাকি….
একটু থেমে স্যার আপনি শুধু একটা খেলার জন্য এটা কি করতে যাচ্ছিলেন। উফফ জাস্ট পাগলামি
ধ্রুবঃ আমি কি করতাম তুমিই বল্লে ছেলেরা পারে না তাই আর কি..
তারাঃ হয়সে রাখেন আপনার খাওয়া। আমার খাওয়া শেষ। বিল দিয়ে আসেন আমি বাইরে দাড়াইসি।
ধ্রুবঃ ওকে।
ধ্রুব বিল পে করে এসে দেখলো তারা বাইরে নেই। চারদিকে তাকালো কিন্তু তারাকে দেখা যাচ্ছে না। এদিকে বৃষ্টি বেড়েই চলেছে। জোরে জোরে বৃষ্টি পড়ছে। ধ্রুব তারাকে চারপাশে খুজতে লাগলো। তীব্র বৃষ্টিতে ধ্রুব ভিজে যাচ্ছে কিন্তু ধ্রুবর চোখ তারাকে খুজতে ব্যস্ত।
ধ্রুব তারাকে খুজতে খুজতে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খায় আর ধ্রুবর হাত থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে। কিন্তু সেই ব্যাথার দিকে ধ্রুবর কোনো খেয়াল নেই।
সে তো তারাকে খুজতে মগ্ন।
ধ্রুবঃ তারা! তারা! দেখো তারা তুমি যদি মজা করো তাহলে তোমার খবর আছে। তারা!!!
ধ্রুব এতো খোজার পরও তারাকে পাচ্ছে না।
ধ্রুব রাস্তায় বসে পড়লো।
ধ্রুবঃ তারা তুমি কোথায়? সরি প্লিজ ফিরে এসো। আমি আর কখনো তোমায় বকা দিবো না। প্লিজ । ( কান্না করতে করতে)
ধ্রুবর মনে কেমন এক শূণ্যতা কাজ করছে। কাউকে হারানোর ভয় কাজ করছে। জীবনটা কেমন উলট পালট লাগছে।
ধ্রুব রাস্তায়,বসেই আছে এখনো।বৃষ্টির পানির সাথে ধ্রুবর চোখের জল মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
হটাৎ ধ্রুব সামনে, এক জোড়া পা দেখলো।
ধ্রুব উপরে তাকাতেই দেখলো তারা দাড়িয়ে আছে। ধ্রুব জলদি দাড়িয়ে গেলো আর তারাকে জড়িয়ে ধরলো। খুব শক্ত করেই ধরেছে। মনে হচ্ছে তারা কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে।
তারা তো অবাক। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। ধ্রুব এভাবে তাকে জড়িয়ে ধরবে এটা তারা ভাবতেও পারেনি। ধ্রুবর বুক থেকে খুব জোরে ধুক ধুক আওয়াজ হচ্ছে। ধ্রুব যেভাবে তারাকে জড়িয়ে ধরেছে তারা এটা বুঝতে পেরেছে ধ্রুব কিছু একটা নিয়ে ভয় পেয়েছে,।কিন্তু কি নিয়ে?আমাকে??
অনেকটা সময় পর ধ্রুব তারাকে ছাড়লো।
তারা ছাড়া পেয়ে একটু দূরে দাড়ালো।
ধ্রুব বুঝতে পারলো এতোক্ষন কি করেছে ও। ধ্রুব নিজেকে সামলে বললো- কোথায় ছিলে তুমি?
তারাঃ স্যার ঐদিকে(জঙলের দিকে দেখিয়ে)আমি দোকান থেকে বের হতেই দেখলাম ওখানে একটা সুন্দর ফুল। এই যে দেখেন( তারা পিছনে ফিরে চুলের খোপাটা দেখালো)খুব সুন্দর লাগলো তাই নিতে গিয়েছিলাম। আর ওখানে পায়ে কাঁদা লেগে যায় তাই পরিষ্কার করছিলাম আপনি হয়তো এদিকটায় খেয়াল করেননি।
কিন্তু, স্যার এতো কষ্টর পর এই দেখেন কত সুন্দর ফুল পেয়েছি। সুন্দর না?😀😀
ঠাসসসস!!!!!
ধ্রুব খুব জোরে তারাকে একটা থাপ্পর মারলো।
তারা অবাক।
ধ্রুব তারাকে কাছে টেনে বললো- কি ভাবো নিজেকে? যখন যা ইচ্ছা তা করবে? আর আমি কিছু বলবো না। জানো আমি কত টেনশনে পড়ে গেছিলাম? কত খারাপ খারাপ ভাবনা আসছিলো জানো তুৃমি?একবার এর জন্য মনে হয়েছিলো তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি।
😡😡😡😡😡😡
তারা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। কথা আটকে আসছে। বুকে কেমন যেনো কষ্ট লাগছে। আচ্ছা এই কষ্ট থাপ্পর এর কারণে নাকি ওনার চোখে আমার জন্য জল দেখে??
তারা ভেবে পাচ্ছে না।
চলবে…………