তারে আমি চোখে দেখিনি

তারে আমি চোখে দেখিনি !! Part- 07

বিছানায় বসে ডায়েরী লিখছে মায়া আর কানে হেড ফোন।ওপাশ থেকে অনুভবের কন্ঠস্বর ভেসে আসছে মায়ার কানে।কারণ যেদিন থেকেই অনুভবকে প্রথম শুনেছে সেদিন থেকে তার বলা প্রত্যেকটা কথাই মায়া লিখে রাখে।আর মন খারাপের সময় ডায়েরীর পাতাগুলো খুলে অনুভবের বলা কথাগুলোর বিচরণ ঘটায়। যা শুনলেই মায়ার মন ভালো হয়ে যায়।

কোনো এক ঝুম বর্ষায় একগুচ্ছ কদমফুল হাতে দাড়িয়ে তুমি আমার অপেক্ষায়।দমকা বাতাস, নির্জলতার আভাস, টিনের জলের টুপটাপ শব্দ। আর হঠাৎ মেঘের গর্জনে তোমার আমার আরও কাছে আসার সেই অনুভূতির আত্নসমার্পণ।যা আলতো স্পর্শে পূর্ণতা এনে দেয় মুহূর্তকে।কথাগুলো রেডিওতে বলছে অনুভব আর মায়া তার ডায়েরীর পাতায় লিখে রাখছে।মায়ার খুব ইচ্ছা যেদিন অনুভবের সাথে দেখা হবে সেদিন এই ডায়েরীটা অনুভবকে দেখাবে।আর বলবে কতোটা ভালোবাসে তাকে।এমন সময়ে রুসা এসে রুমের দরজায় নক করে।মায়ার কানে হেডফোন থাকায় মায়া খেয়াল করে না।রুসা ভাবি ভাবি করতে করতে রুমের মধ্যে ঢুকে যায়। আর আচমকা রুসাকে আসতে দেখে মায়া বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বলে ওঠে,

মায়াঃ কে?

মায়ার খেয়াল নেই যে অসুস্থতার অভিনয় করছে।মায়াকে দাড়ানো অবস্থায় দেখে রুসা মায়ার সামনে আসে।একটু হাসি মুখ করে মায়ার কাছে জানতে চায়।

রুসাঃ একি ভাবি তোমার পা আর কোমড়ের ব্যাথা সেড়ে গেছে?

মায়াঃ নাহ!

রুসাঃ ওহহ আচ্ছা। আমি ভাবলাম বোধহয় সেড়ে গেছে।

মায়াঃ আরে না একটু উঠে দাড়াবার চেস্টা করছি এই আরকি। কিছু বলবে তুমি?

রুসাঃ হুমম।অনেক রাত হয়েছে তোমার খাবারটা কি উপরে নিয়ে আসবো? নাকি ভাইয়া আসলে…

মায়াঃ নাহ এখনই নিয়ে আসো।আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।

রুসাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।বলে রুসা চলে যায়। আর মায়া মনে মনে ভাবে,

এবাড়িতে প্রত্যেকটা মানুষই কত্ত ভালো।শুধু ওই ছেঁচড়া মাহিরটা বাদে।

কিছুক্ষণ পর রুসা এসে খাবার দিয়ে গেলে মায়া খেয়ে নেয়।তারপর খাওয়ার শেষে ডায়েরীটা ঝাপটে ধরে ঘুমিয়ে পরে।

মাঝরাতে মাহির বাড়িতে এসে রুমে গিয়ে দেখে মায়া আজও ওর বিছানায় শুয়ে আছে।মাহির চিন্তায় পরে যায় আজ আবার কোথায় শোবে।

মাহিরঃ এই মেয়ে! এই ওঠো!
মায়াকে ঝাঁকিয়ে ডাকতে থাকে মাহির।

মায়া ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে মাহির এসেছে।মায়া এক লাফে উঠে বসে মাহিরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃস্টিতে তাকায়।

মায়াঃ আপনি কি আমাকে শান্তিতে একটু ঘুমাতেও দিবেন না?

মাহিরঃ আমি কোথায় ঘুমাবো?

মায়াঃ কেন কাল যেখানে ঘুমিয়েছিলেন।

মাহিরঃ মোটেও না।এইরকম শীত আর মশার মধ্যে আমি বাইরে গিয়ে ঘুমাতে পারবো না।

মায়াঃ তাহলে রুমে ঘুমান।

মাহিরঃ অসম্ভব! তোমার সাথে এক বিছানায় আমি কিছুতেই ঘুমাবো না।

মায়াঃ আরে যান যান আপনার সাথে এক বিছানায় কে ঘুমোতে চাইছে? দয়া করছিলাম চাইলে রুমের যেকোনো এক কোণায় ঘুমাতে পারতেন কিন্তু শুনলেন না।

মাহিরঃ আমার রুমে তুমি আমায় দয়া দেখাও?

মায়াঃ হ্যাঁ দেখায়।কারণ এখন এটা আমার রুম।যতোদিন ডিভোর্স না দিচ্ছেন ততোদিন আমি এখানে যা খুশি তাই করবো।

মাহিরঃ দেখও মেয়ে আমি অতো সতো বুঝি না।আজ আমি আমার বিছানায় ঘুমাবো তাই জানি।

কথাটা বলেই মাহির মায়াকে বিছানা থেকে নামিয়ে মেঝেতে বসিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দুই’পা দুইদিকে টানটান করে মেলিয়ে দেয়।

মায়া মাহিরকে অনেক চেস্টা করে হাত-পা, টানা- হিচড়া, কিল-ঘুষি, কাতুকুতু, মার ধোর যা করার করে দেখে।কিছুতেই বিছানা থেকে নামাতে পারে না।তারপর নিজেই ক্লান্ত হয়ে মেঝেতেই বসে কাটিয়ে দেয় সারারাত।

সকালের দিকে মায়ার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি ভর করে।কিছু একটা ভেবে মাহিরের বিছানার এক জগ পানি ঢেলে দেয় মায়া।তারপর চিৎকার জুড়ে দেয়।
,
,
,
,
,
,
,
চলবে,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *