Love Right ! Part- 23 +24
নিশু:(এইজীবনেও শোধরাবে না তুমি!)
নীল:চলো নিচে চলো।
নিশু:না যাবো না।
নীল:এই না ছাড়া তোমার ডিকশনারিতে আর কোন ওয়ার্ড নেই?..যাই বলি না যাবো না।না করবো না।সবকিছুতেই না।
নিশু:আগে বলো নিচে কেন যেতে বলছো?আমাকে রুম থেকে বের করে দেওয়ার চিন্তা তাই না?আমি কিন্তু রুম থেকে বেরোচ্ছি না নীল, আগেই বলে রাখলাম!
নীল:😐
নিশু:আমি কিছু জানি না তুমি আমাকে নিয়ে এসেছো।এর পর আমার সাথে কি করেছো কে জানে।তোমার যা স্বভাব মেয়ে দেখলেই তো হুঁশ থাকে না। সকালে যদি খালামনি জিজ্ঞেস করে আমি কিন্তু বলে দেবো উনার ছেলে আমাকে মাঝরাতে নিজের রুমে নিয়ে এসে আমার সাথে কি করেছে সেটা যেন উনি উনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করে!
নীল:একটা কথা জানো নিশু?
নিশু:কি?
নীল:তুমি না নিজের বুদ্ধিটা যত কম খাটাবে ততই ভালো।তোমার মাথায় এমনিতেই প্রচুর ঘাটতি আছে। তাই বলি যেগুলো আছে সেগুলোও এইসব কুকাজে খরচ করো না।পরে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে যাবে।
নিশু:(এতবড় সাহস আমাকে অপমান?)
নীল:চলো নিচে চলো?
নিশু মুখ কালো করে বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়ালো।
নীল:কি হলো মুখটা এমন বাংলা পাঁচের মত বানিয়ে রেখেছো কেন?
নিশু:আমার মুখ আমি পাঁচের মত বানাবো না প্যাঁচার মত বানাবো সেটা আমার ব্যাপার!..তুমি তোমার কাজ করো।
নীল:আমার কি মনে হয় জানো?
নিশু:অনেক কিছুই তো জানি কোনটা বলবো?
নীল বিরক্ত হয়ে বললো..একটা কথা বলে শান্তি নেই,প্যাচানো শুরু করে দেয়!
নিশু:কি হলো বলো?
নীল:চুপ!তুমি আর একটা কথাও বলবে না!
নিশু:আমি কি বোবা নাকি যে চুপ করে থাকবো?
নীল হাতদুটো জোড় করে বললো…মাফ চাই!আমি আর কিচ্ছু বলবো না তোমার যা খুশি তুমি করো!
নিশু:সেটাই তো করছি!
নীল:কি করছো তুমি?
নিশু:তোমাকে জ্বালাচ্ছি!
বলেই নিশুর জিহ্বায় কামড় দিয়ে ফেললো।এইবার নীল নির্ঘাত ওকে তুলে আছাড় মারবে।মনে মনে নিজেকে হাজারটা গালি দিচ্ছে।
নীল:বিচ্ছু মেয়ে!তুমি এতক্ষণ ইচ্ছে করে আমার সাথে এমন করছিলে?
নিশু:দেখো নীল, এমনিতেই তুমি আমাকে দিয়ে অনেক কথা বলিয়েছো,আমি বেশি কথা বলা মানুষ একদম পছন্দ করি না।আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো।তোমার যদি কিছু বলার থাকে তুমি বারান্দায় গিয়ে ঐ খাম্বাগুলোর সাথে কথা বলো!তোমার সাথে মিলবে ভালো!(আল্লাহ যেন কাজ হয়!আল্লাহ নীল যেন আর কিছু না বলে)
নীল ভ্রু কুচঁকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।নিশু ভয়ে ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছে না।কিন্তু নীলের সামনে হার মানলে চলবে না।
নিশু:এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?(ধমক দিয়ে)
ওর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে নীলকে কনফিউজড করে দেওয়া।নীলের কাছে ধরা খেলে ও প্রায়ই এমন করে।
নীল:একদম চালাকি করবে না নিশু!
নিশু:চালাকি?..কিসের চালাকি?
নীল দাঁতমুখ খিঁচে বললো..বেশি চালাক হয়ে গেছো না?
নিশু:আমি কি বোকা নাকি?
নীল:হ্যাঁ!ঠিকই তো তোমার বুদ্ধির ঠেলাতেই তো আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তুমি বোকা হতে যাবে কোন দুঃখে?
নিশু:দেখো নীল।আমার সত্যিই ঘুম পাচ্ছে।
নীল:একদম মিথ্যে বলবে না।
নিশু:সবাইকে নিজের মত ভাবো কেন?
নীল:😐আমি মিথ্যে কথা বলি?
নিশু:তুমি নিজেই জানো না তুমি সত্যি বলো নাকি মিথ্যে বলো আমি কি করে জানবো?
নীল:(অসভ্য মেয়েটা আমার মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছে)
নিশু:আর কিছু বলবে?যা বলার পাঁচ মিনিটের মধ্যে শেষ করো।এমনিতেই বকবক করে আমার মাথাটা খারাপ করে দিয়েছো!
নীলের বেহাল দশা দেখে নিশুর ভীষণ হাসি পাচ্ছে।বেচারা না পারছে কিছু বলতে না পারছে সহ্য করতে।ঠিক হয়েছে!নিশুকে বকাবকি করে কতবড় সাহস!
নীল:চলো নিচে চলো!
নিশু:আবার এক কথা!…নিচে কি?
নীল:আমার ক্ষিদে পেয়েছে!
নিশু:তোমার ক্ষিদে পেয়েছে তুমি গিয়ে খেয়ে এসো। আমাকে যেতে বলছো কেন?..নাকি আমাকে ছাড়া খেতে পারবে না ?..তোমাকে কতবার করে বলেছি আমাকে এত ভালোবাসতে হবে না।লোকে বউ পাগলা বলবে তো!(তোমাকে দিয়ে আমি স্বীকার করিয়েই ছাড়বো নীল!আমাকে নাকি ভালোবাসে না?)
নীল:আচ্ছা ঠিক আছে চলো এবার।
নিশু:কি ঠিক আছে?
নীল:আমি বউ পাগলা চল এবার নিচে চলো।
নিশু:(সাব্বাশ নিশু!)😂কি বললে?
নীল:আমি বউ পাগলা!
নিশু:আরেকবার বলো না নীল!আহা কি যে শান্তি লাগছে শুনতে!
নীল:আমি বউ পাগলা!
নিশু:আরেকবার নীল, প্লিজ!
নীল:😐এবার তুলে একটা আছাড় মারবো!অসভ্য মেয়ে! মাঝরাতে বসে আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।
নিশু:পাগল যখন বলেছো সাথে বউটা লাগিয়ে দিলেই তো হতো।
নীল:তুমি উঠবে?
নিশু:উঠছি তো!ধমকাচ্ছো কেন?
ডাইনিং এসে নীল লাইট জ্বালাতেই নিশু ফিসফিসিয়ে বললো…লাইট জ্বালাচ্ছো কেন নীল?সবাই উঠে পড়বে তো!
নীল:বাতি নেভালে দেখবো কি করে?
নিশু:পারবো তুমি বাতি নিভিয়ে দাও।
নীল:আমরা কি চোর নাকি যে চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে খেতে আসবো?নিজের বাড়িতে কেউ চোরের মত লুকিয়ে খায় নাকি?
নিশু:তোমার বুদ্ধিশুদ্ধি কিচ্ছু নেই নীল।
নীল:হ্যাঁ!দুনিয়ার সব বুদ্ধি তো আল্লাহ খালি তোমাকেই দিয়েছে।
নিশু:রাগছো কেন?…একবার ভাবো কেউ আমাদের মাঝ রাতে ডাইনিং এ দেখলে সবাই কি ভাববে?
নীল:আর মাঝরাতে আমার ঘরে শুলে তখন বুঝি কেউ কিছু ভাববে না?
নিশু:(ইশশস!ধরা খেয়ে গেলাম!)ঠিক আছে তুমিই বলো কি করবো?
নীল:দয়া করে তুমি তোমার মুখটা কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ রাখো তাহলেই হবে।কে কি ভাববে সেই চিন্তা তোমাকে করতে হবে না।
ওদের খাওয়া শেষ হতেই দেখলো নীলের বাবা ইমতিয়াজ সাহেব সিঁড়ি দিয়ে নামছেন।
নিশু:নীল আংকেল আসছে!
নীল:তো?
নিশু:আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।
নীল:তুমি লজ্জাও পাও নাকি নিশু?জানতাম না তো!কোনদিন থেকে তোমার এত উন্নতি হলো?
নিশু:ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
নীল:😂আচ্ছা ঠিক আছে।
ইমতিয়াজ সাহেব:এই যে ইয়াং পিপল তোমরা এত রাতে এখানে কি করছো?
নীল:খেতে এসেছি!তুমি এত রাতে নিচে নামলে যে?
ইমতিয়াজ সাহেব:পানি নিতে এসেছি!..খেতে এসেছিস মানে?
নীল:নিশু রাতে আমার ওপর রাগ করে খায় নি তাই!
নীলের কথা শুনে ইমতিয়াজ সাহেব অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন।
নীল:আস্তে বাবা! তোমার হাসির শব্দে সবাই উঠে যাবে তো।
নিশু:😮(নীলের বাচ্চা!আমার মান ইজ্জত সব শেষ!)
ইমতিয়াজ সাহেব:তা নিশু মামনি রাগ করেছে কিসের জন্য?..তুই নিশ্চই কিছু বলেছিস!
নিশু:শুধু কিছু না আংকেল অনেক কিছু বলেছে!
ইমতিয়াজ সাহেব:তাই নাকি নীল?
নীল:এসব কথা এখন থাক!চলো ঘুমাতে যাবে।
ইমতিয়াজ সাহেব:তোরা যা আমি পানি নিয়ে আসছি।
নিশু:আমাকে দিন আংকেল আমি নিয়ে আসছি।নিশু পানি আনতে গেলেই ইমতিয়াজ সাহেব নীলকে বললেন…তুই সারাক্ষণ মেয়েটাকে ভয়ে ভয়ে রাখিস না?
নীল:তুমি জানো না বাবা ও আমাকে কি পরিমান জ্বালায়। মাথাটা একেবারে খারাপ করে দেয়!
ইমতিয়াজ সাহেব আবারও ঘর কাঁপানো হাসি দিয়ে উঠলেন।
নীল:হাসছো যে?
ইমতিয়াজ সাহেব:তুই এখনো ওকে ভালোবাসিস?
নীল হেসে ফেললো উনার কথা শুনে।
ইমতিয়াজ সাহেব:হাসছিস কেন?
নীল:ও কি বলে জানো?
ইমতিয়াজ সাহেব:কি বলে?
নীল:আমি নাকি ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি!
ইমতিয়াজ সাহেব সাহেব আবারও হো!হো! করে হেসে উঠলেন।
ইমতিয়াজ সাহেব:তা আমার ছেলে কি বলে?
নীল মুচকি হাসি দিয়ে বললো..তোমার ছেলেও তাই বলে!
নিশু পানি নিয়ে আসতেই দেখলো নীল আর ইমতিয়াজ সাহেব হাসাহাসি করছেন।
ওকে দেখেই হাসি থামিয়ে দিয়ে ইমতিয়াজ সাহেব বললেন…এই যে নিশু মামনি এসে গেছে,চল ওপরে চল।
নীল ফ্রেশ হয়ে বেররোতেই দেখলো..নিশু খাটের ওপর বসে আছে।ইমতিয়াজ সাহেবের ঘরে পানি দিয়েই সোজা নীলের রুমে চলে এসেছে ও।
নীল:কি ব্যাপার তুমি ঘুমাতে যাও নি?
নিশু পা দোলাতে দোলাতে বললো…ঘুমাতেই তো এলাম।
নীল:দেখো নিশু…
নিশু ওকে শেষ করতে না দিয়ে বললো..আরেকটু কাছে এসে বসো আরো ভালো করে দেখতে পারবো।
নীল:😐তুমি কি আমার কথা শুনবে?
নিশু:ঠিক আছে বলো।
নীল:এখন প্রায় পৌনে চারটা বাজে।আর কিছুক্ষন পর সকাল হয়ে যাবে।তোমাকে এই ঘরে দেখলে সবাই কি ভাববে বলো?
নিশু:তুমিই তো বলেছো কে কি ভাববে সেসব নিয়ে যাতে আমি মাথা না ঘামাই?
নীল:(উফফফ!আল্লাহ তুমি রক্ষা করো।)আমি তো আরো অনেক কথাই বলি তার কয়টা তুমি শোনো?
নিশু চুপ করে আছে।নীল টাওয়েলটা বারান্দায় ঝুলিয়ে দিয়ে নিশুর পাশে এসে বসলো।
নীল:নিশু?
নিশু:হুঁ?
নীল:কি হলো চুপ করে গেলে যে?
নিশু:থাকি না নীল?..প্লিজ?
নীল:বড্ড জ্বালাও তুমি নিশু!
নিশু:তারমানে পারমিশন পেয়ে গেছি?
নীল আর না করতে পারলো না।
নীল:ঠিক আছে!
বলতেই দেরী কিন্তু নিশুর ওর গলা জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে দেরী নেই।
নীল:তুমি শুয়ে পড়ো আমি আসছি।
নিশু আর কোন প্রতিবাদ করলো না।চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
অনেক্ষন পর নীল রকিং চেয়ার ছেড়ে নিশুর পাশে এসে বসলো।নিশু ঘুমিয়ে পড়েছে।গুটিসুটি মেরে বিছানার একপাশে শুয়ে আছে।নীল চাদরটা সরিয়ে আস্তে করে ওর পাশে ঢুকেই ওকে বুকের ভেতর নিয়ে নিলো।নিশুও ঘুমের ঘোরেই নীলকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
নীল ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়েই নিশুর সারা গালে, কপালে,চোখে অসংখ্য চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিলো।তারপর ঠোঁটের কোনে প্রশান্তির হাসি ফুটিয়েই চোখ বুঝলো।
ভোর হতেই নীলের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।পাশে তাকাতেই দেখল নিশু ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।ও আলতো করে নিশুর কপালের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে ঠোঁট ছুয়ে দিলো।
নিশু নড়েচড়ে উঠতেই নীল ওকে সরিয়ে সাবধানে উঠে পড়লো।
ফ্রেশ হয়ে এসেই নিশুকে কোলে নিয়ে ইশুর রুমের দিকে পা বাড়ালো।ইশু রুমে নেই।খুব ভোরেই ছাদে যায়।নীল নিশুকে শুইয়ে দিয়ে ওর গায়ের ওপর চাদরটা মেলে দিয়েই বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।যাওয়ার আগে ফিরে এসে নিশুর দুগালে আলতো করে দুটো চুমু দিয়েই বেরিয়ে এলো।
নাশতার টেবিলে নিশু মুড অফ করে আছে।
নীল:নিশু আজকে কিন্তু আমাদের তাড়াতাড়ি অফিসে পৌঁছাতে হবে।
নিশু:এত তাড়া কিসের তোমার হ্যাঁ?
নীল:ভুলে গেছো?আজকে নতুন কন্ট্রাক্ট পেপার সাইন করতে হবে।
নিশু:তুমি কন্ট্রাক্ট এর মানে জানো?(ধমক দিয়ে)
নীল বুঝতে পারছে না হঠাৎ নিশুর কি হলো।ইশু মুখ টিপে টিপে হেসেই যাচ্ছে।
নীল:এই ইশু তুই কিছু জানিস?সকাল সকাল আবার ক্ষেপেছে কেন?(ফিসফিস করে)
ইশু:ছাদে থেকে আসার পর দেখলাম ও খাটে বসে বসে তোকে বকছে।
নীল:কেন বলতো?
ইশু:তুই নাকি রাতে ওকে ফাঁকি দিয়ে আমার ঘরে দিয়ে গেছিস😂।
নীল ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটিয়ে বললো…তুই কি বললি?
ইশু:আমি বলেছি তুই সকালে দিয়ে গেছিলি।আমাকে ধমক দিয়ে বললো…তুই চুপ থাক!ভাইয়ের হয়ে একদম ওকালতি করতে আসবি না!
নীল:তাহলে তো আরেকটু জ্বালানো যায় কি বলিশ?সারাদিন তো আমার মাথা খারাপ করে দেয়!
ইশু:ভাইয়া আজকে মনে হচ্ছে এমনিতেই তোর অবস্থা খারাপ করে দেবে😂।
নিশু:এই ইশু তুই ওর সাথে কি ফিসফিস করছিস?..সারাক্ষণ ভাইয়ের তালে তালে নাচচ্ছে।
নীল:কি হলো নিশুবেবি তুমি এমন করছো কেন?
নিশু:খবরদার আমাকে নিশুবেবি নিশুবেবি করবে না!
নীল:কেন জান?
ইলারা বেগম নিচে নামতেই দেখলো নীল নিশুকে রাগাচ্ছে আর ইশু হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
ইলারা বেগম নীলকে ধমক দিয়ে বললেন…তোর বাপ তো এমন ছিলো না?তুই এমন হলি কি করে?
নীল হাসতে হাসতে বললো…আমার বাবার ভাগ্য ভালো যে তোমার মত একটা বউ পেয়েছে।আমার তো আর সেই কপাল নেই তাই!
ইলারা বেগম ওর কথা শুনে মুখ টিপে হাসছেন। নীল:তুমি জানো মা তোমার এই হাসি দেখেই বাবা তোমার প্রেমে পড়েছিলো?
ইলারা বেগম ওর পিঠে হালকা চাপড় মেরে বললেন…পাঁজি ছেলে!আমাদের তো এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ!তোর বাবা আমার প্রেমে পড়লো কবে?
নীল:যখন তোমাকে দেখতে গিয়েছিলো।
ইলারা বেগম:অসভ্য ছেলে!অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে না?
নীল:ওহো!…নিশু ওঠো তাড়াতাড়ি আমাদের দেরী হয়ে যাচ্ছে।
#Love_Right❤💕❤
#অরিত্রিকাআহানা
#Part_24
ওরা অফিসে পৌঁছাতেই দেখলো রুশা নীলের রুমে বসে আছে।নীলকে দেখেই দৌঁড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো।নিশু রাগে কটমট করে নীলের দিকে চেয়ে আছে।নীল তাড়াতাড়ি রুশাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো..কি করছো রুশা?বিয়ের আগেই ডিভোর্স করিয়ে দেবে নাকি?
রুশা:মানে?
নিশু:মানে আমি বোঝাচ্ছি!…লজ্জা শরম তোমার কিচ্ছু নেই?
রুশা:নীল দেখেছো?
নিশু:কি দেখবে নীল?আমাকে দেখেই তো কুল পায় না তোমাকে দেখার টাইম আছে নাকি?
নীল:(রুশাকে দেখলেই এমন করে কেন এই মেয়ে আল্লাহই জানে?)
রুশা:তুমি কাকে কি বলছো জানো?
নিশু:কেন নিজেকে চিনতে পারছো না?
রুশা:আশ্চর্য!
নিশু:কিসের আশ্চর্য?আশ্চর্য তো হবে তখন যখন তোমাকে আমি ছয়তলা দেখে ধাক্কা মেরে ফেলে তোমার হাত পা সব গুড়ো করে দেবো!অসভ্য মেয়ে একটা!
নীল:আহ্! নিশু?
নিশু:তুমি চুপ করো!(ধমক দিয়ে)
রুশা:নীল ও তোমার সামনে আমাকে এতগুলো কথা বলছে আর তুমি দাঁড়িয়ে দেখছো?
নিশু রাগে টেবিলের ওপর থাকা ফ্লাওয়ার ভাসটা হাতে নিয়ে বললো..তুমি যদি এইমুহূর্তে এই রুম থেকে না বেরিয়েছো তাহলে সত্যি বলছি বাড়ি মেরে তোমার মাথাটা দুভাগ করে দেবো আমি!
রুশা:নীল এতকিছুর পরও তুমি এই মেয়েটাকে আবার তোমার লাইফে কি করে এক্সেপ্ট করলে আমি বুঝতে পারছি না?
নিশু:সেই কৈফিয়ত তোমাকে দেবে নাকি?…যাও বেরোও বলছি!আর যদি নীলের আশেপাশে দেখি তোমার একদিন কি আমার একদিন।
রুশা:নীইইল?(অধৈর্য গলায়!)
নীল:তুমি এখন এখান থেকে যাও রুশা।দেখছো তো তোমাকে দেখে উল্টোপাল্টা রিয়েক্ট করছে?
রুশা:নীল তুমি?
নিশু:আবার নীল?(ধমক দিয়ে)
রুশা রাগে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো।নিশু এখনো ফ্লাওয়ার ভাসটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নীল ভালো করেই বুঝতে পারলো নিশ্চই রুশার সাথে কিছু একটা হয়েছে তা না হলে নিশু শুধু শুধু এমন করবে কেন?কিন্তু নিশু তো ওকে কিছুই বলছে না?তাহলে কি এমন হলো?
নীল:তুমি রুশাকে দেখলেই এমন করো কেন বলতো?
নিশু রাগে ফ্লাওয়ার ভাসটা জোরে আছাড়া মেরে নীলের কলার চেপে ধরে বললো..এই জন্যই বুঝি অফিসে আসার জন্য এত তাড়া দিচ্ছেলে না?
নীল ওর চোখে চোখ রেখে বললো…যা বলছো তা নিজে বিশ্বাস করোতো?
নিশু:একদম কথা ঘোরাবে না।আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
নীল:আরে বাবা, আমি কি জানতাম নাকি ও অফিসে আসবে?আমি তো কন্ট্রাক্ট…
নিশু:একদম মিথ্যে কথা বলবে না?
নীল:তুমি পাগল হয়ে গেছো নিশু!
নিশু:হ্যাঁ আমি পাগল!রুশা খুব ভালো তাই না?
নীল:কি আশ্চর্য!
নিশু:আশ্চর্য তো আমি হয়েছি আমার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি ওকে জড়িয়ে ধরেছো কোন সাহসে?
নীল:আমি কখন জড়িয়ে ধরলাম?ঐ তো…
নিশু:ও তোমাকে জড়িয়ে ধরার সাহস কই পায়?…অসভ্য!লুচু!তোমাকে আমি ভালো করেই জানি মেয়ে দেখলেই হুশঁ থাকে না।
নীল আচমকা নিশুর কোমর চেপে ধরে টান দিতেই নিশুর ওর বুকের ওপর আছড়ে পড়লো।নিশু শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নীল ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো..আমি অসভ্য হলে কাল সারারাত আমার বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতে?(ফিসফিসিয়ে)
নিশু ঘোর লাগা দৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকালো।নীল ওর কোমরে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।নিশুর পুরো শরীরে কাটাঁ দিয়ে উঠলো নীলের স্পর্শে।ও কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললো..কি করছো নীল?
নীল:অসভ্যতা করছি!
নিশু যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।নীলকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ওর নেই।মন বলছে মুহূর্তটা যেন থেমে যায়।ও যেন এভাবেই প্রতিটা সেকেন্ড,প্রতিটা ক্ষন নীলের বুকের মধ্যেই থাকতে পারে।
নীল আচমকা ওকে ছেড়ে দিয়ে টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।
নীল:এখন বলো?রুশার সাথে তোমার প্রবলেম টা কি?তুমি তো আর কারো সাথে এমন করো না?
নিশু:কিসের প্রবলেন?আমার সামনে ওর নাম নেবে না তুমি।
নীল:ঠিক আছে নেবো না।কিন্তু আমাকে আগে সত্যি করে বলো ওর সাথে তোমার প্রবলেমটা কি?তুমি নিশ্চই এমনি এমনি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করছো না?
নিশু:আবার ওই রুশা?…সারাক্ষণ রুশা রুশা করো কেন?তুমি রুশাকে ভালোবাসো নাকি আমাকে?
নীল হেসে ফেললো ওর কথা শুনে।
নিশু:হাসছো কেন?
নীল:হাসার মত কথা বললে হাসবো না?
নিশু:এখানে হাসির কি হলো?
নীল:এই যে তুমি বারবার রুশার কথা বলো?
নিশু:তো?
নীল:আমার সব তো তুমি আগেই দখল করে নিয়েছো তাহলে রুশা আসবে কোথা থেকে?
নিশু:তাহলে রুশা বারবার তোমার কাছে আসবে কেন?
নীল:আরে বাবা ও আমার কাজিন!
নিশু:কাজিন??কাজিন হলেই হুটহাট করে জড়িয়ে ধরতে হবে?চুম্মা খেতে হবে?
নীল:😮ও কখন আমাকে চুমু দিলো?
নিশু:এখন দেয় নি আগে তো দিয়েছিলো?নিজের চোখেই তো তোমাদের রাসলীলা দেখেছি!
নীল:ছিহ!নিশু তুমি পাগলের মত কি উল্টোপাল্টা বকছো?
নিশু ইচ্ছে করে নীলকে আরেকটু রাগানোর জন্য বললো…সত্যি করে বলতো ও কখনো তোমাকে চুমু খেয়েছে?
নীল রাগে দাঁতমুখ খিঁচে বললো..একদম বাজে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি।
নিশু:আমি বললেই দোষ!আর রুশা?ও খুব ভালো তাই না?
নীল:তুমি বারবার রুশাকে টানছো কেন আমাদের মাঝে?
নিশু:আগে আমাকে বলো ও তোমাকে জড়িয়ে ধরবে কেন?খুব ভালো লেগেছে তাই না?
নীল:উফফফ!আমার হয়েছে যত জ্বালা।সব পাগল এসে আমার কপালেই জোটে!
নিশু:আমাকে পাগল বলবে না খবরদার।সত্য কথা বলেছি বলে আমি পাগল হয়ে গেছি না?
নীল:তো এখন বলো তোমার কি মনে হয় আমি রুশাকে ভালোবাসি?
নিশু:সেটাই তো আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি।
নীল:কেন তুমি জানো না?
নিশু:কথা ঘোরাবে না।প্রশ্ন আগে আমি করেছি।
নীল:আরে বাবা আমি রুশাকে ভালোবাসতে যাবো কোন দুঃখে বলতো?
নিশু:দুঃখে তো আর ভালোবাসবে না সুখেই বাসবে।
নীল:তুমি কিন্তু আমার মাথা গরম করে দিচ্ছো নিশু?
নিশু:আমি কথা বললেই তো তোমার মাথা গরম হয়ে যায়।
নীল:তাহলে বলো কেন এমন কথা?
নিশু:বলবো।একশোবার বলবো।সত্যিই তো বলেছি!মিথ্যে কিছু তো আর বলি নি।
নীল:তুমি এই মুহূর্তে আমার সামনে থেকে সরে যাও নিশু।আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।আমি চাচ্ছি না সকাল সকাল তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে।
নিশু:কেন আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে রুশাকে ডাকবে নাকি রুমে?
নীল:তোমাকে আমি বেরোতে বলেছি?(ধমক দিয়ে)
নিশু:না যাবো না।
নীল:তুমি না গেলে আমিই বেরিয়ে যাবো।
নিশু:ঠিক আছে যাচ্ছি।
নীল:হ্যাঁ!যাও।আগামী তিনদিন আমি যেন তোমাকে আমার আশেপাশে না দেখি!অসভ্য মেয়ে একটা!
নিশু দুপ করে নীলের চেয়ারের ওপর বসে বললো..তাহলে তো আর বেরোচ্ছি না।
নীল:ঠিক আছে তাহলে আমিই যাচ্ছি।
নিশুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীল রেগে বেরিয়ে গেলো।নিশু বসে বসে হাসছে।বেশ হয়েছে!এত কিছু করলো তবুও একবার ভালোবাসি বললো না ত্যাড়াটা!আর কতদিন যে রুশাকে সহ্য করতে হবে কে জানে?
আজকে সারাদিন নিশু আর নীলের সামনে যায় নি।নীল অফিস থেকে বেরোতেই লারা জানালো নিশু আগেই আয়াতের সাথে চলে গেছে।
বাসায় এসে বেল দিতেই ইশু দরজা খুলে দিলো।নীল সোজা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।নিশু একবারও গেলো না ওর রুমে।
খেতে বসেই নিশু নীলের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি দিয়েই বসে পড়লো।খাওয়া শেষ করে উঠে যাওয়ার সময়ও একই কাজ করলো।
নীল:😐
নীল খাটের ওপর বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো।ইশু বাইরে থেকে ডাক দিতেই ল্যাপটপ পাশে রেখে দিলো।মনে মনে ধারনা করে ফেলেছে ইশু কি জন্য এসেছে।
ইশু:ঘুমিয়ে পড়েছিস নাকি?
নীল:না!..তুই হঠাৎ?বিচ্ছুটা কোথায়?
ইশু:ঘুমাচ্ছে।
নীল:কখন ফিরেছে বাসায়?
ইশু:বিকেলবেলা।আয়াতের সাথে এসেছিলো।
নীল:তোকে কিছু বলেছে?
ইশু:হ্যাঁ।তুই নাকি ওকে তিনদিন মুখ দেখাতে নিষেধ করেছিস?
নীল:হুম!
ইশু:কেন?রুশার জন্য?
নীলের আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
নীল:কে বলেছে তোকে এসব?..ও?
ইশু:হুম।
নীল:ও কি করেছে সেগুলো বলে নি?
ইশু:কি করেছে ও?
নীল ইশুকে সব খুলে বলতেই ইশুর গালে হাত।
ইশু:বলিস কি?রুশার এতবড় সাহস?
নীল:😐(ঘুরেফিরে সেই রুশা!)আরে বাবা! তোরা সবাই রুশার পেছনে পড়েছিস কেন আমি বুঝতে পারছি না?
ইশু:(শাঁকচুন্নিটা কি করেছে শুনলে সবার আগেই তুই নিজেই ওকে ধাক্কা মেরে বের করে দিতি ভাইয়া!)
নীল:আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম।ও রুশাকে সহ্য করতে পারে না।কিন্তু বারবার নিজের সাথে রুশার কম্পেয়ার কেন করে বলতো?…ও জানে না?ও আমার ঠিক কতখানি জুড়ে আছে?আমি কখনো বলেছি আমি রুশাকে ভালোবাসি?
ইশু:সেটা ওকে বুঝিয়ে বললেই তো হয়!
নীল:ও আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছে?সারাক্ষণ বকবক করে আমার মাথাটা খারাপ করে দেয়।
ইশু:ঠিক আছি আমি আসছি।
পরেরদিন সকালবেলা নীল অফিসে বসে কাজ করছিলো।নিশু সকালেই আয়াতের সাথে বেরিয়েছে।অফিসে আসে নি এখনো।নীল দুবার ফোন দিয়েছিলো ওকে ধমক দিয়ে ফোন রেখে দিয়েছে।
ও ফাইল দেখছিলো এমন সময় নিশু এসে ভেতরে ঢুকলো।
নীল ফাইল থেকে মুখ না উঠিয়েই বললো…এত দেরী হলো যে?
নিশু:জরুরি কাজে গিয়েছিলাম।
নীল:কি সেই জরুরী কাজ?
নিশু:আমাদের বিয়ের কার্ড ছাপাতে।
নীল ফাইল রেখে নিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে নিশুর মাথায় সত্যিই কি চলছে।এই গতকাল থেকে ওকে চুপচাপ দেখেই নীল বুঝে গিয়েছিলো নিশ্চই কোন শয়তানি বুদ্ধি চলছে এই মেয়ের মাথায়।
নিশু ওর হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিলো।
নীল:কি এটা?
নিশু:বিয়ের কার্ড।আমাদের!
নীল হাতের কার্ড টা টেবিলের ওপর রেখে বললো..প্লিজ নিশু!আমি কাজ করছি এখন।
নিশু:হ্যাঁ কাজ নিয়েই থাকো তুমি।পারলে বরের নামটা একবার দেখেই নিয়ো।
নীল:কেন বলতো?
নিশু:নিশু সেটা দেখলেই বুঝতে পারবে।
নিশু বেরিয়ে যেতেই নীল কার্ডটার দিকে তাকিয়ে আপন মনে কিছুক্ষন হাসলো।সত্যিই এবার বিয়েটা করা উচিৎ।নিশুকে এভাবে দূরে সরিয়ে রাখা সত্যিই অনেক কষ্টকর।ও মুচকি একটা হাসি দিয়ে কার্ডটা খুলতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেলো।বরের নাম আয়াত রহমান।
নীলের রাগে মাথা কাজ করছে না।এটা কি ধরনের মজা?রাগে ওর ফর্সা মুখ পুরো লাল হয়ে গেছে।
রুম থেকে বেরোতেই দেখলো অফিসের সব স্টাফদের হাতে কার্ড।নিশু আর আয়াত দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করছে।
নীল কোন কথা না বলে নিশুর হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলো।ওকে ভেতরে ঢুকিয়েই দরজা লক করে দিলো।
নিশু:কি করছো নীল!ছাড়ো আমাকে।
নীল ওকে ছেড়ে দিয়েই রুমের সব কিছু ভাংচুর করা শুরু করে দিলো।সব জিনিসপত্র তছনছ কর ফেলছে ও।
নিশু ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু কোন লাভ হলো না।
নিশু:নীল!আমার কথা শোনো প্লিজ!
নীল:শোনার কত তুমি কিছু রাখো নি নিশু।
নিশু:নীল আমি মজা করার…
নীল ওকে শেষ করতে না দিয়ে রাগে চিৎকার দিয়ে বললো..মজা হোক আর যাই হোক তুমি এতবড় সাহস পেলে কোথায়?
নিশু:নীইইল?
আয়াত বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে।নীলের কোন হুঁশ নেই।ও রুমের সব তছনছ করে ফেলেছে।
নিশু ভেতর থেকে দরজা খুলতেই আয়াত ভয় পেয়ে গেলো।স্টাফরা সবাই ভয়ে বাইরে দাড়িয়ে আছে।আয়াত সবাইকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ইশারা দিলো।
আয়াত:এই নীল?এবার থাম প্লিজ!
নীল:তোরা আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা আয়াত।
নিশু আয়াতের দিকে অসহায়ভাবে চেয়ে আছে।
আয়াত:আমি আগেই বলেছিলাম নিশু!তুমি আমার কথা শোননি!এবার ওকে থামাও?
নিশু:ইশুকে একটা ফোন দাও না!
আয়াত ইশুর নাম্বারে ডায়াল করে নিশুকে ধরিয়ে দিলো।
ইশুকে সব খুলে বলতেই ইশু আয়াতকে বেরিয়ে যেতে বললো।
ইশু:এবার দরজা বন্ধ করে তুই তোর কাজ কর!
নিশু:কি করবো আমি?
ইশু:সেটা আমি কি জানি?আমি ফোন রাখছি।
নিশু:প্লিজ ইশু?বলনা আমি কি করবো?
ইশু:আরে বাবা!তুই জাপটে ধরলেই তো ও শান্ত হয়ে যাবে।
নিশু:যা রাগ উঠেছে আমাকে ধাক্কা দিয়ে পাঁচতলা থেকে ফেলে দিবে!
ইশু:কান্ড যখন বাধিয়েছিস তখন শাস্তিতো পেতেই হবে।রাখছি আমি!
নিশু সাহস করে নীলের দুহাত চেপে ধরে বললো…নীল আমার দিকে তাকাও!আমার কথাটা একবার শোনো।
নীল:হাত সরাও নিশু।
নিশু:আগে আমার কথা শোনো।
নীল রাগে চিৎকার দিয়ে বললো…কি শুনবো তোমার কথা?কি বলবে তুমি?মজা করেছো আমার সাথে?তাহলে অফিসের প্রত্যেকটা স্টাফের হাতে কার্ড কেন?তোমার কি মনে হয় নীলাস হাসান এতটা সস্তা? তুমি ভাবলে কি করে আয়াতের সাথে বিয়ের কার্ড ছাপানোর পরও আমি তোমাকে ক্ষমা করবো?তাই বলছি তুমি আমার সামনে থেকে…
ও পুরো কথা শেষ করতে পারলো না।তার আগেই নিশুর ওর ঠোঁটদুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলো। নীল রাগে ওকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।নিশুও নাছোড়বান্দা ও শক্ত করে নীলের গলা জড়িয়ে ধরলো।
নীল কিছুটা শান্ত হয়েছে বুঝতে পেরে নিশু ওকে ছেড়ে দিলো।নীল হাত দিয়ে ওর ঠোঁট মুছছে।নিশু এগিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে বললো…এত রাগ কই রাখো বলতো?কতবার করে বলছি আমার কথাটা একবার শোনো তা না করে সব ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলেছে।
নীল:ছাড়ো আমাকে!(শান্ত গলায়)
নিশু:আমি তো তোমার মত না যে যখন ইচ্ছে ধরবো যখন খুশি ছেড়ে দেবো।সারাক্ষণ আমাকে মাথামোটা বলো!নিজে কি?আমি বলেছি বরের নাম দেখতে বরের নামটাই দেখেছে।কনের নাম দেখেছো?
নীল:মানে?
নিশু:নিজেই দেখো!
নীল:তুমি আমাকে ছাড়লে তবেই তো দেখবো?
নিশু ওকে ছেড়ে দিতেই নীল কার্ডটা খোঁজা শুরু করে দিলো।
নীল:খুঁজে পাচ্ছি না।
নিশু দরজা খুলে আয়াতকে ডেকে নিয়ে আসলো।
নিশু:তোমার বিয়ের কার্ডটা দাও তো।
আয়াত কার্ডটা বের করে নীলের হাতে দিলো।
নীল:ইলারা?মানে লারা কনে?
আয়াত:হ্যাঁ ভাই!তবে তুই বললে লারাও বাদ!আরেকটু হলে আমার জানটাই চলে যেত ভয়ে।
নীল:আমাকে আগে বলিস নি কেন?
নিশু:সময় দিয়েছো তুমি?
নীল:😐তোমাকে তো আমি পরে দেখে নিচ্ছি।
আয়াত:তোরা দুজন দুজনকে দেখতে থাক ভাই।আমি আসি!
নীল:প্ল্যানটা কার ছিলো আয়াত!
নিশু বললো আয়াতের,আয়াত বললো নিশুর😂শেষে দুজনেই একসঙ্গে বলে উঠলো…ইশুর!
নীল আয়াতকে আর বেশি কিছু বললো না।
আয়াত:নিশু তুমি কি করে এই ডিজাস্টার থামালে বলতো?
নীল আড়চোখে নিশুর দিকে তাকালো।
নিশু:আবার দেখাবো নীল?
আয়াত:দেখাবে মানে?
নিশু:😁সেটা নীলকেই জিজ্ঞেস করো না?
নীল:বাজে বকা বন্ধ করো!
আয়াত যা বোঝার বুঝে গেলো।নীল লারাকে রুমে ডেকে পাঠালো।
লারা:আসবো স্যার?
নীল:আসুন।
লারা:জ্বী স্যার!
নীল:ম্যানেজার সাহেবকে বলুন এসব পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে।
লারা রুমের চারপাশে চোখ বোলাতেই দেখলো সব জিনিসপত্র ভেঙ্গে একেবারে চুরমার করে দিয়েছে নীল।
আয়াত:কি হলো হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?কথা কানে যায় না?😜
লারা ওকে একটা ভেংচি দিয়েই বেরিয়ে গেলো।
আয়াত:আমি এবার আসি নীল!
আয়াত বেরোনোর কিছুক্ষন পরই নীলও বেরিয়ে গেলো।নিশু ওর পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করার জন্য।নীল ওর একটা কথারও জবাব না দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
রাত সাড়ে আটটার দিকে ইশুর ডাকে নীলের ঘুম ভাঙলো।
ইশু:ভাইয়া নিশু এখনো ফেরে নি!
নীল:ফেরে নি মানে?কয়টা বাজে এখন?
ইশু:সাড়ে আটটা।
নীল সেই দুপুরবেলা এসে ঘুমিয়েছিলো।ইশুকে নিষেধ করে দিয়েছিলো ওকে যাতে কেউ ডিস্টার্ব না করে।নিশু ফেরেনি শুনে তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো।
নীল:আমাকে আরো আগে ডাকিস নি কেন?
ইশু:আমি ভেবেছিলাম চলে আসবে।কিন্তু এখন তো টেনশন হচ্ছে।আমি আয়াতকে একটা ফোন দিয়ে বরং জিজ্ঞেস করি ওর সাথে আছে কি না?
নীল:আমার মনে হয় না আয়াতের সাথে আছে।
ইশু:তুই কি করে জানলি।
নীল ভালো করেই জানে নিশু আজকে বাইরে কোথায় যাবে না।নীলকে মানানোর জন্য সোজা বাসাতেই আসতো।
নীল:আমি তোকে পরে বলছি!এখন আসছি।
গাড়ির চাবি নিয়ে ও সোজা অফিসের দিকে ছুটলো।নিশুর নাম্বারে ফোন করতেই সুইচড অফ বলছে।টেনশনে নীলের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো নিশুকে অফিস থেকে বেরোতে দেখেছে কি না?দারোয়ান দেখে নি বলতেই ও গেটের চাবি নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।পুরো অফিস অন্ধকার।ও সুইচ অন করলো কিন্তু বাতি জ্বলছে না।পুরো অফিসের পাওয়ার কাট হয়েছে।
নিশু নাম ধরে কয়েকবার ডাক দিলো কিন্তু কোন সাড়া নেই।ও দারোয়ান কে ফোন দিয়ে বললো সব রুমের যাতে চাবি নিয়ে আসে।ওরা দুজন মিলে একেএকে সব রুম চেক করে ফেললো বাকী রইলো শুধু রুশার রুম।
নীলের টেনশন হচ্ছে রুশা কিছু করে নি তো নিশুর সাথে?তালা খুলতেই ও ভেতরে ঢুকলো।অন্ধকারে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না।মোবাইলের ফ্ল্যাশ দিয়ে রুমের চারদিকে আলো ধরতেই ওর পুরো শরীরের রক্ত হীম হয়ে গেলো।নিশু সেন্সলেস অবস্থায় চেয়ারে হেলান দিয়ে পড়ে আছে।হাত মুখ বাধা।দারোয়ানকে পানি নিয়ে আসতে বলেই ও দৌঁড়ে নিশুর কাছে গিয়েই প্রথমে ওর হাত পায়ের বাধন খুলে দিলো।
নিশুর চোখেমুখে পানির ছিঁটা দেওয়ার পরও যখন ওর জ্ঞান ফিরছে না তখন ও দায়োয়ানকে বেরিয়ে যেতে বলেই আর্টিফিশিয়াল রেস্পিরেশনের দিলো।কিছুক্ষণ পরই নিশুর রেস্পন্স পেয়ে ওর কলিজায় পানি এলো।আরেকটু হলে ওর জানটাই চলে যেত।নিশু চোখ খুলতেই নীল ওকে বুকের সাথে চেপে ধরে অসংখ্য চুমুতে ওর সারা গাল ভরিয়ে দিলো।নিশু ওর বুকের ভেতর মাথা রেখেই ডুঁকরে কেঁদে উঠলো।
নীল ওকে আরো শক্ত করে বুকের ভেতর চেপে ধরে বললো….কিচ্ছু হয় নি নিশুপাখি!এই যে দেখো আমি তোমার পাশেই আচ্ছি।কিচ্ছু হয় নি!কান্না করে না কলিজাটা আমার!নীল তোমার কাছেই আছে।
দারোয়ানকে গেটে তালা দিতে বলেই ও নিশুকে কোলে তুলে নিলো।
গাড়িতেই নিশু আবার জ্ঞান হারালো।
বাসায় পৌঁছেই নীল ওকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।ইলারা বেগম বাসায় নেই।উনার কোন আত্মীয়ের বাসায় গেছেন।নীল নিশুকে নিয়ে ঢোকার একটু পরেই আয়াত ডাক্তার নিয়ে হাজির হলো।
ডাক্তার বেরিয়ে যেতেই ইশু উদ্বিগ্ন গলায় নীলকে জিজ্ঞেস করলো.. নিশুর কি হয়েছে ভাইয়া?
নীল:জানি না আমি কিচ্ছু জানি না।
আয়াত:এত টেনশন করার কিছু নেই।ওর এমনিতেই ক্লসট্রোফবিয়া আছে।তবে এখন আর কোন ভয় নেই।
ইশু:কিন্তু ও রুশার রুমে কি করছিলো?
নীল:তুই রুশাকে এক্ষুনি ফোন দিয়ে বল বাসায় আসতে(কঠিন গলায়)।