Love Right ! Part- 20
নীল:প্লিজ নিশু দয়া করে এবার এসব পাগলামি বন্ধ করো!
নিশু:(পাগলামির দেখেছো কি?)
মিটিং শেষ হতেই বুড়ো ভদ্রলোক নিশুকে ইশারা করলো।নিশু নীলের দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো…যাই!দেখা করে আসি।
নীল:😐
ইশতিয়াক সাহেব:আপনি বোধহয় তখন আমাকে পার্সনাল কিছু বলতে চেয়েছিলেন?
নিশু:জ্বি অনেক বেশি পার্সনাল।
ইশতিয়াক সাহেব:হুম!বলুন?
নিশু:কানে কানে বলি?
নীল আর ম্যানেজার জানালা দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
ম্যানেজার:স্যার ম্যাডাম উনার কানে কানে কি বলতে চাইছেন?
নীল:আপনি আগে তাড়াতাড়ি মেডিকেল সেন্টারে ফোন করে ডক্টরকে আসতে বলুন।
ম্যানেজার:কেন স্যার?
নীল:কারন আপনার ম্যাডাম এখন কানে কানে উনাকে যা বলবেন বুড়ো ভদ্রলোক সেটা সহ্য করতে পারবে না।
দুইঘন্টাপর,,
ডাক্তার ইশতিয়াক সাহেবের প্রেশার চেক করে দেখছেন নরমাল হলো কি না!
নীল ইশতিয়াক সাহেবের পাশে বসে আছে।উনাকে একেবারে বিধ্বস্ত লাগছে।নিশু নীলের পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।নীল কয়েকবার ওর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়েছে।নীল তাকাতেই অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
ম্যানেজার ইশতিয়াক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন…ম্যাম আপনাকে কি বলেছেন স্যার?
নিশু বেশ উৎফুল্ল হয়ে বললো…আমি বলি??
নীল ওকে টেনে বের করে নিয়ে গেলো।ভদ্রলোকের এখনো ঠিক মত হুশঁ ফেরে নি এই মেয়ে উনাকে আবার বেঁহুশ করার প্ল্যান করছে।
নীল:এগুলো কোন ধরনের অসভ্যতা নিশু?
নিশু হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে।
নীল ধমক দিয়ে বললো…আমার কথা উত্তর দাও!…উনি বয়স্ক মানুষ উনার সাথে এসব মজা করার কোন মানে হয়?
নিশু:আমাকে ধমকাচ্ছো কেন?..বুড়ো এত ভালো হলে আমার একা সাথে কথা বলতে চাইলো কেন?
নীল ওর কথা কান না দিয়ে বললো…দোষ আমারই আমি আদর দিয়ে দিয়ে তোমাকে মাথায় উঠিয়েছি!
নিশু:………
নীল:তুমি উনাকে কি বলেছো?
নিশু:বলবো না।
নীল:আমি কিন্তু তোমাকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি নিশু!
নিশু:বলছি তো!…এত ধমকানোর কি আছে!
নীল:সহজে বললে তো তোমার কোন কথা কানে যায় না।
নিশু:আমি শুধু উনাকে এই কথাটাই জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম উনি এত সুন্দর বেবি বাম্প বানালো কি করে?
নীল:তোমার মাথায় কি বুদ্ধিশুদ্ধি কিচ্ছু নেই??….উনি একজন পুরুষ মানুষ উনার বেবি বাম্প আসবে কোথা থেকে?
নিশু:তুমি যাই বলো…খেয়ে কেউ এত সুন্দর ভুঁড়ি বানাতে পারে না।
নীল নিজের চুল নিজে টানছে রাগে।
নিশু:কিন্তু ব্যাটা রুমে ঢুকেই আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছে।তাই আমি দিয়েছি ভালো করে ভেজাল লাগিয়ে।
নীল:কি বলেছো তুমি?
নিশু:😁উনার ওয়াইফ ফোন করেছিলো আমি ফোনটা রিসিভ করে বলেছি উনার স্বামির আরেকটা বাচ্চা হয়েছে!…তাকে দেখেতে হসপিটালে এসেছেন উনি।চাইলে ছবি তুলে পাঠাতে পারি।
নীল:😮কি বললে তুমি?
নিশু:……..
নীল রাগে কেঁদে দেওয়ার অবস্থা।নীলের এমন চেহারা দেখে নিশু বেশ মজা পাচ্ছে।
নীল লম্বা শ্বাস নিয়ে নিশুর দিকে তাকিয়ে বললো…ওকে ফাইন!যা বলেছো বলেছো!…তুমি এখন বাসায় যাও।কাল থেকে তোমার আর অফিসে আসার দরকার নেই।
নিশু:😮
নীল: Now জাস্ট লিভ ফ্রম হিয়ার!
নীল রেগে বেরিয়ে গেলো।সব কিছুর একটা লিমিট থাকা দরকার।ওর সাথে করছে ও সহ্য করে নিবে কিন্তু অফিসে এসব কেউ সহ্য করবে না।কখন কে মুখের ওপর কি বলে দেয়।
নিশু ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।নীল এমন করলো ওর সাথে?…ও তো নীলকে রাগানোর জন্য এসব বলেছিলো।
নিশু নীলের রুমেই বসে আছে।নীল এখন আসে নি।ইশতিয়াক সাহেবের হুঁশ আসতেই উনি সব খুলে বলেন।নিশু উনাকে রুমে নিয়ে বলেছিলো নীলই অফিসের এম.ডি।ও নীলের পি.এ।ভদ্রলোকের আগে থেকেই হাই প্রেসার আছে।নিশুর দুর্ভাগ্য যে ও কথা বলতে বলেতেই উনি বেঁহুশ হয়ে গেছিলো আর নীল ভেবেছিলো ও নিশ্চই উল্টোপাল্টা কিছু বলেছিলো।ইশতিয়াক সাহেবের মুখে সব শুনে নীলের প্রচন্ড রাগ লাগছে নিজের ওপর।রাগের মাথায় কতগুলো কথা শুনিয়ে দিয়ে এসেছে নিশুকে।নিশু যতই পাগল হোক ওর কাজের কোন ক্ষতি করবে না সেটা ওর বোঝা উচিৎ ছিলো।ইশতিয়াক সাহেব চলে গেলে ও নিজের রুমে এসে ঢুকলো।নিশু চুপচাপ বসে আছে মুখ ভার করে।
নীল ওর পাশে গিয়ে বসলো।
নীল:আমাকে মিথ্যে বলেছিলে কেন?
নিশু রাগে রিজাইন লেটার টা ওর হাতে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
নীল:(উফফফ!…রাগ উঠলে কেন যে আমার হুশঁ থাকে আল্লাহই জানে)
নীল গিয়ে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো…আমার কলিজাটার খুব রাগ হয়েছে তাই না?
নিশু রাগে ধমক দিয়ে বললো…ধরবে না আমাকে ছাড়ো!
নীল ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো…আমার জিনিস আমি ধরেছে তাতে কার কি?
নিশু ওর কাছে থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
নিশু:ছাড়ো আমাকে!… আমি তোমার কেউ না!
নীল নিবিড়ভাবে জড়িয়ে নিয়ে বললো…উহুঁ..পুরোটাই আমার!
নিশু:ছাড়ো বলছি!…আমি বাসায় যাবো!
নীল:তো যাও না।
নিশু:তুমি আমাকে ধরে রেখেছো কেন?
নীল:আমার ইচ্ছে!
নিশু:আমার রাগ লাগছে নীল।আমাকে ছাড়ো!
নীল:আমারও তো গুলুগুলু নিশু পাখিটাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে।…অবশ্য তোমাকে গুলুগুলু বলা যায় না।
নিশু:আমাকে কেন বলবে?..তোমার গুলুগুলু তো ঐ রুশা!…লুচু একটা!মেয়ে দেখলেই হুশঁ থাকে না।
নীল ঠোট চেপে হাসি আটকালো ওর কথা শুনে।
নীল:তোমাকে কেমন লাগে জানো?
নিশু:(শয়তানটা জীবনেও ভালো কিছু বলবে না আমি জানি!)…..না আমি জানতে চাই না।
নীল ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসিফিসিয়ে বললো…তুমি হচ্ছো পুরাই এটম বোমা!জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি.. ..আমার হটি বিউটি।
নীল ওর রাগ ভাঙানোর পরিবর্তে উল্টো ওকে রাগিয়ে দিচ্ছে।
নিশু:তুমি একটা অসভ্য!..লুচু!…
নীল ভ্রু নাচিয়ে বললো..আর??
নিশু আর কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না।
নীল:আমি হেল্প করবো?
নিশু:করো।
নীল এবার শুরু করে দিলো….নীল তুমি খুব খারাপ!…অসভ্য,লুচু,বদমাশ, মেয়ে দেখলেই হুশঁ থাকে না।আস্ত শয়তান একটা।(নিশুকে ভেঙাচ্ছে ও)
নিশু:এক্সজেক্টলি!
নীল:আরেকটা বাদ পড়ে গেছে।
নিশু:কি?
নীল একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো…আমার নীল আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতেই পারে না।
নিশু:(ছিহ!অসভ্যটা ওকে এভাবে লজ্জা দিলো?)
নিশু লজ্জায় মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।নীল পেছন থেকে নিশুর হাতের ওপর হাত রেখে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বললো…সরি!
নিশু চুপ করে আছে।
নীল:সরি বললাম তো!
নিশু কিছু না বলে সামনে ফিরে চট করে নীলকে জড়িয়ে ধরলো।নীলের বুকে মাথা দিয়ে চুপ করে আছে।
নীল:তোমাকে মানানো ভীষণ সোজা নিশু!
নিশু:জড়িয়ে ধরেছি বলে ভেবে নিয়েছো নাকি যে আমি গলে গেছি?মোটেও না!
নীল:তাই??
নিশু:হ্যাঁ তাই!…তুমি কি ভেবেছো নিশিতা জামানের রাগ ভাঙানো এত সহজ?
নীল:উফফফ নিশু!…তোমার তো ভীষণ রাগ!(মুচকি হেসে)
নিশু:আমি মজা করছি না নীল!
নীল:ঠিক আছে বলো নিশিতা জামানের রাগ ভাঙানোর জন্য কি করতে হবে?
নিশু:আমি কেন বলবো?…তুমি নিজে চেষ্টা করে দেখো ভাঙাতে পারো কি না!
নীল ওর ডানহাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে গভীরভাবে একটা চুমু খেলো।
নীল:আমার কলিজাটার যত রাগ আছে নীলের ওপর সব দূর করে দেবে নীল!
নিশুর পুরো কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে গেলো নীলের কথা শুনে।নীলের মুখ দিয়ে বোমা ফাটিলেও কিছু বের করা যায় না।কিন্তু ওর এই কথাটা নিশুর একেবারে কলিজায় গিয়ে লাগলো।নীলের রাগ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।ও তো আর জানতো না যে নিশু ওকে রাগানোর জন্য মিথ্যে বলেছিলো।
নিশু:নীল??
নীল:হুঁ?
নিশু:আমি তোমাকে খুব জ্বালাই না?
নীল:বড্ড বেশি জ্বালাও!
নিশু:আমি তোমার সাথে অন্য কাউকে সহ্য করিতে পারি না নীল সেইজন্যই তো অফিসে আসি। রুশা শয়তানটাকে আবার যদি তুমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও।আমি থাকতে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসবে সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না নীল।আমি মরে গেলে অন্য হিসেব!
নীল:কিন্তু আমি মরে গেলেও তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবে না নিশু।আমার সহ্য হবে না।
নিশু:ইশসস!…একেবারে দখল করা সম্পত্তি মনে হচ্ছে?
নীল:হুম!…পুরোটাই আমার!…নিশুর আলাদা কোন কিছু থাকতে পারে না,ওর সব কিছুর ওপর শুধু নীলের অধিকার থাকবে।এমনকি ওর ছাঁয়াটার ওপরও শুধু নীলের অধিকার।…ইউ জাস্ট বিলং টু মি!
নিশু:আমি আত্মসমর্পণ করলাম!
নীল:আমি আদরের সহিত আমার আসামীকে গ্রেপ্তার করলাম!
নিশু:আমাকে ভুল বুঝবে না তো?
নীল নিজে চেয়ারে বসে ওকে টেনে কোলে বসিয়ে ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরে বললো..সেটা তো অসম্ভব ব্যপার!..তুমি কাজগুলোই করো এমন যে আমার মাথা গরম হয়ে যায়।
নিশু:হ্যাঁ তুমি তো খুব ভালো মানুষ?
নীল:হতেই হবে!…নিশুর নীল বলে কথা?
নিশু:মেয়ে পটানো ভালোই শিখেছো!
নীল:মোটেও না নিশিতা জামান নিজেই সহজে পটে যায়।
নিশু:আমি তো কারো কত এত নিষ্ঠুর নই সেজন্য।
নীল:আমার কথা আমাকেই বলছো?
নিশু:😁
নীল হাসছে ওর দিকে চেয়ে।এই মেয়ে ওকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসবে সেটা হতেই পারে না।
রাতের বেলা ডাইনিং এ বসে ইলারা বেগম নীলকে বললেন…তানিম এসেছিলো।কালকে নাকি বাসায় পার্টি দিচ্ছে।
নীল:কি উপলক্ষে?
ইশু:উনি রিসার্চ শেষ করে এতদিনপর দেশে ফিরেছে তাই!
নীল:ঠিক আছে আমি কালকে সন্ধার আগেই চলে আসবো।…..আয়াতও কালকে আসছে।
নিশু:তানিম স্যারের কথা শুনলে আমার এখনো ভয় লাগে!
নীল:তুমি আবার কাউকে ভয় পাও নাকি?…আমি যতদূর জানি তুমি মানুষকে ভয় পাইয়ে দিতে ওস্তাদ।তোমাকে ভয় দেখানোর সাহস উনি পায় কি করে?..মানতে হবে তানিম ভাইয়ের দম আছে।
ইশু:ভাইয়া তুই শুধু ওর পেছনে লাগছিস।উনি মানুষটাই এমন যে দেখলেই ভয় লাগে।
নীল:মা তুমি নিশ্চিন্তে তোমার মেয়েকে তানিম ভাইয়ের কাছে তুলে দিতে পারো।তোমার ঘরের দুই সুনামি যাকে এত ভয় পায় তার ওপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।
ইলারা বেগম হাসছেন ওর কথা শুনে।নীল নিজেও মিটিমিটি হাসছে।ওরা দুই বান্ধবী মিলে নীলের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে।
(বিঃদ্রঃআর তিন চারটা পার্ট লাগবে শেষ করতে।আগে থেকেই বলে রাখলাম।রুশা হেটার্সদের জন্য ভালো একটা খবর রুশা অবশ্যই ওর কাজের জন্য শাস্তি পাবে!প্লিজ দয়া করে কেউ গল্প বড় করার কথা বলবেন না।)