Love Right

Love Right ! Part- 11 + 12

আয়াত:কতবার বললাম বেরোনোর আগে আমাকে একটা ফোন করো??…আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসবো?
নিশু:লাগবে না আমি একাই যেতে পারবো!…তুমি তো এমনিতেই সারাদিন ব্যস্ত থাকো তারওপর বাড়তি ঝামেলা দিতে চাইছিলাম না।….তাও তো চলে এসেছো!
আয়াত:ঠিক আছে এসব বাদ দাও। তোমার দেরী হয়ে যাচ্ছে!…গাড়িতে উঠো।
নিশু গিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো।
আয়াত:তোমার তো ৯:০০টায় পৌঁছানোর কথা?..এখন তো অলরেডি ৮:৩০।
নিশু:হুম!
নিশু বিষণ্ণ মুখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।ও আগের মত নেই একদম।হঠাৎ করে ওকে দেখলে চিনতেই পারবে না।অনেক বেশি ফর্মাল আর চুপচাপ হয়ে গেছে।দিনে কাজ করে সময় পার হয়ে যায়।কিন্তু রাতে??…এতগুলো দিনগেলো তাও কেন ও ভুলতে পারে নি।ওর ওপর রাগ করে সেই যে নীল গিয়েছে আর ফিরে নি।ওকে অন্যমনস্ক থাকতে দেখে আয়াত ডাক দিলো…নিশু?
নিশু:হুঁ!
আয়াত:কি ভাবছো?
নিশু:কিছু না!
আয়াত:আমাকে বলা যায় না?
নিশু:ভাবছি নিজেকে কোনদিন মাফ করতে পারবো না।
আয়াত:তুমি এখনো নীলকে ভালোবাসো?
নিশু:না বেসে থাকতে পারি না যে!
আয়াত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো…কেন সেদিন রুশার কথা ধরে তুমি মিথ্যে বলেছিলে?..আমাদের মধ্যে তো বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক ছিলো না।
নিশু হতাশ হয়ে বললো..আমার জন্য তোমাদের দুজনের ফ্রেন্ডশিপ টা নষ্ট হয়ে গেলো তাই না?
আয়াত:নষ্ট হয়েছে কি না জানি না।ঐ ঘটনার পর ও আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখে নি।দেশে ফিরেছে কি না জানিনা।তবে আমি জানি ও এখনো আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু!ও আমার ভাই!
নিশু চোখদুটো ছলছল করে উঠলো।এতগুলো দিন ওর কীভাবে কেটেছে ও নিজেও জানে না।নীল নিশ্চই ওকে এখনো আগের মত ঘৃনা করে।আচ্ছা ও কি দেশে ফিরেছে।যাই হোক একবার যদি নীলকে সামনে পেত!

অফিসের সামনে গাড়ি থামতেই আয়াত ওকে নামিয়ে দিয়ে গেলো।নিশু চিটাগাং থেকে বদলি হয়ে ঢাকার ব্রাঞ্চে এসেছে।আজই ওর প্রথম দিন।নীল চলে যাওয়ার পর পরীক্ষা শেষ করে ও চিটাগাং চলে যায়।লজ্জায় ইশুর সাথেও কোন যোগাযোগ রাখে নি।আয়াতের সাথেই একমাত্র ওর যোগাযোগ ছিলো।ঢাকায় আসার পর আয়াতই ওকে বাসা খুজেঁ দেয়।

অফিসে ঢুকেই নিশু রিসিপশনে গেলো।
রিসিপ্সনিস্ট:Hello Mam!…How can i help you?
নিশু ওর আইডি কার্ড টা বের করে দেখালো।
রিসিপ্সনিস্ট ফাইল চেক করে বললো…আজকে আপনার 5th ফ্লোরে এমডি স্যারের সাথে এপয়েনমেন্ট আছে।
নিশু:Thank you so much!

নীল সবে এসে অফিসে ঢুকেছে।ওর মেজাজ প্রচন্ড বিগড়ে আছে তারওপর আজকে নতুন একজন এমপ্লয়ি আসছে।দেশে ফিরেছে মাত্র একসপ্তাহ হয়েছে এর মধ্যেই কম্পানির স্টাফদের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।সবাই আতংকে আছে ওর মেজাজ নিয়ে।সবসময় বিগড়ে থাকে।
সকাল:৯:৩০,
ও প্রচন্ড তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে ফাইলগুল দেখছে আর ম্যানেজার বেচারা ভয়ে আঁটসাঁট হয়ে আছে কখন জানি কি ভুল ধরে বসে।
নীল:আপনাকে অফিসে কি জন্য রাখা হয়েছে বলুন তো?
ম্যানেজার ঢোকগিলে বললো… আমার কি কোন ভুল হয়েছে স্যার?
নীল:যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দিন না!
ম্যানেজার:জি স্যার?
নীল:আবার জি স্যার?…পুরো প্রজেক্টেই তো গোলমাল করে রেখেছেন।
ম্যানেজার:সরি স্যার!
নীল:আপনাকে আমি আধাঘণ্টা সময় দিলাম এর মধ্যে আমি পুরো প্রজেক্টের রেকর্ড রেডি দেখতে চাই ডিটেইলস সহ!
ম্যানেজার করুন মুখে ফাইলটা নিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে যেতে নিলে নীল আবার ডাক দিলো….শুনুন?
ম্যানেজার:জি স্যার?
নীল:লারাকে বলবেন আমার রুমে কফি পাঠিয়ে দিতে।
ম্যানেজার:ওকে স্যার!
নীল:রুশা ম্যাডাম এসেছেন?
ম্যানেজার:জি না স্যার!
নীল:ঠিক আছে আপনি আসুন!

ম্যানেজার বেরিয়ে গেলে নীল অফিসের ফাইলগুলো চেক করে নিলো।লারাকে দিতে হবে প্রোফাইল তৈরি করার জন্য।ও সবে কেবিন থেকে বেরিয়েছে লারাকে ফাইলগুলো দেওয়ার জন্য এমন সময় সামনে তাকাতেই ওর থমকে গেলো।নিশু দাঁড়িয়ে আছে।হ্নদপিন্ডটা মনে হচ্ছে থেমে গেছে।কলিজাটা ধক করে উঠলো।ওকে বেরোতে দেখে স্টাফরা সবাই দাঁড়িয়ে গেলো কিন্তু ওর কোন হুশঁ নেই।ও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।নিশু এতগুলো দিন বাদে ওর সামনে দাঁড়িয়ে।অতিরিক্ত উত্তেজনায় মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।ওর হাত থেকে ফাইলগুলো পড়ে গেলো।লারা দৌড়ে গিয়ে ফাইলগুলো তুলে ওর হাতে দেওয়ার জন্য ডাকছে কিন্তু ওর সেদিকে কোন হুশঁ নেই।
নিশুর ওড়নাটা একটা সেল্ফের সাথে আটকে গেছে।ওড়নাটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।অনেক্ষন পর ওটা খুলে যখন সামনে তাকালো তখন ওর সমস্ত শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো।ওর মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরোচ্ছে না।….নীল???
নীল ওর দিকে চেয়েই আছে।
লারা:স্যার?
নীল:হুঁ??
নীলের গলা শুনে নিশু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।দৌঁড়ে গিয়ে নীলকে জড়িয়ে ধরলো।নীল ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ও যেন এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না নিশু ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ও দুহাত দিয়ে নিশুকে জড়িয়ে ধরে বোঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে।ওকে ধরতে দেখে নিশু আরো বেশি করে ওকে জাপটে ধরলো।কিন্তু পরক্ষনেই প্রচন্ড রাগে নীল ওকে ঠেলে সরিয়ে দিলো।অফিসের স্টাফরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে??
নিশু:I’m sorry!
নীল:Who are you?….এসব কি ধরনের অসভ্যতা?
নিশু:আমি নিশু তোমার নিশু!
নীল:লারা?
লারা:ইয়েস স্যার!
নীল:দারোয়ান কে ডাক দাও!….এসব মানুষ আমার অফিসে ঢুকে কি করে?
নিশু:প্লিজ?
নীল:আপনি কি আমাকে চিনেন?
এত সহজে যে নীল মানবে না তা নিশুর আগেই জানা ছিলো।কিন্তু এতগুলো দিনপর ওকে দেখে নিশু ইমোশন টা কন্ট্রোল করতে পারে নি।ও চোখ মুছে ব্যাগ থেকে ওর আই ডি কার্ডটা বের করে নীলের দিকে বাড়িয়ে দিল.
নিশু:Personal Assistant(P.A.) Of the M.D!
নীল রাগে কটমট করে ওর দিকে চেয়ে আছে।
নীল:আমি এই মুহূর্তে আপনাকে আমার কম্পানি থেকে ফায়ার করলাম!(কঠিন গলায়)
নিশু:সেটা তুমি চাইলেও করতে পারবে না Without proper reason।
নীল রাগে হাতের মুঠো শক্ত করে ফেলল।
নিশু:আমার সাথে এগ্রিমেন্ট হয়েছে টুয়েন্টি ফোর মান্থের!….তাই আপনি চাইলেও আমাকে..
নীল:জাস্ট শাট আপ!
নিশু চুপ করে গেলো।নীল যা রেগে আছে তাতেই চুপ করে থাকাটাই বেটার!
নীল:বিহেভ ইউরসেল্ফ!
নিশু:সরি স্যার!
নীল রেগে ভেতরে চলে গেলো।নিশু অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।অফিসের সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
লারা:তুমি উনার কি হও বলতো?
নীল:আপনাকে কি এসব জানার জন্য অফিসে রাখা হয়েছে?
লারা খেয়ালই করে নি নীল কখন এসে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
লারা:সরি স্যার!

নীল এবার নিশুর দিকে তাকিয়ে বললো…আপনার নাম?
নিশু:নিশিতা জামান!
নীল:আপনার পোস্ট কি আপনি জানেন?
নিশু:জি স্যার!
নীল:গুড!…দাঁড়িয়ে না থেকে কাজ শুরু করুন!
লারা বুঝতে পারছে না নিশু নীলের মধ্যে কি সম্পর্ক?…তবে ওদের নিশচই চেনাজানা আছে।

নীল ওর কেবিনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নিশু ডাক দিলো…নীল??
নীল:??
নিশু:সরি স্যার!
নীল:এনি প্রবলেম?
নিশু:না মানে আমি কি কিছু সময়ের জন্য ছুটি পেতে পারি?
নীল:না!

নিশু ডেস্কে বসে বসে ভাবছে কি করা যায়।কি করলে নীল মানবে?
এদিকে নীল রাগে কাঁপছে।এতবড় সাহস কি করে হয় এই মেয়ের ওকে জড়িয়ে ধরে।কি ভেবেছে সেদিনের অপমান নীল ভুলে গেছে?..নীলাস হাসান এতটা সস্তা?…তার তিনগুণ শোধ যদি না তুলেছে তো ওর নামও নীলাস হাসান না।দেখা যাক ও কতটা অপমান সহ্য করতে পারে?..কিন্তু নিজেকে কোনভাবে শান্ত রাখতে পারছেনা নীল।নিশুকে দেখেই ওর সব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে।আয়াতের সাথে কি ওর বিয়ে হয়েছে?…মনে হয় না হয়েছে। তাহলে নিশ্চই ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরতো না।এইজন্যই এখন ওর কাছ এসেছে।স্বার্থপর মেয়ে!
এসব ভাবতে ভাবতে ও নিশুকে রুমে ডেকে পাঠালো।
নিশু:আসবো?
নীল:ইয়েস!
নিশু ভেতরে ঢুকে বসতেই নীল বলে উঠলো আপনাকে আমি বসতে বলেছি?
নিশু আবার দাঁড়িয়ে গেলো।
নিশু:সরি স্যার!
নীল:তো কি মতলবে আমার অফিসে এসেছেন?…আপনি তো আবার স্বার্থ ছাড়া কোন কাজ করেন না!
নিশু এবার নীলের কথাটা রিপিট করে বললো..আপনি কি আমাকে চেনেন স্যার?
নীল থতমত খেয়ে গেলো ওর কথা শুনে।
নীল:(এখনো দেখছি আগের মতই তেজ আছে?)তোমার মত মেয়েদের এত সহজে ভোলা যায় নাকি?
নিশু ইচ্ছে করছে নিজের গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিতে।ও কেন নীলকে আরো বেশি রাগিয়ে দিচ্ছে?
নিশু:……(তোমার যত ইচ্ছা রাগ প্রকাশ করো নীল!আমি কিচ্ছু বলবো না।এসব আমার প্রাপ্য ছিলো)
নীল:যাই হোক!…যে জন্য ডেকেছি তোমার আর আমার সম্পর্ক নিয়ে যেন আমি অফিসে কোন কথা না শুনি!..মনে রাখবে…আমি তোমার বস!…সো ট্রিট মি লাইক আ বস!…ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?…আর এমনিতেও আমার কিছুদিন পর বিয়ে সো আমি চাইনা পুরনো কথা নিয়ে কোন ঝামেলা হোক!
নিশু:(ঢং!..তোমাকে বিয়ে করতে দিলে তো?)আপনি এতদিন বিয়ে করেন নি??(অবাক হওয়ায় ভান করে)কেন স্যার?
নীল পাল্টা জবাব দিয়ে বললো..একটা স্বার্থপর আর নিচু মনের মেয়ের পাল্লায় পপড়েছিলাম!
নিশু:এখনো তাকে ভালোবাসেন?
নীল:সে আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়!(কঠিন গলায়)
নিশুর চোখদুটো পানিতে ছলছল করছে।নীল ওকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো।ওর সৌন্দর্য্য একটুও কমে নি।তবে অনেক রোগা লাগছে ওকে।
নিশু:ঠিক আছে আপনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই হবে!
নীল:গুড!…আপনি এখন আসতে পারেন।
নিশু বেরিয়ে যেতে গিয়ে আবার থমকে দাঁড়ালো।
নীল:??
নিশু:আপনার চেহারার এই অবস্থা কেন??…দয়া করে নিজের শরীরের দিকে একটু নজর দিবেন প্লিজ!
নীল কিছু বলার আগেই ও বেরিয়ে গেলো।নীল রেগে দিলো টেবিলে এক ঘুসি।কি ভেবেছে ওকে ইমোশনালি উইক করে দিবে।এত সহজ নাকি?…উফফফ এই মেয়ে ওর মাথা খারাপ করে দিবে…..নো!…কোনভাবেই উইক হওয়া যাবে না।

লাঞ্চ আওয়ারে লারা আর নিশু বসে আছে।লারাকে ভালোই লেগেছে নিশু।বেশ শান্ত এবং ঠান্ডা স্বভাবের মনে হচ্ছে।
লারা:নিশু?
নিশু:আমি জানি তুমি কি বলবে?….স্যারের সাথে আমার কি সম্পর্ক তাই তো?
লারা:না মানে কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারছি না।উনি যা রাগি মানুষ তাতে তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে মনে হয় পাচঁতলা দেখে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতেন।
নিশু:আমাকে অবলা নারী দেখে দয়া করেছেন হয়তো!
লারা:কাহিনী কি বলতো?
নিশু:আসলে আমি স্যারকে আগে থেকেই চিনি।উনি আমার মায়ের বান্ধুবির ছেলে।তাই আগে থেকে জানাশুনা।তেমন কিছুই না।
লারা:কিন্তু তুমি যে উনাকে জড়িয়ে ধরলে?
নিশু:আসলে আমি উনাকে অনেকদিন পর দেখে আমি কিছুটা ইনসেন্সিটিভ হয়ে গেছিলাম।অনেক দিন পর দেখা হওয়াতে উনি বোধহয় আমাকে চিনতে পারে নি।
লারা:বলো কি?
নিশু:হুম!…দোষটা আমারই!
লারা:না না পরিচিত কারো সাথে কেউ এমন বিহেভ করে নাকি?
মনিকা:বামুন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়ালে এমনই হবে!

এই মনিকা হচ্ছে রুশার চামচা।এর সাথে আরো কয়েকজন আছে যারা রুশাকে তেল দিয়ে চলে।লারার এদেরকে একদম পছন্দ না।
লারা বিরক্ত হয়ে নিশুকে বললো…চলো লাঞ্চ করে নেই!
নিশু:আমার ক্ষিদে নেই!
মনিকা গা জ্বালানো একটা হাসি দিয়ে বললো….এত অপমানের পর আর ক্ষিদে থাকে কি করে?
নিশু:আমি আসছি লারা!

#Love_Right❤💕❤
অরিত্রিকা আহানা
#part_12

মনিকা একটা গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললো…এত অপমানিত হওয়ার পর আর ক্ষিদে থাকে নাকি?
লারা:তুমি নিজের কাজে মন দাও না?…অন্যদের নিয়ে এত মাথা ব্যথা কেন?
মনিকা কিছু বলার আগেই ও বিরক্ত হয়ে নিশুকে নিয়ে উঠে চলে গেলো।

নিশু:তুমি গিয়ে বসো লারা আমি একটু আসছি!
লারা চলে যেতেই নিশু করিডোরে গিয়ে চুপিচুপি আয়াতের নাম্বারে ডায়াল করলো।দুবার রিং হতে আয়াত রিসিভ করে বললো…বলো নতুন অফিসের প্রথম দিন কেমন লাগছে?
নিশু উচ্ছ্বাসিত হয়ে বললো…একটা গুড নিউজ এবং ব্যাড নিউজ আছে আয়াত!…কোনটা আগে বলবো?
আয়াত:তাই নাকি?…ঠিক আছে ভালোটাই আগে বলো।
নিশু একনিশ্বাসেই বলে ফেললো…নীল দেশে ফিরেছে আয়াত।ও আমার বস!
আয়াত যেন বড়সড় একটা শক খেলো।ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।নীল দেশে ফিরেছে??…এতদিনপর?
নিশু:কি হলো শুনতে পাও নি?…আমি নীলের পি.এ. আয়াত।
আয়াত কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো…এটা তোমার কাছে গুড নিউজ হলো?
নিশু:অবশ্যই!….তুমি তো জানোই আমি এইদিনটার জন্য কত অধীর ছিলাম?
আয়াত:হুম!…সেটা তো আমি জানি।কিন্তু আমার নীলকে নিয়ে ভয় হচ্ছে, ওর যা জেদ।….আচ্ছা যাই হোক বাদ দাও!…এবার বলো খারাপ খবরটা কি?…নিশ্চই ও তোমাকে অনেক আদর আপ্যায়ন করেছে??(হাসতে হাসতে)
নিশু মুখটা ছোট করে বললো…ঠিক তাই।ও আমাকে সহ্যই করতে পারছে না।
আয়াত:সেটাই তো হওয়ার কথা।তবে এটা কিন্তু একটা গুড সাইন ডিয়ার!..যদি ও তোমাকে ভালো না বাসতো তাহলে এত রিয়েক্ট কেন করবে?…আমি শুধু বলবো ভুলটা যেহেতু তোমারই ছিলো তাই তোমাকেই সহ্য করতে হবে।ওকে আরেকটু সময় দাও।খুব তাড়াতাড়ি ওর রাগ পড়ে যাবে সেই আশাটা না রাখাই ভালো।তবে আমার যতদূর মনে হয় সত্যিটা জানার পর ও তোমাকে বেশিদিন দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না।
নিশু:থ্যাংক ইউ সো মাচ আয়াত আমাকে এতটা ভরসা দেওয়া জন্য।

নীল ফোনে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছিলো।করিডোরে চোখ পড়তেই দেখলো নিশু ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে।ও কলটা কেটে দিয়ে নিশুর কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায় নিশু কার সাথে এত হেসে হেসে কথা বলছে বোঝার জন্য।নিশুর কথা শুনে বুঝতে পারলো ও আয়াতের সাথে কথা বলছে।নীলের মনে হচ্ছে ওর বুকের ভেতরটায় কেউ ছুরি বসিয়ে দিয়েছে,ভেতরটা যেন তছনছ হয়ে যাচ্ছে।তারমানে কি নিশু আর আয়াত সত্যি সত্যি?……
ও দ্রুত হেঁটে নিজের কেবিনে চলে যায়।ভেতরে ঢুকেই টেবিলের ওপর থাকা ফ্লাওয়ার ভাসটা ছুড়ে মারলো রাগে।কিচ্ছু ভালো লাগছে না।….নাহ্ নিশু ওর চোখের সামনে থাকলে ও সহ্য করতে পারবে না।ওকে এমন কিছু করতে হবে যাতে নিশু যেতে বাধ্য হয়।মাথাটা ঠান্ডা করে ও নিশুকে নিজের কেবিনে ডেকে পাঠায়!

লারা:কি ব্যপার বলতো?..প্রথম দিনেই স্যার তোমাকে এতবার রুমে ডাকছেন?….স্যার তো কোন মেয়েকে নিজের কেবিনে ডাকেন না।ফাইলপত্র সব নিজে এসে দিয়ে যান আমাদের ডেস্কে।…আমার কিন্তু ব্যপারটা অন্যরকম মনে হচ্ছে।
লারার কথা শুনে নিশু ভীষণ ভালো লাগছে।ও একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো…তুমি একটু বেশিই ভাবছো!…আমি নতুন বলেই হয়তো কাজ বুঝিয়ে দিতে ডাকছেন।
লারা:যাই হোক এবার তাড়াতাড়ি যাও!…নাহলে এটম বোমা ব্লাস্ট হতে বেশি সময় লাগবে না।(হেসে হেসে)
নিশু নীলের রুমের বাইরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ভয়ে ভেতরে ঢুকছে না।নীল ভেতরে বসে বসে সিসি টিভি ফুটেজে ওর কান্ড দেখছে।করছে টা কি এই মেয়ে??
প্রায় তিনমিনিট হলো নিশু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ভেতরে ঢুকছে না।শেষে বাধ্য হয়ে নীলই ডাক দিলো….কাম ইন!
আচমকা নীলের ডাক শুনে নিশু চমকে উঠেছে।নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে ও ভেতরে ঢুকলো।
নিশু:ইয়েস স্যার!
নীল ফাইল থেকে মুখটা তুলে নিশুর দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল..আপনি গুনে গুনে ত্রিশ মিনিট লেইট মিস নিশিতা জামান!
নিশু:সরি স্যার!
নীল:সরি বললে লাভ হবে না।আমার অফিসে আমি কোন ইনডিসিপ্লিন সহ্য করি না।সো এর জন্য আপনাকে শাস্তি পেতে হবে। আর আপনার শাস্তি হচ্ছে আপনি ঠিক তিনশো মিনিট ওভার টাইম কাজ করবেন!
নিশু হাঁ হয়ে আছে।অফিস ছুটি হয় ছয়টাটায় ওভারটাইম কাজ করলে তো রাতের দশটা এগারোটা বাজবে!…এত রাতে ও বাসায় ফিরবে কি করে?
নীল:ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?
নিশু যানে কিছু বলে লাভ হবে না।তাই চুপ করে আছে তবে ভীষণ ভয় লাগছে একা একা অফিসে থাকবে কি করে?নীল আড়চোখে নিশুকে বারবার দেখছে। ওর এমন চেহারাটা নীলের সহ্য হচ্ছে না।কি এক অসহ্য যন্ত্রনায় পড়েছে ও।
নীল:কি হলো?
নিশু:……
নীল:আমাদের অফিসের পুরোনো কিছু রেকর্ড আছে সেগুলোর একটা লিস্ট বানাতে হবে।…আজকে যেহেতু আমি ঐরুমের চাবি ফেলে এসেছি তাই কাজটা আপনাকে কালকে করতে হবে।
নিশু মনটা অনেক হালকা হয়ে গেলো।যাক বাবা কালকে হলে আয়াতকে বলে দেওয়া যাবে।আজকে হলে কি মুসিবতেই পড়তো!
নীল:আপনি এখন আসতে পারেন।
নিশু:জ্বি স্যার!
নিশু চলে গেলে নীল চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।ও তো চাইছে নিশু যেন এখান থেকে চলে যায়।তাহলে কেন করছে এমন।কেন ওকে আজকেই কাজটা করতে বললো না?..কিচ্ছু ভালো লাগছে না।এখন মনে হচ্ছে দেশে না ফিরলেই ভালো হতো!

নিশু ফিরতেই লারা ওকে জিজ্ঞেস করলো কেন ডেকেছে।নিশু সব খুলে বলতেই লারা হুশঁ এলো।
লারা:তারমানে ইনি সবার সাথেই এমন?…তোমার তো তাহলে কালকে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে।আমার মনে হচ্ছে রেকর্ড লিস্ট বানাতে তোমার সারারাত অফিসে কাটিয়ে দিতে হবে।
নিশু:বলো কি?
লারা:তারওপর আমি কালকে ছুটি নিয়েছিলাম মাকে ডাক্তার দেখাবো বলে।তা না হলে তো আমি তোমাকে হেল্প করতে পারতাম।
নিশুর ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
নিশু:না ঠিক আছে।

নীল ম্যানেজারকে নিয়ে 6th ফ্লোরে মিটিং এটেন্ড করতে যাচ্ছিলো।নিশুকেও থাকতে হবে।তাই ও আগেই লিফটে উঠে পড়লো।ও সবে উঠেছে এর মধ্যেই পুরো অফিসের ইলেক্ট্রিসিটি অফ হয়ে গেলো।
নিশু যে লিফটে উঠেছিলো সেটা নীলের চোখে পড়েছিলো তাই ও দৌড়ে লিফটের কাছে গেলো।ম্যানেজারও ওর পেছন পেছন গেলো।নিশুর নাম ধরে কয়েকবার ডাক দিলো কিন্তু ভেতর থেকে নিশুর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ওর মনে হচ্ছে ঐ বোধহয় সেন্সলেস হয়ে যাবে।ও লিফটের দরজায় জোরে জোরে বাড়ি দেওয়া শুরু করলো।
ম্যানেজার: What happens Sir?
নীল ম্যানেজারের দিকে না তাকিয়েই বললো…মিস নিশিতা ইজ অন দেয়ার!..উনি ভেতরে আটকা পড়েছেন?…আপনি তাড়াতাড়ি উনাকে বের করার ব্যবস্থা করুন…কুইক!
ম্যানেজার:ইলেকট্রিক লাইনে সামান্য একটু গোলমাল হওয়ায় কারনে এমন হয়েছে।…আপনি শান্ত হোন আমরা যত তাড়াতাড়ি ঠিক করার চেষ্টা করছি!
নীল জোরে চিৎকার দিয়ে বললো…She has a strong Claustrophobia!…আপনি বলছেন আমি শান্ত হবো?
ও ম্যানেজারে কলার ধরে ঝাঁকানো শুরু করে দিলো…ওর যদি কিছু হয়!…আপনাদের আমি ছাড়বো না!
ম্যানেজার:প্লিজ স্যার আপনি মাথাটা একটু ঠান্ডা করুন!
নীল:আমি বলছি আপনি এই মুহূর্তে পাওয়ার অন করার ব্যবস্থা করুন?…Just now…&now!(চিৎকার দিয়ে)
ম্যানেজার:স্যার!…পাঁচসাত মিনিট ওয়েট করলে মেবি সব ঠিক হয়ে যাবে।…তাছাড়া এখন পাওয়ার অন করলে দুতিনমিনিটের ভেতর পুরো লাইন Destroy হওয়ায় সম্ভাবনা আছে!….It will be a huge loss!নীল এবার আরো জোরে চিৎকার দিয়ে বললো..হোক!…লস হলে আমার হবে আপনার কি?.. আপনি এই মুহূর্তে পাওয়ার অন করতে বলুন!
ম্যানেজার হতাশ হয়ে বললো…জ্বি স্যার!
পাওয়ার অন করতেই লিফটের দরজা খুলে গেলো।নিশু বেরিয়েই নীলকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।
নীল ওর দুবাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বললো….আমি যে এতবার চিৎকার দিয়ে ডাকছিলাম সাড়া দিচ্ছিলে না কেন?…আমাকে কষ্ট দিতে তোমার কেন এত ভালো লাগে বলতো?
নিশুর পুরো শরীর কাপঁছে ভয়ে।ওকে এভাবে কাপঁতে দেখে নীল তাড়াতাড়ি ওকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।একটু হলে তো ওর জানটাই চলে যেত।
নীল ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে ওর কপালে নিজের কপালটা ঠেকিয়ে বললো…কিচ্ছু হয় নি!..এই যে দেখো আমি আছি তো?…দেখি কান্নাটা থামাও!
নিশুর হঠাৎ ভয় ডর সব কেটে গেলো।ও কান্না থামিয়ে নীলের দিকে চেয়ে আছে। এত কিছুর পরও এখনো ওকে এতটা ভালোবাসে??
ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীল হুঁশে এলো।শিট ও আবার ইমোশনাল ফুল হলো??….ও সবে নিশুকে সরিয়ে দিবে তার আগেই নিশু ওর বাহুর ওপর ঢুলে পড়ে গেলো।অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারনে জ্ঞান হারিয়েছে।নীল তাড়াতাড়ি ওকে কোলে নিয়ে ওর কেবিনের দিকে হাঁটা ধরলো।মনিকা লারা সহ সব স্টাফরা বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *