ভালোবেসে তারে

ভালোবেসে তারে !! Part- 07

সিড়ি বেয়ে ছাদের উপরে গিয়ে পুরো থমকে গেলাম।আমার হাত-পা নাড়ানোরও কোনো শক্তি পাচ্ছিনা আমি।চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পরছে।পুরো শরীর ভয়ে থরথর করে কাপছে।আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম,

“রাফিইইইইইইত।”

রাফিত একটা লোকের মাথার খুলি বরাবর বন্দুক তাক করে দাড়িয়ে আছে।লোকটা দেয়ালে কোনোরকমে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে প্রচুর মারাও হয়েছে তাকে।শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত ঝরছে।বয়স আর কতো হবে এই ৩০ কি ৩২ বছর।রাফিত আমার চিৎকার শুনে আমার দিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় লোকটার দিকে তাকালো।লোকটা বারবার আকুতি মিনতি করেই যাচ্ছে।কিন্তুু রাফিতের সে দিকে কোনো ভ্রক্ষেপ নেই।

তারা আমার থেকে কিছুটা দূরত্বে আছে মাত্র।আমি সামনের দিকে পা বাড়িয়ে যে তাকে আটকাবো সেই শক্তিটুকুও পাচ্ছিনা।মনে হচ্ছে কেউ আমার পা দুটোকে পেরেক দিয়ে ওখানেই আটকে দিয়েছে।রাফিত বন্দুক তাক করা অবস্থাতেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যজনক বাকা হাসি দিলো।তার এই হাসির অন্যসব অর্থ আমি না বোঝলেও একটা জিনিস খুব ভালো করে বোঝে গিয়েছি।তাই আমি তাকে কান্নজড়িত কন্ঠে বললাম,

“রাফিত না প্লিজ রাফিত না না রাফিত……………আআ আআআআ।”

কানে দুই হাতের তালু চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠলাম আমি।হ্যা মেরে ফেললো সে লোকটাকে।তাকিয়ে দেখি তার নিথর দেহটা মাটিতে লুটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।আর তার সামনে হিংস্র বাঘের ন্যায় দাড়িয়ে আছে রাফিত।যেনো কতদিনের তৃষ্ণার্ত ছিলো সে।আমি এই নির্মম দৃশ্যটা আর নিজ চেখে সহ্য করতে পারলামনা।মুহূর্তের মধ্যেই নিজের শরীরের সম্পূর্ণ ভারটা ছেড়ে দিয়ে মাটিতে গা এলিয়ে দিলাম।আস্তে আস্তে চোখটাও বুজে এলো আমার।তারপর কি হলো আর কিছু মনে নেই।
,
,
,
,
,
,
রাত ৯.২০ মিনিট,,,,,,,

খাটের এক কোণে হাটু ভাজ করে দুই হাতে হাটু আকরে ধরে গুটিশুটি মেরে বসে ননস্টপ কেদে চলেছি।কারণ হলো ভয়।আর ভয়ের কারণটা রাফিত।সে সোফায় বসে ফল কাটার ছুরি দিয়ে নিশ্চিতে পায়ের উপর পা তুলে আপেল কেটে খাচ্ছে।ভাবসাবটা কিছুটা এমন টাইপ যে আমিতো একটা ইনোসেন্ট বাচ্চা আমি কিছুই করিনি।ইভেন করতেই পারিনা।

সে আপেলটা হাতে নিয়ে কাটতে কাটতে সেদিকে তাকিয়েই বেশ শান্ত গলায় ভ্রু কুচকে বলল,

“আচ্ছা দিশা সোনা একটা কথা বলোতো আমি কি এমন করলাম যার কারণে তুমি আমাকে এতো ভয় পাচ্ছো।জাস্ট একটা মার্ডারইতো নাকি।অবশ্য সেটা করতে তুমিই আমাকে বাধ্য করেছো।আর লোকটাকেতো মনে হয় তুমি চিনতে পেরেছো তাইনা?সেই জন্যইতো তাকে বাচানোর জন্য এতো ব্যাকুল হয়ে পরেছিলে।কি ঠিক বললামতো।”

কথাগুলো বলতে বলতে যে তার রাগটা ক্রমশই বাড়ছিলো তা আমি বেশ বোঝতে পারছি।সে এমনভাবে বলছে যেনো সে মানুষ খুন করেনি বরং কোনো মহৎ কাজ করে এসেছে।আর তার কথার আগা গোড়া কিছুই আমি বোঝতে পারছিনা।কি বলছে ও এসব।আমি লোকটাকে চিনবো কোথা থেকে?আমিতো তাকে আজ প্রথম দেখলাম।আর দুর্ভাগ্যবশত আজই বেচারার প্রাণটা গেলো।না আমাকে এভাবে চুপ করে থাকলে চলবেনা।তাই মনে সাহস নিয়ে একটু নড়েচড়ে বসে কিছুটা জোরেই আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

“কি বলছেন এসব?আমি লোকটাকে চিনি মানে কি?তাকে বাচাতে চেয়েছি কারণ এটা আমার মনুষ্যত্বের মধ্যে পরে।এর মানে এই নয় যে আমি তাকে চিনি।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনি তাকে কেনো মারলেন?কি ক্ষতি করেছিলো সে আপনার?মানুষকে মেরে আপনি খুব আনন্দ পান তাইনা।তারপরে আমার উপর সব দোষ চাপাচ্ছেন।আমি কি আপনাকে বলেছি তাকে মারতে।তাহলে বাধ্য করলাম কখন?কেনো করছেন এসব?আজকে আপনাকে আমার প্রশ্নের জবাব দিতেই হবে।বলুন কেনো এমন নির্দয়ভাবে একটা লোককে মারলেন আপনি?এ্যনসার মি।”

রাফিত এবার রাগে তার হাতের আপেলটাকে সজোরে দেয়ালে ঢিল মারলো।যার ফলে সেটা বারি খেয়ে চারিদিকে ছিটকে পড়লো।তারপর আমার দিকে এগিয়ে এসে এক পা ফ্লোরে ও অন্য পা বিছানার উপর রেখে এক হাতে খুব শক্ত করে আমার গালদুটো চেপে ধরলো ও রেগে চিৎকার করে বলল,

“তোর এখন এ্যনসার চাই আমার কাছ থেকে না?বল এ্যনসার চাই তোর?আর কি যেনো বলছিলি?ওহ হ্যা মনুষ্যত্ব তাই তো?তা মনুষ্যত্বের মানে বুঝিস তুই?বল বুঝিস মানে?আরে তুই কি মনুষ্যত্বের মানে বোঝবি।যে একজন মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের সম্মান নিয়ে খেলতে পারে সে আর যাই হোক মনুষ্যত্বের মানে বোঝতে পারেনা।আর আমি মানুষকে মেরে আনন্দ পাই আর না পাই তুই মানুষের সম্মান নিয়ে খেলে ঠিকই আনন্দ পাস।আজ আমি যেই খুনটা করলাম সেটার কারণও তুই।কেনো নিজের পার্টনারকে চিনতে পারিসনি বুঝি?অবশ্য চিনবিই বা কি করে অনেকদিন পর দেখাতো তাই হয়তো চিনতে পারিসনি।”

আমি রাফিতের এসব কথা শুনে এটুকু বোঝতে পারছি কোথাও খুব বড় একটা গন্ডগোল আছে।আমি তার বুকে দুই হাত দিয়ে এক প্রকার জোরে ধাক্কা দিয়েই নিজের কাছ থেকে দূরে সরালাম।সেও আচমকা ধাক্কায় আমার থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো।আমিও গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বললাম,

“কি আবল তাবল বলছেন এসব হে।আমি কোনো সময় কারো সম্মান নিয়ে খেলিনি।আর কার কথা বলছেন আপনি?কোনো পার্টনার নেই আমার।কিচ্ছু করিনি আমি কারও সাথে শুনতে পাচ্ছেন আপনি কিচ্ছু করিনি আমিইই।”

সে ঠাসস করে তার শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে আমাকে চড় মারলো।তাল সামলাতে না পেরে আমি বসা থেকে বিছানায় নেতিয়ে পরি ও আমার খোলা চুলগুলো আমার সারা মুখে ছড়িয়ে পরে।আমি শব্দ করে জোড়ে জোড়ে কেদে চলেছি।

রাফিত আমার কাছে এসে আমার এক হাতের বাহু শক্ত করে ধরে আমাকে টেনে তুললো।তারপর এক হাতে আমার চুলের মুষ্টি ধরে মাথা উচু করে তার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে রেগে বলল,

“তোর সাহস কি করে হয় আমার সাথে উচু গলায় কথা বলার।ভালো করে ভেবে দেখ তুই কি করেছিস।ছাড়বোনা আমি। তোদের কাউকে আমি ছাড়বোনা।সব কটাকে নিজের হাতে শেষ করবো।আর তোকে তিলে তিলে প্রতিটা মুহূর্তে মারবো আমি।যেমন কষ্ট গত একটা বছর ধরে আমি পেয়ে আসছি তার চেয়ে দিগুন বেশি কষ্ট আমি তোকে ফিরিয়ে দিবো।”

এদিকে আমি চুলের ব্যাথায় এক হাত দিয়ে তার হাতটা আমার চুল থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।তার কথাগুলো শুনার পর আমার মাথাটা ভীষন ফাকা ফাকা লাগছে।লাগবেইনা বা কেনো।আমি তার কথার বিন্দু পরিমাণও কিছু বোঝে ওঠতে পারছিনা।তাই আমি তার চোখে চোখ রেখে বললাম,

“যা বলার ক্লিয়ারলিভাবে বলুন।এসব ভাঁওতাবাজি বন্ধ করে কিসের কথা বলছেন আপনি সাফ সাফ বলুন। আমি আপনার মতো এতো প্যাচের কথা বোঝতে পারিনা।”

সে আমার চুলে তার হাত আরও শক্ত করে ধরে দাতে দাত পিষে বললো,

“আরে এতো তাড়া কিসের।তোর কাছে এখনো অনেক সময় আছে এসব ভাবার।সো নো হারি সোনা।”

বলে আমার চুলের মুষ্টি ধরে আমাকে ঠাস করে বিছানায় ফেলে দিলো।সে আমাকে এত্তগুলা কনফিউশান এর ডিব্বা উপহার দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো।আর আমি এদিকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাদছি।ঠোঁটের সাইটটাও মনে হয় কেটে রক্ত ঝরছে।কিন্তুু মনের রক্তক্ষরণ এর কাছে এটা কিছুই নয়।কষ্টে মনে হচ্ছে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।যদি কলিজাটা কেটে কিছুটা কষ্ট কমানো যেতো তাহলে তাই করতাম এই মুহূর্তে।এভাবে কাদতে কাদতে এলোমেলো অবস্থাতেই উবু হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম তা জানিনা।
,
,
,
,
,
মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে অনুভব করলাম কে যেনো আমার ঠোঁটে এক আঙ্গুল দিয়ে অনবরত স্লাইড করে চলেছে।হঠাৎ মনে হলো আমার গালে তরল জাতীয় হালকা গরম কিছু পরছে।চট করে চোখ মেলে দেখি রাফিত আমার দিকে ঝুকে এক দৃষ্টিতে আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ দুটোও কেমন জানি পানিতে টলমল করছে।সে কাছে আসাতে খুব বাজে টাইপের একটা গন্ধ আসছে আমার নাকে।বোঝতে আর বাকি নেই সে ড্রিংক করে এসেছে।আমি আর কিছু বললামনা।আমিও ওভাবে থেকেই তার মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলাম।তাকে দেখে কেনো যেনো মনে হচ্ছে সে খুব কষ্টে আছে।যা সে কাউকে বলতে পারছেনা।মানে চাপা কষ্ট।সে কেমন যেনো মায়া জড়ানো কন্ঠে আমার ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে বলে উঠলো……………..

to be continued…………….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *