তোকে চাই !! Part- 09
আমার দিকে কৃতজ্ঞতা মাখা চাহনী দিয়ে দরজার পাশ থেকে সরে গেলেন মামনি,,,,ধীরে ধীরে সড়ে গেলো সবাই।।।শুভ্র এখনো হাসছে,,,হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাচ্ছে এমন অবস্থা।।।মানুষটা এতো হাসতে পারে,,তবু হাসিগুলোকে যে কি ভাবে চেপে রাখে সেটাই বুঝতে পারছি না??৪/৫ মাস পর আজ প্রথম, আমি উনাকে মন খুলে হাসতে দেখছি।।হঠাৎই উনি হাসি থামিয়ে দিলেন,,,হয়তো নিজের পরিবর্তনটা বুঝতে পেরে নিজেই অবাক হচ্ছেন।।আমার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন,,,”চলো”।।।আমিও বাধ্য মেয়ের মতো উনার পেছন পেছন মামুর রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।।।আজ খুব করে মনে হচ্ছে,,,খুব কি ক্ষতি হয়?যদি উনি নীলিমা আপুকে ভুলে আবার হাসতে শিখেন,,,,বন্ধুদের আড্ডায় আবারও মধ্যমনি হয়ে উঠেন,,,আবার একটু ভালোবেসে আগলে রাখতে শিখেন।।কিন্তু প্রকৃতি সবকিছুকে এতো সহজ করে দেয় নি,,,একটা জীবনের সাথে খুব গোপনভাবে জড়িয়ে দিয়েছে আরো কয়েকটা জীবন।।।নীলিমা আপুর সাথেও জড়িয়ে ছিলাম আমরা।। তাইতো তার চলে যাওয়াতে,,, কেউ রেহাই পাইনি,,,না আমি,,না শুভ্র,,না আপুর বাবা-মা,,,সবাই তার অগোছালো জীবনটাতে ক্লান্ত শুধু একটা নীলিমার অপেক্ষায়।।মামু বিছানায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলেন,,,আমরা রুমে ঢুকতেই উঠে বসে আমাদেরও বসতে বললেন।।।
।
বাবা,,ডেকেছিলে??কোনো সমস্যা?? (উদ্ধিগ্ন হয়ে)
।
তোদের কোনো সমস্যা ছাড়া ডাকতে পারি না বুঝি?(হালকা হেসে)
না,,তেমন টা না আসলে,,,
।
থাক ওসব কথা,,,,তোদের ডাকার প্রধান কারণ হলো রোদ মা।।
।
আমি অবাক হয়ে মামুর দিকে তাকালাম,,,শুভ্রও হয়তো অবাক হয়েছে,,সে আমার দিকে একনজর তাকিয়েই মামুর চোখে চোখ রেখে বললেন,,,
।
রোদ মানে??
।
রোদ মা??তোর সাথে অনেক অন্যায় আমি করেছি,,তোর স্বপ্নগুলো আমার জন্য ঝাপসা হয়ে গেছে কিন্তু না,,,তুই তোর স্বপ্ন পূরন করবি,,,কালই একটা এডমিশন কোচিং এ ওকে এডমিট করিয়ে দিবে শুভ্র,,,ভালো করে পড়াশোনা করো,,,আমার বউমাকে আমি উচ্চশিক্ষিত হিসেবে দেখতে চাই।।(আমার মাথায় হাত রেখে)
।
না ম,,মামু,,,তার কোনো প্রয়োজন নেই,, আমি বাসায় পড়েই এডমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে নিবো।।কোচিং এ ভর্তি হওয়ার দরকার নেই।।
।
একদম কথা না।।।আমি যা বলছি,,,যেভাবে বলছি তাই হবে,,,তুমি ভর্তি হবে মানে হবে।।।শুভ্র তোমার কোনো সমস্যা আছে?
।
না বাবা,,,,আমি এক্ষুনি খোঁজ নিয়ে দেখছি কোন কোচিংটা ব্যাটার,,,,
।
বলেই বেরিয়ে গেলেন,,,,উনার চোখে মুখে খুশির একটা ঝিলিক ছিলো,,হয়তো উনি এমন কিছুই চাইছিলেন।।। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে আসতে নিলেই মামু আমার হাত চেপে ধরলেন,,,,আমি তাকাতেই,, ছলছল চোখে পাশে বসতে ইশারা করলেন,,,,আমি অবাক হলাম।।মামুর এই ছলছল চোখের রহস্য খোঁজে পাচ্ছিলাম না।।মামু আগের থেকেও শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরে বলে উঠলেন,,,
।
মা রে,,,বড্ড অন্যায় করে ফেলেছি তোর সাথে,,,পারলে ক্ষমা করিস।।কিন্তু জানিস?এই অন্যায়ের জন্য আমার আপসোস হচ্ছে না।।সন্তানের জন্য স্বার্থপর হওয়া তো অন্যায় নয়,, তাই না??আমি জানি শুভ্র নীলিমাকে ভালোবাসে,,,ভালোবাসা অন্যায় না কিন্তু ভালোবাসার জন্য তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়াটাও তো কোনো সমাধান নয়,,,নিজের ছেলেকে চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতেও দেখতে পাচ্ছিলাম না।।এভাবে থাকলে ও মরে যেতো মা,,,মরে যেতো।।।আমি শুধু আমার ছেলেটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি ব্যাস।।
।
আমি মামুর দিকে তাকিয়ে আছি তীক্ষ্ণ চোখে,,,তার চোখে ছেলেকে হারানোর ভয়,,,অশ্রুজল মাখানো আর্তনাত,,,,হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে,,,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলেন উনি,,,
।
তুই নিশ্চয় ভাবছিস,,,ছেলেকে বাঁচাতে যদি বিয়েটা খুব ইম্পর্টেন্ট ছিলো তাহলে তুই ই কেনো???তোর মতো বাচ্চাকেই কেনো বেছে নিলাম??কোনো এডাল্ট মেয়েকে কেনো নয়??
আমি মাথা ঝাঁকালাম,,,উনি মুচকি হেসে বলে উঠলেন,,
।
এর পেছনে দুটি কারণ আছে,,প্রথমত,,আমি তোর চোখে শুভ্রর জন্য একটা গভীর মায়া দেখেছিলাম।।যা শুধু শুভ্রর মায়ের চোখেই ফুটে ওঠে বারবার।।আমার মনে হয়েছিলো এই মায়া শুভ্রকে বাচাঁর একটা স্কোপ তৈরি করে দিবে,,,তাই তোকে বিয়েটা করতে বাধ্য করেছি,,,
।
আর দ্বিতীয় কারন??(কৌতূহলী চোখে)
।
দ্বিতীয় কারণটি হলো তুই দেখতে তোর মায়ের মতো আর তোর আচার-ব্যবহারও তার মতোই,,,
।
এর সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক?? (ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে)
।
মামু এবার হুহু করে হেসে উঠলেন,,,আমি এবার আরো অবাক হলাম,,,কি ব্যাপার??উনি হাসছেন কেনো??
।
দেখেছিস??,এই যে ভ্রু কুঁচকে তাকালি,,,তোর মাও ঠিক এভাবেই তাকায়।।তোর মা আমাকে বাঁচার আশা দিয়েছিলো,,,আর তুই দিবি আমার ছেলেকে,,,কি পারবি না??
।
মানে??মা বাঁচার আশা দিয়েছিলো মানে??আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না,,,,(কনফিউজড হয়ে)
।
এতো বুঝতে হবে না,,, তোকে অন্যদিন না হয় সব খুলে বলবো।।।
।
না,,না,,প্লিজ আজই বলো না,,নইতো আমার রাতে ঘুমই হবে না আমার।।(ঠোঁট উল্টিয়ে)
।
তুই বায়নাও করিস তোর মায়ের মতো,,,আমার ছেলেটাকেও তোর মায়ের মতো সামলে নিস মা,,,,,এবার যা এক কাপ চা নিয়ে আয় তো,,,
বুঝতে পারলাম মামু কথা ঘুরাতে চাইছে,,তাই আমিও আর জোড় করলাম না,,বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে ফিরতেই শুভ্রকে দেখতে পেলাম,,দরজায় দাড়িয়ে আছেন।।উনার চোখ -মুখ দেখে বুঝতে পারছিলাম না যে,,,উনি কি আমার আর মামুর কথা শুনেছেন নাকি শুনেননি???উনি আমার দিকে একনজর তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলেন,,,,,আমাকে পাশ কাটিয়ে মামুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন,,, আমিও চা আনতে নিচে চলে গেলাম।।।মামুর কথা শুনে বুঝতে পারছি,, উনি আমাকে কোচিং এ ভর্তি করিয়েই ছাড়বেন,,,কিন্তু টাকা???আমি এতো টাকা কোথায় পাবো??ভর্তি ফি,,বই-খাতা বাবদ ১৫/২০ হাজার টাকা তো এটলিস্ট লাগবে।।।মামু বা শুভ্রর টাকায় আমি কোচিং এ ভর্তি হবো না,,,শুভ্রর মুখে শুনা লোভী পদবীটা এখনো আমার কানে বাজে,,,নাহ,,নিজের আত্মসম্মানের সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ নয়।।।একটা মানুষের আর কিছু থাকুক বা না থাকুক সেল্ফরেসপেক্ট থাকা উচিত,,,যা আমার রক্তের কণায় কণায় মিশে আছে।।।টাকা আমায় জোগার করতেই হবে কিন্তু কিভাবে??বাবাকে বলা যাবে না তাহলে বাবা মামুকে ভুল বুঝবে,,এসএসসি পাশ করার সার্টিফিকেটও হাতে পাইনি তো চাকরি করাটা নেহাত কল্পনা,,,ওসব শুধু গল্প-নাটকেই হয়,,,রিয়েল লাইফে নয়।।।কিন্তু কিছুতো করতে হবে।।।এসব ভাবতে ভাবতে মামুর রুমে গিয়ে মামুর হাতে চায়ের কাপটা ধরিয়ে দিয়েই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম,,শুভ্র হয়তো রুমেই আছে,,উনার থেকে টাকার এমাউন্ডটা জেনে নিতে হবে
।।।তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকেই আমি” হা”,,,,উনি এর মধ্যে শাওয়ারও নিয়ে নিয়েছেন,,,হাউ ফাস্ট,,,হবেই না বা কেন??দেখতে হবে না কার বর,,,,ইচ্ছা করছে কাজলের টিপ দিয়ে দিই উনাকে,,এত্তো কিউট কে হতে বলছে??ভিজা চুল থেকে টুপটাপ পানি ঝরছে,,বুকে লেপ্টে থাকা লোমগুলোও কি আকর্ষনীয়,,,,ইচ্ছা করছে উনার বুকে জমে থাকা ফোঁটা ফোঁটা পানিগুলো ছুঁয়ে দিই আলতো হাতে,,,হঠাৎ ই দুষ্টুবুদ্ধি খেলে গেলো মাথায়,,চটপট বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম,,,,উনি আমাকে দেখে যেনো অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন,,,তাড়াহুড়ো করে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলেন,,,হয়তো ড্রেস বের করবেন।।ঢং দেখলে,,, মেজাজ বিগড়ে যায়,,,নেকামো,, আগে তো খালি গায়েই হুটহাট সামনে চলে আসতো আর আমি লজ্জায় লাল হয়ে যেতাম আর এখন??বিয়ে হয়ে গেছে,,, সাথে সাথে সাহেবও দেখি লজ্জার কারখানা দিয়ে বসে গেছেন,,,হুহ।।।উনি তাড়াহুড়ো করে বিছানার পাশ দিয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ওমনি উনার পায়ের সাথে পা লাগিয়ে দিলাম।।তারপর যা হওয়ার তাই হলো,,আমায় নিয়ে বিছানায় গিয়ে পড়লেন,,কই ভেবেছিলাম স্টার জলসার হিরো-হিরোইনের মতো ৫/১০ মিনিট দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হারাই যাবো,,,কিন্তু তা আর হলো কই??ওই যে আমার বর বলে কথা,,,,ব্যাটা এতো আনরোমান্টিক,,,,আমার মনে হলো পড়ার আগেই উনি উঠে গেলেন।।।আর আমি উঠে বসতে বসতে উনি টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমেও ঢুকে গেলেন,,যাওয়ার সময় ছোট্ট করে বললেন “সরি,,,এটা ইন্টেনশনালি ছিলো না”।।।। মেজাজটা আমার চরম খারাপ হচ্ছে,,ব্যাটা খচ্চর একটা,,,জীবনে রোমান্টিক মুভি দেখিস নি???ইচ্ছা তো করছে তোর সবগুলো চুল টেনে টেনে ছিঁড়ে ফেলি,,,ফাজিল পোলা,,কতো আশা করেছিলাম,, কতো সুন্দর রোমান্টিক সিন ক্রিয়েট হবে,,,আর এই ব্যাটায় সব নষ্ট করে দিলো।।শালা আবাল,,,তোর ঘাড়ে নীলামার ভূত এসে চাপপে দেখে নিস,,,,😠😠😠
।
।
#চলবে….