ভালোবাসার প্রতারণা

ভালোবাসার প্রতারণা ! সিজন 2 ! Part- 07

প্রভাত ইচ্ছে করেই এই কথা বলেছে। তারার মুখটা দেখার মতো। তারা নিজেও জানেনা কেন জানি ওর মনে একটা অদ্ভুদ মায়া জন্ম নিয়েছে প্রভাতের উপর। অবাক করা ব্যাপার ওর চোখে পানি টলমল করছে।নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে বলল

—-ভালোবাসা ! (তাচ্ছিল্যের হাঁসি)

—-হুম। জানি তুমি বিশ্বাস করবেনা আর না করারই কথা তা কেন তুমি তো জানোই।

—-আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে মি. চৌধূরী।

—-তা ঠিক খারাপ তো হয়েছেই। আর ভালো হবে কি করে আমি সেটাও জানি।

—-জানলে ঠিক করিয়ে নিন।

—-হুম খুব তাড়তাড়ি ঠিক করে নিব। (তারার দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে)




তারা আর প্রভাতের এংগেজমেন্ট হয়ে যায়। তার দুইদিন পর তারা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তারার তো নিজের চোখের সামনেই প্রভাতকে দেখতে পারেনা তলে সারাজীবন কিভাবে থাকবে ওর সাথে? আসলেই কি কোনো পথ নেই ওর প্রভাতের হাত থেকে বাঁচার। খুব কান্না পাচ্ছে তারার কিন্তু কান্না করতে পারছেনা। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিল তখনিই হাতে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে। স্ক্রিনে যে নাম্বার ফুটে উঠেছে তা দেখে তারার যে আর খুশি ধরেনা। কারণ তার ফোনের ওপাশে থাকা সেই ব্যক্তিটি যে কল দিল। একটুও দেরি করলোনা। কল রিসিভ করেই হেলো বলে উঠল। তখন ওপাশের লোকটি বলল

—–মিস করছিলে আমায়?

—–কই নাতো। (কান্না চেপে)

—-তুমি করেই বলছি কারণ আমার মতো তুমিও এখন আমার প্রেমে পড়েছো।

—-ভুল।

—-সেটা তোমার থেকে আমার জানার দরকার নাই।

—-হুম। একটা কথা বলি?

—-কাল আমার বিয়ে।

——কালকে?

—–হুম। আমার একটা হেল্প চাই।

—–কি পালাতে চাও নাকি?

—–ধরে নিন সেটাই।

—-কার সাথে পালাবে?

—–কারো সাথেই না তবে আমি মুক্ত ভাবে বাঁচতে চাই। যেখানে কেউ আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবেনা। জোর করবেনা।

—-ওহ। আমি এই ব্যাপারে তোমায় সাহায্য করতে চাইনা।

—–কেন? ওহ এইতো বেরিয়ে এল আসল কথা আপনাদের মতো ছেলেরা এমনি হয় মেয়েদের টিস্যুর মতো ব্যবহার করে ফেলে দেয়। প্রেম করার সময় যা পারেন সব রকমের ওয়াদা দেন আর যখন মেয়েটা বিয়ে করতে চায় বা একটু সাবায্য চায় তখন সেটা থেকে দূরে সরে যান। একটা মেয়ের জীবন এইভাবেই শেষ হয় যায়।

—–সব ছেলে এক নয় তারা।(ধমক দিয়ে)

—–তাহলে আমাকে সাহায্য করতে সমস্যা কি?

—–আমি পারবোনা তারা যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে আর আমার মনে হয় তোমার সেটা মেনে নেওয়া দরকার।

—–আপনি আপনার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন তাই না?

—–হুম। নিয়ে ফেলেছি আর যা বলার সেটাও বলেও দিয়েছি।

—-ভালো থাকবেন।

তারা ফোনটা কেটে দিল। এই লোকটাকে ওর ভরসা হতো আর সেও কিনা একিরকম বের হলো। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথায় হাত দিয়ে বসে কিছু ভাবলো তারপর মুখে একটা লম্বা হাসির রেখা টেনে বললো। “করবোনা আমি আপনাকে বিয়ে। দরকার হলে নিজের জীবনটাও শেষ করে দিব তাও আপনার সাথে সংসার করবোনা।”

এদিকে••••••

তোমাকে আমি এই ব্যপারে সাহায্য করবোনা তারা। কারণ আমি যদি তোমায় সাহায্য করি তাহলে তোমাকে যে আমি হারিয়ে ফেলবো।

সকালে♡♡♡

তারা পুরো রাত ঘুমায়নি। সকালের দিকে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেল। সবাই ব্রেকফাস্ট করছে। তারাও ব্রকফাস্ট টেবিলে বসলো। তার বাবা তাকে দেখে মর্নিং উইশ করলো

—-গুড মর্নিং মামুনি।

—-মর্নিং।

—–মন খারাপ কেন মা? বিয়ের পর চলে যাবে সেজন্য!

—–তোমাদের ছাড়া আমি থাকবো কি করে?

—–যখন ইচ্ছে হবে চলে এসো। এখন মন খারাপ না করে ব্রেকফাস্ট টা করে নাও। আজ তো তোমার বিয়ে অনেক ব্যস্ততার মধ্যে থাকবে তারপর হয়তো খাওয়ার কথাই মনে থাকবেনা।

—–বাবা একটা কথা ছিল। ধরে নাও একটা রিকোয়েস্ট।

—-বল আম্মু।

—-পার্লারের থেকে মহিলা আসার কথা ছিল। কিন্তু ওরা আসতে পারবেনা। আমার অনেক ইচ্ছা পার্লারে সাজার।

—–অন্য কোনো পার্লারে বলে দিচ্ছি।

—-না বাবা। এখন বিয়ের সিজন অনেকেই হয়তো বাসায় নিয়ে গিয়ে সাজছে। আর তাছাড়া আগে থেকে ইনফর্ম করা লাগে। হুট হাট বললে তো পাওয়া যায় না।

—–ওহ তাহলে কি

—-বাবা পার্লারে গিয়েও সাজা যায়। ঐখানে সবসময় থাকে ।

——এখন পার্লারে গেলে যদি দেরি হয়ে যায়?

—–2 ঘন্টার মধ্যে চলে আসব।

—–আচ্ছা তাহলে যাও। তবে সাথে কাউকে নিয়ে নিয়ে যাবে কিন্তু।

—–ঠিক আছে বাবা।

তারপর তারা ব্রেকফাস্ট করে চলে যায়। রেডী হয়ে পার্লারে যায় তবে কাউকে নেয় না। তারার মা বার বার করে বলেছে কাউকে নিতে তারা বলেছে সামনে নাকি তার কোন বান্ধবী আছে তাকে নিয়েই যাবে।

পার্লারে আসার ব্যাপারটা প্রভাতরা জানে না। তাই তারার জন্য আরো সহজ হয়ে গেল পার্লারে আসা। পার্লারের মহিলা গুলো তারাকে দেখে অবাক কারণ ওরা এখন তারাদের বাড়িতেই যাচ্ছিল। তারা ওদের বলল বাড়িতে ঝামেলা তাই নিজেই চলে আসল। তারাকে সবাই খুব সুন্দর করে বউ সাজিয়েছে। লাল লেহেঙ্গাটা ফুটে উঠছে ওর গায়ে লাল লিপস্টিক গাড় কালো কাজল। তাছাড়া তো রয়েছেই অন্যন্য সাজ সজ্জা। পার্লার থেকে বেরিয়ে সোজা একটা উভারে উঠল বাড়ির গাড়িতে উঠলে তো প্রবলেম। তারার গন্তব্য হলো স্টেশন কিন্তু ঐখানে যাওয়ার আগেই উভারে একটা সমস্যা হয় যার ফলে মাঝ রাস্তায় নেমে যেতে হয়। কি আর করার এক প্রকার দৌড়াতে লাগে এতক্ষণে হয়তো জানা জানি হয়ে গেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব যেতে হবে তখনিই একটা কালো গাড়ি এসে থামে সেখান থেকে কয়েকটা কালো কোর্ট পরিহিতা লোক বের হয়ে আসে আর কাকে যেন ফোনে বলে “স্যার ম্যাডামকে পেয়ে গেছি।” সেটা শুনে তারা ভয় পেয়ে যায় আর বুঝেও যায় এরা কেন এসেছে। দৌড়ে চলে গেল একটা ঘন জঙ্গলের দিকে। এই বিয়ের সাজে এভাবে দৌড়ানো যে খুব কষ্টকর। সে কোনো ভাবেই ধরা দিতে চায় না ওদের হাতে। জঙ্গলের মধ্যে এক প্রকার হারিয়ে গেল বললেই চলে। তখনিই কয়েকটা কালো রঙের গাড়ি এসে ওকে ঘিরে ফেলে সামনে দিয়ে যেতে গেল একটা সাদা রঙের প্রাইভেট কার ওর রাস্তা আটকিয়ে নেয়। গাড়ি থেকে অনেক গুলো কালো কোর্ট পরিহিতা লোক বেরিয়ে আসে। আর সামনের গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে শেরওয়ানী পড়া প্রভাত।

চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *