আমার ক্রাশ বর !! Part- 17
অনু পেছনে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে আছে।আরিয়ান ও মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে আছে।
অনু তাড়াতাড়ি সিঁড়ি থেকে নেমে চলে আসে।এই নতুন মেয়েটা আবার কে তা দেখতে।
অনু ভাবছে, “এখনো সংসার সাজাতে পারবো কি না তা জানি না,তার আগেই ঘাড়ে আপদ-বিপদ এসে হাজির,,আল্লাহ তুমি জানো এই নতুন শাঁকচুন্নি আবার কে”?
আরিয়ান বলে,”আমি তোমার উপর রাগ করেছি, তুমি আসতে তা আগে কেনো বলো নায়?? তার পরও দেড়ি করেছো কেনো, তাই বলে মেয়েটাকে ছাড়িয়ে একটু দূরে মুখ গোমড়া করে দাড়িয়ে থাকে”।
মেয়েটি বলে,”আরে জান পাখি মুখ গোমরা করে না,,,তোমাকে দেখতে তখন পেঁচার মতো লাগে।এতো অভিমান করলে হয়।মান ভাঙ্গাতে সারাবছর লেগে যাবে তো।
অনু একটু ভাল করে দেখছে,আরিয়ান কে দেখতে কেমন লাগে,,
কই ঠিক ঠাক তো লাগছে।
আজারে বেশী কথা বলছে মেয়েটা,,
মনে ইচ্ছা হচ্ছে মেয়েটাকে ধরে দেই না কি চারটা।
আয়াত এগিয়ে গিয়ে বলে,,”আরে মৌ তুই যে কি বলিস নাহ,, এখন ভাইয়ের অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য আমাদের নতুন ভাবী আছে তো”।
মৌ :তাই তো,, সে ভাবী টা কোথায় দেখি কেমন মেয়ে জুটেছে আমাদের নবাবজাদা ভাইয়ের কপালে।
অনু ভাই কথাটা শুনে একটু মনে শান্তি পেয়েছে। যাক বাবা এই বজ্জাতের কোনো এক বোন হয়।
আমি তো পাঁচ সাত ভেবে বসে আছি।মনে মনে
আয়াত মৌ কে অনুর সামনে এনে বলে,”এই হচ্ছে আমাদের ভাবী “।
মৌ অনুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলছে,,
“এ মেয়ের কোন দিক দেখে ভাই বিয়ে করেছে।
এতো সুন্দর ভাই আমার।
এতো দামী ড্রেস পরার পর ও কোনোদিক দিয়ে পারফেক্ট মনে হচ্ছে না ভাবীকে।
মেকআপ গুলা কি বাজে,,
চেহারা দেখতে সুবিধার না।
চোখের কথা তো বাদ দেই,
নাক ঠোট কোনোটাই সুন্দর না।
ভাই তুমি কেমন মেয়ে বিয়ে করেছো,,,
মায়ের পছন্দ মতো করলে বেষ্ট মেয়ে পেতে।হুহ”
অনু তো তেলে বেগুনে জ্বলছে।
রাগে তো এবার ভাবছে মেয়েটার ঘাট মটকে দিবো।।শালা নিজে তো পুরা মিষ্টি কুমড়া আমাকে আসছে কমেন্ট করতে।
এই তোর মা কে রে যে বিশ্ব সুন্দরি এনে দিতো আরিয়ান কে? মনে মনে বলে।
এবার আরিয়ান এসে বলে,”মৌ তোর চোখে কি ছানি পড়েছে??? তোর কোন দিক দিয়ে অনুকে খারাপ দেখতে মনে হচ্ছে?
চোখ নাক ঠোট সব তো মাশাআল্লাহ সেই সুন্দর। আর এই ড্রেস পড়ে তো কোনো রাজ্যের রানী ছাড়া কম কিছু মনে হচ্ছে না।
মেকআপ জুয়েলারি সব কিছু একদম পারফেক্ট। আমার বউ না সাজলেও সুন্দরি লাগবে।
তোদের মতো আটা ময়দা মাখতে হবে না।
আরিয়ান অনুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত দিয়ে নিজের সাথে লাগিয়ে বলে “এবার দেখ বলতো আমাদের কোন দিক দিয়ে খারাপ লাগছে,,,
একদম দুজন দুজনার জন্য পারফেক্ট “।
অনুর মাঝে আরিয়ানের ব্যবহার আর কথা শুনে মুগ্ধতা কাজ করছে।
মৌ আর আয়াত একসাথে বলে ওঠে,ওওও এতো দূরে,,যাক বউয়ের যে প্রশংসা করতে জানো তা আজ বুঝলাম। যাক ভাবি তোমার কপাল ভাল যে ছেলে দশ বছরে কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না,,প্রশংসা তো দূরের কথা নিন্দা করে না।
সে ছেলে নিজের বউয়ের প্রশংসা করেছে তাও যেমনে বলতে পারছে বলেছে এটাই অনেক।
আরিয়ান :তার মানে তোরা দু জন মিলে অনুর নামে বানিয়ে বানিয়ে এতো কথা বলেছিস শুধু আমার মুখ থেকে অনুর প্রশংসা শুনতে।
মৌ আর আয়াত : জ্বি ভাই,,তুই যে নিরামিষ জীবনে বউয়ের প্রশংসা করবি না।তা আমরা দুজনে খুব ভাল করে জানি।তাই একটু বাজিয়ে দেখলাম বউয়ের প্রতি কেমন ভালবাসা।
মৌ :এই যে ভাবি কে আজ এতো সুন্দর লাগছে একবার ও কি তার প্রশংসা করছেন আপনি? উঁহু করেন নাই তা আমার খুব ভাল করে জানি।
অনু : যে বজ্জাতের বজ্জাত জামাই আমার সে করবে প্রশংসা।। একথা ভাবা যায়।
মৌ :কেনো ভাবী ভাই বুঝি রোমান্টিক না??
এ কথা শুনে অনু যে এখন কি বলবে তার উওর ভাবছে।
তখন ফুপু আম্মা এসে বলে,,”আরে মৌ তুমি কখনো আসছো?? তুমি যে দেশে আসবে তা তো একবার ও বলো নাই?
মৌ : আম্মু আসলে কি হয়েছে ভাইয়া ভাবী কে সারপ্রাইজ দিতে তোমাদের কাউকে কিছু না বলে চলে আসা।তুমি খুশী হওনি বুঝি??
ফুপু :আমি খুশী হবো না, এটা কি কখনো হতে পারে?
মৌ তার মাকে জড়িয়ে ধরে,,
ফুপু বলে,,”তা তুমি এখানে কি করছো”??
মৌ :আসলে মা ভাবীকে দেখতে আসছি।
ফুপু :অনুকে বলে, “এই যে আরিয়ানের বউ এ হচ্ছে তেমার ননদ,আর আমার মেয়ে,,আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকবে। তোমার মতো মেয়ের ছারা পরলে না জানি মেয়েটা আমার খারাপ হয়ে যাবে।
এবার অনু দু হাত দিয়ে লেহেঙ্গা ধরে বলে,”ঐ ফুফু আম্মা আমি আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি?
যে সারা বেলা আপনি আমার পিছনে লেগে থাকেন? কোন কালের শএুতা আমার সাথে আপনার?
আল্লাহ আমাকে এই মহিলার ছেলের বউ ভাগ্যিস করো নাই তাহলে তো বাসরঘরে গলায় দড়ি দিতে হতো।
By the away আপনার কোনো পোলা আছে না কি খালি একটা মেয়ে??
আরিয়ান এসে অনুকে ধরে বলে,”ফুপুর ছেলে আছে সে বাহিরে থাকে দেশে আসে না। আর তুমি নিচে থাকা মানে বিশ্বযুদ্ধ। তাই বলে অনুকে কোলে করে নিয়ে চলে আসে।
অনু বলে,”আমাকে নামিয়ে দিন আপনার ফুপুর আজ বারোটা বাজিয়ে দিয়ে আসি,বেয়াদ্দপ মহিলা।
‘
‘
‘
অারিয়ান অনুকে রুমে এনে আয়নার সামনে নামিয়ে দিয়ে বলে,”এবার নিজেকে আয়নাতে দেখো তোমাকে রাগলে কেমন পচা দেখতে লাগে”।
অনু আয়নাতে নিজেকে ভাল করে দেখছে আর বলছে কই কোন দিক দিয়ে পঁচা লাগে ভালই তো লাগছে আমাকে।
আরিয়ান অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে “এইতো এইবার দেখো”।অনু বোকার মতো নিজেকে দেখছে।
আরিয়ান সেই ফাঁকে অনুর গায়ের ঘ্রাণ নিচ্ছে,, চুলে দিয়ে অনেক সুন্দর ঘ্রাণ বাহির হচ্ছে যা আরিয়ানের মনের মাঝে একটু একটু করে ভালবাসার সাগর তৈরি করছে।
অনু এবার খেয়াল করে আরিয়ান তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।কেমন যেনো অন্যরকম একটা অনুভূতি অনুর মনের মাঝে হচ্ছে।
তারপর অনু বলে, “বেপার কি আপনি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন কেনো”?
আরিয়ান, “আমি আমার বউ কে জড়িয়ে ধরে আছি,তাতে তোমার কি সমস্যা”??
অনু :আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন।আবার আমাকে বলেন আমার কি সমস্যা আজব তো?
অারিয়ান :আজিব মেয়ে তুমি,, আমার বউকে শান্তি মতো ধরতেও দাও না।তাই বলে, “অনুর গালে একটা চুমো দিয়ে তাড়াতাড়ি রুমের বাহিরে চলে যায়”।
অনু এটা কি হলো,,,এই বজ্জাত স্যার তো দেখছি পুরা লুচু টাইপের,,, এর পর আমাকে টাস্ করলে তার হাতে এমন কামড় দিয়ে দিবো,পরে আমাকে টাস্ করতে ভয় পাবে।হুহ
তারপর অনু ফ্রেশ হয়ে,ড্রেস চেঞ্জ করে নিচে গিয়ে খাবার খেয়ে নিজেদের রুমে চলে আসে।
আজ সারাদিন সবাই খুব ব্যস্ত ছিলো তাই যে যার মতো বিশ্রাম করতে নিজেদের রুমে চলে যায়।
সবাই ক্লান্ত তাই পুরা বাড়ি খুব তাড়াতাড়ি নিরব হয়েগেছে,,বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে গেছে।
অনুও ঘুমিয়ে গিয়েছে। আরিয়ান এসে খাটের নিচে বসে ঘুমন্ত অনুর চেহারা দেখছে।
আরিয়ান :ঘুমন্ত অনুকে দেখে কেউ বলবে,,
এই মেয়েটা এতোটা চঞ্চল,,
এতোটা দুষ্টুমি তে ভরা যার সারাদিন।
যে কেউ তোমার সাথে থাকলে তোমাকে ভালবাসবেই।
আর আমি তোমাকে ভালবাসাবো না তা কি করে হতে পারে।
জানি না।আমাদের ভালবাসা পূর্ণতা পাবে কি না।যদি তোমার ভালবাসা আমার ভাগ্যে থাকে তাহলে পাবো।
মনে মনে।
‘
‘
‘
অনু আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে আরিয়ান ঘরে নেই।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে আরিয়ান বসে মৌয়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।
অনু :আজ আপনি অফিসে যাবেন না??
আরিয়ান :হুম আজ আমি যাবো।কিন্তু তোমার কিছুদিনের জন্য ছুটি।
অনু :আমি কি ছুটির জন্য দরখাস্ত করেছি যে আপনি ছুটি দিবেন?
আরিয়ান :উঁহু, তুমি ছুটি চাও নি কিন্তু তবুও আমি ছুটি দিচ্ছি। তুমি কিছুদিন ছুটিতে থাকবে।
অনু :আপনে আমাকে ছুটি দিলেই যে আমি ছুটি কাটাবো তার কোনো মানে নেয়।
আরিয়ান :আজব মেয়ে তো তুমি।বলছি না তুমি কিছুদিন অফিসে যাবে না।ধমক দিয়ে বলে।
অনু রেগে গিয়ে আরিয়ানের চুল মুঠ করে ধরে বলে,,,””ফাজিল লোক কোথাকার,
বিয়ের পরেরদিন সকালে বউ সাথে করে অফিসে নিয়ে যাবার সময় ছুটির কথা মনে ছিলো না।
আজ হঠাৎ ছুটি দিচ্ছে, বলছি নিবো না।
তাও জোর করে ছুটি ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে ।।
মৌ বলে,,””আরে বাহ,,ভাই তুমি এতো রোমান্টিক যে বউ কে বিয়ের পরেরদিন সাথে করে অফিসে নিয়ে গেছো?
অফিসে বুঝি রোমান্স করেছ তোমরা??
অনু আরিয়ানের চুল টানছে আর বলছে,,”,রোমান্স না ছাই করেছে,,
আমাকে দিয়ে সারাদিন কাজ করিয়ে নিয়েছে।
এই বজ্জাত স্যার রোমান্স বোঝে যে করবে “?
মৌ :ভাই তুমি এটা একদম ভুল কাজ করেছো কিন্তু very bad..
আরিয়ান বলে,,”ভাল মন্দ পরে দেখবি,,এখন এই ভেজালের হাত থেকে আমাকে বাঁচা প্লিজ মৌ”।
অনু :কেউ বাঁচাতে পারবে না।আজ আপনার সব চুল ছিঁড়ে টাকলু বানিয়ে দিবো।
আরিয়ানের বাবা এসে বলে,,”বউমা টাকলু বানাবে ঠিক আছে,, কিন্তু তোমার কি টাক মাথার বর পছন্দ হবে”??
অনু এবার আরিয়ানের চুল গুলা ছেড়ে দিয়ে ভাবতে থাকে।আচ্ছা টাকলু মাথা বর কি দেখতে ভাল লাগবে??
একটু ভেবে চিৎকার দিয়ে বলে।।
না থাক চুল ছাড়া বর ভালো লাগবেনা।
আরিয়ানের বাবা বলে,”এই না হলে আমার সোনা বউমা “!
অনু গিয়ে তার শ্বশুরআব্বা কে জড়িয়ে ধরে বিচার দিতে শুরু করে,”আমাকে আজ ছুটি দিলে আমি ছুটি কেনো গ্রহণ করবো বলেন তো”?
আরিয়ানের বাবা :কারণ এই যে মৌ আসছে,,তুমি ওর ভাবী হও তাই না,ও বাংলাদেশের কিছু চেনে না।তুমি কিছুদিন মৌ কে সময় দিবে।
মৌ কে নিয়ে ঘুরাঘুরি করবে।
অনু বল,”ওহ এই কথা!!তাহলে ঐ ফাজিল আগে এ কথা যদি বলতো কি এমন ক্ষতি হতো?
প্রথমে যদি বলতো তখন আমি এমন কিছু করতাম নাহ”।।
এরপর থেকে কিছুদিন অনু আর মৌ খুব ঘুরাঘুরি করে,,,দুজনের মাঝে খুব ভাব হয়ে যায়।
এদিকে প্রতিদিন অারিয়ান অফিসে যায়।
অনু আর অফিসে যায় না।
হঠাৎ করে মৌ কিছুদিনের জন্য ওর দাদুবাড়ি বেড়াতে যায়।
অনু বাড়িতে সারাদিন একা থাকে।
তাই পরের দিন সকালে আরিয়ান অনুকে বলে,”বাড়িতে বসে আর কি করবে,,
আজ থেকে আবার অফিসে আসতে পারো,
যদি তোমার ইচ্ছা হয়”।
অনুও ভাবে এভাবে বাড়িতে একা থেকে কি করবো তার থেকে প্রতিদিন অফিসে যাওয়া ভাল।
তাই অনুও রেড়ি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
(নাহ,, অনু খুব ঝগড়াটে,, অনুকে আর মানুষ করতে পারবো না,”আচ্ছা মৌ কি কোনো ঝামেলা করতে পারে না কি ওহ খুব ভাল মেয়ে”😟😒)
‘
‘
‘
চলবে…