আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 18

অনু অফিসে এসে তো অবাক,,,
কারণ অনুর কেবিনে একটা সেইরকম সুন্দরি আর মডার্ন স্টাইলিশ মেয়ে বসে আছে।
অনুর তো মেয়েটাকে দেখে বাজ পরেছে।

অনু :এই মেয়ে তুমি এখানে বসে কি করো??

মেয়েটা : আমি এখানে মানে কি? আমার স্থান ছাড়া কোথায় যাবো?

অনু :এটা তোমার জায়গা মানে?? এটা তো এ আফিসের পিএর ডেস্ক!!

মেয়েটা :জ্বি আমি এ অফিসের নতুন পিএ।
আজ চার পাঁচ দিন জয়েন করেছি!

অনু : কি ভাবে সম্ভব আমার সাথে ফাইজলামি হচ্ছে?? পিএ থাকতে আবার নতুন পিএ।

মেয়েটা :দেখুন মেম আমার সাথে অযথা ঝামেলা না করে। আপনি আমাদের অফিসের বসের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।

অনু আর কথা না বাড়িয়ে সোজা আরিয়ানের কেবিনে ঢুকে যায়।

আরিয়ান অনুর চেহারা দেখে বুঝতে পারছে,
আজ আমার কপালে শনি রবি সোম আছে।

আরিয়ান অনুকে বলে,”অফিসে এসে বসের কেবিনে প্রবেশ করার আগে যে অনুমতি নিতে হয় তা বুঝি আপনি ভুলে গেছেন “?

অনু বলে,”রাখ তোর অনুমতি,অনুমতির নিকুচি করি,আমি থাকতে নতুন পিএ কি করে অফিসে রাখছেন”?

অারিয়ান :ভুলে যাবেন না, এটা আমার অফিস। আমি আমার অফিসের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারি।

অনু বলে,” তাই আমাকে না জানিয়ে নতুন পিএ রেখে দিতে পারলেন? খুব ভাল তাহলো তো আর এ অফিসে আমার আসার আর কোনো প্রয়োজন দেখছি না ‘”?

অারিয়ান :প্রয়োজন কেনো থাকবে না।আপনি এ অফিসের সাধারণ কর্মচারী হয়ে কাজ করবেন। যে কাজের জন্য আপনি ইন্টার্ভিউ দিয়েছিলেন।

অনু :ওহ আমাকে এভাবে অপমান না করলেও পারতেন মিস্টার আরিয়ান চৌধুরী!!

অারিয়ান :এখানে অপমানের কি আছে।আমার অফিস, আমার সিদ্ধান্ত।

অনু বলে,”Ok fine, I have no problem!

আরিয়ান :আপনার সমস্যা থাকলে বা আমার কি?

অনু বলে,”আমার মাথা মন্ডু!! আপনি থাকেন আপনার নতুন পিএ কে নিয়ে তাতে আমার কি”?

অারিয়ান বলে,”আর কিছু বলবেন? নাহলে নিজের কাজে গিয়ে মন দিন “।

অনু সেখান থেকে হন হন করতে করতে সাধারণ কর্মচারী দের সাথে গিয়ে অফিসের কাজ করতে থাকে।
অনু রাগে গজ গজ করে,,আর আরিয়ানের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতে থাকে।

অনু বলে,,” সালার বর,,জীবনে তুই সুন্দরি বউ পাবি না,,আমি ও থাকবো না তোর সাথে,,
তোর জীবনে বাচ্চা হবে না,,
তোকে পাগলা কুত্তা কামড় দিবে,
তখন চৌদ্দটা ইনজেকশন দিবে।
আহ আমার যে কি শান্তি লাগবে তখন ভাবা যায় না।আমার কলিজা ঠাণ্ডা হবে তখন।
মনে মনে বিড়বিড় করে বলে।

অনুর পাশের একজন বলে,”আপনার কি কোনো সমস্যা?একা একা কি করছেন”?

অনু বলে,”আমি আমার বরের চৌদ্দগুষ্ঠিকে গালি দিচ্ছি”।

মেয়েটা :মেম আপনি কবে বিয়ে করলেন?

অনু :আরে বইন বিয়ে করি নাই তাই গালি দিচ্ছি। বিয়ে করলে তো বর কে চুমা দিতাম।

তখন পাশে থেকে অারিয়ান বলে,”বাহ আপনি বুঝি আপনার বর কে সারাদিন চুমা দেন”?

অনু বল,”বর নাই থাকলে ১০০% দিতাম “।

আরিয়ান :তা পরে দেখা যাবে এখন,,,চুমা টুমা বাদ দিয়ে কাজে মন দিন।এটা অফিস আপনার বেড রুম নাহ।

অনু কি বলবে বুঝতেছে না,,,খচ্চর যে এমন সময় এসে কথা শুনবে কে জানতো।

আরিয়ানের পাশে থেকে ওর পিএ বলে,”স্যার এসব মেয়ের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না,চলেন আমাদের মিটিং আছে “।।

আরিয়ান আর পিএ চলে যাবার পর,,

অনুর পাশের মেয়ে সুমি বলে,
“জানো অনু সারের এই পিএ টা একদম আঠার মতো,, স্যারের সাথে সব সময় লেগে থাকে।
আর কি নেকামি দেখলে গা জ্বলে,,,
তুমি তো কয়দিন দেখো নাই।
এখন দেখো কেমন লাগে।
মেয়েটা পারলে স্যারের বউ হয়ে যায়””।

অনু বউ কথাটা শুনে বলে,,”থাক ঐ সব বড় লোকের বড় বড় বেপার সেপার আমরা বুঝবো না।তাই নিজেদের কাজে মন দেয় “।

অনু চুপচাপ থাকলে কি হবে,,,মনের মধ্যে ঠিকি
একটা জিলাসি কাজ করতেছে। যতোই হোক নিজের বর কিনা তার সামনে অন্য একটা মেয়ের সাথে ঘুরাঘুরি করবে?? এটা কি সহ্য করা যায়।
অনুর ও তাই হয়েছে,,,সে রাগে দুঃখে কষ্টে আছে কিন্তু এটা কেনো হচ্ছে বুঝতেছে না।



অফিস শেষে বাড়িতে এসে দেখে আরিয়ান এখনো আসে নাই।

অনু তার শাশুড়ি মা কে বলে,”আম্মা আপনার ছেলে এখনো বাড়ি আসে নাই “?

শাশুড়ি মা : আরিয়ান তো এখনো আসে নাই।জানি না হয়তো বাহিরে কোনো মিটিং এ ফেঁসে গেছে।তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নাও।

অনু ফ্রেশ হয়ে নাস্তাপানি খেয়ে তো বসে আছে,,আজ আরিয়ান আসলে খুব ঝগড়া করবে।
এভাবে অপেক্ষা করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়।কখন যে ঘুমিয়ে যায় বুঝতে পারে না।

আরিয়ান বাড়িতে এসে দেখে অনু খাটে হেলান দিয়ে বসে ঘুমিয়ে গেছে।
আরিয়ান অনুকে কোলে করে সোজা করে শুয়ে দেয়।

তারপর নিজেও অনুর পাশে ঘুমিয়ে যায়।

এদিকে আরিয়ান অনুর আগে ঘুম ভেঙ্গে দেখে অনুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।

আরিয়ান মনে মনে বলে,”আল্লাহ আমি যে এই
ডেঞ্জারাস মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেছিলাম কোনো ভাবে যদি বুঝতে পারে তাহলে আমাকে আস্তা চিবিয়ে খাবে”।

অনু কিছু বুঝে ওঠার আগে আরিয়ান অনুর কপালে একটা চুমা দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে চলে যায়।

এদিকে অনু সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে আরিয়ান রুমে নেই।
পরে নিচে গিয়ে জানতে পারে,
অারিয়ান তাড়াতাড়ি অফিসে চলে গেছে,,
ওর না কি মিটিং আছে তাই।

তারপর অনু অফিসে গিয়ে দেখে আরিয়ান আর তার পিএ দিশা বসে হাসি তামাস করছে।

তা দেখে অনু সহ্য না করতে পেরে আরিয়ান কে বলে,”স্যার আপনার না আজ মিটিং ছিলো? তাহলে আপনি এখানে বসে ঠাট্টাতামাসা করছেন কেনো”?

দিশা :এই মেয়ে সব কথার জবাবদিহিতা কি তোমাকে দিতে হবে?? কে তুমি?

অনু মনে মনে বলে,”শাঁকচুন্নি আমার যদি শুধু রাজ না থাকতো তাহলে আমি যে কে তা তোকে হারে হারে বোঝায় দিতাম “?

আরিয়ান বলে,”আহ তোমরা চুপ করো,মিটিং ছিলো কেন্সেল হয়ে গেছে।আর কাজ কম তাই গল্প করছি।এবার তোমার কাজে যাও।

অনু চলে যাচ্ছিল,, তখন দিশা বলে,”স্যার মেয়েটার কি সমস্যা সব কাজের মাঝে নাক গলাতে চলে আসে,,কিসের এতো অধিকার দেখাতে আসে আল্লাহ জানে”।

অনু দিশার কথা গুলা বসে বসে ভাবতে থাকে সত্যি কি আমার কোনো অধিকার নেই?? না কি আমি নিজের হাতে সব অধিকার নষ্ট করছি।

তারপর আবার ভাবে,আরে আমি যদি স্যারের জীবন থেকে চলে যায় তখন তো স্যারের কাউকে লাগবে।হয়তো দিশা স্যারের জন্য পারফেক্ট।



এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যেতে থাকে,,
অনু আরিয়ানের মাঝে হঠাৎ করে একটা দূরত্ব কাজ করতে শুরু করেছে।

আরিয়ান সারাদিন কাজের জন্য ব্যস্ত থাকে।অনুর সাথে আগের মতো আর ঝগড়া করে না।

অনুর চোখের সামনে আরিয়ান সব সময় দিশার সাথে কাজ করে কথা বলে কিন্তু অনুর সাথে কথা বলে না।

অনু এখনো বোঝে না,,আরিয়ান ওর সাথে কথা না বললে কেনো এতো খারাপ লাগে,,
কেনো জানি একটা শূন্যতা কাজ করে,,
এইটা বুঝি ভাল লাগা নয়তো ভালবাসা,,
এ অনুভূতি মানে অনুর জানা নেই।

অফিস শেষে বাড়িতে গেলেও এখন আরিয়ান আগের মতো অনুর সাথে ঠাট্টাতামাসা করে না।

অনু কথা বলতে গেলেও অারিয়ান তার কাজের বাহানা দেয়।

অনুর পুরো পৃথীবি টা যেনো আজ কাল পুরো কালো মেঘে ঢাকা।কি জীবন আমার।
কোথায় ছিলাম আর কোথায় এসেছি।
সব কিছু শুধু আমার জন্য আচ্ছা আমি কি নিজে নিজের পৃথিবী টা নষ্ট করছি শুধু রাজের জন্য?
উফফ কি হচ্ছে,,এই রাজ কে কি পাবো কোনোদিন না কি,,শেষে এই ক্রাশ খাওয়া বর টাকেও হারাবো।উফফ জানি না কপালে কি যে আছে।



পরের দিন অনু অফিসে,,,,
অনুর আর ভালো লাগছিলো না,,
নিজের মনের মাঝে খুব বেশী
খারাপ লাগা কাজ করছিল।
তাই ভাবে কিছুদিনের জন্য বাবার বাড়ি যাবে।

তাই সে কাজ বাদ দিয়ে সোজা আরিয়ানের কেবিনের দিকে যেতে থাকে।

তখন দিশা এসে বলে,” স্যার ব্যস্ত আছে এখন যাওয়া যাবে না”।

অনু বলে,”তা আমি বুঝবো তোমাকে নাক ঘামাতে হবে না “!!

দিশা বলে,”আমি স্যারের পিএ,আমি নাক না ঘামালে কে ঘামাবে শুনি “?

অনু :ধেত তোমার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নাই
তাই বলে দিশাকে সাইড করে অারিয়ানের কেবিনে চলে যায়।

অনু আরিয়ান কে বলে,”আমি কিছু দিনের জন্য বাবার বাড়ি যেতে চাই “!

আরিয়ান :যাবে তো যাও না,,
তোমাকে কি আমি পায়ে শিকল পড়িয়ে রেখেছি?
তোমার সব কিছু তে পুরো স্বাধীনতা আছে।
যা খুশী করতে পারো।
তোমার কোনো কাজে আমি বা আমার পরিবার কখনো বাধা দিবে না।

অনু :আজব তো একটা সাধারণ কথা বলেছি। তার জন্য এতো কথা বলার কি ছিলো??
একটু ভালো ভাবে তো বলা যায়।

অারিয়ান :দেখতে পাচ্ছো না কাজ করছি কাজের সময় ডিস্টার্ব করতে আসো কেনো? এটা আমার অফিস তোমার বাবা বাড়ি নাহ।ok

অনু :আমার বাবা বাড়ি হলে আপনার সাথে কোনো দিন কথা বলতে আসতাম না।বাড়িতে কথা বলা যাবে না,অফিসে বলা যাবে না,
তাহলে কোথায় কথা বলবো আমি??

আরিয়ান :আর কোনো কথা বলবে,,
না হলে এখন আসতে পারো।
তোমার আজারে পেঁচাল শোনার কোনো ইচ্ছা আমার নেয়।

অনু আর কোনো কথা না বলে নিজের কাজে চলে যায়।সারাদিন মন খারাপ করে কাজ শেষ করে।
তারপর সোজা নিজের বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়,,,,,

(দুজনের মাঝে যখন তৃতীয় কেউ আসে সম্পর্ক সব সময় খারাপ হবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম😣😣
যাক অনু বাবার বাড়ি যাচ্ছে জানি না সামনে আরো কতো কি হবে।😥😥)


চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *