I AM YOUR VILLAIN LOVER

I AM YOUR VILLAIN LOVER !! Part- 16

ফোনে কথা বলা শেষ করে গিটার হাতে ছাদ থেকে নিচে নেমে এলো মেঘ। তারপর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিয়ে নিচে নামতে লাগলো। নিচে নেমে দুটো সিরি বাদ থাকতে সোফায় বসে থাকা বর্ষাকে দেখে থেমে গেলো মেঘ। বর্ষাও মেঘের দিকেই তাকিয়ে আছে। হলুদ শাড়ি আর খোলা চুলেই যেনো নজর কারা সুন্দর লাগছে বর্ষাকে। মুখে কোনো সাজ না থাকলেও চেহারায় যেনো একটা আকর্ষন কাজ করছে মেঘের জন্যে।

মেঘ পড়েছে একটা সাদা রঙের শার্ট,সাথে জিন্স প্যান্ট,শার্টের হাতা দুটো ফোল্ড করা, চুলগুলো আধো ভেজা, হাতে দামি ঘড়ি। মেঘকেও আজ অনেক বেশি কিউট আর হ্যানসাম লাগছে বর্ষার কাছে। কিন্তু মেঘের কপালের কাটা দাগটা দেখে বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো বর্ষার। বর্ষা মেঘের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকালো।

মেঘ বর্ষার কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো। মেঘকে এগিয়ে আসতে দেখে বর্ষা উঠে দাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যেতে নিলো। আর তখনি মেঘ গিয়ে বর্ষার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে কোমড় জরিয়ে ধরলো। তারপর বর্ষার কপালে চুমু একে দিয়ে বললো

— আমার থেকে যত দুরেই যাওয়ার চেষ্টা করিস না কেনো। মনে রাখবি তুই শুধু আমারই। আমার বুকের মাঝে শুধু তুইই আছিস। আমার ভুলটা যেমন ভেঙেছে তেমনি একদিন তোর ভুলও ভাঙবে আর তুইও আমায় আপন করে নিবি সরিষা। আমি সেই দিনের অপেক্ষায় রইলাম।

কথাটা বলে বর্ষাকে ছেড়ে দিয়ে আবারও জরিয়ে ধরলো মেঘ। বর্ষা মেঘের এমন কান্ড দেখে রাগি মুখ করে কিছু বলবে তার আগেই মেঘ বর্ষার ঠোট দখল করে নিলো। মেঘের আচমকা এমন কান্ডে চোখ বন্ধ করে আবার বড় বড় চোখ করে তাকালো বর্ষা। একটু পর বর্ষাকে ছেড়ে দিয়ে মেঘ বাকা হেসে বললো

— শুনেছি সরিষা ফুলের মধু নাকি খুব মিষ্টি আর সুস্বাদু হয়। কিন্তু সেটা যে এতটা মিষ্টি হবে জানতাম না। ইসস আবার একটু খেতে মন চাইছে। না থাক ওটা না হয় পরে একসময় খাওয়া যাবে, এখন আবার খেতে গেলে আমার কপালে সরিষা মৌমাছি হুল ফোটাবে নিশ্চিত।

মেঘের কথা শুনে আর মেঘের কান্ড কলাপ দেখে বর্ষা কি বলবে বা করবে বুঝতে পারছে না। তাই রাগি লুকে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে। মেঘ বর্ষাকে রাগ করতে দেখে নরম সুরে বললো

— এত রাগ করার কিছু নেই। একটা ভালো কাজে যাচ্ছি তাই যাওয়ার আগে মিষ্টি মুখটা করে নিলাম।

কথাটা বলেই বর্ষাকে একটা চোখটিপ মেরে চলে গেলো মেঘ। আর বর্ষা মেঘের চলে যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। কেনো জানেনা বর্ষার একটুও রাগ বা ঘৃনা হচ্ছে না মেঘের ওপর। তবে বর্ষার একটা জিনিস ভেবে খটকা লাগছে যে। হঠাৎ মেঘের কি হলো যে ও এতটা খুশি আর কি এমন ভালো কাজে গেলো ও এখন।
,
,
,
গোডাউনে পৌছে মেঘ সোজা চলে গেলো নিলয়ের কাছে। মেঘের লোকেরা নিলয়কে একটি চেয়ারে বেধে রেখেছে।

মেঘকে দেখেই নিলয় বলে উঠলো

— দোস্ত আমায় বাচা এই দেখ এই লোকগুলো আমায় কিডন্যাপ করে এনে বেধে রেখেছে। কেনো এমন করছে আমি তাও জানিনা। দোস্ত তুই আমায় বাচা প্লিজ।

নিলয়ের কথা শুনে মেঘ ওর লোকদের ইশারা করলো নিলয়ের বাঁধন খুলে দিতে। মেঘের ইশারা পেয়ে দুজন লোক নিলয়ের বাঁধান খুলে দিলো। বাঁধন খুলতেই নিলয় উঠে চলে যেতে নিলে মেঘ বললো

— আরে দোস্ত কই যাস তুই। তোর সাথে আমার কথা আছে। তাই তো তোকে কিডন্যাপ করতে বলেছিলাম ওদের আমি।

মেঘের কথা শুনে নিলয় অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে বললো

— তুই আমায় কিডন্যাপ করিয়েছিস? কিন্তু কেনো মেঘ?

— আরে ভাই আগে এখানে চুপটি করে একটু বসবি তো। তারপর সব বলছি তোকে।

মেঘের কথা শুনে ভয় করলেও নিলয় চেয়ারে বসলো। নিলয়ের সামনের চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে মেঘ বসে ওর লোকদের বললো

— এই তোমরা যাও তো আমাদের দুই বন্ধুর জন্যে গরম গরম কফি নিয়ে আসো। কফিটা যেনো খুব গরম হয়। আর তারাতারি আনবা বুঝলা।

মেঘের কথা শুনে ওর লোকেরা কফি আনতে চলে গেলো। এদিকে মেঘের এমন আচরনে নিলয় যেমন অবাক হচ্ছে তেমনই পাচ্ছে ভয়। নিলয় মেঘকে কাপা কাপা গলায় জিগ্যেস করলো

— তু তুই আমায় কেনো কিডন্যাপ করেছিস মেঘ। আ আমায় ব বললেই তো আমি চলে আসতাম।

— আরে দোস্ত তুই এত ঘামছিস কেনো আর এত ভয় পাচ্ছিস কেনো বলতো? আমি তো তোর সাথে মজা করে তোকে এখানে নিয়ে এসেছি। আচ্ছা বাদ দে এসব এখন বল তোর বিয়ের দাওয়াত দিচ্ছিস কবে?

মেঘের কথা শুনে অজানা ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো নিলয়। তারপর জোর করে হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে বললো

— যখন বিয়ে করবো তখন তো তোকে জানাবোই আর দাওয়াতও দিবো।

— তাই, তাহলে বর্ষার সাথে তোর যখন বিয়ে হচ্ছিলো তখন দাওয়াত দিলি না ক্যান? এমনকি জানালিও না আমায় একবার?

মেঘের কথা শুনে নিলয়ের মুখটা এবার ভয়ে চুপশে গেলো। নিলয় কি বলবে বুঝতে পারছে না। অসম্ভব পরিমানে ঘামছে নিলয়। তখনি মেঘের লোকেরা কফি নিয়ে এলো মেঘ আর নিলয়ের জন্যে। মেঘ এক মগ কফি নিজে নিয়ে আরেক মগ নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো

— এই নে দোস্ত কফি খা, এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি তোকে কিছু করবো না। শুধু কিছু কথা জানতে চাইবো তোর থেকে আশা করি তুই আমায় সত্যি কথাগুলোই বলবি।

— ক কি জানতে চাস তুই মেঘ। কোন সত্যি কথার কথা বলছিস তুই আমায়?

নিলয়ের কথা শুনে মেঘ কফিতে চুমুক দিয়ে গম্ভির গলায় বললো

— এক বছর আগে কলেজে যে ঝামেলাটা হয়েছিলো। আই মিন, বর্ষাকে আমি ধর্ষন করতে চেয়েছি এটা বলে যে আমায় গণধোলাই খেতে হয়েছিলো সেটা তোর প্ল্যান ছিলো তাইনা নিলয়?

মেঘের কথা শুনে নিলয়ের এবার প্রান যায় যায় অবস্থা। নিলয় ভয়ে কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে বললো

— এএএ সব ফ ফালতু কথা তোকে কে বলেছে ম মেঘ? আমি কেনো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে এমন করবো?(কিছু না জানার ভাব করে)

নিলয়ের মিথ্যে কথা শুনে এবার রাগ উঠে গেলো মেঘের। মেঘ সামনে থাকা নিলয়ের জন্যে রাখা কফির মগটা তুলে সব টুকু কফি নিলয়ের মুখ বরাবর ছুড়ে মারলো।

এতক্ষণে কফিটার গরম একটু কমে যাওয়ায় নিলয়ের মুখটা পোড়ার বদলে কিছুটা লাল হয়ে গেলো। নিলয় চিৎকার করে মুখে হাত দিয়ে বললো

— আআআআআ এটা তুই কি করলি মেঘ, আমার মুখটাতো জ্বলে গেলো।

— ইশশশ সরি সরি রে নিলয় আমি আসলে খেয়াল করিনি। তুই কিছু মনে করিসনা প্লিজ। আচ্ছা বাদ দে, এখন বল কলেজের ঘটনাটা তুই ঘটিয়েছিলি সেটা আমি জানি। কিন্তু কেনো ঘটিয়েছিলি সেটা বল। কেনো নিজের বেষ্টফ্রেন্ড এর সাথে এমন করলি? সত্যি কথা না বললে তোর জন্যে খুব খারাপ হয়ে যাবে, তাই যা বলবি সত্যিই করে বল।

মেঘের কথা শুনে নিলয় বুঝতে পারলো ওর আর কোনো উপায় নাই। এখন সত্যিটা না বললে মেঘ ওর সাথে যা খুশি করতে পারে। তাই নিলয় বলতে শুরু করলো

— হ্যা আমিই সেদিন কলেজে ঐ ঘটনাটা ঘটিয়ে বর্ষার নাম দিয়েছিলাম তোর কাছে। কারন তোর মতো আমিও বর্ষাকে পছন্দ করতাম ভালবাসতাম। কিন্তু সেদিন বর্ষা তোর প্রপোজ একসেপ্ট করায় আমি খুব রেগে যাই। তোর ওপর হিংসে হয় আমার। তাই আমি তোদের আলাদা করতে ঐ খেলাটা খেলি। তারপর বর্ষাকে আমি বিয়েও করতে গেছিলাম কিন্তু তুই বর্ষাকে সেই আমার থেকে কেরেই নিলি মেঘ।

এতটুকু বলে থামলো নিলয়। নিলয়ের কথা শুনে শান্ত গলায় মেঘ বললো

— কাউকে ভালবাসা পাপ নয়। আর আমি জানি ভালবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্যে মানুষ সব কিছু করে। কিন্তু এতটা ভালোই যখন বাসতি তুই বর্ষাকে তাহলে বিয়ের আসোর থেকে বর্ষা পালিয়েছে শুনে চলে কেনো গেছিলি? কেনো বর্ষাকে খোঁজার চেষ্টা করলি না?

— আমি বর্ষাকে বিয়ে করতে চাইছিলাম কিন্তু ও অন্য কারো সাথে পালিয়ে গেছে জানলে সমাজের লোক আমায় থু থু দিতো তাই বিয়ে না করে চলে আসি।

নিলয়ের কথা শুনে মেঘ হাতে তুড়ি বাজিয়ে বললো

— বাহ বাহ নিলয় তোর ভালবাসার প্রশংসা না করে পারছি না। একটি মেয়ে বিয়ের আসোর থেকে হঠাৎ হাড়িয়ে গেলো। তাকে তুই ভালবাসিস, অথচ মেয়েটা পালিয়ে গেছে নাকি তার কোনো বিপদ হয়েছে এটার খোজ না নিয়ে তুই সমাজের লোকের কথার ভয়ে বিয়ে না করে চলে গেলি? কেমন ভালবাসা তোর?

শান্ত গলায় এতটুকু বলেই উঠে দাঁড়ালো মেঘ। তারপর নিলয়ের শার্টের কলার ধরে চেয়ার থেকে টেনে তুলে টানতে টানতে নিয়ে গেলো গাড়িতে। মেঘের সাথে মেঘের লোকেরাও গাড়িতে গিয়ে বসলো। নিলয় মেঘের এমন রাগি লুক দেখে ভয়ে কাবু হয়ে বললো

— তুই আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস মেঘ। ছেড়ে দে আমায়। প্লিজ মেঘ আমায় ক্ষমা কর।

নিলয়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নিলয়কে নিয়ে সোজা নিজের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো মেঘ। তারপর গাড়ি থেকে নেমে নিলয়ের কলার ধরে টানতে টানতে নিলয়কে বাসার ভিতরে নিয়ে গেলো। আর ওর লোকদের ইশারায় কিছু একটা বলে দিলো মেঘ।

নিলয়কে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে বর্ষার সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো মেঘ। বর্ষা বাগানের দোলনাটায় বসে ছিলো। নিলয়কে এভাবে ফেলে দিতে দেখে বর্ষা দোলনা থেকে উঠে দাড়িয়ে অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *