I AM YOUR VILLAIN LOVER !! Part- 15
শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মেঘকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে নিচে ফেলে দিলো বর্ষা। রাগ আর ঘৃনায় বর্ষার মুখটা যেনো রক্তবর্ণ ধারন করেছে। ও মেঘকে এক মুহুর্তের জন্যেও সহ্য করতে পারছে না।
ঘুমের ঘোরে বর্ষার ধাক্কা খেয়ে খাট থেকে নিচে পরে গেলো মেঘ। নিচে পরার সময় খাটের পাশে থাকা টেবিলের কোনার সাথে কপালে আঘাত লেগে অনেকটা কেটে গেলো মেঘের। সেখান থেকে টপটপ করে রক্ত পড়তে লাগলো। মেঘ কপালে হাত দিয়ে চেপে ধরে বর্ষার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
— বর্ষা এটা কি করলি তুই, আমি কতটা আঘাত পেলাম, দেখ কি ভাবে রক্ত ঝড়ছে কপাল কেটে।
বর্ষা উঠে বসে মেঘের কথা শুনে একবার মেঘের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। কারন মেঘের মাথায় রক্ত দেখলে বর্ষা আর মেঘকে ঘৃনা করতে পারবে না যতই হোক এক সময় তো মেঘকে ভালবেসেছে ও। আর ভালবাসার মানুষকে যে কষ্ট দেওয়া যায়না। অন্তত মেয়েরা পারে না কষ্ট দিতে যদিও সবাই এক নয়।বর্ষা অন্য দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বললো
— তোর সাহস কি করে হয় আমায় জরিয়ে ধরে ঘুমানোর? তোকে আমি বলেছি না আমি তোকে ঘৃনা করি। তোর স্পর্শকেও ঘৃনা করি আমি। তুই আমার রুমে ঢুকলি কি করে আমি তো দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। বেড়িয়ে যা আমার রুম থেকে।
বর্ষার কথা শুনে মেঘ ছলছল চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বললো
— আমি জানি আমি তোর সাথে অনেক বেশি অন্যায় করে ফেলেছি বর্ষা। কিন্তু আমি তো আমার ভুল বুঝতে পেরে তোর কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। আমাকে কি একটা সুজোগ দেওয়া যায়না বর্ষা? প্লিজ বর্ষা ক্ষমা করে দে আমায়। আর এভাবে দুরে সরিয়ে দিস না।
— ক্ষমা হুহহ কোন মুখে ক্ষমা চাইছিস তুই মেঘ। তুই ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি তুই শুধু আমাকেই নয় আমার পেটের অনাগত নিশ্পাপ বাচ্চাকেও কলঙ্কীতো করেছিস। আমি তোকে কোনো দিনও ক্ষমা করবো না মেঘ কখনোই না। তুই বের হ আমার রুম থেকে এখুনি বেরিয়ে যা তুই।
বর্ষার কথা শুনে মেঘ কপালের কাটা জায়গাটা হাত দিয়ে চেপে ধরে উঠে দাঁড়ালো। তারপর বর্ষার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললো
— আমি চলে যাচ্ছি বর্ষা তুই ঘুমিয়ে পর, এসময় তোর জেগে থাকা ঠিক নয়।আমার কাছে ডুব্লিকেট চাবি ছিলো এই রুমের আমি সেটা দিয়েই রুমে এসেছিলাম। আর আসবো না তোকে ডিস্টার্ব করতে তুই নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারিস।
কথাটা বলেই চোখের জল ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো মেঘ। বর্ষা মেঘের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। বর্ষার চোখ থেকেও পানি ঝড়ছে অঝোড়ে। মেঘ কে কষ্ট দিয়ে যেনো নিজেই কষ্ট পাচ্ছে বর্ষা।
,
,
,
বর্ষার রুম থেকে বেড়িয়ে মেঘ নিচে চলে গেলো। তারপর সোফায় হেলান দিয়ে বসে কান্না করে বলতে লাগলো
— আমি জানি বর্ষা তুই আমার সাথে যা করছিস তা তোর মন থেকে নয়। তুই যে আমায় আমার থেকেও বেশি ভালবাসিস। কিন্তু তোর এই অবহেলা এই কষ্ট দেওয়া আমার প্রাপ্প ছিলো। আমি তোর সাথে যেটা করেছি তার ফল ভোগ করতে হবে আমায়। কিন্তু তোকে আমি ছাড়তে পারবো না বর্ষা। তুই আমার কাছেই থাকবি। তাতে তুই আমায় যত খুশি কষ্ট দে আমি মেনে নিবো শুধু তোকে ছেরে থাকতে পারবো না।
কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে এক সময় ঘুমিয়ে পরলো মেঘ। ওদিকে বর্ষার চোখে ঘুম নাই। বর্ষার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু আফসোস বর্ষা সেটাও পারছে না।
,
,
,
সকালে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে একটা হলুদ রঙের শাড়ি পরে নিলো বর্ষা। ভেজা চুল গুলো ঘারের ওপর ছেড়ে দিয়ে, তারপর নিচে নেমে এলো বাইরে প্রকৃতির হাওয়া খাবে বলে। এটা বর্ষার প্রতিদিনের অভ্যাস। নিচে নামতেই বর্ষার চোখ আটকে গেলো সোফায় শুয়ে থাকা মেঘের দিকে। কান্না করার ফলে মেঘের চোখের নিচে আর নাকটা লাল হয়ে হালকা ফুলে আছে। কপালে কেটে যাওয়া জায়গাটায় রক্ত জমাট বেধে শুকিয়ে গেছে। মুখটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে মেঘের।
মেঘের এমন অবস্থা দেখে বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো বর্ষার। বুকের বাম পাশে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো। কিন্তু মুহুর্তেই বর্ষা নিজেকে সামলে নিলো। বর্ষা কিছুতেই মেঘের ওপর নরম হবে না। আর সুজোগ পেলেই এখান থেকে চলে যাবে ও। কথাটা ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইরের দিকে হাটা দিলো বর্ষা।
,
,
,
প্রায় ১ ঘন্টা ধরে বাগানের দোলনায় বসে ফুলগাছের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে বর্ষা। মাথায় ওর হাজারো চিন্তা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজের পেটের সন্তানকে নিয়ে হাজারো চিন্তা ভর করেছে বর্ষার মাথায়। বাতাসে বর্ষার খোলা চুলগুলো উড়ছে। চুলের সাথে তাল মিলিয়ে উড়ছে বর্ষার শাড়ির আঁচলটাও। কিন্তু সেদিকে বর্ষার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বর্ষা এখন ভাবনায় মগ্ন।
হঠাৎ গিটারের শব্দে ধ্যান ভাঙে বর্ষার। অনেক দিন পর গিটারের সেই মন কারা সুর যেনো টানছে বর্ষাকে। বর্ষা না চাওয়া সত্যেও দোলনা থেকে আনমনে উঠে গেলো। তারপর গিটারের সুর ধরে বাসার ভিতরে ঢুকে সোজা ছাদে পৌছে গেলো বর্ষা। ছাদের দরজায় দাড়িয়ে বর্ষা দেখলো মেঘ অন্য দিকে ঘুরে সমানে গিটার বাজিয়ে চলেছে। গিটার বাজাতে বাজাতে মেঘ গান ধরলো
দুরে কোথাও আছি বসে
হাত দুটো দাও বাড়িয়ে,
বিরহ ছুতে চায় মনের দুয়ার
দু চোখ নির্বাক আসোনা ছুটে,,
তুমি এলে রামধনু রং ঢেলে দেয়
তুমি এলে মেঘেরা বৃষ্টি ঝড়ায়
এমনের আহলাদ আসোনা ছুটে
দুরে কোথাও আছি বসে
হাত দুটো দাও বাড়িয়ে
বিরহ ছুতে চায় মনের দুয়ার
দু চোখ নির্বাক আসোনা ছুটে,,
(বাকিটা নিজ দ্বায়ীত্বে শুনে নিয়েন🙄)
গানটা গাওয়ার সময় বার বার গলাটা ধরে আসছে মেঘের। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে অঝোড়ে পানি। বর্ষারও পিছনে দাড়িয়ে থেকে একি অবস্থা। চোখের পাতা বার বার ভিজে ভাঁড়ি হয়ে আসছে বর্ষার। ইচ্ছা করছে ছুটে গিয়ে মেঘকে জরিয়ে ধরে বলতে ও মেঘকে ভালবাসে খুব খুব ভালবাসে।
কিন্তু না বর্ষা এত তারাতারি মেঘকে ক্ষমা করবে না। মেঘ যা করেছে তাতে ওকে আরো একটু শাস্তি দেওয়া দরকার। নইলে যে বর্ষার মনটাও শান্ত হবে না। কথাগুলো ভেবেই চোখের জল মুছে মেঘ দেখার আগেই নিচে নেমে এলো বর্ষা।
ওদিকে মেঘ গান গাওয়া শেষ করে গিটারটা জরিয়ে ধরে হু হু করে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো। নিজের ভুলের কারনে অনেক বেশি অনুতপ্ত মেঘ। মেঘের ইচ্ছা করছে এই মুহুর্তে সুইসাইড করে মরে যেতে। কিন্তু মেঘ সেটা করতে পারবে না। কেননা মেঘ নিজের সন্তান আর বর্ষাকে নিয়ে বাচতে চায়। নিজের ভালবাসা দিয়ে বর্ষাকে ভড়িয়ে দিতে চায়। বর্ষার রাগ অভিমান যে করেই হোক ভাঙাতে হবে মেঘকে।
মেঘ যখন এসব চিন্তায় ব্যাস্ত তখন
হঠাৎ ফোনের শব্দে ধ্যান ফিরলো মেঘের। মেঘ চোখ মুছে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো মেঘের গুপ্তচর (যাদের মেঘ গোপনে শত্রুর খোজ করার জন্যে রেখেছে) তাদের মাঝে একজন ফোন করেছে।
মেঘ নিজেকে শান্ত করে গম্ভির গলায় ফোন রিসিভ করে বললো
— হুমম বলো,,
— স্যার আমরা তাকে পেয়ে গেছি যে এক বছর আগে আপনার আর বর্ষা ম্যাডামের ছবি তুলে কলেজে মিথ্যে কথা রটিয়ে ছিলো।
ঐ পাশের লোকের কথা শুনে দাতে দাত চেপে মেঘ বললো
— কে সে?
— আসলে ইয়ে মানে স্যার সে আর কেউ নয়। সে আপনার বন্ধু নিলয়।
কথাটা শোনার সাথে সাথে যেনো মাথাটা ঘুরে উঠলো মেঘের। মেঘ অবাক হয়ে বললো
— তোমরা ঠিক বলছো তো ঐ লোকটা নিলয়? কিন্তু নিলয় এসব কেনো করবে?
— স্যার আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি নিলয় স্যারের সাথেই বর্ষা ম্যাডামের বিয়ের কথা ছিলো। হয়তো নিলয় স্যার বর্ষা ম্যাডামকে ভালবাসতো।আর তাই এমন করেছে।
কথাটা শুনে মাথায় যেনো রক্ত উঠে গেলো মেঘের। মেঘ রাগি গলায় বলে উঠলো
— তোমরা সবাই মিলে নিলয়কে কিডন্যাপ করে আমার গোডাউনে নিয়ে বেধে রেখে আমায় খবর দাও। আর হ্যা কেউ যেনো কিছু জানতে না পারে।
— ওকে স্যার,,,,
কথাটা বলেই ফোন কেটে দিলো মেঘ। তারপর ফোনটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে বললো
— নিলয় তুই বড্ড ভুল করে ফেলেছিস নিলয়। তোকে তো আমি কি করবো তা আমি নিজেও জানি না। তোর জন্যে আমি আমার বর্ষাকে সন্দেহ করেছি কত কষ্ট দিয়েছি। এমন কি আমি আমার নিজের সন্তানকেও ভুল বুঝে নষ্টা বলেছি। তোকে তো আমি ছাড়বো না নিলয়। তৈরি হ তুই মেঘ চৌধুরীর হাতে মরার জন্যে,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,