I AM YOUR VILLAIN LOVER

I AM YOUR VILLAIN LOVER !! Part- 05

বর্ষা ওয়াশরুমে চলে যেতেই মেঘ ঐ গোলাপ ফুলটা বাম হাতে দুমড়ে মুচড়ে ফেললো। এমন করায় গোলাপের কাটাগুলো সব মেঘের হাতের মধ্যে খুব বাজে ভাবে ঢুকে রক্ত পরতে লাগলো। কিন্তু সেদিকে মেঘের কোনো খেয়াল নেই। মেঘ মনে মনে বলতে লাগলো

— কেনো বর্ষা কেনো? কেনো সেদিন আমার ভালবাসাটা না বুঝে তুই আমার সাথে ওমনটা করেছিলি। যে আমি কখনো একটা ফুলের টোকাও পরতে দিতামনা তোর শরীরে সেই আমি আজ তোকে কতটা কষ্ট দিচ্ছি। কেনো বাদ্ধ করলি তুই আমায় তোর সাথে এমন করতে। তোকে কষ্ট দিলে যে তার চাইতে বেশি কষ্ট আমার এই খানটায় হয়(বুকের বা পাশে হাত রেখে)। কেনো বুঝলি না আমায় সেদিন তুই। কি করে পারলি তুই আমার সাথে ঐ রকমটা করতে বর্ষা কি করে? আমিও তোকে ছারবোনা বর্ষা, যে ভাবে গত এক বছর আমি তিলে তিলে শেষ হয়েছি। ঠিক একি ভাবে আমি তোকেও শেষ করবো। তোকেও বোঝাবো আমি, বিনা দোষে নিজের ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে কষ্ট পেতে কতটা খারাপ লাগে কতটা কষ্ট যন্ত্রনা হয়। মনে মনে

কথাগুলো ভেবেই নিজেকে শক্ত করে হাতের ফুলটা নিয়ে জানালা দিয়ে ছুরে ফেলে দিলো মেঘ। তারপর বর্ষা বের হওয়ার আগেই নিজের হাতের কাটা জায়গাটার রক্ত পরিস্কার করে ফেললো। যাতে করে বর্ষা বুঝতে না পারে।

একটু পর চোখের পানি মুছে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো বর্ষা। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মেঘ ফ্লোরে একটা বালিশ আর একটা চাদর ফেলে রেখে ওপরে অন্য দিকে ঘুরে ঘুমিয়ে আছে। বর্ষার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে মেঘ ওকে বিছানায় ঘুমোতে দিবে না। তাই বর্ষাও আর সময় নষ্ট না করে নিচে ফ্লোরে বিছানা করে ঘুমিয়ে পরলো।
,
,
,
সকালে খুব ভোরে ঘুম ভাঙলো বর্ষার। বর্ষা ঘুম থেকে উঠে দেখলো মেঘ এখনো ঘুমিয়ে আছে। বর্ষা বিছানা ছেরে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। বর্ষা খেয়াল করলো আশ্চর্য জনক ভাবে ওর হাতের কাটা জায়গায় আর একটুও ব্যাথা নেই। কাটা জায়গাটা এক রাতের মাঝেই অনেকটা শুকিয়ে গেছে। বর্ষা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওজু করে এসে নামাজ পরে নিলো।

নামাজ শেষ করে রুম থেকে বাইরে বের হতে যাবে তখনি বর্ষাকে ডাক দিলো মেঘ

— এই সরিষা এদিকে আয় তো,,

মেঘের ডাক শুনে ঘুরে দাড়ালো বর্ষা। মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ চোখ বন্ধ করে আছে। বর্ষা মনের ভুল মনে করে আবারও দরজার দিকে পা বারালো। আর তখনি মেঘ আমার বলে উঠলো

— কাল রাতের কথা কি ভুলে গেছিস নাকি? আমি ডাকার পরেও আবার চলে যাচ্ছিস কোন সাহসে? এদিকে আয় আমার কাছে।

মেঘের কথা শুনে ভয়ে ঢোক গিললো বর্ষা, তারপর ভয়ে ভয়ে মেঘের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো

— আ আমি আসলে ভেবেছিলাম তুই ঘুমিয়ে আছিস ডাকিসনি আমায় তাই মনের ভুল ভেবে চলে যেতে নিছিলাম। সরি

— বস এখানে,,

— ক ক কি?

— কানে কি কম শুনিস নাকি, বললাম এখানে আমার পাশে বস।

মেঘের কথা শুনে ভয়ে ভয়ে মেঘের পাশে বসলো বর্ষা। মেঘ সাথে সাথে উঠে এসে বর্ষার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। তারপর বললো

— সারা রাত ঘুমাইনি খুব মাথা ব্যাথা করছে। আমি যতক্ষণ ঘুমাবো তুই আমার মাথায় বিলি কেটে দিবি। আর ভুল করেও একটু নড়াচড়া করবি না, বা আমায় ডাকবিও না বুঝলি।নে এবার আমার মাথায় বিলি কেটে দে আমি ঘুমাবো,,

কথা গুলো বলেই বর্ষার কোলে মাথা রেখে বর্ষার কোমড় জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো মেঘ। মেঘের এমন কান্ড দেখে বর্ষার অবাক ও রাগ দুটাই হচ্ছে। বর্ষা মনে মনে বললো

— সারারাত ঘুমায়নি তো করেছে টা কি। শালা কুম্ভভুত একটা, রাতে ঐ ভাবে আমায় কষ্ট দেওয়ার পরেও এখন আমার কোলে ঘুমায় কি ভাবে ব্যাটা বাদর হনুমান একটা। ইচ্ছা তো করছে চুলে বিলি না কেটে চুলগুলো সব টেনে টেনে ছিঁড়ি।

— ঐ আমি বললাম না আমি ঘুমাবো। মনে মনে ফালতু বকা বাদ দিবি নাকি কানের নিচে দিবো কয়েকটা।(চোখ বন্ধ করেই বললো মেঘ)

মেঘের কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকালো বর্ষা তারপর মনে মনে বললো

— কি শয়তান ছেলেরে বাবা মনে মনে একটু বকা দিয়েও শান্তি নেই। সব সময় কি করে সব শুনে নেয় কে জানে।

কথাগুলো ভেবেই মেঘের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বিলি কেটে দিতে লাগলো বর্ষা। মেঘের ঘুমন্ত মুখটা দেখে যেনো সব রাগ চলে গেছে বর্ষার। বর্ষা মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ডুব দিলো অতিতে,,,
,
,
,
সেদিন কলেজের প্রথম দিন ছিলো বর্ষার। বর্ষা খুব এক্সাইটেড ছিলো কলেজ লাইফ নিয়ে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে কলেজের জন্যে রেডি হয়ে নেয় বর্ষা। লাল রঙের একটা গাউন, মাথায় সুন্দর করে হিজাব পেঁচিয়ে ঠোটে হালকা লিপস্টিক দেয় বর্ষা। চোখে গাড়ো করে কাজল দিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরে কলেজের উদ্যেশে। একটা রিক্সা নিয়ে চলে যায় কলেজে। কলেজের গেটে নেমে ভাড়া মিটিয়ে কলেজের ভিতর দিকে তাকিয়ে বড় একটা শ্বাস নেয় বর্ষা। বর্ষার খুব নার্ভাস লাগছে। একেতো কলেজের আজ প্রথম দিন। তারওপর এখানে পরিচিতও কেউ নাই। তবুও বুকে সাহস নিয়ে কলেজের ভিতর প্রবেশ করে বর্ষা। ভিতরে যেতেই একটি সিনিয়র মেয়ে বর্ষাকে ডেকে বলে

— এই যে লালবতি মেয়ে ক্লাসে পরে যাবে আগে এদিকে আসো।

সিনিয়র মেয়েটার কথা শুনে মেয়েটার কাছে এগিয়ে আসে বর্ষা। ঐ মেয়েটার সাথে আরো দুজন মেয়ে আর ৫-৬ জন ছেলেও আছে। তাদের মাঝে একটা ছেলে অন্য দিকে ঘুরে বসে আছে। আর বাকি ছেলে মেয়েগুলো বর্ষার মতো আরো কয়েকজন জুনিয়র ছেলে মেয়েকে নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন করে বিরক্ত করছে। বর্ষা ওদের কাছে এগিয়ে যেতেই সিনিয়ার দের মাঝ থেকে একটি ছেলে বলে উঠলো

— এই যে লাল বেবিডল কলেজে নতুন?

ছেলেটার কথা শুনে রাগ ওঠে বর্ষার। বর্ষা নিজের রাগটাকে কন্ট্রল করে বলে ওঠে

— আমার নাম বর্ষা কোনো লাল বেবিডল নয়। তাই এমন নাম ধরে না ডেকে বর্ষা বলে ডাকলে খুশি হবো।

বর্ষা নামটা শুনতেই অন্যদিকে ঘুরে বসে থাকা ছেলেটা দ্রুতো বর্ষার দিকে ঘুরে বলে ওঠে

— আরে মিস সরিষা, আমাদের কলেজে? ওয়াটস এ সারপ্রাইজ?

মেঘকে দেখে আর মেঘের কথা শুনে বর্ষা বড় বড় চোখ করে রাগি গলায় বলে

— মিস্টার কুম্ভভুত তুই এখানে?

বর্ষার কথা শুনে সিনিয়ার সব ছেলে মেয়েরা হা করে বর্ষার দিকে একবার আর মেঘের দিকে একবার তাকায়। মেঘ সকলের তাকানোর বিষয়টা বুঝতে পেরে বর্ষা বাদে সকল জুনিয়রদেরকে বলে

— এই তোমরা সবাই যেতে পারো। আজকে আর তোমাদের কোনো কাজ নাই। আজকে আমরা মিস সরিষার ক্লাস নিবো।

— ও হ্যালো মিস্টার কুম্ভভুত তোর কানে কি সমস্যা আছে নাকি। আই এম নট সরিষা আই এম এ বর্ষা ওকে, জাস্ট বর্ষা।

— ঐ হোলো সরিষা, এবার বল তোকে কি করা যায়। সেদিন তো আমার বাসায় আমার গাছের ফুল ছিড়ে আবার আমাকে গালি দিয়েই পালিয়ে গেছিলি। কিন্তু এখানে তোকে কে বাঁচাবে রে সরিষা।(ডেভিল হেসে ভ্রু নাচিয়ে বললো মেঘ)

— বর্ষা নিজেকে সেভ করতে জানে। আমার জন্যে আমি একাই যথেষ্ট। কোনো কুম্ভভুতকে ভয় পায়না এই বর্ষা।

মেঘ আর বর্ষার কথা শুনে সিনিয়ার ছেলে মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। হঠাৎ ওদের মধ্যে থেকে একটি ছেলে মেঘকে বলে ওঠে

— কি ব্যাপার বল তো মেঘ, তোরা এমন ভাবে কথা বলছিস যেনো তোরা আগে থেকেই দুজন দুজনকে চিনিস? আর আমি এই মেয়েটার স্পর্ধা দেখেও অবাক হচ্ছি। ও তোর সাথে এভাবে কথা বলছে। এই কলেজের সব মেয়েদের ক্রাশ, সকলের বড় ভাইয়ের ওপর এভাবে কথা বলছে তাও আবার তুই তুই করে? হাউ ইজ পসিবল?

মেঘ আর সিনিয়ারেরা যখন কথা বলতে ব্যাস্ত সেই ফাঁকে বর্ষা দৌড় দিয়ে নিজের ক্লাসে চলে গেলো। আর মনে মনে বলতে লাগলো

— ইশশ লোকে কথায় বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই নাকি সন্ধা হয়। আজকে কথাটা হাতেনাতে প্রমান পেলাম। এই কুম্ভভুতটাকে এই কলেজেরই বড় ভাই হতে হলো। এখন না হয় কোনো মতে বেচে গেলাম। কিন্তু এর পর থেকে কি করবো? আমার কলেজের প্রথম দিনটাই খারাপ করে দিলো কুম্ভভুতটা। ব্যাটা খাটাশ একটা।

ওদিকে বর্ষাকে পালাতে দেখে মেঘ ওর বন্ধুদেরকে বললো

— এই তোরা সকলে শুনে রাখ এখন সরিষা নামের আই মিন বর্ষা নামের যে মেয়েটিকে দেখলি। যার সাথে আমি ঝগড়া করছিলাম ওটা আমার কাজিন। কিন্তু মেয়েটা এক নাম্বারের পাজি। ওকে একবার যখন পেয়েছি তখন ওকে তো আমি দেখে নিবো। তোরা ওর দিকে নজর রাখবি।

— শুধু কাজিন নাকি অন্য কিছু রে মেঘ? আমরা কেমন জানি একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। তুই তো কোনো মেয়ের সাথে কথাই বলিস না অথচ বর্ষার সাথে সোজা ঝগড়াতে চলে গেলি। সামথিং সামথিং কিছু নয়তো?

— আরে ধুর তোরা যা ভাবছিস তেমন কিছুই নয়। ও আমার আব্বুর বেষ্টফ্রেন্ড এর মেয়ে। কয়েকদিন আগে আমাদের বাসায় গিয়েছিলো তখনই ওর সাথে আমার প্রথম দেখা আর ঝগড়া। মিস সরিষা জানে না ও কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছে। মেঘ চৌধুরীর সাথে পাঙ্গা নেওয়ার মজা তো ওকে পেতেই হবে।

কথাগুলো বলেই ডেভিল হাসলো মেঘ। তারপর সবাইকে নিয়ে ক্লাসের দিকে হাটা দিলো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *