I AM YOUR VILLAIN LOVER !! Part- 03
জানালার কাছে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে বর্ষা ডুব দিলো তিন বছর আগের অতিতে মেঘের সাথে সেই প্রথম দেখা হওয়ার সময়ে,,,,,
,
,
,
রাজশাহী থেকে টান্সফার হয়ে সপরিবারে ঢাকা চলে আসেন বর্ষার বাবা আশরাফ খান। ঢাকায় এসেই বর্ষাকে কলেজে ভর্তি করতে নিয়ে যান। বর্ষার খুশি যেনো আর ধরছে না। বর্ষার অনেক দিনের শখ ছিলো ঢাকায় কলেজে পড়ার।
বর্ষাকে কলেজে ভর্তি করে দিয়ে বর্ষাকে নিয়ে আহসান চৌধুরীর বাসার উদ্যেশে রওনা হয় বর্ষার বাবা আশরাফ খান। আশরাফ খানের অনেক ছোট বেলার বন্ধু এই আহসান চৌধুরী। দুজন নিজেদের জীবিকার জন্যে দুই শহরে থাকলেও কখনো আলাদা ছিলেন না। প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও ফোনে কথা হতো আহসান আর আশরাফের। কিন্তু দেখা খুব কমই হতো দুজনের। আজ এতটা কাছাকাছি আসায় আশরাফ খান আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না। তাই বর্ষাকে নিয়েই বেরিয়ে পরলেন আহসান চৌধুরীকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যে।
চৌধুরী বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই গাড়ি থেকে নেমে একদম হা হয়ে গেলো বর্ষা। বিশাল বড় একটা গেইটের সামনে দাড়িয়ে নিজেকে কেমন যেনো ছোট ছোট লাগছে। বর্ষা পিছনে ঘুরে ওর বাবার উদ্যেশে বললো
— আব্বু আমরা মনে হয় ভুল ঠিকানায় এসে পরেছি। এটা মনে হয় আহসান চাচ্চুর বাসা নয়। কত বড় বাড়িটা দেখেছো একবার?
বর্ষার কথা শুনে আশরাফ খান মুচকি হেসে বর্ষার মাথায় হাত রেখে বলেন
— আমরা ঠিক জায়গাতেই এসেছিরে মা। এটাই তোর আহসান চাচ্চুর বাসা। চৌধুরী পরিবার বলে কথা বড় লোকতো হবেই বল। চল মা ভিতরে চল।
কথাগুলো বলেই বর্ষাকে নিয়ে গেটের কাছে এসে নক করলেন আশরাফ খান। আশরাফ খানকে দেখেই গেটের দারোয়ান রহিম বেক্কল মার্কা হাসি দিয়ে বললো
— ভালো আছেন স্যার? আপনারে অনেক দিন পর দেখলাম। আপনার সাথে এইডা কে? আপনার মেয়ে নাকি?
— হুমম এটা আমার মেয়ে বর্ষা। আর আমি ভালো আছি। এখন বলো আহসান কি বাসায় আছে?
— জ্বি স্যার, বড় স্যার বাসাতেই আছেন। আপনারা ভিতরে যান।
দারোয়ানের সাথে কথা বলে বাসার ভিতরে গেলো আশরাফ খান আর বর্ষা। গেইটের ভিতরে ঢুকেই যেনো আরো বেশি অবাক হলো বর্ষা। বাইরে থেকে বাড়িটা যতটা সুন্দর আর বড় মনে হয়েছিলো, ভিতরটা তার চাইতের ১০ গুন সুন্দর ও বড়।
গেইট দিয়ে ভিতরে ঢোকার পর মাঝখান দিয়ে রাস্তা, আর দুই পাশে রঙ বেরঙের ফুলগাছ। ডান পাশের ফুল গাছগুলোর মাঝখানে রয়েছে বড় একটা দোলনা আর সেই দোলনা থেকে একটু সামনে যেতেই খুব সুন্দর একটা সুইমিংপুল। সেই সুইমিংপুলের ঐ পাশে রয়েছে হেলান দিয়ে বসে থাকার জন্যে চেয়ার, তার ওপর ছায়া হয়ে দাড়িয়ে আছে বড় একটি ছাতা। সব মিলিয়ে যেনো কোনো অসাধারন সুন্দর পার্কে চলে এসেছে বর্ষা।
বর্ষা সব কিছু শুক্ষ ভাবে দেখে ওর বাবাকে উদ্যেশ্য করে বলে উঠলো
— আব্বু চাচ্চুরা এত্ত বড়লোক? ওনাকে দেখে তো কখনো এমন মনে হয়নি। বাড়িটা কি সুন্দর যেনো রাজপ্রাসাদ।
— হ্যা রে মা, তোর চাচ্চুর মনে কোনো অহংকার নাই। এতটা বড়লোক হওয়া সত্যেও দেখ একদম সাধারন হয়ে চলে। আচ্ছা চল এবার ভিতরে যাই কতদিন হলো ওকে দেখিনা।
— আব্বু তুমি ভিতরে যাও আমি একটু এখানে থাকি না আব্বু প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
— আচ্ছা ঠিক আছে থাক, কিন্তু একদম বাইরে কোথাও যাবিনা, অপরিচিত জায়গা।
— যাবো না আব্বু তুমি যাও আমি এখানেই আছি।
বর্ষাকে রেখে আশরাফ খান ভিতরে চলে যায়। আর বর্ষা গিয়ে বসে পরে দোলনায়। দোলনায় দোল খেতে খেতে খলখলিয়ে হাসছে বর্ষা। হঠাৎ দোল খেতে খেতে বর্ষার চোখ পরে একটা বড় লাল টকটকে গোলাপের দিকে। বর্ষার লাল গোলাপ খুব পছন্দ। তাই গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় গোলাপটার কাছে। যখনি ফুলটা তুলতে যাবে তখনি সামনে দেখে একটা সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখা “যে তুলবে ফুল,তার ছিরবো চুল”। এমন অদ্ভুত লেখা দেখে বর্ষা কিছুটা অবাক হয়ে মনে মনে ভাবে
— আশ্চর্যের বিষয়তো আমি অনেক ফুল বাগানে দেখেছি লেখা থাকে ফুল ছেড়া বারন বা নিষেধ। কিন্তু এটা আবার কেমন লেখা। মনে মনে
কথাগুলো ভেবে আবার বর্ষা ভাবে ও এই ফুল ছিঁড়লে হয়তো চাচ্চু ওকে কিছু বলবে না। আর তাছারা ফুলটা দেখে নিজের লোভটাকেও সামলাতে পারছে না বর্ষা। তাই চট করে ফুলটা একটানে তুলে নেয়। তারপর ফুলটা নাকের কাছে ধরে জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে ওয়াও যেমন দেখতে তেমন সুন্দর গন্ধ। কথাটা বলতেই নিজের চুলে টান অনুভব করে বর্ষা। কেউ একজন পিছন থেকে বর্ষার লম্বা চুলগুলোকে হাতের মুঠোয় শক্ত করে পেচিয়ে ধরে জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে থাকে
— রহিম চাচা রহিম চাচা, কোথায় থাকো তোমরা সবাই, বাসার মধ্যে চোর ঢুকে ফুল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দেখতে পাও না নাকি?
মেঘের ডাক শুনে দৌড়ে আসে গেইটম্যান রহিম চাচা। রহিম চাচাকে দেখে মেঘ আবারও চিল্লিয়ে বলে
— রহিম চাচা তোমায় কি গেটে পাহাড়া দেওয়ার জন্যে রাখা হয়েছে নাকি ঘুমানোর জন্যে? এখন আমি না আসলে কি হতো বলো তো? এই চোর, নাহ নাহ চুন্নিটা তো ফুল সহ আরও কত কি চুরি করে নিয়ে যেতো তার কোনো হিসাব নাই। কত্ত বড় সাহস এই চুন্নির আমার ফুলে হাত দিয়েছে। ফুল ছিঁড়েছে এবার আমিও এই চুন্নির চুল ছিঁড়বো। কে এই চুন্নি যার এত সাহস?
— ছোট স্যার আপনি ভুল বুঝতাছেন এইডা চোর না, এইডা আপনার আশরাফ আংকেলের মাইয়া বর্ষা। ইশশ ওনারে ছাইরা দেন ছোট স্যার উনি কান্না করতাছেন।
দারোয়ানের কথা শুনে বর্ষার চুল ছেরে দিয়ে বর্ষাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাড় করায় মেঘ। তারপর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে, ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ ৫.৫ হাইট, বড় বড় হরিনি চোখ, কোমড় অব্দি লম্বা লম্বা চুল। গায়ে হলুদ রঙের একটা থ্রিপিচ পড়া, হাতে চিকন চিকন হলুদ রঙের কাচের চুড়ি।কানে হলুদ রঙের পাথড়ের দুল। চোখের কাজলটা কান্না করার কারনে লেপ্টে গেছে কিছুটা। বর্ষাকে দেখে মেঘ হা করে তাকিয়ে আছে। বর্ষা যে কান্না করছে সেদিকে মেঘের কোনো খেয়ালই নাই। সে বর্ষাকে দেখতেই ব্যাস্ত। হঠাৎ দারোয়ানের ডাকে ঘোর কাটে মেঘের
— ছোট স্যার ও ছোট স্যার বর্ষা ম্যাডামরে থামান হেয় তো কানতে কানতে চোখ লাল করে ফেললো। বড় স্যার জানতে পারলে রাগারাগি করবেন।
দারোয়ানের কথা শুনে মেঘ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো
— ও বর্ষা হোক বা বৃষ্টি তাতে আমার কিছু যায় আসে না। ওর সাহস হয় কি করে সাইনবোর্ডে লেখা থাকা সত্যেও আমার গাছের ফুল ছেড়ার? শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে।
মেঘের কথা শুনে রাগ উঠে যায় বর্ষার, বর্ষা চোখ মুছে তাকায় মেঘের দিকে। লাল ফর্সা গায়ের রঙ ৫.১১ হাইট, চুলগুলো অনেক সুন্দর ও সিল্ক, বেশ সাস্থবান দেখে মনে হচ্ছে যেনো নিয়মিত জিম করে। মেঘকে ভালো মতো দেখে নিয়ে বর্ষা রাগি গলায় বললো
–ঐ কি শাস্তি দিবেন আপনি হুমম। কে আপনি যে আমায় শাস্তি দিবেন? আপনাকে তো আমি শাস্তি দেওয়াবো চাচ্চুকে দিয়ে। আপনি কোন সাহসে আমার চুল ধরেছিলেন। কোথাকার কোন কুম্ভভুত আপনি।
— এই মেয়ে এই তোর সাহস তো কম নয়। তুই মেঘ চৌধুরীর ওপর কথা বলছিস তাও আবার মেঘ চৌধুরীর বাড়িতে দাড়িয়ে মেঘ চৌধুরীর গাছের ফুল ছিরে? তোকে তো আমি আজকে,,,
এতটুকু বলতেই মেঘকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাসার ভিতর দিকে দৌড় দেয় বর্ষা। মেঘ ভাবতেও পারেনি বর্ষা এমন কিছু করবে। বর্ষা বাসার দরজার কাছে দাড়িয়ে পিছনে ঘুরে বলে ওঠে
— তোকে তো আমি দেখে নিবো মিস্টার মেঘ চৌধুরী ওরফে কুম্ভভুত এই বর্ষার চুলে হাত দেওয়ার মজা তুইও বুঝবি খাটাশ একটা।
কথাটা বলেই ভিতর দিকে দৌড় দিলো বর্ষা। বর্ষার এমন কান্ড দেখে আর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো মেঘ। আর মনে মনে বললো
— কি মেয়েরে বাবা, দেখতে যেমন মিষ্টি আচরন তার চাইতে হাজারগুন ঝাল। মেঘ চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ তাইনা। এবার তুমিও বুঝবা বর্ষা নাকি সরিষা, এই মেঘ কি করে।
,
,
,
জানালার ধারে বসে কথাগুলো মনে পরতেই আনমনে হেসে উঠলো বর্ষা। প্রথম পরিচয়টা ওদের এভাবে ঝগড়া দিয়েই শুরু হয়েছিলো সেদিন,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,