হারিয়ে খুজবে আমায়

হারিয়ে খুজবে আমায় !! Part- 06

অন্ধকার ঘরে বসে আছে শাফিন। ঘরটা কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা ঠিক যেমন শাফিনের মনটার মত।কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা ছিল না সে তো এটাই চাইছিল অনু জেন চলে যায় তাহলেই তো সে আর ইরা ভালো থাকবে।

অন্য সাধারন দিনগুলোর হলে শাফিন এতক্ষণে অফিস থেকে ফিরত। অনু হাসিমুখে দরজা খুলত। ঘামের জর্জরিত শরীরে শাফিনকে অনু জড়িয়ে ধরত যা ইদানিং শাফিনের বিরক্ত করে তুলতো। তারপর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেত।কাবার্ড থেকে কাপড় নিয়ে শাফিনকে ঠেলে ওয়াশরুমে ঢুকাতো আর তার কাপড়-চোপড় মানিব্যাগ ঘড়ি সঠিক জায়গায় রেখে দিত। শাফিন শাওয়ার থেকে বের হলে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছে দিত। তারপর তার সারাদিনে কাজকর্ম গুলো হাসিমুখে শাফিনের সাথে শেয়ার করত কিন্তু শাফিন আগে বিরক্ত না হলেও ইরার সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর কেন যেন এগুলো বিরক্ত লাগত মাঝে মাঝে অনুকে ধমক দিয়ে চুপ করাত। তারপর দুজনে ডিনার করে শুয়ে পরতো। আর যেদিন ইরার সাথে বাইরে থেকে ডিনার করে আসত সেইদিন অনু না খেয়ে শুয়ে থাকত। তাই অনুকে খাওয়ানোর জন্য সামান্য হলেও শাফিন খাবার খেতো।

শাফিনের খুব ইচ্ছে করছে অনুর সাথে দেখা করতে একটু কথা বলতে কিন্তু না সে বলবে না তাই সে ইরান নাম্বারে ডায়াল করল কিন্তু ফোন অপর পাশ থেকে ব্যস্ত দেখাচ্ছে ঘন্টা দুয়েক আগেও ইরার সাথে কথা হয়েছে ওর।

তার বেশিরভাগ কথাই ছিল হানিমুনে কোথায় যাবে এঙ্গেজমেন্ট রিং কেমন হবে, তাদের ওয়েডিং কেমন হবে। বিয়ের পর কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে এসব নিয়ে। আর আসল বিষয় ছিল কিভাবে অনুকে ডিভোর্স দিতে হবে।

সে নাকি তার পরিচিত ভালো ডিভোর্স লয়ার এর সাথে কথা বলে রেখেছে কালকে সকালে যাবে তারা লয়ারের সাথে সরাসরি কথা বলতে।

কিন্তু সত্যিই সে চায় অনুকে ডিভোর্স দিতে? তার মাথায় নানান জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে। না সে আর ভাবতে চায়না সে আবার ইরার নম্বরে ডায়াল করে কিন্তু এবারও ব্যস্ত দেখায় তাই সে চুপচাপ বেলকুনিতে গিয়ে সিগারেট ধরায়।

অনু থাকা অবস্থায় শাফিনকে কখনো সিগারেট খেতে দিত না।অনু সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারত না। তাই শাফিন প্রায় সিগারেটের স্বাদ ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু আজকে সারাদিনে সে এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করেছে। এসব ভাবনার মাঝেই ইরা ফোন ব্যাক করে।

রাত 10:30 মিনিট,
অনুকে নিয়ে তার বাবা-মা বাড়ি ফিরেছে। আরো আগেই আসার কথা ছিল কিন্তু সাদাত ডিনার না করিয়ে ছাড়লো না তাদের। তারা বেশ কিছুক্ষণ ঘরে আড্ডা ও দিল অনুর ছোটবেলা নিয়ে তাকে কিভাবে সব সময় সাদাত শায়েস্তা করত তা নিয়ে বেশ হাসাহাসি করলো। এসবের মধ্যে অনু প্রায় চুপি ছিল মাঝে মাঝে দু একটা কথা বলেছে আর বেশিরভাগ সময় চুপ থেকে মুচকি হেসেছে। অনু ছোটবেলা থেকেই ভীষণ দুষ্টু ছিল সারাদিন দুষ্টুমি করে বেড়াতো আর সাদাত সব সময় তাকে দুষ্টুমির জন্য শাস্তি দিত।শাস্তি পেয়ে অনু মাঝে মাঝে কান্না করত তারপর আবার সবাই মিলে তাকে হাসাতো। এই সবই ছিল অনুকে শাফিনের দেওয়া কষ্ট থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখার চেষ্টা মাত্র।

বাসায় এসে অনু নিজের ঘরে ফ্রেশ হল।বিকেলে ঘুমানোর কারণে এখন আর ঘুম আসছে না তার সারা সন্ধ্যায় কান্না আটকে রাখতে পারলেও এখন আর কান্না বাঁধ মানছে না সে বালিশে মুখ গুঁজে চিৎকার করে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো। এরই মাঝে হঠাৎ দরজায় কেউ কড়া নাড়লো সে তাড়াতাড়ি কান্না বন্ধ করে দরজা খুলে দেখল তার মা দাঁড়িয়ে আছে।

অনু: মা তুমি এত রাতে কোন প্রয়োজন ছিল কি?

অনুর মা বুঝতে পারলো অনু এতক্ষণ কান্না করছিল চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে চোখ গুলো ফুলে গেছে তার মেয়ের জীবনটা কেন এমন হলো ভেবেই সে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো সে জানতো অনু একা থাকলে কান্না করবে তাইতো সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যতদিন পর্যন্ত নিজেকে শক্ত না করতে পারে ততদিন পর্যন্ত সে অনুর সাথে থাকবে তাকে সাপোর্ট করবে।

কারণ এই সময়ে মায়ের মানসিক চাপের কারণে বাচ্চাদের সমস্যা হয়ে থাকে যা মোটেও ভালো না সে জানে বাচ্চাটা অনুর বেঁচে থাকার একমাত্র চাবিকাঠি। সাদাত এর কথা অনুযায়ী শাফিন তাকে ডিভোর্স দিবে বলেছে । তাই একটা ডিভোর্সী মেয়ের একটা বাচ্চা দুনিয়াতে আনতে হযলে অনুকে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে।তার জন্য তার প্রচুর সাপোর্টের দরকার আর মোটিভেশনে দরকার যা অনুর বাবা-মা ও সাদাত দিবে।

অনুকে বোঝাতে হবে ভালো থাকার জন্য কোন শাফিনের মত কোন পুরুষ মানুষের প্রয়োজন নেই। তাই সে বলল।

অনুর মা (রাবেয়া):কেন কোন দরকার ছাড়া কি আমি আমার মেয়ের কাছে আসতে পারিনা বুঝি?আমি এমনিতেই এসেছি তোর সাথে থাকব বলে কত দিন হয় তোর সাথে থাকি না।

অনু বুঝতে পারল তার মা হয়তো বুঝতে পেরেছে সে এখন কান্না করছে। তাই তার সাথে থাকতে এসেছে যাতে সে কান্না করতে না পারে। এরই মাঝে অনুর বাবা হাতে করে গরম দুধ নিয়ে প্রবেশ করে।

অনু: আরে বাবা তুমি তোমার হাতে দুধ কেন?

অনুর বাবা (আলম):তোমার জন্য মামনি এখন তোমার সাথে অন্য আরেকজন আছে তাকে তো সুস্থ হয়ে ঘরে আসতে হবে নাকি তার জন্য তো বেশি বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে আমি কিন্তু না শুনবো না তাড়াতাড়ি করো দুধটুকু ফিনিশ করো।

অনু: কিন্তু আমি তো দুধ খাই না তুমি তো জানো প্লিজ বাবা জোর করে না।

আলম:আমি তোমার কোন কথা শুনবো না আমিতো তোমাকে খেতে দিচ্ছি না আমি তো আমার নাতি নাতনীকে খাওয়াচ্ছি আমার সাথে খেলতে হলে তো তাদের যথেষ্ট শক্তির প্রয়োজন তাড়াতাড়ি শেষ করে তাড়াতাড়ি।

অনু বুঝতে পারলো এখন আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই অজ্ঞাত অনুকে নাক চেপে দুধটুকু খেয়ে ফেলতে হল বরাবরই দুধ অনুর অপছন্দনীয় খাবার।তাকে জোর করে দুধ খাওয়ানো যায় না কিন্তু তার সন্তানের ভালোর জন্য তো এতটুকু করতেই পারে যেখানে তার বাবা-মা তাকে দূরে ঠেলে না দিয়ে এত আপন করে নিয়েছে তার সন্তানের জন্য। সেখানে দুধ খাওয়ার কি এত বড় কাজ।

ঠিক সেই মুহূর্তে থেকে সে প্রতিঙ্গা করল। শাফিন কে মনে করে সে আর কান্না করবে না।যে তাকে ভালোবেসে না তার জন্য সে কান্না করে তাকে যারা ভালবাসেন তাদের কেন কষ্ট দিচ্ছে।

অনু তার বাবা-মা কে জোরিয়ে ধরল আর তাদের জীবনে এগিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিল। যেখানে থাকবে না কোন শাফিন নামের কোনো পিছুটান।

ভালো থাকার জন্য প্রথমে যা করতে হবে তা হল এ শহর থেকে দূরে থাকা কারণ এই শহরের আনাচে-কানাচে তারা প্রেম করে বেরিয়েছে তাই এখানকার প্রত্যেকটা জায়গায় শাফিনকে মনে করিয়ে দেয়। তাই সে শহর থেকে দূরে চলে যাবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেয় সে লেখাপড়া চালিয়ে যাবে। কারণ শাফিন তার যোগ্যতায় প্রশ্ন তুলেছে। তার থেকে বেশি যোগ্য হয়ে তবেই সে শাফিনের সামনে দাঁড়াবে আর দেখিয়ে দেবে শাফিন কখনো তার যোগ্য ছিল না।আর অতীতকে ভোলানো সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে নিজেকে ব্যস্ত রাখা এত ব্যস্ত রাখা যাতে অতীত নিয়ে ভাবার সময়ই না থাকে আর এর সব থেকে ভাল মাধ্যম হচ্ছে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া।

শাফিন নামে যে কেউ একজন তার জীবনে ছিল তা একবারের জন্য মুছে ফেলতে চায় অনু। কিন্তু চাইলেই কি সবকিছু মন থেকে মুছে ফেলা যায়?ঠিক কোন এক গভীর রাতে দীর্ঘ নিঃশ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসে কালো অতীত গুলো। সাথে কিছু সুখময় স্মৃতি। শাফিনের সাথে খুব তো খারাপ ছিল না সে।

অনু বিবিএ কমপ্লিট করার পর বিয়ে করে। তারপরে আর পড়াশোনা বা চাকরির দিকে ঝুকেনি সে কারণ অনুর সব সময় ইচ্ছে ছিল বিয়ের পর সে চাকরি করবে না সংসারী হবে শাফিনের পছন্দমত রান্নাবান্না করবে ঘর গোছাবে বাচ্চা পালবে আর শাফিনের খেয়াল রাখবে। তাই আর নিজেরও পড়াশোনা কন্টিনিউ করেনি বা শাফিন ও আগ্রহ দেখায়নি।

ইরার কল দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করে শাফিন ফোন ধরতেই জিজ্ঞেস করে,

শাফিন: কার সাথে কথা বলছিলে এতক্ষণ যাবৎ? সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি বারবার বিজি দেখাচ্ছে?

শাফিনের এ কথাটাই যথেষ্ট ছিল ইরাকে রাগাবার জন্য, সেও বলে ফেলে

ইরা:কেন এখন কি তোমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আমার ফোনে কথা বলতে হবে?কার সাথে কথা বলছি?কি কথা বলছি?কতক্ষণ ধরে কথা বলব?সবকিছু তোমাকে বলতে হবে?আমাকে কি অনু পেয়েছ। যে সবকিছুর কৈফত আমি তোমাকে দেবো। সবকিছুতে তোমার পারমিশন চাইবো।

হঠাৎই শাফিন দমে গেল সে শান্ত স্বরে ইরাকে বলল

শাফিন: সরি ইরা ভুল হয়ে গেছে। আসলে মাথা ঠিক ছিল না তারপর আমি তোমাকে অনেকক্ষণ যাবৎ ফোন দিচ্ছি বারবার বিজি দেখাচ্ছে তাই হুট করে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল।ভুলে বলে ফেলেছি তুমি যার সাথে খুশি কথা বল আমার কোন সমস্যা নেই। জানোই তো রাগ উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা যা তা বলে ফেলি।

এবার ইরা স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
ইরা: আমি অনু না যে তোমার রাগের ধার ধরে বসে থাকবো। যাক গে আসলে এক পুরনো ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম তাই তোমার ফোন খেয়াল করিনি কি জন্য ফোন দিয়েছো বল? কিছুক্ষণ আগেই না কথা বললাম তোমার সাথে?

শাফিন দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল সে অনুকে মনে না করার জন্য ইরাকে ফোন দিয়েছে কিন্তু ইরাও বারবার অনুর কথা তুলে ওর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

শাফিন: কেন তোমার সাথে কথা বলার জন্য বুঝি কারণ থাকতে হবে?এমনিতে কথা বলা যাবে না?আর কিছুক্ষণ আগে কেন বলছ?প্রায় 2 ঘণ্টা আগে কথা বলেছি আমরা।তোমার কথা মনে পড়ছিল তাই ফোন দিলাম। এই ইরা চলো না তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলি একা একা থাকতে ভালো লাগছে না। চলো কালই বিয়ে করে ফেলি।

ইরা: বললেই হলো নাকি কালই বিয়ে করে ফেলি। আর তাছাড়া বিয়ে ছাড়াই তো সব পাচ্ছো তাহলে সমস্যা কোথায় আমরা আরো কিছুদিন এভাবেই থাকি তারপর না হয় বিয়ের কথা ভাববো আগে তোমাদের ডিভোর্সটা তো হোক। আমার কত শপিং করতে হবে,ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করতে হব, কত প্ল্যানিং আছে আমার বিয়ে নিয়ে?তোমার হয়তো এটা দ্বিতীয় বিয়ে কিন্তু আমার তো প্রথম আমারও তো কিছু শখ আছে নাকি। আর শোনো তোমার ফালতু কথা শোনার আমার এখন সময় নেই আমার কিছু কাজ আছে পরে কথা বলব কোন দরকার থাকলে বল।আর ফালতু টাইম স্পেন এর জন্য আমাকে ফোন দিবে না রাখি বাই।

কট করে ফোনটা রেখে দিলো ইরা। শাফিন বারান্দায় দেয়াল ঘেঁষে বসে পরলো রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি চোখে ঘুম নেই তার ঘুম যেন তার অবাধ্য হয়ে গেছে। তার চোখ থেকে অন্য কারো বুকে চুপটি করে বসে আছে। আর ঘুমানোর জন্য সেই ব্যক্তিটা কে দরকার।

রাতটা নির্ঘুম সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে কাটিয়ে দিল সে।

সকালে,
বরাবরের মতো খুব সকালেই ঘুম ভাঙলো অনুর। অনুর সকালে ওঠার অভ্যাস আছে।তাই সে তাড়াতাড়ি করে অজু করে নামাজে বসে পরল আর আল্লাহর কাছে তার সন্তানের সুস্থতা কামনা করল। কাল রাতে ভালো ঘুম হয়েছে তাই মনটা সকাল থেকেই হালকা লাগছে যেন খুব বড় একটা পাথর নেমে গেছে বুক থেকে। কাল অনেক রাত পর্যন্ত সে ভেবে নিয়েছে আগামীতে কি করতে হবে তাই সে তার বাবা-মায়ের ঘুম থেকে জাগায় অপেক্ষা করতে লাগলো।

কিছুক্ষণ ছাদে হাঁটাহাঁটির পর পিছনে কিচেনে গিয়ে সকালে নাস্তা বানাতে আরম্ভ করলো এটা তার প্রতিদিনের অভ্যাসে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়া তারপর ছাদে কিছুক্ষণ হাটা তারপর নাস্তা তৈরি করা। মাঝে মাঝে ছুটির দিনে শাফিনো তার সাথে যোগ দিতো ভাবতেই চোখ থেকে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পরল। যা সাথে সাথে মুছে ফেলল অনু।

সকলেই ডাইনিং টেবিলে বসতেই হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। অনু দরজা খুলে দেখল সাদাত ভাই আর সাদ এসেছে। তাদের দেখে অনু একটা মিষ্টি হাসি দিল। সাদা পিমনি বলে লাফ দিয়ে অনুর কোলে ওঠার চেষ্টা করলো কিন্তু তার আগেই সাদাত তাকে থামিয়ে দিল।

সাদাত: সাদ বাবা এমন করে না তোমার পিমনি তো অসুস্থ। তোমার পিমনির পেটে একটা বাবু আছে। ছোট্ট বাবু তুমি লাফ দিলে তো বাবুটা কষ্ট পাবে তুমি কি চাও ছোট্ট প্রিন্সেস কষ্ট পায়।

সাদ মাথাটা দুই পাশে হেলে না বোঝাল আর উপরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল মানে সে কোলে উঠতে চায়।

অনু হাত বাড়িয়ে সাদ কে কোলে নিল আর ডাইনিংয়ে বসিয়ে দিল সাথে সাদকে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিল।

অল্প সময়ের মধ্যেই অনু আর সাদের মধ্যে ভালো বন্ডিং হয়ে গেল। মাঝে মাঝে ছেলেটাকে দেখলে খুব মায়া হয় অনুর।মা কি জিনিস তা হয়তো কখনোই বুঝবে না সে বাবা তো বাবাই হয় মা তো হতে পারেনা সে যতই ভালোবাসুক মা এর ভালোবাসাটাই আলাদা। যেমন মায়ের ভালোবাসা বাবা দিতে পারে না ঠিক বাবার ভালোবাসাও মা দিতে পারে না। কথাটা ভাবতেই অনুর বুকে ছ্যাঁত করে উঠলো। তার সন্তান ও তো বাবার আদরের থেকে বঞ্চিত থাকবে।

খাবার পরে অনু সবার উদ্দেশ্যে বলল,
অনু: আমার তোমাদের সাথে কিছু কথা আছে।

সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে ভোরের দিকে চোখ লেগে গেছিল শাফিনের হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো তার। মাথাটা ভার হয়ে আছে।

কোনরকম উঠে দাঁড়িয়ে সে অনুকে ডাকতে লাগলো দরজা খোলার জন্য তারপর হঠাৎ এই আস্তে আস্তে গত দুই দিনের কথাগুলো মনে পরল তার। তারপর সে নিজে অগ্রসর হলো দরজা খুলতে। দরজা খুলেই দেখে ইরা বেশ পরিপাটি হয়ে বিরক্তিকর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

ইরা: প্রায় বিশ মিনিট যাবত বেল বাজাচ্ছি।কি করছিলে তুমি?শব্দ শুনতে পাওনি?দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা করছে।দেখি সর সামনে থেকে আমাকে ভিতরে যেতে দাও।

ইরা ঘরে গিয়ে দেখলো রুমের প্রায় নাজেহাল অবস্থা সারা ঘরে কাপড়চোপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সিগারেটের খোসা ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে ইরা তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে আসে বলল,

ইরা: ছিঃ তোমার রুমের এ অবস্থা কেন? তুমি এত নোংরা?আমার সাথে থাকতে হলে সব সময় ঘর গুছিয়ে রাখতে হবে।নিজের কাজ নিজে করবে আর তুমি কি ভুলে গেছো আজকে আমারা লয়ারের কাছে যাবো দশটার এপোয়েন্টমেন্ট। অলরেডি সাড়ে নয়টা বাজে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো। যাও।

শাফিন বিনাবাক্যে কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল একদম শাওয়ার নিয়ে বের হবে সারা শরীর থেকে সিগারেটের বাজে গন্ধ আসছে এভাবে বেরোনো যায় না।

শাফিন কে শাওয়ার থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে ইরা সামনের দিকে আগায় আর শাফিনের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। অন্য সময় হলে সে নিজেও তাল মিলাতো কিন্তু এখন কেন যেন এগুলো বিষের মত লাগে তাই সে ইরাকে সরিয়ে দেয়।

তারপর তারা রওনা দেয় লয়ারের কাছে যাবার উদ্দেশ্যে….

চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *