The villain lover ।। পার্ট : ০৪
বিছানায় ছুড়ে মাড়াতে ছোয়া হাতে বেশ ব্যাথা পেলো,
কি হয়েছে আমাকে কেনো এখানে নিয়ে এলেন? আর দোহা , দোহাকে কেনো আনলেন না? প্লিজ আমাকে যেতে দিন। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।
– একদম চুপ, আর একটা কথাও বলবিনা। মনে আছে ভালোবাসি বলে একটা সময় যা বলতি তাই বিশ্বাস করতাম,কিন্তু তুই তার কি মুল্য দিলি বল পালাতে চেয়েছিস বার,বার।
কিন্তু তুই ভুলে গেছিলে এই রুদ্রের থেকে তুই পালাতে পারবি না,
– ছোয়া কান্না করেই যাচ্ছে
– আমাকে বোকা ভাবিস তাইনা আজ দোহাকে আবার ছেড়ে দেই আর তুই সুযোগ বুঝে পালিয়ে যা, এই ভুল করিসনা ছোয়া।আমি তোকে এতোটাই ভালোবাসি যে, আর বললাম না। আমার পাগলামি আর দেখতে চাস না। খুব খারাপ হয়ে যাবে।
– ছোয়ার কান্না দেখে,
রুদ্র ছোয়ার চুলের মুঠি ধরে ছোয়ার মুখ উচু করে বলতে লাগলো,,
– কেনো ছোয়া? কেনো? আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায়না? তোমার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এতো ছোটফোট করি।
– আপনি একটা খুনি,আর একটা খুনিকে ভালোবাসার থেকে ভালো আমি মরেই যাবো। আমার বাবাকে কেড়ে নিয়েছেন আপনি। আমাকে অপবিত্র করেছেন আপনি( কাঁদতে, কাঁদতে বললো ছোয়া।
রুদ্র নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না, ছোয়াকে অনেক জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো,আর খাটের কোনের সাথে লেগে ছোয়ার কপাল কেটে গেলো।
ছোয়া অনেক দুর্বল কিছুদিন যাবত তার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে,
ছোয়ার মাথা ঘুরতে লাগলো আর একটা সময় অজ্ঞান হয়ে গেলো ছোয়া,,,,
এতোক্ষনে যেন রুদ্রের ঘোর কাটলো,
– ছোয়া এই ছোয়া কি হলো,জান আমাকে মাফ করে দাও। আমি রাগের মাথায় এটা কি করলাম, জান এই জান কথা বলো,
রুদ্র বিছানা থেকে নেমে মেডিসিন বক্স এনে ছোয়ার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিলো,,,
তারপর ডাঃ কে ফোন দিলো,,,,
-ডাঃ : মিস্টার রুদ্র, মেয়েটি আপনার কে হয়???
– আমার ওয়াইফ।
ডাঃ : আসলে মেয়েটি খুবই দুর্বল,খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করছে না তাই একটু চোট পেতেই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।এই স্যালাইন শেষ হলে সে ভালো অনুভাব করবে, একটু খেয়াল রাখবেন।
– ওকে ডাঃ ধন্যবাদ।
ডাঃ চলে যাওয়ার পর রুদ্র যেয়ে ছোয়ার পাশে বসে,হাতে স্যালাইন পুষ করা ছোয়ার আর রুদ্র বসে, বসে ছোয়াকে দেখতে থাকে।
আর আগের দিনগুলার কথা ভাবতে থাকে,,,,,
সেদিন বাসায় যেয়ে রুদ্র শুধু ছোয়ার কথায় ভাবছিলো, তার ইচ্ছা করছিলো ছোয়ার সামনে যেয়ে অধিকার খাটিয়ে বলতে,তুমি আমার বউ আমার সাথেই তোমাকে যেতে হবে।
কিন্তু না সে সেটা করতে পারবে না,
– উফ কেনো আমি আগে ছোয়াকে এমন ভাবে দেখলাম না,দেখলে হয়তো আজ ছোয়া আর আমি একসাথে হতাম। এসব ভাবছে রুদ্র।
এর মাঝেই এলো রোদেলার ফোন,
– হ্যালো ভাইয়া??
– হুম বল!
– তোর জন্য একটা ভালো খবর আছে!
– কি??
– ছোয়া আপুর এফ বি আইডি,,,
– সত্যি তাড়াতাড়ি দে,
– নাহ এভাবে হবে না,আগে বল আমাকে কি দিবি,
– তুই যা চাইবি।
– ওকে ভাইয়া সময় হলে চেয়ে নিবো,
– আচ্ছা আমার লক্ষি বোন প্লিজ ভাইকে ভাবির আইডি টা তাড়াতাড়ি দাও।
তারপর রোদেলা ছোয়া এফ বি আইডি দিলো, রুদ্রকে।
রুদ্র ছোয়ার এফ বি পিক গুলো দেখছে, ছোয়ার শাড়ি পরা কিছু ছবি।আর রুদ্র খেয়াল করলো ছোয়ার চুও অনেক লম্বা। রুদ্র বার,বার ছোয়ার ছবিগুলো জুম করে দেখতে লাগলো। ছোয়ার ছবিগুলো থেকে যেন চোখ ফেরাতে ইচ্ছাই করছে না তার।
রুদ্র খাতা আর কলম নিয়ে বসলো,
এর আগে কারো জন্য কবিতা লেখেনি রুদ্র কবিতা তো দূরের কথা ভালোলাগাও অনুভব করে, সেই ছোট বয়স থেকে সে নিজের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে কিন্তু আজ যখন সে বেচে থাকার, মানে খুজে পেয়েছে তখন যেন তার ইচ্ছা করছে,তার প্রিয় মানুষটার জন্য হাজারো কবিতা,হাজারো কাব্য রচনা করা তার জন্য কোনো ব্যাপারই না।
তাই একটা কবিতা লিখেই ফেলোলো রুদ্র,,,
যদি কোনো গল্প লেখি,ওগো তোমায় নিয়ে সখী।
এসো আমার চিলেকোঠায়, শুনাই এ আবৃতি।
তুমি,,,,
মন্ত্র তালে শোনো, ওগো আমার বীনার বানী।
ওগো,তোমার কাছেই আছি, যেন সন্ধ্যা সাজে সাজী।
যে রুদ্রে জীবনে এতো দিন ছিলোনা আজ সে খুজে পেয়েছে জীবনের ছন্দ।
(সে কি পাড়বে ছোয়ার ভালোবাসা আদায় করতে??)
এদিকে,,
ছোয়া ভাবছে আজ শুধু, শুধু না বুঝে লোকটাকে ওভাবে বলা ঠিক হয়নি,পরে যে সরি বলবো লোকটাকে আর খুজেই পেলাম না, উফ আল্লাহ লোকটাকে যেন সরি বলার জন্য খুজে পাই।
– এই ছোয়া খেতে আয় মা,
– আসছি আম্মু। দোহা কি করে,
– কি আর করবে আমার রুমে বসে ড্রয়িং করছে,
– ওহ আচ্ছা আম্মু,যাও আমি দোহাকে নিয়ে আসছি।
…….
– কি করে আমার আপুটা??
– আপু তুমি দেখো আমি আমাদের সবার ছবি আঁকছি, এটা আম্মু,এটা তুমি, এটা আব্বু, এটা আপু,আর এটা আমি।
দোহার ড্রয়িং দেখে ছোয়ার চোখ ভিজে উঠলো,
কারন দোহা যেই ছবি এঁকেছে তা কখনোই হয়তো আর সত্যি হবেনা,
তারপরও নিজেকে সামলে বললো ছোয়া,
– আমার আপুটা তো খুব সুন্দর ড্রয়িং করে আমিতো জানতামই না,আমাকে শিখাবা?
– না আপু আমি এখন অনেক ব্যাস্ত তোমাকে পরে শেখাবো,
দোহার কথা শুনে ছোয়া হেসে দিলো,
– আচ্ছা আপনি যখন ফ্রি হবেন তখন শেখালেই হবে, এখন একটু সময় করে খেতে চলুন ম্যাম।
– আমি এখন ফ্রি আছি আপু, চলো খেতে যাই।
তারপর ছোয়া, ছোয়ার আম্মু, দোহা গল্প করতে করতে খেয়ে নিলো।
,,,,,,,,,,
পরেরদিন সকালে,
– আম্মু আমি আসছি!
– আচ্ছা সাবধানে যা মা।
– আচ্ছা আম্মু।
ছোয়া রাস্তা দিয়ে হাটছে,আজকে মনে হয় আজকের ক্লাস টা মিস করবে ছোয়া। ভাবতে ভাবতেই মেজাজটা গরম হয়ে যাচ্ছে, আজ ক্লাসে এক্সেম এর নোটস গুলো বুঝে না নিলে ফেলল কেও ঠেকাতে পারবে না,নাচানাচি সব লাটে উঠবে,,
এর মাঝেই বাইক নিয়ে যাচ্ছে, একটা লোক মাথায় হেলমেট পরা।
ছোয়া ভাবছে থামাবে কি থামাবেনা,লিফট চাইলে কেমন হয়। আরে ধুর ভাবাভাবির সময় নেই,তাই ছোয়া হাত দিয়ে ইশারা করে থামাতে বললো,
– ভাইয়া আমার আজ খুব জরুরী একটা ক্লাস আছে প্লিজ আমাকে একটু লিফট দিবেন, বেশি দূর না সামনেই বাট হেটে গেলে ক্লাসে দেড়ি হবে আর যাওয়ার জন্য কিছু পাচ্ছিও না। ( একটানে কথাগুলো বললো ছোয়া)
– আর বাইকে থাকা লোকটি তাকিয়ে আছে ছোয়ার দিকে,কারন লোকটি মেঘ না চাইতেই যে জল পেয়ে গেলো,কারন ছোয়াকে দেখার জন্যই বাসা থেকে সকাল,সকাল বের হয়ে ছিলো। (ভাবছেন তো লোকটি কে?)
লোকটি ছোয়াকে ইশারা করলো ওঠার জন্য। আর ছোয়া তাড়াতাড়ি উঠে পড়লো,
কিন্তু বসলো মাঝে ব্যাগ দিয়ে। বাইকটা ব্রেক করতেই ছোয়ার হাত অজান্তেই লোকটির ঘারে রাখলো।
– জানেন ভাইয়া,আমার সাথেই এমন হয়। দেখেছেন আজ যদি ক্লাসে না যাই কি হবে জানেন। ডাহা ফেল করবো। ছোয়া কথা বলেই যাচ্ছে।
– আর ছোয়ার স্পর্শে কেও যেন বার,বার হারিয়ে যাচ্ছে আর লুকিং গ্লাস দিয়ে ছোয়াকে বার,বার দেখছে কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই ছোয়ার।
গাড়ি থামাতেই,,
ছোয়া নেমে বললো,
– ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে অনেক বাচা বাঁচালেন আপনি।
এই বলেই ছোয়া চলে যাচ্ছিলো,
– এইযে ম্যাম শুধু ধন্যবাদে কাজ হবেনা।
হঠাৎ কারো ডাকে আবার পেছনে ফিরলো ছোয়া। পেছনে ফিরে যাকে দেখলো তাকে দেখে ছোয়া পুরো অবাক।
– আপনি????
– হুম আমি।
– আগে বলবেন তো যে আপনি?
– আমাকে কথা বলার সুযোগ আপনি দিচ্ছিলেন, নিজেই বক,বক করে যাচ্ছিলেন।
– সরি ভাইয়া,
– আরে সরি কেনো?
– কালকের জন্য, আসলে আমি আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম। আচমকা ব্যাপারটা ঘটেছিলো আমি বুঝতে পারিনি।
– ওকে সমস্যা নেই,শুধু শুধু সরি আর ধন্যবাদ তো আমি নেইনা।
– তবে???
– আমাকে কফি খাওয়াতে হবে।
– ওকে ভাইয়া আজ কলেজ শেষ এ থাকবেন আমি খাওয়াবো,এখন যাই আমার দেরি হচ্ছে।
– আচ্ছা আমি কিন্তু থাকবো।
– ওকে, বলেই ছোয়া ক্লাসে চলে গেলো,,,
ক্লাস শেষ করে ছোয়া দেখলো রুদ্র বাইকের ওপরে হ্যালান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– বাহ ভাইয়া এককাপ কফির জন্য এতো রোদের ভেতরে দারিয়ে আছেন?
– হুম কি করবো বলো,কাল যা ঝাড়া ঝাড়লা? ভাবলাম এতো সহজে তোমাকে ছাড়া যাবে না।
– (ঠোট বাকিয়ে) আর লজ্জা দিবেন না ভাইয়া।
তারপর ছোয়া আর রুদ্র একটা ক্যাফেতে গেলো,
– ভাইয়া আপনার বাসায় কে কে আছে?
– মা,বাবা,ভাই, বোন সবাই আছে।
– আর তোমার?
– আম্মু , আমি, ছোট বোন। বাবা মাড়া গেছে আসলে মাড়া গেছে বললে ভুল হবে বাবাকে মেড়ে ফেলা হয়েছে। যাক ওসব কথা বাদ দিন।
– হুম, জানেন ভাইয়া কাল আপনার সাথে ওভাবে কথা বলার পর খারাপ লাগছিলো,আল্লাহর কাছে বলছিলাম আপনার সাথে যেন আবার দেখা হয় মাফ যেন চাইতে পারি।আর দেখুন আল্লাহ আমার কথা শুনে নিলো।
– ওহ তাই, আরে মাফ চাওয়া লাগবেনা,আমি বুঝতে পেড়েছি যে তুমি ঘাবড়ে গিয়েছিলে,
– হুম ভাইয়া শুধু কফি খাওয়ালে কেমন হয় তার সাথে কি খাবেন বলুন?
– তুমি খাওয়াবা তাই তুমি ডিসাইড করো।
– ওকে, তারপর ছোয়া দুই কাপ কফি আর দুটো চিলি চিকেন আনতে বললো,
– ছোয়া কথা বলেই যাচ্ছে আর আর রুদ্র শুধু ছোয়াকেই দেখছে,তার কথা বলা তার হাসি যেন রুদ্রকে পাগল করে দিচ্ছে।
এরি মাঝে ওয়েটার খাবার দিয়ে গেলো, ছোয়া আর রুদ্র খেতে শুরু করলো,,
– ছোয়া বেশ খেয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু রুদ্র একটু খেতেই জোরে, জোরে কাশি শুরু করলো, কারন রুদ্র একদম ঝাল খেতে পারেনা।
– একি ভাইয়া কি হলো?
রুদ্র কাশির জন্য কথা বলতে পারছে না, ছোয়া চেয়ার থেকে উঠে রুদের পিঠে হাত বোলাতে, বোলাতে পানির গ্লাস মুখে ধরলো, রুদ্র একটু পানি খেলো, কিন্তু এখন যেন আর রুদ্রের তেমন খারাপ লাগছে না,কারন ছোয়া তার অনেক কাছে। বরং আজ ঝালটাকেও যেন মিষ্টি লাগছে। কারন এই ঝালের জন্যই ছোয়া তার এতো কাছে এলো আজ।
বর্তমান,,,,
সকালের রোদ ছোয়ার চোখে পড়তেই ঘুম ভাঙলো ছোয়ার। পাশেই বিছানার সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে রুদ্র, আর ছোয়া তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে। ঘুম অবস্থায় সবাইকে খুব নিষ্পাপ লাগে, রুদ্রকেও লাগছে।
ছোয়া কিছুক্ষন রুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো,হঠাৎ রুদ্রের ও ঘুম ভাঙলো।
– জান তোমার জ্ঞান ফিরেছি তুমি ঠিক আছো?
কালকের কথা মনে পড়তেইই ছোয়ার আবার রাগ উঠে গেলো,ছোয়া রেগে বললো,
– মরে গেলেই ভালো হতো আপনার মতো খুনির হাত থেকে রেহাই পেতাম।
এই বলে ছোয়া উঠতে যাবে তখনো,স্যালাইন এর তারে বাধলো ছোয়ার হাত,ছোয়া স্যালাইন খোলার চেষ্টা করছে, তা দেখে রুদ্র খুলে দিলো।
– চলো আমি ধরে নিয়ে যাচ্ছি।
– লাগবেনা আমি পাড়বো।
– জেদ করোনা ছোয়া,
ছোয়া রুদ্রকে ধাক্কা দিলো, টাল সামলাতে না পেরে ছোয়ার শাড়ির সাথেই পেঁচিয়ে রুদ্র ছোয়ার ওপরে পরে গেলো।
রুদ্র তাকিয়ে আছে ছোয়ার দিকে, আর ছোয়া উঠতে চেষ্টা করছে,
ছোয়া যতো উঠতে চাইছে রুদ্র ততো চেপে ধরছে,
হঠাৎ ছোয়া রুদ্রের হাত তার পেটে অনুভব করলো। আর রুদ্র ছোয়ার ঘারে নাক ঘষতে লাগলো,
চলবে,,