যদি তুমি জানতে

যদি তুমি জানতে !! Part- 14

-আমার হাত দিয়ে জুনায়েদ সাঈদকে মেরে খুব শান্তি পাচ্ছো, তাইনা দিপ ভাই??
-শান্তি মানে!! আজ আমি অনেক অনেক অনেক হ্যাপি!! তুই যে এতো সুন্দর করে কাজ টা করে দিবি, জানতামই না!! যাইহোক তোর ভাবিকে নিয়ে আসি। এরপর দুটোকে একসাথে নিয়ে আয়েশ করবো।।
-ছি! দিপ ভাই! তুমি কতবড় নির্লজ্জ ! নষ্টা এক পুরুষ ! তা আমার জানা ছিলো না। তুমি আমার সাথে সাথে আরেক মেয়ের জীবনও তছনছ করার জন্য রেডি! ছি! ধিক্কার তোমার উপর ! তুমি কিনা আমার ভাই!
-আহারে…থাক কষ্ট পেতে হবে না। রাতে দেখ কি করি!! এখন যেতে হবে।।। তা না হলে এখনই তোকে…….থাক পরে দেখছি। টেবিলের ড্রয়ারে একটা প্যাকেট আছে। সাঈদের ওয়ালেট, ফোন আর ঘড়ি ওটাতে রাখা। আমি বাসায় আসার আগেই সব আগুনে পুরিয়ে দিস। ওর কোনোকিছু যেন এরুমে না দেখি।।

বলেই দিপ ভাই মাথায় পাগড়ি পড়ে চলে যায়। বরযাত্রির আটটা মাইক্রোবাস সাথে বরের গাড়ি সহ মোট নয়টা বাস এক এক করে চলে যেতে থাকে। আমি রুম থেকে বেরিয়ে নিচে এসে দেখি বরযাত্রির লাষ্ট গাড়িটা রেডি হচ্ছে। ওই গাড়িতে বড় খালামনি, খালু, বাবা-মা এবং ফিমা আপু যাবেন। বাবা-মা, বড় আপু আর খালু উনারা গাড়িতে বসে আছেন। খালামনি সব দেখেশুনে গাড়িতে উঠবেন।এই কজন বাদে বাকি সবাই কনেবাড়ির জন্য চলে গিয়েছে। আমাকে দেখেই বড় খালামনি বললেন-

-ফিহা, তুই স্নেহাদের গাড়িতে যাসনি? আমি তো ভেবেছি তুই চলে গিয়েছিস।।
-না খালামনি আমি ওদের সাথে যাইনি। আমার প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছে। আমি যেতে পারব না। তোমরা যাও।
-কি বলছিস এসব??তোর এতো আদরের দিপ ভাইয়ার বিয়ে তুই আসবিনা !! কিচ্ছু হবেনা একটা নাপা খেয়ে নিস, মাথাব্যথা চলে যাবে। এখন চল।
-প্লিজ খালামনি জোর করো না। আমার এমনেই ভালো লাগছে না।
-ফিহা সাঈদ কি আবার কিছু করছে? থাপ্পড় টাপ্পড় দিলো নাকি? মন খারাপ কেন!!
-না খালামনি ভাই কেন মারবে। তুমি না শুধু শুধু ভাইকে দোষারোপ করো।
-একটাই ছেলে আমার। ও কোনো ভুল কিছু না করুক, এজন্য সবসময় একটু চিন্তায় থাকি। কখন কি করে, ওই জানে। ফিহা সাঈদ কি দিপের সাথে গেছে না?
-হ্যাঁ…না….মানে…
-দেখতো! আমিও না!! দিপের সাথেই তো যাবে। দুই ভাই একসাথে না থাকলে দিপ কি যেতো নাকি!!
-ঠিক বলছো।
-তুই কি এভাবে খালি বাড়িতে একা একা থাকবি? তোকে একা রাখা তো ঠিক না! এমনেই সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি সুযোগ পেলে তোকে ছাড়ে না!
-না খালামনি ওই ব্যক্তি আসবে না। টেনশন করো না। প্লিজ তোমরা যাও। আমি ঠিক আছি এখানে একা একা।সমস্যা নেই। যাও তুমি।
-নাহ্ চল তুই
-খালামনি বিশ্বাস কর কিছু হবে না। আমি একটু ঘুমাতে চাই। আমাকে যাওয়ার জন্য জোর করো না।।
-তাহলে আমি সাঈদ কে বিয়ে বাড়ি থেকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ও এসে খেয়াল রাখবে।
-………………………………….

“সাঈদ” এই নামটা শুনলেই চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করে। খালামনিকে তোমাকে কীভাবে বোঝাবো সাঈদ ভাই আর নেই। আমি নিজে উনাকে মেরে এসেছি। আমি তার খুনি! সাঈদ ভাইয়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি! ধোকা দিয়েছি উনাকে! উনি হয়তো ভাবতেও পারেনি আজ তার “স্পেশাল আদর” টা বেশি পাওয়ার পর এভাবে মৃত্যু হবে। সাঈদ ভাই তো কখনো আমাকে ক্ষতি করেনি!! না কখনো লালসা ভাবে দেখেছে!! উনি একটু খানি ভালোবাসা চেয়েছিল! শুধু একটু খানি! আর আমি উনাকে কিনা নিজ হাতে শেষ করে দিয়ে এসেছি।। সাঈদ ভাই তোমার নাবিলা যে এমন কিছু করতে পারবে তা কি তুমি কখনো ভাবতে পেরেছো?? কক্ষনো ভাবতে পারো নি।।।

খালামনিকে অনেক বুঝিয়ে বিয়েবাড়ির জন্য বিদায় করলাম। বাবা-মা কে কোনোরকমে বুঝিয়ে দিলাম, আজ আমি আসতেই পারব না, আমার মাথা অনেক ব্যথা। সবাই চলে গেলে বিয়ের সাজে সজ্জিত খালি বাড়ির দিকে চলে এলাম। সদর দরজা ঠেলে সিড়ি বেয়ে একপা দুপা করে উপরে উঠছি। সাঈদ ভাই এখানে দিপ ভাইয়ার সাথে গাদাগাদি করে থাকতেন। রাতে তো ঘুমাতেও পারতেন না। আমার কাছে এসে কোলে ঘুমিয়ে পড়তেন। একটা ছেলে কত বিশ্বাস করলে এভাবে একটা মেয়ের কোলে রাতে শান্তির ঘুমের জন্য মাথা রাখে!! খালামনির পর কখনো দেখিনি অন্য কারো কোলে ওভাবে মাথা রেখে আরামসে ঘুমাতে। উনি তো শুধু আমার কোলেই মাথা রাখতেন, সেই আমি কিনা এত বড় আঘাত করলাম। কাল সকালে যদি আরো পাচঁ মিনিট ঘুমাতে বলতাম!! “নাবিলা আর পাচঁ মিনিট প্লিজ ঘুমাতে দে”- এখনো আমার কানে বেজে চলছে সাঈদ ভাই।।

রুমে যেয়ে দিপ ভাইয়ার কথামতো টেবিলের ড্রয়ার থেকে সাঈদ ভাইয়ের সব জিনিস সরিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু সাঈদ ভাইয়ের জিনিস আগুনে পুড়াব না। ওগুলো এখন থেকে আমার কাছে থাকবে, চোখের সামনে। ড্রয়ার খুলে দেখি একটা প্লাষ্টিকের ব্যাগে সাঈদ ভাইয়ের ঘড়ি, ওয়ালেট আর ফোন রাখা। ব্যাগটা খুলে সব বিছানায় ছড়িয়ে নিয়ে বসলাম।

ব্র‍্যান্ডেড ওয়ালেট। ডিপ ব্রাউন কালার। ভাই যেমন সুন্দর উনার জিনিসগুলাও সেইই। উনার যে পার্ফেক্ট জিনিস লাগে, সেটাই ওয়ালেট দেখে বুঝা যায়। ওয়ালেটটা একপাশে রেখে এখন ঘড়িটা দেখতে লাগলাম। রেডো ব্র‍্যান্ডের কালো ঘড়ি। ঘড়ির কাটা থেমে আছে। চলছে না। ” দুইটা পনের ” ঠিক এই সময়টাতে কাটাটা আজীবনের জন্য থেমে আছে। হয়তো ঘড়িটার সময় জানত ভাই আর ফিরবেনা। আজ আমি “মেঘ না চাইতে বৃষ্টির” মতো কাদছি। কারন, নিজেই কিনা শেষ করে এলাম আর এখন শোকে কাদছি! হায়রে দুনিয়া! একসেকেন্ডের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেলো। ঘড়িটা দুহাতে নিয়ে অঝোরে কেদে যাচ্ছি। কিন্তু চোখের পানি মুছিয়ে “চুপ কর নাবিলা ” বলা মানুষ টি পাশে নেই!!

ঘড়িটা ওয়ালেটের পাশে স্থান দিয়ে ফোনটা হাতে নিলাম। অন করে দেখি লক করা। লক খুলতে পিনকোড লাগবে, সেটা জানা নেই। আবোল-তাবোল অনেক ডিজিট দিয়ে খুলার চেষ্টা করলাম। খুললো না। আরো অনেকগুলো ডিজিট বসিয়ে ট্রায় করলাম তাও খুললো না। এবার ওয়ালেট খুলে পাটেপাটে চেক করলাম কোনো পাসকোড বা পিনকোড পাওয়া যায় কিনা। হঠাৎ দেখি ওয়ালেটের কোনায় একটা কাগজ রাখা। খুলে দেখি তাতে লিখা “5”। কিন্তু পিনকোড তো একটা ডিজিটের না। পরে চিন্তা করতে লাগলাম, ফাইভ দিয়ে কি ইন্ডিকেট করছে।। “S A Y E E D” -হয়তো টোটাল পাচটা ডিজিট সংখা বোঝাচ্ছে। ফোনটা আবার হাতে নিয়ে পিনকোডে পাচবার “5” লিখে “ওকে” অপশনে ক্লিক করলাম। সাথেসাথেই ফোন আনলকড।।

ফোনের অল এ্যাপস অপশনে গিয়ে দেখি একটা “নোটবুক” নামে এ্যাপস নামানো। ওটাতে ক্লিক করতেই দেখি ভাই ওখানে লিখালিখি করতো। ঠিক ডায়েরির পাতায় মানুষ যেভাবে লিখে। প্রথম পাতা আসতেই দেখি ওখানে ঠিক এরকমভাবে লিখা- “আজ নাবিলা বাসায় এসেছে। ও এতো বড় হয়ে গিয়েছে, ভাবতেও পারিনি। দুইবছর পর দেখলাম ওকে। আব্বু তো নাবিলাকে পেয়ে ভুখা মুরগির মতো খাওয়ালেন। আমি রুম থেকে বসে বসে পুরো একটা লাইভ এপিসোড দেখলাম, কিভাবে শুটকি টু মুটকি করা যায়!”
লিখাটা পড়ে হাসছি!! ভাই যে এটাও তার লেখনিতে যোগ করবেন জানতাম না। আমার কাছে তো উনি বরাবরই ভাব নিয়ে চলা পার্সন ছিলেন। দ্বিতীয় পাতায় গেলাম, ওখানে লিখা- ” সকাল সকাল আমার ক্লাসমেট ফাহিমের সাথে চুলাচুলি বাধিয়ে দেওয়ার মতো ঝগড়া করছিল। ফাহিম এমনেই ফ্লার্টবাজ সেই জায়গায় ওর যদি কিছু হতো তাহলে পরিস্থিতি বিগড়ে যেত। ফাহিমের সাথে ওভাবে উঠাপড়া দেখে রাগের মাথায় নাবিলাকে থাপ্পড় দিয়ে বসেছি। ওকে কখনো মারিনি। মন টা চাচ্ছে হাতটা কেটে টুকরো টুকরো করি।” এরপরের কয়েকটা পাতা ফাকা। আবার দেখতে লাগলাম কোন পাতায় লিখা আছে, দেখি চব্বিশ নম্বর পাতায় কিছু লিখা আছে।ওই পাতাটাতে ক্লিক করতেই দেখি, লিখা- “নাবিল যেমন উট্ভট ওর প্রতিটা জিনিসও ওর মতোই উট্ভট। আজ ‘লাল মরিচের মশলা মাখা’ নামে এক আদর খেলাম। আমি, লাইফের এত বছরেও এমন কোনো আদরের নাম শুনিনি। তবে ওরটা স্পেশাল !! আই নিড দ্যাট আদর ফর টুয়েন্টি মিনিটস!!”

আর পড়ার সাহস পাচ্ছিনা। গলা আটকে আসছে। কান্নার বেগ কখন এতো বেড়ে গিয়েছে জানা নেই। হেচকি উঠে আসছে। সাঈদ ভাই, তোমার ফোনের এই সামান্য ডায়েরি নামক জিনিসটাও আমার নামটা ঠাই পেয়েছে! কেন ভাই! কেন তুমি এতো প্রায়োরিটি তোমার নাবিলাকে দিতে গিয়েছিলে! ও তো এসবের যোগ্য নাহ!

.

.

সাঈদ ভাইয়ের সব চিহ্ন আমি ব্যাগে ভরে নিলাম। যাওয়ার সময় সাথে করে নিয়ে যাব। ভাইয়ের সাথে শেষবারের মতো এবাড়ির ছাদে বসেছিলাম। এখন ঠিক ওখানেই যাব। পড়নের শাড়িটা চেন্জ করে নরমাল ড্রেস পড়ে নিলাম। ওয়াশরুমে যেয়ে বেসিনে পানি ছেড়ে মুখ ধুচ্ছি কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়া বন্ধ হচ্ছেনা। আয়নায় তাকালাম চোখ বেয়ে এখনো পানি পড়ছে। মুখটা মুছে ছাদের দিকে চলে গেলাম।

ছাদে বসে আছি। চারপাশ নিস্তব্ধ, নিস্তেজ। প্রকৃতিও যেন আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে।। চারিদিক থেকে বাতাস, শো শো করে যাচ্ছে। চোখ দুটো বন্ধ করে পুরোনো ঘটনায় ফিরে যাই….

সাঈদ ভাইয়ের শাড়ি দেখে স্নেহা নিজে পড়ার জন্য আকুতি করতে লাগল। কিন্তু আমি একদম না করে দিয়েছি, আমি এ শাড়ি দিতে পারব না।। স্নেহা আমার কথা শুনে কিছুটা মন খারাপ করলেও পরে ও ঠিক হয়ে যায়। আর আমাকে হাসিমুখে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। আমি শাড়ি পড়ে ঠিক সাঈদ ভাইয়ের ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী সেজেগুজে স্নেহার আগে রেডি হয়ে রুম থেকে বেরুতেই দিপ ভাই খবর পাঠালো স্টোররুম থেকে রঙ আনতে। হলুদ শেষে সবাই মিলে রঙ মাখামাখি করে খেলবে বলে। আমি কথামতো স্টোররুমে গেলে দেখি বিশাল রুমের এক চিপায় রঙের হাড়ি রাখা। রুম থেকে রঙের হাড়ি দুহাতে নিতেই মনে হলো কেউ দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে। আমি হাড়ি নিচে রেখে দৌড়ে যেয়ে দেখি সত্যি সত্যি কেউ দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিয়েছে । কে করল।।।অনেক ধাক্কাচ্ছিলাম। কিন্তু সবাই ততক্ষণে হলুদের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত, বিয়ে বাড়ির চিল্লাচিল্লি তে আমার চেচামেচি চিৎকার কেউ শুনতে পাচ্ছিলা না। কয়েকঘন্টা যাবৎ ওভাবে চিৎকার করে ধাক্কাতে ধাক্কাতে আমি ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছিলাম। একটা ছোট জানালা ছাড়া আর কোনো স্পেস ছিলো না ওই রুমে। স্টোররুমে রাখা একটা টুলে বসতেই দেখি দরজা কেউ খুলছে। আমি দৌড়ে দরজার কাছে যেতেই দেখি দিপ ভাই হলুদ লাগানো অবস্থায় দরজা খুলে দিলেন। আমি ভাইকে আমার আটকে পড়া অবস্থা জানাবো, তার আগেই সে ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে নেয়। আমার দিকে ধীর পায়ে এগুতে থাকে। ভাইয়ের চাহনি সেদিন ঠিক মনে হচ্ছিলো না। সে কেমন খারাপ দৃষ্টি নিয়ে পৈশাচিক ভাবে হেসেদুলে আসছিলো। আমি দেয়ালে ঠেসে গেলে সে আমার কাছে এসে দুহাত দেয়ালে রেখে আটকে দেয়। মাঝে আমি, দিপ ভাইয়ার হাত দুপাশে। আমি চোখমুখ বন্ধ করে আমার হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলে সে আবারও পৈশাচিক হাসিতে মেতে উঠে। আমি কাপাকাপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম-

-দিপ…প ভাই তু..তুমি এভাবে কেন হাসছো? প্লিজ দূরে যাও !
-আহ্ হা, দূরে যেতে এখানে আটকিয়েছি নাকি?? সুইটহার্ট!!
-সুই..ট..হার্ট তো ও..ই ব্যক্তি ব…লত তাহলে তু..তুমি সেই অজ্ঞাত ব্যা..
-হ্যাঁ আমি তোর অজ্ঞাত ব্যক্তি। তুঝে চাহনেওয়ালা!!

এমন কিছু শুনার সাথে সাথে দিপ ভাইকে আমার কাছ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে গেলে সে আমার হাত চেপে ধরে। আমি চিৎকার করলেও কোনো লাভ হয়না। দিপ ভাই তার মুখ এনে আমার চুলের স্মেল নিতে থাকে, আর বলে-

-ওফফ্ সেদিন তোকে সাঈদের বাসায় কী সুন্দর ছুয়েছিলাম!! আ’ম ম্যাডড!! তুই ধাক্কা দিয়ে না ফেলে দিলে তোর অজান্তেই সেদিন তোকে শেষষ করে দিতাম!! ওহহ গড, তুই এতো হট কেন! ইথিলার মতো স্লিভলেস ড্রেস পড়তে পারিস না! তোকে যা হেব্বি লাগতো!!!
-ছি ভাইয়া! তুমি দূরে যাও! আমার কাছে আসবেনা!
-ওলে, সুইটহার্ট কেন আসবো না বলোতো!! তোমার মত এত পটাকা একটা মালকে কীভাবে??কীভাবে?? একা ছাড়ি বলো, বলো??তোমাকে যে আমি পেতে চাইইইই, আই লাভ ইউউ!! আই নিড ইউ ফর এ নাইট!

শুনেই ঠাসস..করে এক থাপ্পড় দিপ ভাইয়ের গালে বসিয়ে দেই। উনি গালে হাত দিয়েই পাগলের মতো হাসছে। উনাকে দেখতে খুব ভয়ঙ্কর লাগছে। মনে হচ্ছে হিংস্র শেয়াল ছিড়ে ছিড়ে খাওয়ার বাসনায় আছে। আমি থাপ্পড় দেয়াতে সে একটু পিছালে আমি ওখান থেকে সরে রুমের আরেক কোনায় যেতেই দেখি একটা ছুড়ি চালের বস্তার উপর পড়ে আছে। আমি ছুড়ি হাতে নিয়ে উনাকে বলতে থাকি-

-দূ..রে যাও ! দূ..রে যা..যা..ও বলছি ! আমা…কে যে…তে দাও, বলছি ! না..হলে আমি এই ছুড়ি দি..য়ে তো..মাকে খুন ক..রে..রে ফেলব ! দূরে যা..ও ! যে..যেতে দাও আমাকে !
-ছুড়ি ফেলে দাও জানু!! এসবের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। তুমি আজ আমার কথামতো না চললে আমি যে তোমার সওওবকিছু শেষ করে দিব!!
-মা..নে?
-মানে হলো তোমার বাবা আর আমার ছোট খালুজান যে বিপত্তের মধ্যে পড়ে যাবে।।
-কী বলতে চাইছো তুমি!
-প্রাণপ্রিয় খালুজানকে কাল আমি একটা সুন্দর দেখে চেইন গিফট করেছি।। দেখছো না??? অনেক সুন্দর না বলো??? ওহহো তুমি তো দেখোনি!! সাঈদের সাথে ওয়াশরুমে ছিলে…তাইনা???
-কি বলতে চাইছো সোজাসাপ্টা বলো !
-ইয়াহ্..রাইট, বেবি!! মেইন কথায় আসি। সবাই পার্টিতে খাবারের জন্য ব্যস্ত ছিলো আর আমি এই ফাকে খালুকে গলার একটা লকেট চেইন গিফট করি।খালু সেটা পড়েও নেয় আমার রিকুয়েস্টে।। কেন গিফট করবো না বলো?? তোমার মতো একটা স্পাইসি টারকা দিয়েছে।। মনেকরো খালুকে চেইনটা ওই হিসেবে গিফটট দিয়েছি! লকেটটায় না একটা ছোটখাটো চিপ আছে। এত্ত কিউটট!! তুমি চিপটা দেখলে বলবা, অন্নেক কিউট। ওই চিপটা একটা বারুদ!! ঠিক তোমার মতো!!
-কি আছে চিপটায় ! কি করতে চাইছো তুমি বাবাকে!
-রিল্যাক্স রিল্যাক্স..চিল সুইটি!! সব বলব তো। বি পেসেন্ট বেবি!! তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। যদি কাজটা করো আর নিজেকে কথামতো সপে দাও তাহলে আমি তোমার বাবা এন্ড মাই খালুকে ছেড়ে দিব।কিছু করবোনা। আর যদি না করো তাহলে চিপটা ব্লাস্ট হবে….”বুমমম”
-বিশ্বাস করি না আমি তোমার কথা ! তোমার মতো নিকৃষ্ট ব্যাক্তির কোনোকিছু আমি বিশ্বাস করি না!
-কুল!! তো প্রুফ লাগবে তাইতো?
-হ্যাঁ ! সচক্ষে প্রমাণ দেখব!
-ওকে। ওয়েট।

বলার সাথেসাথে দিপভাই তার ফোন পকেট থেকে বের করলেন। ফোনে কিছু করার পর আমার দিকে ফোনের স্ক্রিন উপর করে তুলে ধরলেন।ফোনের স্ক্রিনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিকেল চারটা পযর্ন্ত বোমের টাইমার সেট করা। টুট টুট করে সময়ের সেকেন্ড চলে যাচ্ছে। আমার তাকিয়ে থাকা দেখে ফোন নামিয়ে বন্ধ করে পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন। আমার থ হয়ে যাওয়া দেখে ভাই বললেন-

-ডোন্ট ওরি বেব্। কাজটা ছোটখাটো। খুব ছোট। এইটুকু।
-কি কাজ?
-নাও ইটস মাই গুড গার্ল!! কাজটা হলো জুনায়েদ সাঈদ…দাড়াও একটু কেশে নেই…এহেম এহেম…হুম এখন ঠিকঠাক। জুনায়েদ সাঈদ ওরফে আমার ভাইজান। আমার দুইবছরের বড় হ্যান্ডসাম ডেসিং ভাইয়ুটা। সবার আদরের আর তোমার লাভারর। ওকে জাষ্ট গ্রিন পয়েন্ট পাহাড় থেকে একটু ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবা। এই, এইটুকি কাজ।
-অসম্ভব! আমি মরলেও তোর মতো বজ্জাতের কথা মানবো না!
-উহু, তুই করে ডাকবে না। প্রেসটিজে লাগে তো জানু!! তুমি করে ডাকো অনেক মধুর লাগে।।।
-তোর কান খোলা রেখে শোন ! তুই এতোই বলদ যে নিজের হাতে সাঈদ ভাইকে কিছু করার সাহস পাচ্ছিস না ! তুই শুধু চিন্তা কর, আমি যদি তোর আসল ঘটনা সাঈদকে জানাই, তোর কলিজা তোর সাথে থাকবে কিনা ! এখনো সময় আছে ! ভালো হ।
-ওউফফফ!! আই লাইক দিস এটিটিউড জানু!! তুমি যে জলজ্যান্ত একটা বোম !! কবে একটু ধরে দেখব!
-সাঈদের সামনে বলিস!
-ওয়াও! “সাঈদ ভাই টু সাঈদ” ! ফাটাফাটি!! বাট কষ্ট! সাঈদ তো আর বাচবেনা।
-আমি তোর কথা মানবো না!
-বাটন ক্লিক করলেই কিন্তু…..
-কর!
-সিউর! করলে কিন্তু শেষ!
-আমি জানি তুই মিথ্যা বলছিস!
-আচ্ছা আচ্ছা, এখন বুঝলাম। আমাকে সিরিয়াসলি নেওয়া হচ্ছে না এটাই তো? ওয়ান মিনিট!

দিপ ভাই আবার পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন বের করে কিছু একটা অন করে যা দেখাল আমি একদম অবাক ! ফিমা আপুর বাথরুমে গোসল করার ভিডিও ধারন করা হয়েছে। কখন করেছে এসব!

ভিডিও অফ করে আবার জোরে জোরে হাসতে লাগল দিপ ভাই। আমার হা হয়ে থাকা দেখে উনি বললেন-

-ফিমা না তোমার মতো হট না।। এজন্য ভাবছি এটা ভাইরাল করে দিব।কি বলো?? জানু!!
-নাহ্ প্লিজ! বড় আপুর এই ভিডিও ডিলিট করে দেও!! হাত জোর করছি দিপ ভাই!
-একশর্তেই। কিন্তু সেটা তো বলে দিয়েছি।।
-প্লিজ ভাইয়া, সাঈদ ভাই তোমারও ভাই হয়। আমার হাতে এমন কিছু করতে বলো না!
-ভাই ! হাসালি আমাকে ফিহা। ওর মতো ভাই যেনো দ্বিতীয় কারোর ঘরে না হয়! ছোট থেকে ও আমার সবকিছু শেষ করেছে ! বড় হয়েও আমার পিছু ছাড়েনি! ওর মতো কাউকে আমি ভাই ডাকব। ইম্পসিবল ফ্যাক্ট! কাজ করবি! ইয়েস অর নো!
-……………………………
-আই সেইড ইয়েস অর নো!
-হ্যাঁ..
-সে লাউড বেবি!!শুনতে পারছিনা।।
-হ্যাঁ হ্যাঁ আমি করবো, আমি করবো !

.

.

দিপ ভাইয়ের কথামতো সব করলাম। সব।। তোমাকে মেরে ফেলা, আপুর মান-ইজ্জতের নিলামি, বাবার যেকোনো সময় অঘটন – আজ এই তিনটের টানাপোড়নে আমি ঠিক নেই সাঈদ ভাই! আমি ঠিক নেই! দিপ ভাইয়ের মনে তোমাকে নিয়ে জমানো এত ক্ষোভ কেন তুমি বুঝতে পারলেনা সাঈদ ভাই!! কোন ভুলের মাশুল আজ আমি তুমি সহ্য করছি!!

.

.

বরযাত্রি কনে নিয়ে শানশওকতে ফিরে এসেছে। বড় খালামনি সাঈদ ভাইয়ের কোনো খোজ পাচ্ছেননা তা সবাইকে না বুঝতে দিলেও নানা কাজের মধ্যেও বারবার ফোন হাতে তাকে কল করে যাচ্ছেন। বড় আপু খুব হাসি-ঠাট্টায় মজে আছেন নতুন ভাবির সাথে। আম্মু আর মেজো খালামনি নানারকম ঐতিহ্যবাহী নিয়মকানুন পালন করছেন নতুন বউ আর বর নিয়ে। মুখোশের আড়ালে ঢেকে আছেন আমাদের এ বিয়ে বাড়ির প্রথম আকর্ষণ “দিপ” ভাই। নতুন বউ বাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে, দিপ ভাইয়ার ফুপির ফ্যামিলির পচিশজন সদস্য “বিয়ের কার্যাদি শেষ” বলে প্রস্থান করেছেন। বৌভাতে নাকি উনারা থাকতে পারবেন না। বাকি আছে শুধু দিপ ভাইয়ের চাচার ফ্যামিলির সদস্য। কাল বৌভাত শেষে তারাও বিদায় নিবেন। বড় খালু মানে সাঈদ ভাইয়ের আব্বুর ছুটি শেষ বিধায় আজ রাতেই আর্মির হেড কোয়াটারে যাওয়ার জন্য রওনা দিবেন। বলতে গেলে বাড়ি খালি হয়ে যাচ্ছে। আজ রাতে দিপ ভাইয়া কি করবেন, না করবেন, উনি জানেন।

দিপ ভাইয়ার বউকে বাসর ঘরে পাঠানো হয়েছে। নতুন ভাবি খুব সুন্দর। ভাবির সাথে সব ভাইবোন মজা করতে চলে গেছে। নিচে সোফার গদিতে শুধু দিপ ভাই বসে আছেন। বড়রা সবাই কালকের বৌভাতের কাজ সেরে নিচ্ছে। আমাকে দুরে দাড়ানো দেখে ভাই ইশারায় ডাকলেন। আমি মনমরা করে উনার থেকে দুহাত দূরে দাড়ালে দিপ ভাই বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে আমার কানের কাছে ঝুকে বললেন-

-বাসর কোনটাকে নিয়ে করি, বলতো?? তোকে নিয়ে নাকি নতুনটাকে নিয়ে??

দিপ ভাইয়ের কথায় আমি ঠাই মেরে চোখ শক্ত করে চুপ মেরে আছি। ভাই আবার বললেন-

-চুপ করে থাকিস না ফিহু বেবি!! নাহলে আগে তোর সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে হবে!
-লজ্জা থাকা উচিত !
-এক কাজ করি !! রাতে নতুনটাকে পানির মধ্যে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে ঘুম পাড়িয়ে তোর কাছে চলে আসব!!
-উপরে একজন আছে তো। সবকিছু উনার উপরেই ছেড়ে দিলাম। সাঈদ ভাইকে তো শেষ করে দিয়েছোই, এখন আমাকে নিয়ে কোন্ ছল-চাতুরি করবে সেটা তোমার ব্যাপার।
-বি রেডি বেব্বি!!! রাতে আসছি!!

.

.

আজ বাড়িতে মানুষ কম বলে রুম অনেকগুলোই ফাকা। এজন্য আর গাদাগাদি করে শুতে হয়নি। আমি স্নেহা আর ভাবিদের সাথে না থেকে আলাদা ভাবে অন্যরুমে দরজা লাগিয়ে শুয়ে আছি। কখন যে দিপ নামের হিংস্র হায়েনা আসবে, জানি না। ভয় নেই।কি আর করবে? শেষমেশ নিঃশেষ করে দিবে। সাঈদ ভাই নেই, ভয়ও নেই। এতদিন ভাই কোনো না ভাবে আগলে রেখেছিল। কিন্তু সেই বাচানোর হাত আর নেই। দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হচ্ছে। হয়তো বিপদ এবার সম্মুখে চলে এসেছে। দরজায় নব লাগিয়ে শুয়ে আছি। দেখি কতক্ষন কি করতে পারে। কিন্তু আজ আমি দরজা খুলবো না। যদি সে লক খুলে ভেতরে আসতে পারে তবেই আজ তার জয়।

হঠাৎ দেখি নব খুলে যায়। আমি শোয়া থেকে উঠে দাড়াতেই দেখি দিপ ভাই দরজা খুলে ফেলে। দরজা খুলে আমার দিকে বীভৎস এক হাসি দেয়। তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি চাবি।তার মানে এক্সট্রা চাবি দিয়ে এ রুমের দরজা খুলে ফেলেছে। সে আমার রুমে এক পা দিবে তার আগেই মেইন ডোরের দিকে কলিং বেল বেজে উঠল। দিপ ভাই থেমে দরজার দিকে উকি দিচ্ছেন। দেখেন সব নিরিবিলি, সবাই নাক ডেকে বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন।বেলের আওয়াজ কারোর কানে যায়নি। মেইন দরজা খুলে কে এসেছে দেখার মানুষ নেই। জেগে আছেন শুধু দিপ ভাই আর আমি।

কলিং বেলের আওয়াজ আবার বেজে উঠল। এবার দিপ ভাই আমাকে উপেক্ষা করে দরজা খুলে দেখতে গেলেন, কে এসেছে এতো রাতে।। আমি ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে। এজন্য বিছানা ছেড়ে আমিও পিছু পিছু দেখতে গেলাম কে এসেছে। দিপ ভাই মেইন দরজা খুললে দেখি একটা কুরিয়ার বয় টাইপ কেউ কিছু দেয়ার জন্য এসেছেন। আমি যেয়ে কিছুটা দূর থেকে দেখতে থাকি কি দিচ্ছে। দেখি একটা খাম দিয়ে ছেলেটা চলে যায়। দিপ ভাই দরজা লাগিয়ে খামটার একটু অংশ ছিড়ে ভেতর থেকে একটা কাগজ বের করে পড়তে থাকেন। তিন চারটা কাগজ ছিলো, সবগুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে পড়ে দিপ ভাই এতো খুশি হলেন যেন সোনায় সোহাগা টাইপের কিছু পেয়ে গিয়েছেন। উনি আমাকে না দেখেই খুশি আর ফুরফুরে মনে উচ্ছাস প্রকাশ করতে লাগলেন। আমি কিছুটা আশ্চর্যজনক বিষয় দেখে দিপ ভাই হাত থেকে কাগজ নিয়ে পড়তে লাগলাম। দিপ ভাই এখনো “আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে ” গেয়ে গেয়ে নাচছেন।

পুরোটা কাগজপত্র পড়ার পর যা বুঝলাম এটা নানুবাড়ির পক্ষ থেকে নাতি-নাতনিদের জন্য উপহার হিসেবে দেয়া কিছু সম্পত্তির কাগজ। সাঈদ ভাই, দিপ ভাই,ফিমা আপু আর আমাকে দেয়া কিছু অংশ।নানা বলেছিল যেদিন দিপ ভাই বিয়ে করবে সেদিন তিনি উপহারস্বরুপ ব্যাংকে টাকা কিছু অর্থ আর জমি দিপ ভাইয়ের নামে দিয়ে দিবেন। নানা-নানু চিকিৎসার জন্য বিদেশ আছেন বলে বিয়েতে আসতে পারেনি, এজন্য সময় মতো উপহার ঠিকি পাঠিয়ে দিয়েছেন। দিপ ভাই হাসিখুশি আমার হাত থেকে কাগজ নিয়ে তার রুমে দোতলায় চলে গেলেন। আর সিড়ি দিয়ে যেতেই বললেন-

-আজ আমার মুড অনেক ভালো!! এজন্য তোকে ছেড়ে দিলাম।। কিন্তু কাল ঠিকই আসবো!!! রেডি থেকো ফিহা।।।

-চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *