সবসময় কি এমনই হয়

সবসময় কি এমনই হয় !! Part- 03

_আসসালামুয়ালাইকুম আব্বা!
ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আহমাদ সাহেব। তারপর বললেন,
_ওয়ালাইকুমুস সালাম! কে? ফারহান না!!
_জি আব্বা! কেমন আছেন আপনি?
আহমদ সাহেবের ভ্রু আরো বেশি কুঞ্চিত হয়ে গেলো। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ফারহানের দিকে।
_অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আমাদের বাসায় শশুরকে আব্বাই ডাকা হয়। তবে আপনি বললে আমি বাবা, আব্বু, পিতাজি, বাপ যা বলবেন তাতেই রাজি।
আহমদ সাহেব কিছুটা সময় নিলেন। তারপর কঠোর সূরে বললেন,
_কবে থেকে এসব??
_এক বছর।
_ফারিয়াও কি তোমাকে পছন্দ করে??
_মনে হয়। আবার হয় না। তবে বেশিরভাগ সময় আমার মনে হয়, যে ও আমাকে ভালবাসে। কিন্তু বলতে পারে না। আপনার ভয়ে……….।
_তুমি আমাকে হাসালে বাবা। ফারিয়া কোনদিনই এরকমটা করতে পারে না। ওকে আমি এমন শিক্ষা দেইনি। বাদ দাও।রাশেদ ভাই জানে?
_বাবাকে রাজি করা কোন ব্যাপার নাকি!
_ফারহান!! আমার মেয়ে এখনো ছোট। আর তুমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকো, ও তোমাকে ভালবাসে না। আর ভালোবাসবেও না।
_আচ্ছা! আচ্ছা!! তাহলে আপনার দিক থেকে কি আমি ওকে??
আহমদ সাহেব মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে নিজ গন্তব্যে হাঁটা ধরলেন। পেছনে ফিরেও চাইলেন না।
ফারহান ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগলো। তার মেজাজ খারাপ হয়ে আসছে। কুল……… কুউউল। তাকে শান্ত হতে হবে‌। ধীরে সুস্থে সব করতে হবে।

🖤

_বাবা আমি চাকরি করতে চাই!!
_কি!!! আচ্ছা। আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি!
_না আমার চাকরি আমি নিজেই খুঁজে নিব।
_কি বলছিস্ এগুলো!! এনি প্রবলেম?
_নাহহ!! কিছু হয়নি। তাহলে তুমি পারমিশন দিচ্ছ??
_তোর ইচ্ছা।
_থ্যাংক ইউ বাবা। লাভ ইউ!

🖤

রিয়া………রিয়া!! ওপেন দা ডোর! প্লিজ!!
ফারিয়া ঘুমিয়েই পড়েছিল। ফারহানের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল ওর‌। কিন্তু নড়াচড়া করলো না। ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে গিয়ে বারান্দার দরজাটা খুলে দিতে। কিন্তু তা তো ও করতে পারে না। ওকে শক্ত হতে হবে………. অনেক শক্ত।

ফারহানের সাড়াশব্দ নেই। ও খাটে উঠে বসলো। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারল না। দু হাতে মুখ ঢেকে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো ফারিয়া। এ ছয় দিনেও বুঝতে পেরেছে‌, যে ও ফারহানকে কতটা ভালোবাসে। একটা বার দেখার জন্য অধীর হয়ে ছিল ও। আর আজ কাছে পেয়েও……………।

হঠাৎ খুট করে একটা শব্দ হলো। হা হয়ে খুলে গেল বারান্দার দরজা‌। ফারহান দরজার লক খুলে ফেলেছে। তাড়াতাড়ি করে ও উরনায়‌ চোখ মোছার চেষ্টা করতে লাগলো। চোখের জল আড়াল করতে চাইলেও পারল না ফারিয়া। ফারহান প্রায় ছুটে এল ফারিয়ার কাছে।
_হোয়াট হ্যাপেন্ড রিয়া!! কি হয়েছে তোমার! কাঁদতেছো কেন?
_…………….……।
_বল কি হয়েছে?? আই জাস্ট কিল দেট গাইস, হু মেইড ইউ ক্রাই।
এবার ফারিয়া আর সহ্য করতে পারলো না ।ফারহান কে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে ফেলল।
ঘটনার আকস্মিকতায় ফারহান স্তব্ধ। কিছুক্ষণ পর সেও একহাতে ফারিয়াকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে।

কিছুটা ধাতস্ত হলে ফারিয়া নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। অন্যদিকে তাকিয়ে স্থির শান্ত কন্ঠে বলে,
_আপনি যান।
ফারহান দুহাতে ওর মুখ ধরে নিজের দিকে ঘোরায়।
_বল কি হয়েছে! আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি?? তোমার আব্বু তোমাকে মেরেছে বা বকেছে আমার কথাগুলোর জন্য!
_না।
_তাহলে??
_আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন?
_স্টাডি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছি। এন্ড ডান! চাকরি পেয়েছিও। সব তো তোমার জন্যই।
_মানে??
_এই যে আমি স্বাবলম্বী না বলেই তো আমাকে তোমাদের পছন্দ না।
_কে বলল?
_সব কথা কি বলা লাগে?? তোমাদের আচরণেই তো বোঝা যায়।

এ বিষয়ে আর কথা বাড়ালো না ফারিয়া। হুট করেই বলে উঠল,
_ভাইয়া…………… আই মিসড ইউ সো মাচ!!
ফারহান প্রচন্ড অবাক হলেও পরক্ষনেই হেসে উঠে।
_এই তুমি কি বিয়ের পরও আমাকে ভাইয়া ই ডাকবে?
ফারিয়া লজ্জায় পড়ে যায়। কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। ফারহান এবার ফারিয়াকে আলতো ভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। ফারিয়া দ্বিমত করে না। চুপ চাপ লেগে থাকে ফারহানের সাথে।
_জানো! তোমাকে জড়িয়ে ধরলে না আমার হার্ট অনেক ফাস্ট কাজ করে। অনেক দ্রুত।
_আপনাকে জড়িয়ে ধরলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।
হোয়াট? ফারহান ছেড়ে দেয় ফারিয়াকে।
_আই মিন হার্ট এত এত ফাস্ট বিট করে, যে ঠুস্ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
ফারহান হেসে দেয় আর বলে তাহলে তো তোমাকে জড়িয়ে ধরাই যাবে না!!
_………….….…..…………..
_আচ্ছা তুমি আমাকে কিভাবে ভালোবেসে ফেলে বল তো!! এক সপ্তাহ ও হয় নাই তুমি আমাকে সামান্য কারণে দুইটা থাপ্পড় মেরেছিলে। কিভাবে কি? আমি সত্যি বুঝছি না!
_আমি আমি আপনাকে আরো আগে থেকেই ভালোবাসি। শুধু বলতে পারিনি। বলব কি! আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি বোঝার পর আমার নিজের উপরই অনেক ঘৃণা লাগছিল!
_আমি আগেই গেস করেছিলাম যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।
_……………..…………….।
_আচ্ছা ! ঘৃণা লাগছিল…….নিজের উপর…. ঠিক বুঝলাম না! ঘৃনা লাগবে কেন??
_………………….।
_আচ্ছা বাদ দাও। ও….. রিয়া!!
_জি?
_তোমাকে কি একটা চুমু খেতে পারি!! প্লিজ!
………………………
(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *