সবসময় কি এমনই হয় !! Part- 04
_তোমাকে একটা চুমু দেই কপালে?
_ছিঃ না নাহ!!
_ছি ছি করার কিছুই নেই। একটা চুমুই তো।
_কোথায়??
_ভয় পাচ্ছো আমি অতটাও খারাপ না। কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিব জাস্ট।
_ইসসসস্।
_ন্যাকামো করতেছো কেন? অবশ্য, তোমার কপালে আমার চুমু খাওয়া আগেই ডান!
_কি!! (চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে)
_স্টপ ইট রিয়ুওও! এ ভাবে তাকিও না। শুধু চুমু না আস্ত তোমাকেই না গিলে ফেলি।
গফ কে পানিবিহীন তার বফ গিলে খাওয়ায় পেটের ভিতরে পানিশূন্যতায় গফের মৃত্যু। কালকের খবরের হেডলাইন টা কল্পনা করেই শিউরে উঠলো ফারিয়া।
_কোথায় হারিয়ে গেলা! প্লিজ!!
ফারিয়ার দ্বিমত করল না। মাথা নাড়ে হ্যা বোধক উত্তর দিল।
ফারহান ফারিয়ার আরেকটু কাছে এগিয়ে গেল। মাথার পেছনে হাত দিয়ে ওকে আর একটু নিজের কাছে টেনে আনলো। ফারিয়া চোখ বুজে নিল। ফারহান নিজের ওষ্ঠদ্বয় ফারিয়ার কপালে শান্ত কিন্তু দৃঢ়ভাবে স্থাপন করে সশব্দে চুমু দিল তারপর ওকে ছেড়ে দিল। ফারিয়ার গাল টুকটুকে লাল হয়ে গেছে। লজ্জায় ফারহানের দিকে তাকাতে পারছে না।
_ব্যাস ব্যাস এইটুকুতে এত বেশী লজ্জা পেতে হবে না।
_………………………
_আমি এখন যাই! কি বল? একটা বেজে গেছে প্রায়!!
_………………………..
_আচ্ছা আমি গেলাম। বা বাই!!
এতক্ষণে ফারিয়া চোখ তুলে তাকায়। তড়িঘড়ি করে বলে উঠে ,
_আল্লাহ হাফেজ ভাইয়া!!
ফারহান ধমক দিতে গিয়েও হেসে দেয়। অপূর্ব সুন্দর হাসি। ফারিয়া লক্ষ করে হাসির সময় ফারহানের বাম গালে একটা গর্তের সৃষ্টি হয়। ফারিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ফারহান একটা ফ্লাইং কিস্ ছুঁড়ে দিয়ে গ্রিল বেয়ে নেমে যায়।
🖤
ফারহানের সাথে ফারিয়ার প্রেম বেশ ভালই জমে উঠেছে। প্রতি রাতে ফারিয়া ফারহানের অপেক্ষা করে। অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলে। গল্প করে। একজন আরেকজনকে ছাড়া কিছুই বোঝে না।
🖤
কাঠফাটা রোদে দাড়িয়ে আছে ফারিয়া। 30 মিনিট যাবত রাস্তার পাশে প্রচন্ড গরমে দাঁড়িয়ে থাকতে কারই বা ভালো লাগে!! তাও আবার বোরকা নেকাব পড়া। তবে ফারিয়ার কিন্তু মোটেও কষ্ট হচ্ছে না। এভাবে সে আরো এক যুগ দাঁড়িয়ে থাকতেও রাজি।
ফারিয়া সামনে এসে বাইকে করা ব্রেক কষলে ফারহান। নেভি ব্লু শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স অস্থির লাগছে ফারহানকে। শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বাইক থেকে নামল সে। মুখে চমৎকার একটা হাসি ঝুলিয়ে বলল,
_আমার কারটায় এসিটা ডিস্টার্ব দিচ্ছে। গরমের প্রবলেম হতো তাই…………। তোমার বাইকে কোন সমস্যা হবে না তো!!
_কেউ চিনে ফেললে খুব বড় ঝামেলা হয়ে যাবে।
_ধুর!! চিনবে কি করে? আমি ই তো চিনতে পারছি না…………..।
ফারিয়া চোখ সরু করে তাকাতেই ফারহান বলে উঠে,
_আরে কথার কথা বললাম আর কি! স্প্রিডে বাইক চালিয়ে নিলে কেউ আমাদের দেখতেই পাবেনা।
_কোথায় যাচ্ছি আমরা??
_সিক্রেট!! গেলেই দেখতে পাবা। নো টেনশন! তোমার ভালো লাগবে আমি জানি।
ফারিয়ার কথা না বাড়িয়ে বাইকে উঠে বসে, ফারহান থেকে কিছুটা ডিসটেন্স রেখেই।
বাইক এসে থামল একটা ঘাট বাঁধানো পুকুরের সামনে।
_এই আপনার সিক্রেট প্লেস!!
_কেন ভাল লাগেনি??
_…………………..
_কি ব্যাপার আজ তুমি এত চুপচাপ কেন?
_……………………..
_এনি প্রবলেম রিয়া??
_আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।
_কি? বল।
_আমি না কাণ্ডজ্ঞান’ হারিয়েছি। আপনাকে ভালবেসে আমার বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। আমি তো আগে এমন ছিলাম না। রাতে পর পুরুষের সাথে কথা বলি! লুকিয়ে আসি দেখা করতে! কতটা খারাপ!! কত নিচে নেমেছি আমি!
_কি বলছো এগুলো!!
_গুনাহহ! অনেক গুনাহ হচ্ছে।
_গুনাহ??রিয়া! তুমি কি বলতে চাও যে, আমি তোমাকে ছেড়ে দিই? তোমার কথা ভূলে যাই? গুনাহ হবে বলে!!
ফারিয়া কখনোই বাসার সামনে খোলামেলা স্থানে নেকাব খুলে না। কিন্তু ও হঠাৎ নেকাবটা খুলে ফেলল আর বলল,
_ছাড়তে বলব? আমি নিজেই তো পারছি না। প্রচন্ড ভালোবাসি আপনাকে! প্রচন্ড!! কিন্তু এরকম ভালোবাসা ঠিক নয়। বাবা কখনোই আমাকে আপনার সাথে বিয়ে দিবেনা।
_কেন দেবে না! কেন?? বিয়ে তো করবোই। দরকার হলে…………..
_দরকার হলে কি! আপনার পাওয়ার এর অপব্যবহার করবেন? আমি এটা চাই না…….. আমি চাই আপনি জাস্ট একটু ভালো হয়ে দেখান।একটু ভালো……. প্লিজ!
_ভালো মানে? আমি কি খারাপ!!
_ভালো বুঝেন নাই! নিয়মিত নামাজ পড়বেন, রোজা রাখবেন, যাকাত দিবেন, ভালোমতো চলবেন, ভালো কাজ করবেন…………
_বুঝলাম। ভালো! ভালো হলে তারপর?
_তারপর কি আমি এনি হাউ বাবাকে বুঝিয়ে বলব। যাইহোক আমি বাবাকে কষ্ট দিতে পারব না। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর তিনিই তো আমাকে………..
_আচ্ছা! তোমার ইচ্ছা। তুমি যা বলবে তাই হবে।
🖤
ফারহান ফারিয়াকে তাদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়। বাড়ির ভেতরে ঢোকার আগে ফারিয়া ফারহানকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। তারপর শান্ত হয়ে বলে…………,
_জানি কষ্ট হবে তারপরও সব ঠিক হওয়ার আগে আমরা আর দেখা করছি না।
_হোয়াট?? রিয়া! আই কান্ট……………
_প্লিজ! আপনি যান!! ভালো থাকবেন।
_রিয়া শুনো তো………….
ফারিয়া দৌড়ে ঘরের ভেতর চলে গেল। ফারহানের চোখ দিয়ে পানি আসতে চাইল। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলে আমি পারবো না………পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। তারপরও সে নিজেকে সামলে নিয়ে বাইক ঘুরিয়ে নিল নিজের গন্তব্যের দিকে। এদিকে ফারিয়া নিজের রুমের দরজা আটকে দিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগল।
(চলবে)