প্রেমে পড়া বারণ !! Part- 07
বাসা ভর্তি মানুষ।
প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে ভালো করে দেখলাম, রিয়াদ ভাইয়া দেখতে মাশা-আল্লাহ!! মাহি আপুর সাথে অনেক সুন্দর মানিয়েছে।উনার সাথে কথা বলেও ভালো লাগলো।অনেক মিশুক একজন মানুষ। শুধু উনি নন।উনার ফ্যামিলির সবাই অনেক মিশুক।
মাহি আপুর সাথে উনাদের ফ্যামিলিরও অনেক ভালো সম্পর্ক। মাহি আপুর প্রেমের বিয়ে!! ইন্টার্নশিপ শেষ করেই বাসায় ফিরে এসেছে মাহি আপু। রিয়াদ ভাইয়াও ডাক্তার হবেন ভেবেছিলাম। কিন্তু উনি একজন সরকারি কর্মকর্তা!
মাহি আপু এতদিন চট্টগ্রাম থেকে এতো দূর এগিয়েছে! আমরা টেরই পাইনি! অবশ্য রেহান ভাইকে নিজেই জানিয়েছে।
মাহি আপুকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ফুপির বাসায় গেলাম। উনি হালকা সাজুগুজু করে রুম থেকে কেবল বের হবেন,তখনই আমি হাজির।
– কি? এভাবে কি দেখছিস?
– তোমাকে।।
– আমাকে জীবনে প্রথম দেখছিস? দেখ তবে, ভালো করে দেখ।
মাহি আপু একটা ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– দেখে তো মনে হয়না, কোনো দিন ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারো! তলে তলে এতো দূর।তুমি তো আসলে একটা মিচকে শয়তান!
ভেজা বিড়াল!
– যা ইচ্ছে বল,আজকে আর কিছু বলবো না।তবে তোর মুখটা দেখার মতো হয়েছিলো!! হাহাহা…..
– হাসবা না।তোমার হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার। এভাবে ভয় দেখালে!?আর নিলে তো নিলে রেহান ভাইয়ের নাম নিয়েই ধোঁকা দিলে!!
– তো! ভাইয়াকে তো আর বলিনি কিছু, দিয়া আর আমার প্ল্যান ছিলো। মামিকে কিছু বলতে দেইনি।আরিফ তো মাঝখান থেকে অর্ধেক কথা বলে আরও সহজ করে দিলো! শুধু বিয়ের শপিং বললো, কিন্তু কার বিয়ে সেটা তো বলেনি।তারপর ও আরও কিছু বলতো কিন্তু দিয়ার ইশারায় চুপ হয়ে গেছে।
– তোমরা তো মজা করেই খালাস!
আমি এখন রেহান ভাইয়ের সামনে যাবো কিভাবে?
– কিভাবে যাবি মানে? কিছু বলেছিস নাকি?
এই, তুই কি বলেছিস?
– তোমার আর শুনতে হবে না। তুমি যাও।উনারা অপেক্ষা করছে।
– হুম। যাচ্ছি যাচ্ছি।
কিন্তু…
– কিন্তু কি?
– কে যে কোথায় ডুবে মরে, সে খবর কি আমরা জানি না?
প্রেমের মরা জলে ডুবে না…..♪♪♪
ও প্রেম…. ♪♪♪
গান গাইতে গাইতে চলে গেলো!!
আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না।
কি বলে গেলো বুঝতে বাকি নেই আমার।
মাথা ধরে আছে। এতো মানুষের ভীড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। মাহি আপুর রুমেই শুয়ে আছি।।
কিছুক্ষণ পরে রেহান ভাই একটা ব্যাগ হাতে রুমে ঢুকলো।উনাকে দেখে আমি উঠে বসলাম। ব্যাগটা একপাশে রেখে বললেন -তুই একা এখানে কি করিস?
– আপনি ও আমার সাথে মিথ্যা বললেন?
– তুই ভালো করে জানিস আমি মিথ্যা বলি না।
– তাহলে ওইসময় কি বলেছিলেন?
– আমিতো তোর নাম বলিনি। যা বলেছি মাহির কথা বলেছি,মাহিকে হ্যাপি রাখবে। তবে হা,এটা ঠিক -তুই নিজের কথা বলেছিস দেখেও আমি শুধরে দেইনি।
– তাই, না?
– হুম।
– আর যে বললেন আমাকে বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বিদায় করার জন্য বিয়ে ঠিক করা হয়েছে!?
– এটাও তো সত্যি। তবে একটু ঘুরিয়ে আরকি..
মাহি বড়,অকে বিদায় না করে, তোকে বিদায় করা যাবে না।
– অনেক চালাক আপনি!
– এটা অন্তত আমাকে বলিস না।আমি খুব সোজাসাপটা মানুষ!
রেহান ভাই চলে গেলেন।
বিয়াদ ভাইয়ার সাথে উনার ভাবি,ভাতিজি,বোন,কাজিন সাব্বির,উষা,মামা-মামি,মামাতো বোন আনজুম,উনার বন্ধু অনিক,ইশতিয়াক এসেছে। সারা বাড়ি গমগম করছে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা!
সবার সাথে পরিচয় হয়ে গেছে। বিয়ে শপিং, ঘুরাঘুরি করে দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে।
রিয়াদ ভাইয়া বন্ধ ইশতিয়াক ভাইয়া,আনজুম আপু, দিয়া, আরিফ, উষা একসাথে বিকালবেলায় বাগানে গল্প করছিলাম।
হঠাৎ রেহান ভাই এসে বললেন – হিয়া একটু আয় তো।
মাহি আপু, রিয়াদ ভাইয়া, ভাবি এসে উপস্থিত তখন।। আমাকে উঠতে দেখে ভাবি( রিয়াদ ভাইয়া ভাবি) বললেন – আরে.. আমরা আসলাম, আর তুমি কোথায় যাচ্ছো?
– ভাইয়া ডেকেছেন। আপনারা গল্প করুন। আমি আসছি।
রেহান ভাইকে উনার রুমে পেলাম।।
– ডেকেছেন কেন?
– বস।।
উনি উনার টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বিজি।আমি বেডের একপাশে বসলাম।অনেক সময় বসে থাকার পরে বললাম
– আর কত সময় বসে থাকবো?
– তাড়া আছে তোর?
– তাড়া নেই, কিন্তু সবাই গল্প করছে….
– একটা কফি নিয়ে আয়।
উহহহ! আসছে মহারাজ! হুকুম করতে। মনে মনে বিড়বিড় করছি।
কফি এনে দিয়ে বললাম – আমি যাই এখন।
– অই, চিনি কি ঢেলে দিয়েছিস?
মুখে নেয়া যাচ্ছেনা!! বলেই..উঠে ফেলে দিলেন!!
-আরেকটা দিবি প্লিজ?? মাথা ধরে আছে।
আমি বোকার মতো চেয়ে আছি।রাগ উঠে গেছে। কি আর করার! আরেকটা কফি দিয়ে বললাম
– মিষ্টি ঠিক আছে। আমি খেয়ে দেখেছি।
– হুম।
কাজের ফাঁকে উনি উত্তর দিলেন – হুম!!
আগের টায় ও মিষ্টি ঠিকই ছিলো। কিন্তু উনার কাছে কেন জানি বেশি মনে হয়েছে।
– আর কিছু করতে হবে?
– না।।
– আচ্ছা। আমি গেলাম।
– শুন।
– জি..
– রিয়াদের সাথে মাহির বিয়ে হচ্ছে। উনারা আমাদের গেস্ট। কিন্তু রিয়াদের বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে থাকবি।।
– কেন? কি হয়েছে?
– কিছু হয়েছে বলেছি? এতো গল্প করার কিছু নেই। বড় হয়েছিস।
– আচ্ছা।
– কি আচ্ছা?
– বড় হয়েছি।
– হুম।
মামিকে,মাকে হেল্প কর।এখন ওখানে যাবার দরকার নেই।
– আচ্ছা।
কেমন লাগে!!! সবাই গল্প করছে আর আমি বাসায় কিচেনে পড়ে আছি।
এতো ঝামেলার মধ্যে আম্মু আমাকে পেয়ে খুশি হলেন। উনার এসিস্ট্যান্ট এর কাজ করছি!!
রেহান ভাই কেন যেতে দিলেন না,বুঝতে পেরে মনে মনে হাসছি!
উনি জেলাস এটা বেশ বুঝতে পারছি।
দেখতে দেখতে মাহি আপুর বিয়ে হয়ে গেলো।শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। দিয়া,আরিফ সাথে গেলো।তিন-চার দিন পরে মাহি আপু রিয়াদ ভাইয়া তারা আসলো।
মাহি আপু এবার আর আমাকে ভয় দেখায়নি,কিন্তু তারচেয়ে ও ভয়ংকর সংবাদ দিলো!
ইশতিয়াক ভাইয়া মানে রিয়াদ ভাইয়ার বন্ধু নাকি বিয়ের প্রপোজাল পাঠিয়েছে। রিয়াদ ভাইয়ার খুব পছন্দ ইশতিয়াককে।
ইশতিয়াক ভাইয়া ব্যাংকার। ভালো ফ্যামিলি।
প্রপোজাল নিয়ে আব্বু আম্মু বেশ সিরিয়াস।
ফুপির ও পছন্দ হয়েছে।
এবার বুঝি আমার বাঁচার উপায় নেই।রেহান ভাই হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলেন।
পরশু মাহি আপু চলে যাবে। আব্বু-আম্মু চিন্তা ভাবনা করছেন। সকালে সিদ্ধান্ত হবে। আব্বু আম্মু রাজি হলে মাহি আপু যাবে না,ইশতিয়াক ভাইয়ার ফ্যামিলির তারা দেখতে আসবে। খুব সম্ভবত এনগেজমেন্ট করিয়ে যাবে।
আমার ভেতর শুকিয়ে যাচ্ছে।
পরদিন সকালে আব্বু- আম্মু ফুপিকে নিয়ে কথা বলতে বসলো আব্বুর রুমে।
আমি ফুপির বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি রেহান ভাই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছেন।
বেশ গম্ভীরভাবে।
আমাকে দেখেই ডাকলেন – হিয়া, আমার রুমে আয় তো।
এমনিতেই টেনশনে দম বেরিয়ে যাচ্ছে তার উপর উনার ডাক শুনে হার্টবিট বেড়ে হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে!
রেহান ভাইয়ের রুমে যাবার পরে উনি দরজা টা লাগিয়ে দিলেন।
এবার মনে হয় আমি অজ্ঞানই হয়ে যাবো।
– তোর সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।
– বলুন।
মিনমিনিয়ে বললাম।
– আমি সোজা প্রশ্ন করবো সোজা উত্তর দিবি।
ঘাড় নাড়িয়ে সায় দিলাম।
– ইশতিয়াক বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, শুনেছিস নিশ্চয়ই।
– হুম।
– বিয়ে টা করবি?
– না।
কিছু সময় চুপ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে থেকে, আমার কাছে এসে দুইহাতে আমার হাত শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করলেন
– ভালোবাসিস? বিয়ে করবি আমাকে?
উনার মুখে এই কথা শুনে আমি মনে হয় কথা বলাই ভুলে গেছি।মুখ থেকে কিছু বের হচ্ছে না।
– কি হলো? জবাব দিচ্ছিস না কেন? দেখ এখন যদি চুপ করে থাকিস, তাহলে পরে আফসোস করে লাভ হবে না।
এবার কিন্তু কেউ মজা করছে না তোর সাথে!
– করবো।
– চল আমার সাথে।
– কোথায়?
রেহান ভাই কিছু না বলে আমাকে নিয়ে সোজা আব্বুর কাছে গেলো।
– মামা, মামি,মা তোমরা সবাই এখানে আছো।তোমাদের কিছু কথা বলতে চাই।
– কি কথা বল…
– মামা,আমি হিয়াকে বিয়ে করতে চাই।
তোমাদের কোনো আপত্তি আছে?
আমি রুমের ভেতরে ঢুকিনি, জোর করে দরজা বাইরে থেকে গেছি। উনার কথা শুনে আমার ভীষণ লজ্জা করছে।
কি নির্লজ্জের মতো সবার সামনে বলে দিলো!
আব্বু বললো – এটা তো খুব ভালো কথা, রেহান।
ফুপি বললো – আল্লাহ, আমার ছেলের সুমতি হয়েছে। বাবা আমি অনেক খুশি হয়েছি।
বাড়িতে হইচই লেগে গেছে!
চলবে….