স্বীকৃতি

স্বীকৃতি !! Part- 08

বৃষ্টির কারণে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা ফারাজের মুখটা। কিন্তু ফারাজ কে চিনতে ভুল করতেই পারেনা খুশবু।
খুশবু ছুটতে লাগলো। এই পথ যেনো শেষই হচ্ছেনা। ফারাজ গায়েব হবার আগেই যেনো তার পৌঁছতে হবে।
ড্রয়িংরুমে আসতেই হঠাৎ কেউ খুশবুর শাড়ির আঁচলটা পেছন থেকে টেনে ধরলো। দাঁড়িয়ে পড়লো খুশবু। পেছনে কে না দেখেই বললো-
আজ কেউ আটকাতে পারবেনা আমায়। যাবোই আমি।
-এই বৃষ্টির মাঝে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?
.
আরহামের গলার স্বর শুনে পেছনে ফিরে তাকালো খুশবু।
খালেদা শারমীন ও খুশি এসে পড়লো।
খুশি বললো-
কই যাচ্ছিস রে আপু?
.
কিছু না ভেবেই অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বললো সে-
ফারাজ এসেছে।

খুশবুর কথা শুনে খুশি ও খালেদা শারমিন একে অন্যের মুখের দিকে তাকালো।
এ কি বলে ফেললো খুশবু!
খুশি মুখে হাসি এনে বললো-
ফা..ফারাজ! ও আমার বন্ধু হয়। আমার না ঠিক, আমাদের।
.
আরহাম বুঝতে পারলো পরিস্থিতি টা
কিন্তু ফারাজের এই মুহুর্তে এই বাসায় আসাটা মোটেও ঠিক হবেনা। ফারাজ যদি এসে এখানে ঝামেলা সৃষ্টি করে! খুশবু ও তার পরিবারকে ছোট হতে হবে। আর সে এসব চায়না। যে বিষয়টা তারা লুকোতে চেয়েছিলো সেটা এভাবে সামনে আসুক এটা সে চায়না। কি দরকার এসবের মাধ্যমে ছোট করে তাদের? মেয়ের সুখই তো চেয়েছে তারা।
খালেদা শারমিন বললেন-
রুমে যা মা।
.
খুশবু বললো-
ফারাজ ভিজছে বৃষ্টিতে।
-তুই ভুল দেখেছিস।
-আমি ভুল দেখিনি।
.
কথাটি বলেই খুশবু ছুটে গেলো।
আরহাম সবার উদ্দেশ্যে বললো-
আমি আছি ওর সাথে। আপনারা এখানে থাকুন।
.
খুশবুর পিছুপিছু আরহামও ছুটে এলো মেইন গেইটের দিকে। কিন্তু দেখতে পেলোনা কাউকে।
খুশবু এদিক ওদিকে ছুটেছুটে খুঁজতে লাগলো ফারাজ কে।
আরহাম কিছু বলছেনা। চুপচাপ দাঁড়িয়ে সে খুশবুর কান্ড দেখে চলেছে।
একপর্যায়ে নিজেই হাপিয়ে উঠলো খুশবু। অসহায় দৃষ্টিতে আরহামের দিকে তাকালো সে।
আরহাম বললো-
আপনি হয়তো ভুল দেখেছেন। ভেতরে চলুন।
-কিন্তু…
-সে আসলে তো ভেতরে আসবে। তাইনা?
.
চুপচাপ খুশবু এগুতে থাকলো আরহামের সাথে।
.
ভেতরে আসতেই খালেদা শারমিন বললেন-
নিশ্চয় অন্য কাউকে ফারাজ ভেবেছে খুশবু, তাইনা?
.
আরহাম বললো-
সেখানে কেউই ছিলোনা।
-ওহ! আসলে ফারাজ ওর খুব ভালো বন্ধু। তাই খুশবু এভাবে রিয়াক্ট করেছে৷ তুমি কিছু মনে করোনি তো?
-না।
.
রাগান্বিত দৃষ্টিতে খুশবু তাকালো তার মায়ের দিকে।
খালেদা শারমিন খুশবুর লাল চোখ জোড়া দেখে বললেন-
ভেতরে গিয়ে শাড়িটা বদলে নে৷ ঠান্ডা লেগে যাবে।
.
.
খুশবু রুমের ভেতরে এসে বারান্দায় ছুটে আসলো। দেখতে লাগলো মেইন গেইটের দিকে। ফারাজকে যদি আরেকটা বার দেখা যায়!
আরহাম ব্যাগ থেকে খুশবুর একটা শাড়ি বের করে নিলো। তোয়ালে টাও হাতে নিলো সে। এগিয়ে এলো বারান্দায়।
এসেই খুশবুর ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে তার ভেজা চুলগুলো মুছতে শুরু করলো সে।
খুশবুর সেদিকে ধ্যান নেই৷ এক মনে তাকিয়ে আছে সে বাইরের দিকে।
একটু পরেই আরহাম বললো-
শাড়ি টা কি নিজেই চেইঞ্জ করতে পারবে নাকি আমাকে হেল্প করতে হবে?
.
আরহামের কথাতে ঘোর কাটলো খুশবুর। বিরক্তি ভরা কন্ঠে সে বললো-
আমি পারবো।
.
খুশবু এগিয়ে যেতে চায়লে থেমে গেলো আরহামের ডাকে।
পেছনে ফিরে বললো-
বলুন?
-তুমি করেই ডাকবো আজ থেকে। আপনি বললে তোমার বাড়ির লোকেরা মাইন্ড করতে পারে। তোমার এতে কোনো সমস্যা নেই তো?
-নাহ। তবে আমি আপনি করেই ডাকবো।

খুশির ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো অনন্তের ফোন এসেছে। রিসিভ করেই খুশি বললো-
তোমার নাকি খুশবু ফেবারিট! সেই কখন জানালাম আপু এসেছে। এদিকে তোমার আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। এক সাথে আড্ডা জমাতে পারতাম আমরা!
-আমি তোমাকে একটু আগেও বলেছি খুশি, আমি বাইরে আছি একটা দরকারে। এই মাত্রই এলাম বাসায়। ফ্রেশ হয়ে আসবো। খুশবুরা তো কিছুদিন থাকবে, তাইনা?
-হ্যাঁ।
-ঠিক আছে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
.
.
.
আফসানা তার মায়ের রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটু আগেই ফাহিম জানালো, তার মা তাড়া দিচ্ছে বিয়েটা নিয়ে। আফসানারও এতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বাসায় এটা সে কিভাবে বলবে? ফাহিম কি পারছেনা তার ভাইকে বলতে!
.
-কিরে আফসু? মুখটা ওমন ফ্যাকাশে করে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
.
মা এর প্রশ্নে কাচুমাচু করে আফসানা জবাব দিলো-
একটা কথা বলতে এসেছি।
-বল?
-আসলে ফাহিম ভাই চাচ্ছে সরি উনার মা চাচ্ছেন বিয়েটা যেনো দ্রুত সম্পন্ন হয়।
-ওহ এই ব্যাপার! ঠিক আছে আমি তোর বাবার সাথে কথা বলবো।
-হু।
-শোন?
-কি?
-ফাহিম ভাই কিরে! শুধুই ফাহিম। ঠিক আছে?
.
খানিকটা লজ্জা পেয়ে আফসানা বললো-
হু।
.
.
.
চোখটা লেগে এসেছিলো খুশবুর। কিন্তু খুশির ডাকে উঠে পড়লো সে। খুশি তাকে টানতে টানতেই ড্রয়িংরুমে নিয়ে এলো। অনন্ত কে দেখিয়ে বললো-
আজ আমরা সবাই গল্প করবো।এমন বৃষ্টির মাঝে আমরা কতো গল্প করেছি মনে আছেরে তোর আপু? বাদাম ভেজে খেতে খেতে তিনজন বসে ফিল্ম দেখেছি কতো!
-হু, মনে থাকবেনা কেনো!

খুশবু বসলো খুশির পাশে।
আরহাম আগে থেকেই বসে ছিলো অনন্তের পাশে।
খুশবু আসাতে গল্পের আসর যেনো মেতে উঠলো। তবে সব কথা খুশি আর অনন্তই বলে যাচ্ছে। খুশবু নিশ্চুপ থাকলেও আরহাম তাদের কথায় মজাই পাচ্ছে।
একপর্যায়ে ফোনটা বেজে উঠলো আরহামের। ফাহিম ফোন দিয়েছে। আরহাম উঠে একটু আড়ালে গেলো ফোনে কথা বলার জন্য।
-হ্যালো ফাহিম?
-শালা তুই নাকি শ্বশুড়বাড়ি?
-হু।
-ইশ আমি কবে যাবো!
-বিয়ে তো কর।
-কিন্তু তোর বোনের মন এখনো আমাতে আটকে নিরে।
-কেমনে বুঝলি?
-উদাস থাকে সে। তাই তাকে পটানোর চেষ্টা করছি।
-ভালোই!
-আমি এখন শাড়ির দোকানে আছি একটা। তোকে কয়েকটা শাড়ির ছবি দিচ্ছি। আফসানার জন্য কোনটা নিবো জানা। ওকে সারপ্রাইজ দিবো।
-তোর যেটা খুশি নে।
-আরে তুই ওর ভাই! তুই ওর পছন্দ বুঝবি। প্লিজ হেল্প কর।
-ওকে বাবা!
-থ্যাংক ইউ। ফেবুতে আয়।
.
ফেবুতে যেতেই সেই আইডি থেকে একটি মেসেজ পেলো আরহাম-
Ajker ghotonar poreo ki mone hoccena, Khusbo amakei valobase? Apnar ucit oke amar jonno chere deya.
.
ওপাশ থেকে আবারো মেসেজ ব্লক করে রেখেছে।
তার মানে ফারাজ সত্যিই এসেছিলো!
.
খুশবুর দিকে তাকালো আরহাম। সত্যিই কি ফারাজ ছাড়া শূন্য খুশবু? তার কি উচিত খুশবু কে ছেড়ে দেয়া?
.
চলবে