সে কি জানে Season 2 ! Part- 12
প্রায় অনেক্ষন চেষ্টা করার পর পাইপ বেয়ে আমার বারান্দায় পৌঁছাতে সক্ষন হন রেয়ান। বারান্দায় দাঁড়িয়েই একটা বড় নিশ্বাস নেন উনি।তারপর ধীর পায়ে এগুতে লাগলেন আমার দিকে। এদিকে আমি বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করেছি মাত্র। হঠাৎ গালে কারো স্পর্শ পেতেই চোখ মেলে তাকালাম আমি।সামনে থাকা মানুষটাকে দেখতেই ধরফুড়িয়ে উঠে বসলাম।আমাকে এভাবে উঠে বসতে দেখে বাঁকা হাসলেন রেয়ান। একটা চেয়ার টেনে আমার সামনে বসলেন উনি আর বললেন….
— মরুভূমি রাতের খাবার খাওনি কেন তুমি?আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে বুঝি?
— আপনি এত রাতে আমার রুমে কি করছেন? রুমেই বা কিভাবে এসেছেন?
— কেন?পাইপ দিয়ে।
ভ্রুঁ কুঁচকে এলো আমার।তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই সে দাঁত কেলিয়ে হাসলো। আমার গাল শক্ত করে টেনে বলল….
— সত্যি বলছি!আচ্ছা এখন এগুলো বাদ দাও।চুপচাপ খাবারটুকু খেয়ে নাও।তারপর আমি আমার প্রতিশোধ নিবো।
— কিসের প্রতিশোধ?
— ভুলে গেছ নাকি? সকালে যে আমার নাকে কামড় দিয়েছো সেটার প্রতিশোধ।আর আমি সেটা কিন্তু এক্ষনি নিবো।
— আপনি বললেই হলো। যান আমার রুম থেকে।বেহায়া, অসভ্য লোক।রাত-বিরাতে একটা মেয়ের রুমে আসতে লজ্জা করে না আপনার।
— না করে না।
ব্যস এতটুকু বলেই রেয়ান “বোন” প্লেটে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়াতে শুরু করলেন আমায়। এক লোকমা মুখে দেওয়ার জন্য এগোতেই মুখ ঘুড়িয়ে নিলাম আমি।সাথে সাথে ধমকে উঠলেন উনি! চোখ রাঙিয়ে বললেন…
— বেশি বেড়ে গেছো তুমি। ভুলে যেও না আমি কে।ইউ নো ওয়াট মরুভূমি!আমার তোমাকে মেরে ফেলতে একটুও হাত কাঁপবে না।প্রথমে তোমাকে মারবো তারপর নিজে মরব।তাই বলে রাখলাম বেশি বাড়াবাড়ি করবে না।
উনার হঠাৎ এমন রেগে যাওয়ার কারন বুঝতে পারলাম না আমি।তার সাথে একটু ভয়ও পেলাম। তাই আর কথা বাড়ালাম না। চুপচাপ খেয়ে নিলাম।খাওয়াতে খাওয়াতে রেয়ান খুব শান্ত সরে আমাকে বলে উঠলেন….
— দেখো মরুভূমি!অতীত নিয়ে বেঁচে থাকলে কোনো লাভ নেই বরং মানুষের উচিত বর্তমান নিয়ে বাঁচা।এই যে তুমি এভাবে না খেয়ে থাকো,কারো সাথে কথা বলো না,সারাদিন ঘর বন্দি হয়ে থাকো,ভার্সিটি যাও না, এতে কি তোমার অতীত ফিরে আসবে মরুভূমি? অবশ্যই না।কিন্তু তাও তুমি এভাবে মন মরা হয়ে থাকছো!কেন? যখন তুমি জানোই অতীত আর ফিরে আসবে না তাহলে এভাবে ভেঙে পরার তো কোনো মানে হয় না মরুভূমি। নিজেকে কষ্ট দেওয়ার পাশাপাশি তোমার আপন জনদেরও কষ্ট দিচ্ছো তুমি। তোমার মা-বাবা যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তারাও কিন্তু বলতেন অতীত ভুলে যেতে।বর্তমান নিয়ে বাঁচতে।
বলেই আরও এক লোকমা খাবার মুখে পুড়ে দিলেন উনি।
খাওয়া শেষে রেয়ান আমার কপালে একটা চুমু একেঁ দিলেন।প্রায় সাথে সাথেই আমার নাকে একটা কামড় দিয়ে দিলেন।আর বললেন….
— প্রতিশোধ নেওয়া শেষ মরুভূমি! এখন আসি।কালকে সকালে দেখা হবে।
বলেই চোখ মারলেন।তারপর যে ভাবে আসলেন সেভাবেই চলে গেলেন রুম থেকে।উনই যেতেই আমার মুখ থেকে আপনা-আপনি বেড়িয়ে গেল…
— অদ্ভুদ!
.
ছাদে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে আবদ্ধ আর দীঘি।আবদ্ধ সেই কখন থেকে দীঘির দিক তাকিয়ে আছে কিন্ত দীঘির দৃষ্টি মেঝের দিকে। এবার বেশ বিরক্ত হলো আবদ্ধ। দীঘিকে উদ্দেশ্য করে বলল….
— আমাকে কি তোর চোখে পরে না?মেঝের দিকে তাকিয়ে কি দেখিস হ্যাঁ?
আবদ্ধের দিকে তাকালো দীঘি।সাথে সাথে আতকে উঠলো আবদ্ধ।দীঘির চোখে পানি স্পষ্ট।কিন্তু দীঘি কাঁদছে কেন? দীঘিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে শান্ত সরে আবদ্ধ বলল….
— কি হয়েছে?কান্না করছিস কেন? আমি কি কিছু করেছি দীঘু?
মাথা ডানে-বামে নাড়ালো দীঘি। এতে আবদ্ধ আবার বলল….
— তাহলে?
— আব্বা আম্মার কথা মনে পরছে খুব!
চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল আবদ্ধের। দীঘির হাত শক্ত করে ধরে বলে উঠল….
— এত কিছুর পরও কিভাবে ইচ্ছে হয় তোর?
— আমার আব্বা-আম্মা ওরা।প্লিজ কালকে আমাকে একটু নিয়ে যাবেন ওদের কাছে। প্লিজ!
আবদ্ধ চুপ করে রইলো কিচ্ছুক্ষন। পরক্ষনেই কঠিন কণ্ঠে বলল…..
— কালকে স্কুলের পর নিয়ে যাবো।
চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল দীঘির। আবদ্ধের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো সে। সাথে সাথে আবদ্ধের সব রাগ নিমিশেই শেষ হয়ে গেল।সেও হাসলো দীঘির সাথে।
২.
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই কিচ্ছুক্ষন বসে রইলাম বিছানায়। চোখ কচলে ভালো ভাবে আশেপাশে তাকাতে লাগলাম আমি। হঠাৎ মোবাইলের টুংটাং শব্দ বেজে উঠল। ফোন হাতে নিতেই দেখলাম রেয়ানের মেসেজ।যাতে লিখা….
.
.
“সে কি জানে” তার ঘুমন্ত মুখশ্রী কতটা নেশাক্ত।তাকে বলো, যখন পর্দার আড়াল থেকে একরাশ রোদ এসে তার মুখে জায়গা নেয়, সে যখন সেই রোদের আলোয় বিরক্ত হয়ে ঘুমের মাঝে ভ্রুঁ দু’টো কুঁচকে ফেলে তখন তার প্রেমে পড়ে যাই আমি। ইচ্ছে করে তাকে ছুঁয়ে দিয়ে।বারবার ছুঁয়ে দিতে! নিজেকে যে আটকে রাখতে পারছি না আমি।তাকে বলো, কি করা উচিত আমার? আমি কি তার প্রেমে মরে যাবো নাকি তার মায়া জালে আরও গভীর ভাবে আবদ্ধ হবো?
.
.
কথাটুকু পড়েই হাসলাম আমি।মানুষটা আসলেই অদ্ভুত।হঠাৎ আমার মনে এক অদম্য ইচ্ছে জেগে উঠলো।সব কিছু ভুলে আবার বর্তমান নিয়ে বাঁচার ইচ্ছে।কিন্তু কিভাবে শুরু করব পথ চলাটা? আচ্ছা!কালকে থেকে ভার্সিটি যাওয়া শুরু করলে কেমন হয়? দারুন হবে তাই না! ভেবেই কল দিলাম দিহানকে।কল দেওয়া মাত্রই ফোনটা ধরে ফেললো সে।উসখুস কন্ঠে বলে উঠল….
— কেমন আছো মিরা? এত দিন পর আমার কথা মনে হলো তোমার।
— এভাবে বলছ কেন দিহান?
— সেই তিন মাস পর তোমার কন্ঠ শুনছি।এসব বলা কি স্বাভাবিক নয়।
— তুমি এমন ভাবে বলছ যেন আমি তোমার প্রেমিকা! আচ্ছা বাদ দাও এগুলো,কেমন আছো তুমি?
— যেমনটা রেখে গিয়েছিলে।
— মানে?
— কিছু না। তুমি বলো আজ হঠাৎ ফোন দিলে যে?
— আমি ভাবছি কাল কিংবা পরশু থেকে ভার্সিটি আবার যাওয়া শুরু করব।
— নোট লাগবে তাই তো?
— হুম।সাথে প্রিন্সিপালের সাথেও একটু কথা বলো।
— আচ্ছা।শুনো আমি আজকে ভার্সিটি যাবো না।এক কাজ করি তোমার বাসায় নোট নিয়ে এসে পরি?
— এতো তাড়া নেই আমার দিহার।
— আমার আছে।
ফোনটা কেটে দিলো দিহান।তার এমন ব্যবহার মোটেও কাম্য নয় আমার।এভাবে করার মানে বুঝতে পারলাম না ঠিক।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
.
ফ্রেদ হয়েই চলে গেলাম নিচে।মামী,আবদ্ধ আর দীঘি বসে আছে সোফায়৷ আমাকে নিচে নামতে দেখে অনেকটা অবাক হলো তারা।আমি সোফায় বসতেই মামী বলে উঠলেন….
— তুই হঠাৎ নিচে আসলি যে।কিছু কি লাগবে মা?
— কেন আসতে পারি না?
— না তেমন না।
— আচ্ছা মা এগুলো আর বলো না তো।খুব ক্ষুধা পেয়েছে আমার।খাবার দাও।
চোখ ভিজে উঠল মামীর।যেন আশার আলো জেগেছে তার মনে।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে মামী বলে উঠলেন…
— তুই বস আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
মামী যেতেই দীঘির দিকে তাকালাম আমি।মুচকি হেসে বললাম…
— কেমন আছো দীঘি?
কিঞ্চিত অবাক হলো দীঘি।পরক্ষনেই মিষ্টি করে হাসলো সে আর বলল….
— আপনি আমাকে চিনেন?
— অবশ্যই। আবদ্ধ বলেছে তোমার কথা।
আড়চোখে আবদ্ধের দিকে একবার দীঘি।তারপর আবার লেগে গেল আমার সাথে গল্প করতে।গল্প করার এক পর্যায়ে কলিংবেল বেজে উঠল। আমেনা আন্টি দরজা খুলতেই দিহান ধড়ফুড়িয়ে বাসায় ঢুকে গেল। হাপাতে হাপাতে আমার পাশে বসে হাতে নোট ধরিয়ে দিলো। দিহানকে এভাবে দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না।এই মাত্র না তার সাথে আমার কথা হয়েছে।এত তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় কিভাবে আসলো।হয়তো দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে।নাহলে এভাবে হাপাচ্ছে কেন? নিজেকে একটু শান্ত করে সবার সাথে কুশল বিনিময় করল দিহান।সবশেষে আমার দিকে তালিয়ে বলল….
— প্রিন্সিপালের সাথে কলে কথা বলেছি।উনি বলেছেন কালকে তোমাকে যেতে।কিছু ফর্মালেটি পূরণ করতে হবে।
— এত তাড়া ছিল না আমার দিহান।পরে করলেও পারতে।
দিহান কিছু বলতে যাবে তখনই আবদ্ধ বলে উঠে…
— কিসের ফর্মালেটি মিরাপু?
— আমি ভাবছি কালকে থেকে ভার্সিটি যাবো।
সাথে সাথে উপস্থিত সবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।সব চেয়ে বেশি খুশি হলো আবদ্ধ।সে তো আমাকে একেবারে জোড়িয়ে ধরল।কিচ্ছুক্ষন এভাবে থেকে নিজের জায়গায় বসল আবদ্ধ।দিহানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে সে।কিন্তু আসলে কি ধন্যবাদটা দিহানের কাম্য? অবশ্যই না।এটা তো রেয়ানকে দেওয়া উচিত আমার। তার কালকে রাতের কথাগুলোর জন্যই তো এমন হয়েছে।
হঠাৎ দরজার দিকে চোখ গেল আমার।রেয়ান দাঁড়িয়ে আছেন। চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে তার।হাতে থাকা ফুলের বুকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলছেন উনি।এত রেগে আছেন কেন রেয়ান? আমাকে আর দিহানকে পাশাপাশি বসতে দেখে?
.
.
#চলবে🍁