সে কি জানে Season 2 ! Part- 11
জানালার ঠিক নিচে পাইপের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন রেয়ান।কিভাবে পেইপ বেয়ে রুমে ঢুকবে সেই চিন্তাই আপাতত রেয়ানের মাথায় ঘুরপাক করছে। নাকি একবার পাইপ বেয়ে উঠবে।পরক্ষনেই ভাবলো, না থাক! একেবারে রাতেই উঠবে সে। তাছাড়া এখন উঠলে যদি তার মরুভূমি টের পেয়ে যায় তাহলে তো বারান্দার দরজা রাতে আটকিয়ে রাখবে। যা মোটেও চাচ্ছেন না রেয়ান। তাই একবার বারান্দার দিকে তাকিয়ে হামি দিতে দিতে চলে গেলেন গাড়ির দিকে।উদ্দেশ্য হস্পিটালে যাবেন। অনেক কাজ বাকি তার!
.
দীঘির শত মানা করার পরও আবদ্ধ তাকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। বাসায় ঢুকতেই প্রথমেই মামীর সাথে দেখা হয় তাদের। কিঞ্চিত অবাক হয় মামী। আজকে আবদ্ধ এত তাড়াতাড়ি বাসায় আসলো যে?আর তার সাথে মেয়েটাই বা কে? হালকা হেসে প্রশ্নগুলো আবদ্ধকে জিজ্ঞেস করতেই সে গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দেয়….
— আমার ফ্রেন্ডের বোন মা। কয়েকদিন আমাদের বাসায়ই থাকবে। ওদের বাসায় একটু প্রব্লেম আছে তাই।
হাসলেন মামী। তার ছেলেকে তিনি বেশ ভাবে চিনেন। আবদ্ধ যে মিথ্যা বলছে আর কাহিনীও যে অন্যটা সেটা বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পারছেন মামী। তবে মুখে কিছু বললেন না। এক নজর দীঘির দিকে তাকালেন উনি। মেয়েটা সুন্দর! দেখেই মনে হচ্ছে যথেষ্ট লক্ষী একটা মেয়ে। মামী দীঘিকে উদ্দেশ্য করেই বলে উঠলেন…..
— তোমার নাম কি মা?
— জ্বী দীঘি।
— বাহ! বেশ সুন্দর নাম তো। আসো আমার সাথে আমি তোমাকে তোমার রুম দেখিয়ে দি।
মাথা নাড়ালো দীঘি। সাথে সাথে আবদ্ধ বলে উঠল….
— মা আমি একটু আসছি, আমার কাজ আছে একটা।
— একটু পরে যা। মিরার সাথে দেখা করে আস আগে। ও আজকে সকালে এসেছে।
চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল আবদ্ধর। কিছু না বলেই দৌড় দিল আমার রুমের দিকে। এদিকে দীঘি বরাবরই অবাক হচ্ছে। বোনের প্রতি কি কোনো ভাইয়ের এত ভালোবাসা থাকতে পারে? তারওপর সে যদি তার আপন বোন না হয়। কি অদ্ভুদ তাই না? আবদ্ধের এসব কেন যেন দীঘিকে মুগ্ধ করে। বরাবরের মতো এখনও সে মুগ্ধ।দীঘির ভাবনায় ছেদ ঘটে মামীর ডাকে।
— আসো দীঘি মা।তোমার রুমে নিয়ে যাই।
— জ্বী আন্টি।
.
এদিকে আমি বিছানায় বসে বসে সামনে থাকা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। জানালা দিয়ে বাতাসের দমকা হাওয়া এসে বারবার আমার মুখশ্রী ছুঁয়ে দিচ্ছে। বেশ লাগছে সময়টা। এমন সময় খট করে দরজা খুলে যায়। আবদ্ধ এসেছে! তাকে দেখেই হাসলাম আমি। সেও হাসলো। কিছুক্ষন চুপ থেকে প্রথমে আমিই তাকে জিজ্ঞেস করলাম….
— কেমন আছিস ভাই?
— আলহামদুলিল্লাহ! তুমি কেমন আছো মিরাপু?
— আছি কোনো রকম তা তোর ওই দীঘির কি অবস্থা?ভালো আছে ও?
— হুম ও-ও ভালো আছে। ওকে এখানে নিয়ে এসেছু মিরাপু।বিয়ে হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবে।
— ভালো তো। তাহলে বিয়াটা করে ফেল।
— হুম করব ওর পরীক্ষাটা শেষ হোক।
— আচ্ছা এখন যা। ঘুমাবো আমি।রাতে কথা হবে।
মন খারাপ হয়ে গেল আবদ্ধের। আগের মতো তার বোন তার সাথে কথা বলে না,হাসে না।নিজেকে গুটিয়ে রাখে সারাক্ষন। ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো আবদ্ধ। রুম থেকে বের হয়েই প্রথমে গেল দীঘির রুমে।মামী কিছুক্ষন আগেই বের হয়েছে দীঘির রুম থেকে। আবদ্ধকে দীঘির রুমে যেতে দেখেও কিছু বললেন না উনি। তার যথেষ্ট বিশ্বাস আছে তার ছেলে ওপর।
আবদ্ধ দীঘির রুমে ঢুকতেই দীঘি করুন চোখে তাকালো আবদ্ধের দিকে। কিন্তু আবদ্ধের কোনো হেলদোল হলো না। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল….
— তোর কি কি লাগবে ওই বাসা থেকে। আমি এখন ওখানেই যাচ্ছি। একেবারে নিয়েই আসবো সব।
আবদ্ধের কথায় জবাব দিলো না দীঘি। নিজের মতো করেই বলল….
— প্লিজ আব্বাকে কিছু করবেন না। উনি আমার আব্বা হয়।একটু শাসণ করবেই আমাকে।এমন শাস্তি দিয়েন না উনাকে প্লিজ।
চটে গেল আবদ্ধ। কপালে রগ স্পষ্ট তার। রাগ সামলে কোনো রকম দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল…
— তাই বলে জানোয়ারের মতো মারবে। নিজের হাত-পা দেখ একবার। কেমন গর্ত গর্ত হয়ে গেছে জায়গায় জায়গায়। তুই বলিস শাস্তি দিবো না আমি ওইটারে।মাফ করে দিবো? জীবনেও না!
— প্লিজ আমার ক….
ধমকে উঠল আবদ্ধ।ধমকের সুরেই বলল…
— যেটার উত্তর দিতে বলেছি শুধু সেটার উত্তর দে। নাহলে আমার থেকে খারাপ কিন্তু দ্বিতীয় কেউ আর হবে না।
খানিকটা ভয় পেল দীঘি। আমতা আমতা করে বলল….
— আমার বই খাতা আর জামা কাপড়।
— তোর বাবার জামা-কাপড় পড়তে হবে না তোর।আমি তোর জন্য জামা-কাপড় কিনে আনবো। শুধু বই-খাতাই ওই বাসা থেকে আসবে আর কিছু না।
বলেই হনহন করে বেড়িয়ে গেল আবদ্ধ। দীঘি এখনও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কান্না পাচ্ছে তার। খুব কান্না! আবদ্ধ তার বাবার সাথে কি করবে আল্লাহ মালুম!
১.
কামরুলের বাসায় এসেই আবদ্ধ ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। ভয়ংকর একটা হাসি দিয়ে বলল….
— শ্বশুড় মশাই তখনকার ওই ব্যবহারের জন্য আমি সরি!
প্রশান্তির এক নিশ্বাস ছাঁড়লো কামরুল। সে তো ভেবেছিল আবদ্ধ আজকে তার নাস্তানাবুদ করেই ছাঁড়বে। বাঁচারও হয়তো উপায় নেই তার।তাই তো বাজার থেকে প্রায় ২০ কেজির মতো কাঁচা মরিচ সামনে নিয়ে বসে ছিল সে। অপেক্ষা করছিল কখন আবদ্ধ আসবে আর কামরুল তার কাছে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু আবদ্ধের এখনের কথায় স্বস্তি পেল সে।দাঁত কেলিয়ে বলল….
— কোনো সমস্যা নেই বাবা।আমি তোমারে মাফ করছি।
আবদ্ধ হাসলো আর বলল….
— থ্যাংক্স শ্বশুড় মশাই তাহলে এখন মরিচ খাওয়া শুরু করুন। সব খেতে হবে কিন্তু আপনার।
বলেই সেই ভয়ংকর হাসিটা আবার হাসলো আবদ্ধ।এদিকে কামরুলের অবস্থা তো না বললেই নয়। তার যেন কয়েকমিনিটের জন্য শ্বাস আটকে গেছে। সাথে কামরুলের স্ত্রীরও।
প্রায় আধা ঘন্টা চুপ করে বসে থাকার পর আবদ্ধের ধমক খেয়ে মরিচ খাওয়া শুরু করল কামরুল।১০টা মরিচ খাওয়ার পরই সে পানি পানি করে চিল্লিয়ে উঠল।আর খাওয়া সম্ভব না তার পক্ষে।২০ কেজি মরিচ সে কিভাবে শেষ করবে?
আবদ্ধ গম্ভীর ভাব নিয়ে কামরুলের পানি খাওয়াটা দেখলো। পরক্ষনেই বলে উঠল…
— যান আপনার জন্য শাস্তিটা কমিয়ে দিলাম।আফটারোল শ্বশুড় বলে কথা।
এতটুকু বলে থামলো আবদ্ধ। তারপর আবার বলল….
— প্রতিদিন ১০টা করে মরিচ খাবেন ২০কেজি মরিচ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। তাও আমার সামনে। আর শ্বাশুড়ি মা দীঘির বই গুলো দিন তো আমাকে। ওর আবার পড়া শোনার জন্য লাগবে।
আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না মিসেস কামরুল। দৌড় দিয়ে রুমে চলে গেলেন বই আনতে।আবদ্ধকে বই দিয়েই যেন সে দায় মুক্ত।
বই হাতে নিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ল আবদ্ধ। কামরুলের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল….
— সি ইউ শ্বশুড় মশাই।কালকে আবার দেখা হবে।
তারপর চলে গেল নিজ গন্তব্যে।
.
.
#চলনে🍁