সে কি জানে Season 2 ! Part- 04
বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছি আমি।সামনেই চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে আছেন রেয়ান।আমাকে বলেছিলেন কালকে আর খাবার খেতে দিবেন না।কিন্তু কিছুক্ষন পর ঠিকই আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন।ক্ষুধা থাকায় আমিও খাবার খেয়ে ফেলি।পরে আর কিছু মনে নেই।হয়তো উনি খাবারে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে ছিলেন!!
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই রেয়ানকে চেয়ারে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখি আমি।কি নিষ্পাপ চেহারা এ ডক্টরের।একদম বিদেশিদের মতো সাদা।ব্রাউন চুল।চোখ গুলো কালো না।কিছুটা সবুজ রঙের।সব মিলিয়ে সুন্দর!!কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো এগুলো কি ভাবছি আমি।এ লোক ভালো না।খুবই খারাপ!কিভাবে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।।আল্লাহ-ই জানে এখন আবদ্ধ আর মামী কি করছেন।ওদের কি আমাকে নিয়ে টেনসন হচ্ছে না??আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছে না কেন ওরা??আর কেনই বা আমাকে এখানে নিয়ে আসতে এ-ই হিটলারকে পারমিশেন দিয়েছে??রাগ লাগছে আমার।সব কিছু বিরক্তিকর!!একদম অসহ্য!!ভাবতে ভাবতেই হাতের বাঁধনটা একটু খোলার চেষ্টা করলাম আমি। আকস্মিক ভাবে দড়িটা খুলে গেল। এতে অবাক আমি!তবে অবাক হওয়া থেকেও বেশি খুশি লাগছে। তাড়াতাড়ি করে পায়ের বাঁধনগুলোও খুলে ফেললাম। তারপর যেই না বিছানা থেকে নামতে যাবো তখনই চোখ মেলে তাকান রেয়ান। কিছুটা ভয় পেয়ে যাই আমি। কাচুমাচু হয়ে আবার আগের মতো বসে পড়ি।
এদিকে রেয়ান শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। ধীর পায়ে আমার কাছে এসে বসেন উনি। টাইট করে দড়ি বাঁধার ফলে হাতে কালচে দাগ পড়ে গেছে আমার। সেখানে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন উনি। পরক্ষনেই ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স বের করে ঔষধ লাগিয়ে দিতে লাগলেন হাতে। কিছুক্ষন চুপ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন…..
—” কালকের মারের কথা মনে আছে আপনার। ”
—” জ্বী?? ”
—” সাহস কিভাবে হয় আপনার বিছানা থেকে নামার?? ”
ভ্রুঁ কুঁচকে এলো আমার। আমি আবার বিছানা থেকে কখন নামলাম। নামতে দিয়েছে এ লোক?? কিছুটা রেগে বললাম….
—” আপনি একটু বেশি বেশি করছেন না মিস্টার ডক্টর। আমাকে এভাবে বন্দী করার মানে কি? এটা কি ধরণের ট্রিটমেন্ট? ”
—” দিস ইস মাই স্টাইল। ”
কথাটা এমন ভাবে বললেন যে রাগ হলো আমার। আমতা আমতা করে তার কথাটা কিছুটা বেঙ্গ করে বললাম আমি। এতে উনি চোখ ছোট ছোট করে তাকালেন আমার দিকে। দু’গাল খুব শক্ত করে টেনে বলে উঠলেন….
—” ছোট খুকি আবার আমাকে ভেঙ্গায়। সাহস কত বড়। ”
বলেই ততক্ষনাত কোলে তুলে নিলেন আমায়।।মুহুর্তেই চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে গেল আমার। জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে উঠলাম…..
—” আপনার সাহস কিভাবে হয় আমাকে কোলে নেওয়ার। বাজে লোক কোথাকার।নামান আমাকে। ”
আমার কথা যেন তার কানে ঢুকলো না। আগের মতোই কোলে নিয়ে হাঁটছেন উনি। কিছুক্ষন ছোটাছুটির পরে দেখলাম হিটলার ডক্টরটা আমাকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে অস্বস্তি হতে শুরু করলো আমার। মুহুর্তেই চোখ ঝাপসা হতে লাগলো।
আবদ্ধ দীঘির হাত শক্ত করে ধরে সামনে থাকা সরু রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে। আর দীঘি! সে মাথা নিচু করে আছে। আবদ্ধ যে তার দিকে তাকিয়ে আছে এতে তার কোনো খেয়ালই নেই। আচ্ছা মেয়েটা এত অবুঝ কেন?? একটু কি আবদ্ধকে ভালোবাসা যায় না?? চোখে চোখ রেখে কথা বললে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে!! ভাবতেই ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আবদ্ধের। দীঘির হাত আরেকটু শক্ত করে ধরে বলে উঠলো…..
—” পিচ্চি আইস্ক্রিম খাবি?? ”
দীঘি জবাব দিলো না। আগের মতোই মাথা নিচু করে আছে সে। আবদ্ধ আবার বলল…..
—” উত্তর দে। খাবি ?? ”
মাথা ঝাঁকালো দীঘি। যার অর্থ খাবে সে। আবদ্ধও আইস্ক্রিম নিয়ে এলো। দু’জনে মিলে নদীর তীরে বসে খাচ্ছে সেটা। হঠাৎ দীঘি বলে উঠে…..
—” আচ্ছা আপনার পুরো নাম কি?? ”
বিষম খেলো আবদ্ধ। যাকে সে এত বছর ধরে ভালোবাসলো সে-ই তার নাম জানে না। অদ্ভুদ! পরক্ষনেই ভ্রুঁ কুঁচকে বলল……
—” তুই আমার নাম জানিস না?? ”
প্রতিউত্তরে দীঘি আমতা আমতা করে বলল…..
—” আসলে কখনও জিজ্ঞেস করা হয় নি। আচ্ছা বলুন না আপনার নাম কি?? ”
—” আমার নাম আয়ান খান আবদ্ধ। এক মায়ের একমাত্র ছেলে। পরিবারে শুধু আমি, মা আর আমার খালাতো বোন থাকি। হায়ার এজুকেডেট। ভালো চাকরিও করি। কয়েকদিন পর তোর বাসায় আসবো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। ”
হা করে তাকিয়ে আছে দীঘি আবদ্ধের দিকে। সে কি জানতে চেয়েছে আর আবদ্ধ তাকে কি বলেছে। ভাবতেই মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। পরক্ষনেই লজ্জা পেয়ে গেল সে। এ লোক সারাটাদিন এসব কথা বলে। বিয়ে আর ভালোবাসা! আর কিছু কি বলতে পারে না??
.
দীঘিকে বাসায় পৌঁছে দিয়েই নিজের বাসায় চলে যায় আবদ্ধ।আজকে আর আফিসে যাবে না সে। বাসায় গিয়ে প্রথমেই মামীর রুমে চলে যায় আবদ্ধ। রুমে ঢুকতেই দেখে মামী কাপড় গুছাচ্ছেন। আবদ্ধ বিছানায় বসতেই মামী বলে উঠেন…..
—” আজকে এত তাড়াতাড়ি এলি যে? অফিসে যাবি না? ”
—” না!! আচ্ছা এখন এত কথা বলিও না।খাবার দাও ক্ষুধা লেগছে। ”
—” নিচে আয় দিচ্ছি। ”
—” মিরাপু খাবার খেয়েছে? ”
—” ও নেই এখানে আবদ্ধ। ”
—” মানে?? ”
—” আসলে ওর নতুন ডক্টর আছে না। সে ওকে নিয়ে গেছে।আমাকে বলল এক ঘরে থাকতে থাকতে হয়তো মিরা আরও অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই অন্য জায়গায় ট্রিটমেন্ট করবে ওর। ”
—” কিন্তু কোথায়?? ”
—” বলল তো চট্টগ্রাম।রাঙামাটিতে!! ”
—” ও!! আচ্ছা ছেলেটা কি বিশ্বাস করার যোগ্য??এভাবে মিরাপুকে ও-ই ছেলেটার সাথে একা পাঠানো কি ঠিক হলো। ”
—” চিন্তা করিস না। ও আমার ফ্রেন্ডের ছেলে। যথেষ্ট বিশ্বস্ত!! তাছাড়া নম্র-ভদ্রও। ”
—” কিন্তু তাও!! ”
—” আর কথা বারাস না আবদ্ধ। নিচে খেতে আয়। দেখিস আল্লাহ সব ঠিক করে দেবেন। ”
আবদ্ধ আর কিছু বলল না। চুপচাপ খেতে চলে গেল নিচে।
.
ট্রেনের কেবিনে বসে আছি আমি।পাশেই বসে আছেন রেয়ান। মন মেজাজ কিছুই ভালো নেই। জানালা দিয়ে মানুষজন দেখা যাচ্ছে। যা আরও অসহ্যকর আমার জন্য। তবে বাইরের মৃদু মৃদু বাতাসে ভালো লাগছে। কিন্তু এ-ই ভালো লাগাটা থেকে অসহ্য লাগাটাই আমার জন্য এখন মুখ্য। এ-ই বাইরের দৃশ্য আর মানুষজনকে দেখে বারবার অতীতের কথা মনে পড়ছে। কি হতো যদি বাবা-মাকে নিয়ে শপিং-এ যাওয়ার জেদ না ধরতাম।তাহলে তো এক্সিডেন্টটা হতো না। আর না আমি মানুষের আসল রুপ জানতাম। আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে বাবা-মার নিথর দেহ পরে ছিল রাস্তায়। একটা মানুষও আসে নি আমাদের সাহায্য করতে। বরং কিভাবে দু’টো মানুষের মৃত্যু হয় তার তামাশা দেখছিলো।
না!!আর ভাবতে পারছি না। বুকের কষ্টটা ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। চোখে জ্বালা করছে খুব। ধীরে ধীরে ঢলে পড়লাম রেয়ানের বুকে। আর সে! হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আমার চুলে।
.
.
.
#চলবে🍁🍁