© রোমান্টিক অত্যাচার–>৭
Israt Jahan
আমিঃ এই মূহুর্তে আমার নিজেরই মাথা কাজ করছেনা ওনাকে
কিভাবে control করবো? হায় খোদা তুমি আমাকে কেমন
পরিস্থিতে ফেললে…….
-স্যার আপনার sense স্বাভাবিক নেই নিজেকে control করার
চেষ্টা করুন। আপনার অনেক নেশা হয়ে গেছে।
আশফিঃ নেশা হয়ে গেছে??? হ্যা,আমার মাহির ভালোবাসা
পাওয়ার নেশা হয়ে গেছে, মাহিকে কাছে পাওয়ার নেশা হয়ে
গেছে।
আমিঃ আমি ওনার থেকে বারবার দুরে সরার চেষ্টা করছি আর
উনি বারবার ই আমাকে কাছে টেনে নিয়াসছে।
-কি যা তা বলছেন আপনি এসব?ছাড়ুন আমাকে আপনি আপনার
সীমার বাইরে চলে যাচ্ছেন।
আশফিঃ কি বললে তুমি? সীমার বাইরে? মাহি?তোমার মনে
কি আমার জন্য একটুও ফিলিংস নেই? এতুটুকুও ভালোবাসোনা
আমাকে?
আমিঃ কথাটা বলেই আমার কোমোর ধরে উনি অনেক জোরে
টেনে ওনার কাছে টেনে নিয়ে এনে বললেন,
– কি হলো বলো? (আশফি)
আমি তখন থেকেই আমার দু হাত দিয়ে গায়ের সবটুকু জোর দিয়ে
ওনাকে ছাড়ানের চেষ্টা করছি। উনি তাতে খুব রেগে গিয়ে
আমার দু হাত ওনার দুহাত দিয়ে সরিয়ে আমার পেছনে ধরে
ওনার এক হাতের মুঠোই আমার দুটো হাত শক্ত করে ধরলেন।
ওনার অনেক কাছে এগিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে
রইলেন। তার কিছুক্ষণ পর উনি আমার শার্টের বাটম এর দিকে
তাকিয়ে ওটা খোলার জন্য হাত বাড়ালেন। আমি ভয় পেয়ে
এটাই ভেবে নিলাম আজকেই আমার সবকিছু শেষ? আমি চিৎকার
করে ওনাকে বলছি প্লিজ আমাকে ছাড়ুন। কিন্তু চারপাশে
music এর আওয়াজে কেউ আমার চিৎকার শুনছেনা। আমি কান্না
করে ওনাকে অনেকবার request করে বলছি
-আপনার পায়ে পরি আমার এত বড় ক্ষতি করবেন না। কিন্তু উনি
আমার কোনো কথাই কানে নিচ্ছেননা। হঠাৎ উনি আমার
শার্টের ২য় আর ৩য় বাটম গুলো খুলে ফেললেন। আমি দেখলাম
উনি আমার বুকের ডানপাশের লাল তিলটার দিকে তাকিয়ে
আছেন। আস্তে আস্তে সেটার দিকে উনি মুখ বাড়াচ্ছেন
( তিলটাই কিস করার জন্য)
তখন খেয়াল করলাম আমার হাত দুটো উনি হালকা ভাবে ধরে
আছে। আমি সেই সুযোগে হাত ছাড়িয়ে অনেক জোরে ওনাকে
ধাক্কা দিয়ে বললাম আমি আপনাকে ভালোবাসিনা আর
কোনোদিন বাসবোওনা । উনি নিজেকে সামলাতে না পেরে
নিচে গিয়ে পরলেন।অনেকটা ব্যথাও পেয়েছেন।আমি সেখান
থেকে দৌড়ে চলে আসতে গেলাম। পরে দাড়িয়ে গেলাম পেছন
ঘুরে দেখলাম উনি ব্যথায় নিচে শুয়ে কাতরাচ্ছে। আমি বুঝতে
পারছিলামনা কি করবো? ওনাকে গিয়ে টেনে তুলবো নাকি
চলে যাবো। তখন ওনার প্রতি আমার আলাদা একটা মায়া কাজ
করলো আমি ওনার কাছে গিয়ে টেনে তুলতে চাইলাম উনি তখন
আমাকে ধাক্কা দিয়ে উঠে পুল সাইডে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ
পর আমি সেখানে গেলাম।
-আরে আশফি এতক্ষন কোথায় ছিলে? আমরা তোমার গান
শোনার অপেক্ষায় আছি। তোমার জন্মদিনে তোমার কন্ঠে গান
না শুনলে কেমন হয়।
আমিঃ আশফির হঠাৎ আমারদিকে চোখ পড়লো। (অনেকক্ষণ
তাকিয়ে ছিল) তারপর উনি একজন কে ডেকে গিটার নিয়ে
আসতে বললো। অদ্ভুত মানুষ উনি এই sense এ উনি গান গাইবে?
তারপর উনি গিটার নিয়ে পুলের পাশে চেয়ারে গিয়ে বসলেন।
আশফিঃ গানটা তোমাকেই ডেডিকেড করলাম ( মাহির দিকে
তাকিয়ে মনে মনে বললো)
-meri kismat ke har ek panne pe……………. meri jeete ji baad marne ke,
meri har ek kal har ek lamhe main…… tu likhde mera useeeeee…….
………… har kahani main sari kisso main dil ki duniya ke sacchi
rishtome zindegani ke sari hissome tu likhde mera useeeee….. ae
khudaaaaaa ae khudaaaaa jab bana uska hi banaaa….
ae khudaaaaa ae khudaaa jab bana uska hi banaaa….
আমিঃ গানটি গাওয়ার সময় ওনার চোখ দিয়ে পানি পরছিল।
গান গাওয়া শেষে উনি উঠে চলে গেলো বাসার ভেতর। আমি ও
যখন ফিরে আসবো তখন হাতে ফাইলটা দেখে মনে হলো ফাইলটা
খুবই important ওনাকে দিয়ে আসা উচিত। এদিকে নিজে যাওয়ার
সাহস পাচ্ছিলামনা আবার অন্য কারো হাত দিয়ে পাঠানো
ঠিক হবেনা কারন ফাইলটাতে কোম্পানির কিছু secret
information আছে। তাই নিজেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ওনার
ড্রয়িংরুমে দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালাম দেখলাম উনি
দেওয়ালে টাঙ্গানো একটা ছবির সামনে দাড়িয়ে আছে আর
চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে। ছবিটা দেখে মনে হলো ওনার
বাবা-মা হবে হয়তো। উনি কিভাবে যেনো বুঝতে পারলো আমি
দাড়িয়ে আছি। ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললো
-অজস্র পরিমান Drinks করলেও আমার sense একেবারে
অস্বাভাবিক হয়না
আমি শুনে কিছু না বলে সোফার ওপর ফাইলটা রেখে বেরিয়ে
আসলাম বাইরে। তখন Driver এসে বললো ম্যাডাম স্যার আমাকে
আপনাকে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছে। এতকিছুর ভেতরেও উনি
এই খেয়ালটা রেখেছে?
আমি বাসায় চলে আসলাম। মা কে কিছু বলতে পারলামনা।
মাঃ কিরে আমি চিন্তা করে মরে যাচ্ছি। এত দেরি করলি
কেনো?
আমিঃ অফিসের কাজ ছিল অনেক। তাই দেরি হলো। মা আমি
রুমে গেলাম ভালো লাগছেনা।
মাঃ মাহি তুই ঠিক আছিস তো কিছু হয়েছে?
আমিঃ না,মা আমি ঠিক আছি। আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।
তারপর আমি ঘরে চলে আসলাম। কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে শুয়ে
পড়লাম। মা অনেকবার খেতে ডাকছিলো আমি গেলামনা।
মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে আর বারবার কানে ওনার
কথা গুলো বাঁজছে। একটা কথাই বেশি ভাবছি আমি উনি এটা
কেনো বললো আমার জন্য দেশে আসা?? উনি কি আমাকে আগে
থেকে চিনতেন কিন্তু কিভাবে? উনি তো থাকতেন জাপান উনি
বড় হয়েছেন ওখানে তাহলে আমাকে কি করে আগে থেকে
চিনবে? উনি কি নেশার ঘোরেই বললো। তা কি করে হয় উনি তো
নিজেই বললো ড্রিংক করলেও ওনার সেন্স ঠিক থাকে। নাকি
এটাও উনি নেশার ঘোরে বললেন। নাহ্ আর ভাবতে পারছিনা।
সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।ঘুমোতে চাইলাম কোনো
ভাবেই ঘুম আসছেনা।
সকাল হয়ে গেলো আজ রাতে ঘুম টা ভালো হয়নি। উঠে ফ্রেশ
হয়ে বিছানায় বসে ভাবছি হঠাৎ মা এসে বললো
মাঃ তুই এখনো বসে আছিস রেডি না হয়ে? অফিস সময় পার হয়ে
যাচ্ছে তো অফিস যাবিনা?
আমিঃ না। যাবোনা।
মাঃ কেনো কি হয়েছে? ছুটি নিয়েছিস শরীর ঠিক আছে তো?
আমিঃ না মা। এমনিই ভালো লাগছেনা। তুমি এতো টেনশন
নিওনা আমি একদম ঠিক আছি।
মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ নিচে গাড়ি থামার শব্দ
পেলাম। জানালা দিয়ে দেখলাম স্যার এর গাড়ি।
-সর্বনাশ উনি কি এখানে চলে আসলো?
আমি এক দৌড়ে নিচে চলে আসলাম। তারপর দেখলাম ড্রাইভার
নামলো।
-ম্যাডাম স্যার আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছেন।
-তোমার স্যারকে বলো আমি যাবোনা।
ড্রাইভার স্যারকে ফোন দিয়ে বললো।
মাঃ কিরে কে এসেছে আর তোর ফোন বাঁজছে। ধর।
আমিঃ স্যার ফোন করেছে। আমি রিসিভ করলাম।
-১০ মিনিটের ভেতর অফিসে দেখতে চাই। খুবই urgent. আর যদি
না আসো তাহলে আমি চলে আসবো। আর আমি আসলে কি হতে
পারে সেটা এখন একটু হলেও idea করতে পেরেছো?
-ফোন টা কেটে দিল। যেভাবে threat করলো তাকে উনি
অস্বাভাবিক কিছু করতেই পারে।
মাঃ কিরে কি সমস্যা? অফিসের বস তোর জন্য গাড়ি
পাঠিয়েছে আবার ফোন করে কি বলছে তোকে?
আমিঃ মা আমি ফিরে এসে সবকিছু বলবো। এখন আমাকে যেতে
হবে। আমি রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলাম।আজকে আর morning
জানানোর জন্য ওনার চেম্বারে যাইনি। উনিও আমাকে আজ আর
ডেকে পাঠাননি। আর আজকে একবারের জন্য আমার দিকে
তাকাননি। আমিই বারবার ওনাকে লক্ষ্য করছি। কেনো যেনো
ওনার এই ব্যবহারটা আমি নিতে পারছিনা। তারপর দেখলাম
নীলাকে ওনার চেম্বারে যেতে। আমি ওদেরকে লক্ষ্য করছি।
স্যার ওর সাথে অনেক ফ্রি ভাবে কথা বলছে। অনেক
হাসাহাসি করছে দুজনে। আমার চেম্বারের দিকে উনি একবারও
দেখছেনা যে আমি ওনাদের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার
একদমই এই দৃশগুলো সহ্য হচ্ছেনা। এখন যেটা করলো সেটা দেখার
জন্য আমি একেবারে প্রস্তুত ছিলামনা। স্যার ওকে একটা
ছোটো giftbox দিলো। দেওয়ার সময় উনি আড়চোখে বারবার
আমারদিকে তাকাচ্ছিলো। giftbox থেকে ঘড়ি বের করলো।
সেটা উনি নিজে ওর হাতে পরিয়ে দিলো। আমি চোখ সরিয়ে
নিলাম। এটা একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো মনে হচ্ছে।নীলা
বেরিয়ে এলো।
ও আমার কাছেই আসছে। অনেক খুশি খুশি লাগছে ওকে।
নীলাঃ মাহি,(exited হয়ে). I’m so happy. এই দেখো স্যার
আমাকে এই ঘড়িটা gift করেছে আর সেটা নিজেই পরিয়ে
দিয়েছে। ঘড়িটা অনেক দামি brand এর তাইনা?
আমিঃ হুম। সুন্দর। তো এটা তোমাকে স্যার কি উপলক্ষে gift
করলো?
নীলাঃ আমাদের কোম্পানি অনেক বড় একটা অর্ডার পেয়েছে
আমাদের কাজের দক্ষতার জন্য। তাই স্যার খুশি হয়ে এটা
দিয়েছে।
আমিঃ তাহলে তো সবাইকেই দেওয়া উচিত তোমার একা কে
দিল কেনো?
নীলাঃ তা তো জানিনা। may be স্যার আমার ওপর ইমপ্রেসড
হয়েছে?
আমিঃ খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেলো।হুহ
একদিনেই ইমপ্রেসড হয়ে গেছে। ঢং। যা খুশি করুক আমার কি।
কিন্তু আমি আর এখানে কাজ করবোনা। আজকে ছেড়ে দিবো।
রেজিগলেশন লেটার নিয়ে ওনার কাছে গেলাম।
– আসতে পারি?
-হুম। (আশফি)
– আমি আর চাকরিটা করতে চাচ্ছিনা। দয়া করে আমার
রেজিগলেশন লেটার টা গ্রহণ করুন।( উনি আমার দিকে একদম
তাকাচ্ছেনা।
-হুম গ্রহণ করবো। কিন্তু এখন নয় সন্ধ্যার পর।
-কেনো? সন্ধ্যার পর কেনো?
-আজকে সন্ধ্যাই আমার বাসায় একটা পার্টির arrangement
করেছি। সেদিনকার ঐ জাপানিজ ক্লাইন্টদের সাথে আমাদের
অনেক বড় একটা ডিল ফাইনাল হবে যেটার জন্য আমাদের
কোম্পানি দেশে 1st position এ থাকবে। আর সেখানে তোমাকে
প্রয়োজন হবে। তাই সন্ধ্যার পরেই তোমার লেটারটা গ্রহণ করে
তোমাকে এই এখান থেকে মুক্ত করে দিবো।
আমিঃ ওনার মুখে কথাটা এভাবে শুনে বুকের ভেতরটা মোচর
দিয়ে উঠলো। কিন্তু আমার তো খুশি হওয়ার কথা। উনিই বা
কেনো আমাকে এভাবে কথাটা বললো? তারমানে উনি কি
সত্যিই……………….না এসব ভালোবাসা বলে কিছু নেই এগুলো
আমি বিশ্বাস করিনা।
আশফিঃ কি হলো চুপ করে আছো কেনো?
আমিঃ হ্যা??? না কিছুনা এমনি। ঠিক আছে।(চিন্তার জগত
থেকে ফিরে)
আশফিঃ আজকে lunch এ ছুটি দিয়ে দিবো সবাইকে। সন্ধ্যায়
চলে এসো।
আমিঃ হুম। আসছি।
আশফিঃ হুম। আজকে তোমাকে সত্যিই মুক্ত করে দিব। আর
এখানে আসতে হবেনা। (মাহি চলে যাওয়ার পর বললো)
চলবে……….