সে কি জানে ! লেখাঃ ঈশানির তাসমিয়া ( মিরা )
সে কি জানে
“২০ বছর বয়সী মেয়েদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার মজাই আলাদা।।তোমার তো ২০ বছর তাই না।।তাছাড়া ১বার বিয়েও হয়েছে আর একটা ছেলেও আছে।।সো তুমি আমার বেড পার্টনার হিসেবে একদম পার্ফেক্ট,,,তাই না??” [ বাঁকা হেসে ]
সামনে থাকা ব্যক্তির এমন কথা শুনে আমার রাগ হওয়ার থেকে বেশি অবাক লাগছে,,,একজন অবিবাহিত ছেলে আমার অতীত জানা সত্ত্বেও আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেখতে এসেছে,,,তার উপর তার বাবা দেশের একজন নামকরা বিজনেস ম্যান,, আর সে একজন পুলিশ,,,ভাবতেও অবাক লাগছে,,একজন পুলিশের ভাষা এমন কেমনে হতে পারে??
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি আবার বললেন,,,,
—” কি ঠিক বললাম তো?? ”
—” দেখুন মিস্টার রেয়ান,,,আমি জানিনা আপনি এমন বাজে কথা কি জন্য আমাকে বলছেন,,,তার উপর বিয়ে করতে চাচ্ছেন,,,কেন??”
—” মিস….কি যেন নাম আপনার??”[ ভ্রুঁ কুঁচকে ]
কথাটা শুনে আমার মাথাটা আরও খারাপ হয়ে গেলো,,,আরে আমার নাম জানে না আর বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আমাকে দেখতে এসেছে,,, যত্তসব আবাল,,,ইচ্ছা করছে কথাগুলো মুখের উপর বলে দি,,,কিন্তু সে একজন অনেক বড় পসিসনের পুলিশ,,, বাজে ব্যবহার করা যাবে না,,,তাই মুখে হাসি রেখে বললাম,,,
—” আমার নাম মিরা,,,”
—” ও মরুভূমি।। তা যা বলছিলাম!! ”
—” এক্সকিউজ মি,,, আমার নাম মিরা,, মরুভূমি না ”
—” সে যাই হোক,,,শুনো আমি তোমার মতো মেয়েকে শুধু আমার বেড পার্টনার হিসেবে চাই,,,আর কিছু না,,,”
—“তাহলে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন কেন??”
—” তোমাকে যেন সমাজের মানুষ অন্য চোখে না দেখে,,আর বিয়ে না করলে আমারও নাম খারাপ হবে,,,তাছাড়া তোমরা তো অনেক গরিব,,তুমি আর তোমার মা তো হয়তো তোমার ছেলের লালনপালন করতে পারো না,, তাই আমি করব,,,এতে তোমার লাভও হবে,,, এখন তুমি বলতে পারো,,তোমাকেই কেন আমি বিয়ে করতে চাচ্ছি,,??একচুয়েলি আই লাইক ইউর বডি,,,প্রতিদিন তোমার শরীরের স্বাদ নিতে চাই,,,তাই বিয়ে করব,,,”[ বাঁকা হেসে ]
কথাটা শুনে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারলাম না।। বেয়াদবির লিমিট ছেড়ে চলে গেছে এ-ই লোক।।রাগে – জিদে পাশে তাকা চা উনার মুখে মেলা মারলাম।।আর চেঁচিয়ে উঠে বললাম,,,
(বিঃ দ্রঃ “ সে কি জানে Season 1, 2 ! লেখাঃ ঈশানির তাসমিয়া ( মিরা ) ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)
—” বের হন আমার বাসা থেকে এখনই।।আর কোনো দিনও যেন আপনাকে আমার আশেপাশে না দেখি।। বের হন!!”
রেয়ান কোনো কথা না বলে আমার দিকে রাগি ভাবে একবার তাকিয়ে তার গার্ডদেরকে নিয়ে চলে যান বাসা থেকে,,,,উনি চলে গেলেও আমার রাগ কমেনি,,,কি,, কি ভেবেছে-টা কি ও-ই লোক আমাকে,,,আমি আমার ছেলেকে লালন পালন করতে পারবো না,,, বেশ পারবো,,,আমার ছেলে আমার পরিচয়ে বড় হবে,,,ও-ই লোকের কি,,,আমাকে কি পতিতা মনে করে,,,আমার ১বার বিয়ে হয়েছে দেখে যা ইচ্ছা তা বলবে,,,আসলে মার কথা শুনে ওই লোককে বাসায় আসতে দেওয়াটাই আমার ভুল,,,
হঠাৎ মার ডাকে আমার ধ্যান ভাঙ্গে,,,,
—” কিরে,,,ছেলেটা এভাবে গেল গা কেন,,,কিছু কি উল্টাপাল্টা বলেছিস নাকি ছেলেটাকে??”
—” আমি কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলি নি মা,,ও-ই লোক বলেছে,,, কত বাজে বাজে কথা বলেছে আমাকে তুমি জানো??তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম মা,, আমি এভাবে থাকতে পারবো,,,আমার ছেলেকে আমি একা মানুষ করতে পারবো,,,কাউকে লাগবে না আমার”
মা আমার কথা শুনে করুন চোখে তাকায় আমার দিকে,,,,তারপর আস্তে করে আমার পাশে বসে আমার কাধেঁ হাত রাখে,,,আর নরম গলায় বলে,,,,
—” মাফ করে দে মা,,,আমি আসলে তোকে এত কষ্টে দেখতে পারছিলাম না,,,তাই যখন ছেলেটা বিয়ের প্রস্তাব দিলো তখন আর মানা করতে পারি নি,,,, আমি ভাবি নি এমন হবে,, মাফ করে দে মা ”
বলতে বলতেই মা কেঁদে দিলেন,,আসলে মা আমার অনেক ইমোসনাল,,,কথায় কথায় কেঁদে দেয়,,,হয়তো আমার কষ্টে উনি আরও বেশি কষ্ট পাচ্ছেন,,,আমি মুচকি হেসে মাকে জড়িয়ে ধরলাম,,,
—” কেঁদো না মা,,,শুভ যা করেছে তার জন্য ও শাস্তি পাবে,,,আর দেখবা,, আমরাও একদিন না একদিন সুখে থাকবো,,একবার আমার চাকরিটা ভালোভাবে হয়ে যাক,,,সব কষ্ট চলে যাবে আমাদের,,,তুমি আমি আর রিহান একসাথে আনন্দে থাকবো,,,”
এরপর মার চোখ মুছে দিলাম,,,এরই মাঝে আমার ছেলে রিহান এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল,,,আর বলতে থাকলো,,,
—” মা,,, তুমি আর নানু কি কান্না করেছো,,,তোমাদের চোখে পানি কেন??”
—” কই নাতো,,,আমরা তো হাসছি,,,এ-ই দেখ” ( .সে কি জানে )
বলেই আমি আর মা হেসে দিলাম,,,আমাদের হাসি দেখে আমার ছোট্ট ছেলেটাও হেসে দিলো,,,কি মায়া ওর ভেতর,,ওর জন্যই তো,,এত কিছু হওয়া সত্ত্বেও বেঁচে আছি,,,
রিহানের কপালে আদরমাখা একটাচুমু দিয়ে বললাম,,,
—” চকলেট খাবি,,,আয় নানু,,আমি আর তুই একসাথে চকলেট খাবো আর গল্প করব,,,ওকে”
—” হুম চকলেট খাবো – গল্প করব ”
বলেই রিহান খুশিতে নাচতে লাগলো,,আসলেই আমার ছেলেটা অনেক দুষ্টু,,সারাটা দিন দুষ্টুমি করবে,, আর নাচানাচি করবে,,,একে নিয়েই তো আমার পৃথিবী!!
এভাবে হাসি আনন্দে কেটে গেল দিনটা,,,, কিন্তু রাতে,,, রাতে তো আর আনন্দে থাকতে পারি না,,রিহানও যখন ঘুমিয়ে যায়,,তখন তো আমার শুভর কথা মনে পড়ে,,তাছাড়া ও-ই লোকটা,, যে আমাকে এতগুলো বাজে কথা বলল,,,,আসলেই কি এগুলো হওয়ার কথা ছিল আমার জীবনে,,,শুভ আর আমি তো ভালোই ছিলাম,,তাহলে এমন কেন হলো,,,কেন ও ছেঁড়ে চলে গেল আমাকে?? কেন ??
রাতটা এভাবেই কষ্টে কেটে গেল আমার,,,
সকালে উঠেই আগে রেডি হয়ে নিলাম,,কারন আজকে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে হবে আমার,,,রিহান এখনও ঘুমাচ্ছে,, তাই তার কপালে একটা স্নেহভরা চুমু দিয়ে আর মাকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলাম,,,,
.
.সে কি জানে
.
.
ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছি রিকশার খোঁজে,,,কিন্তু একটা রিকশাও পাচ্ছি না,,, তাই বাধ্য হয়ে হাঁটা ধরলাম,,,হঠাৎ একটা গাড়ি এসে আমার সামনে দাঁড়ালো,,,কথা নাই বার্তা নেই,, আমাকে গাড়িটার ভেতর জোড় করে ডুকালো,,,,ভেতরে ডুকতেই দেখি রেয়ান এক হাতে জুস খাচ্ছে আর অন্য হাতে ফোন টিপছে,,,কিছু করতে যাবো তার আগেই হুট করে কিছু লোক আমার হাত,, পা আর চোখ বেঁধে দিলো,,,,,
.
.
.
#চলবে so বিঃ দ্রঃ একটু নিচে ভালো করে লক্ষ করুন পরবর্তী পর্বের লিংক দেয়া আছে but
বিঃ দ্রঃ ” লেখাঃ ঈশানির তাসমিয়া মিরা ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন…………