সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 16
শ্বাশুড়ি মায়ের সব কথা শুনে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।এতোটা খারাপ ব্যাবহার আমি করেছি ভাবতেই আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।না জানি আহান কিভাবে সহ্য করেছে এসব।এতোগুলো বছর ধরে একটা মানুষ আমাকে ভালোবেসে এসেছে।এতোটা কস্ট পেয়েছে আমার জন্য আর আমি তাকে এতোকিছু শোনালাম? ভালোবাসে বলেই তো সইতে পারে নি উনি।যার জন্য মনে আঘাত পেয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে।উনার ভালোবাসা আর কস্টের মাঝে আমার এই কয়দিনের কস্ট তো কিছুই না।কথাগুলো মনে মনে ভেবে আমি ছুটে এলাম উনার কেবিনের সামনে।কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই নার্স আমাকে ইশারায় বুঝালো শব্দ না করতে উনি ঘুমাচ্ছেন।মুখে অক্সিজেন মাক্স। চোখ দু’টো বন্ধ।নার্স উনাকে একটা ইনজেকশন পুশ করে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললেন এবার ভেতরে যেতে পারেন ম্যাম।
আমি ছুটে উনির পাশে এসে বসলাম।কাঁপা কাঁপা হাতটা আমার উনার স্যালাইন দেওয়া হাতটার উপরে রাখলাম।উনার হাতের আঙুল গুলো নড়েচড়ে উঠলো।চোখের পাপড়িগুলো কেঁপে কেঁপে ওঠছে।আমি উনার চোখেমুখে ভালোবাসার পরস ছুঁইয়ে দিলাম।উনার হাতটা উঠিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় রেখে উনাকে ডাকলাম।
-আহান? আহান? আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন? আমি কিছু বলতে চাই শুনুন না?
নার্স এগিয়ে এসে বললো,
-কি করছেন কি ম্যাম? স্যারকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।
-ওহহ তাহলে কি উনার সাথে আমি কথা বলতে পারবো না?
নার্স ঠোঁট কামড়ে আমার দিকে তাকালো।মুখটা কালো করে আমাকে বললো,
-অবশ্যই পারবেন।দুই-তিন ঘন্টা পর ঘুম ভাঙলে তখন কথা বলতে পারবেন।
মেয়েটার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে স্বামী আমার না উনার।আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভালো ভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যাবেক্ষণ করছে।যেন মনে হচ্ছে আমার মতো একটা মেয়েকে কি দেখে সুপারস্টার আহান খান বিয়ে করলো?
নাহ! এই মেয়েকে উনার সাথে থাকতে দেওয়া যাবে না।হতেও পারে মেয়েটা উনার ফ্যান।যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে উনার সাথে? হয়তো মেয়েটা আমাকে দেখে উনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রেখেছে।যেন আমি উনার সাথে কথা বলতে না পারি।আমি ভেতরে ভেতরে এসব ভেবে মুখে হাসি ফুটিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আচ্ছা বোন আপনার কি আর কোনো কাজ আছে এখানে?
আমার এমন প্রশ্নে নার্সটা হতভম্ব হয়ে তাকালো।ভ্রু কুঁচকে, চোখ মুখ কালো করে আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
-না ম্যাম কেন?
-তাহলে যান আমি আছি উনার সাথে।
এবার যেন মেয়েটা স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকালো আমার দিকে।গদগদ স্বরে বললো আমাকে,
-না না ম্যাম। আমাকে এখানে থাকতে হবে।আমি তো নার্স কখন কি প্রয়োজন প্রেশেন্টের।আপনি চলে যান।
-কি বললেন আপনি? আমি চলে যাবো? ভুলে যাবেন না আমি উনার ওয়াইফ।ডাক্তারকে ডাকবো? বলবো আপনি আমার সাথে.. সুপারস্টার আহান খানের ওয়াইফের সাথে এভাবে কথা বলছেন?
-কিভাবে কথা বললাম? আমি তো শুধু…
-আপনার কানে কথা যায় নি? যেতে বলেছি আপনাকে আমি এখান থেকে। আর ডাক্তারের সাথে আমি কথা বলে নেবো।যেন একজন বয়স্ক নার্স উনার জন্য ব্যবস্থা করেন।
মেয়েটা কথা না বাড়িয়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসে।ফোনটা হাতে নিয়ে অনুরোধ সূচক ভঙ্গিতে বলে,
-ম্যাম।একটা সেলফি তুলি?
কথাটা বলতে দেরি আছে কিন্তু সেলফি তুলতে দেরি নেই। আমি রেগে বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে মেয়েটা দৌড়ে পালায়।
-আশ্চর্য! একজন অসুস্থ মানুষ। এমন অবস্থায় পরে আছে তার সাথেও সেলফি? কেমন ধরনের পাগলামো বলে এটাকে? (মনে মনে)
সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
দুই ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করে আছি এখনো উনার ঘুম ভাঙে নি।শ্বাশুড়ি মা এসে আমার কাঁধে হাত রাখলেন।আমাকে বললেন কিছু খেয়ে নিতে।উনার জ্ঞান ফিরলে নাকি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।আমি না চাইলেও অনেক জোড়াজুড়ি করে পাঠিয়ে দিলেন। আমাকে খেতে পাঠিয়ে শ্বাশুড়ি মা উনার পাশে বসলেন।
লাঞ্চের টাইম লাঞ্চ করছি।আমার উল্টো দিকে মাইশা আর রুহান। একদিন হয়েছে তাদের বিয়ের। তাতেই এতো ভালোবাসা দুজনের মাঝে। একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়ার শেষে মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে।
-রুহান আপনি বাড়িতে যান হসপিটালে আর কতোক্ষণ থাকবেন?
-জানেমান আমি থাকলে কি কোনো সমস্যা?
-সমস্যা কেন হবে? আমি আছি আমার আপুর সাথে। আপনি কেন এভাবে হসপিটালে পড়ে থাকবেন বলুন তো?
-তোমাকে ভালোবাসি তাই।তুমি যেখানে যেখানে থাকবে আমিও সেখানে সেখানে থাকবো।
-কথায় কথায় এতো ভালোবাসি বলবেন নাতো।আমার লজ্জা করে।মানুষ শুনলে কি ভাববে?
-কি ভাববে?
-ভাববে, রকস্টার রুহান খান এমন একটা বস্তির মেয়েকে কেন বিয়ে করলো?
কথাটা বলার সাথে মাইশার গালে পরলো এক চর।মাইশা গালে হাত দিয়ে রুহানের দিকে তাকিয়ে আছে।রুহান মুখটা ভারি করে অন্য দিয়ে ঘুরে আছে।মাইশা করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে রুহানের হাত টেনে বলছে,
-মারলেন কেন আমাকে? ওহহ বুঝেছি। একটা সত্য কথা বললাম বলে আফসোস হচ্ছে আপনার তাই না?
রুহান ঘুরে মাইশার দু’বাহু শক্ত করে চেপে ধরে।দাঁত কটমট করে বলে,
-বোকা বনে যাও।কিচ্ছু বোঝো না।মুখে যা আসে শুধু তাই বলতে থাকো। রাবিস!
মাইশাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে লাগে রুহান।মাইশা পিছন থেকে রুহানকে ডাকতে থাকে।
-এই আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছেন কেন? আমাকে টেনে বলে, এই আপু উনাকে আটকা না।চলে যাচ্ছে আমাকে রেখে।
রুহান দাড়িয়ে যায় ঘুরে মাইশার সামনে এসে রাগি দৃস্টিতে তাকায়।মাইশা চোখদুটো নিচু করে রেখেছে।আস্তে করে রুহানের হাত ধরে টেনে পাশে বসানোর চেস্টা করছে কিন্তু পারছে না।
-ছোটবেলা হরলিস্ক খাও নি?
মাইশা রুহানের হাতটা ছেড়ে দেয়। রুহান মাইশার পাশে বসে পরে। মাইশার কাঁধে মাথা রেখে বলে,
-বয়স কত তোমার?
-সতেরো!
-সিরিয়াসলি? কথা শুনে তো মনে হয় পাঁচ ছয় বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে।
-ওহহ তাহলে আমাকে এখন আপনার বাচ্চা মনে হচ্ছে?
-নয়তো কি? স্বামীটার কি ধরনের কথা অপছন্দ সেটাও বোঝো না।
ওদের দুজনের ভালোবাসা দেখছিলাম।এমন সময় শ্বাশুড়ি মায়ের ডাক পড়লো উনার ঘুম ভেঙেছে।আমি ছুটে উনার কেবিনে আসলাম।উনার পাশে বসে উনাকে কিছু বলতে যাবো উনি আমাকে দেখে নিজের চোখটা ঘুরিয়ে নিলেন।অক্সিজেন মাস্ক টা হালকা তুলে আস্তে করে বললেন এখান থেকে চলে যাও আরিশা।আমার সামনে আর এসো না।আমি উকিলের সাথে কাল কথা বলে নিয়েছি।আজ আমি অসুস্থ না হলে সকালের মধ্যেই ডিভোর্স পেপারটা তোমার হাতে পেয়ে যেতে।
-কি বলছেন আপনি?
-ঠিকই বলেছি।যেটা তুমি চেয়েছিলে সেটাই পাবে।
-আহান আমি।আমার কথাটা একবার..
-প্লিজ আরিশা।চলে যাও আমার সামনে থেকে।
হুট করে আমি বলে উঠলাম,
-এটা আপনার কোন মুভির এ্যাক্টিং আহান?
আমার কথায় উনি যেন বিস্মিত হলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-এ্যাক্টিং কেন হবে? তুমি আমার থেকে মুক্তি চেয়েছিলে তাই ডিভোর্স দিতে চেয়েছি।এখন চলে যাও এখান থেকে।
-তাই? চলে যাবো আমি? সত্যিই চলে যাবো? যাবো না আমি কোথাও।ডিভোর্স কেন দিবেন আমাকে? ভুলে যাবেন না আমি এখনো আপনার স্ত্রী।আমাকে ডিভোর্স আপনি কিভাবে দেন সেটা আমি দেখে নিবো।মজা করেন সবমসময় আমার সাথে। রাতে বলেন ভালোবাসি আর সকাল হলে বলেন ভালোবাসি না।মিস্টি মিস্টি কথা বলে আদর করে আবার ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলেন মুভির ডায়লগ। এই তাকান আমার দিকে।আপনার রাগ আছে আর আমার অভিমান নেই? আপনি রেগে আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন।আমার সাথে অশালীন ভাষায় কথা বলতে পারেন আর আমি কিনা কি বলে ফেলেছি সেটা ধরে রেখেছেন? নিজেকে অসুস্থ করে নিয়েছেন?
-আরু
-চুপপ করুন। আমাকে বলতে দিন। মা আমাকে সব বলেছে।
বিশ্বাস করুন আহান আমার কিচ্ছু মনে নেয় ছোটবেলায় কি করেছি।যার শাস্তি আপনি আমাকে এখন দিচ্ছেন।
চলবে,,,,,