সম্পর্কের মারপ্যাঁচ

সম্পর্কের মারপ্যাঁচ ! Part- 03

রুদ্র জানালার কাছে গিয়ে দেখলো শুমন দাড়িয়ে আছে।শুমনকে দেখে রুদ্রের রাগ আসমানে। সে কোনোরকম নিজেকে শান্ত করে,
“তুই এখানে কি করছিস? ” রুদ্র শুমনকে জিজ্ঞেস করলো।
শুমন কিছু বলার আগেই প্রভাতি বলে উঠলো,
“ভাইয়া দেখোনা শুমন ভাইয়া আমাকে এই চকলেট দিয়ে বলছে সে আমাকে ভালোবাসে।”
প্রভাতি এমন করে সব বলে দিবে শুমনের মাথায়ও আসেনি।
” তো তুমি কি বললে প্রভাতি?”
“আমি বলেছি এগুলো খারাপ কথা।এগুলা বলতে নেই।চাচি বলেছে।”
এবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে রুদ্র হেসে ফেললো।তার পেট ফেটে হাসি আসছে।এই মেয়ে এতো বাচ্চা কেনো।
“আচ্ছা তুই মায়ের রুমে যা দেখ রিয়ে এসেছে।” রুদ্র হেসে বললো।
প্রভাতি নাচতে নাচতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
“তুই যদি আর প্রভাতির আশেপাশে ঘুরেছিস তাহলে তোর হাত পা ভেঙে নদীতে ভাসিয়ে দিবো।” দাঁতে দাঁত চেপে বললো রুদ্র।
শুমন কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো।
প্রভাতির যেয়ে রিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
“আপু তোমাকে আমি কত মিস করেছি জানো?”

“আরে আমার পিচ্চিটা। ”
তখনি রুদ্র রিয়ার মাথায় একটা বাড়ি দিলো।
“এহহ নিজে এক পিচ্চি আবার আরেকজনকে পিচ্চি বলে।ভাব এমন বুড়ি হয়ে গিয়েছে।”
“উফ ভাইয়া তুমি না।দেখো খালামনি তোমার ছেলে আমার সাথে সবসময় এমন করে।”
” এই একদম জ্বালাবি না আমার রাজকুমারীকে।” রুবি বেগম বললেন।
তিথি চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
হঠাৎ রিয়া বলে উঠলো,
“আরে ওর সাথে তো তোমাদের পরিচয়ই করাইনি।ও তিথি আমার বেস্টু।আমরা সামনাসামনি বিল্ডিংয়ে থাকি।”
তিথি রুদ্রের মাকে সালাম দিলো।
রুবি বেগমের বেশ পছন্দ হলো তিথিকে।সে তাকে ডাক দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন।
প্রভাতির একটু খারাপ লাগলো।কেননা তার চাচি তাকে তো কোনোদিন এভাবে জড়িয়ে ধরেননি।অথচ চিনে না জানে না আর এই মেয়েকে এতো আদর।
“আচ্ছা তোরা সবাই ডায়নিংয়ে গিয়ে বস আমি খাবার দিচ্ছি।”
খাওয়ার টেবিলে বসতে গিয়ে দেখে রুদ্র, তিথির পাশের চেয়ারটা খালি শুধু।তার এতো খুদা লেগেছে যে এতো কিছু না ভেবেই সেখানে যেয়ে বসে পরলো খেতে।
তিথি তো খুশিতে আকাশে উড়ছে।এমনকি খেতে খতে টুকটাক কথাও বলছে রুদ্র তিথির সাথে।
রুবি বেগম খাওয়া রেখে তিথি আর রুদ্রের দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে।
“ইস এমন একটা ছেলের বউ পেলে মন্দ হতো না।” ভাবতেই তার ভালো লাগছে।
রিয়ার মায়ের চোখ এড়ালো না ব্যাপারটা।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার যার রুমে চলে গেলো।
রিয়া, তিথি প্রভাতির রুমে গেলো রেস্ট নিতে।রুদ্রও নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পরলো।
রুবি বেগম এবং রিয়ার মা আয়শা বেগম গল্প করছেন।
“শুন আমার না তিথিকে খুব পছন্দ হয়েছে রে।রুদ্রের সাথে বেশ মানাবে তাইনা বল।”
“বুবু তোমার ঘরে মেয়ে থাকতে তুমি বাহিরে কেনো দেখছো?”
“তুই কি সব ভুলে গিয়েছিস নাকি? ওকে আমার ছেলের বউ আমি কোনোদিন করবোনা।”
“আমি কিছু ভুলিনাই বুবু।কিন্তু প্রভাতি অনেক ভালো মেয়ে।আর দেখতেও তো মাশাল্লাহ। বড় হলে তো ও তিথির থেকেও সুন্দর হবে।”
“আমি এই ব্যাপারে তোর সাথে আর কথা বলতে চাইনা।বলেই রুবি বেগম ওপাশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন।”
“বুবু তুমি কবে সব ভুলতে পারবে?আর কতো।” মনে মনে বললেন আয়শা বেগম।
বিকেল দিকে তিথি রিয়া প্রভাতিকে নিয়ে ঘুরতে বেরুলো রুদ্র।তিথি রুদ্রের আশেপাশে থাকার প্রাণপন চেষ্টা করছে।রুদ্র এটা বুঝেও পাত্তা দিচ্ছে না।আর প্রভাতি সে তো রিয়ার সাথেই ব্যাস্ত। রুদ্রের দিকে তাকানোর সময় আছে নাকি তার।
রুদ্র প্রভাতির কাছে যেয়ে প্রভাতির চুল টেনে ধরলো।
“আহ ভাইয়া ব্যাথা পাচ্ছি তো।”

“আহা আমার পিচ্চিটা ব্যাথা পাচ্ছে।” রুদ্র আহ্লাদী গলায় বললো।
প্রভাতিব রাগি লুক নিয়ে রুদ্রের দিকে তাকালো।তাদের এমন খুনশুটি দেখে রিয়ার খুব মজা লাগছে।কিন্তু তিথি তা দেখে জ্বলে পুড়ে মরছে।
“দেখ তিথি ওদের দুজনকে একসাথে কত সুন্দর লাগে তাইনা?” রিয়া বললো।
এটা শুনে তিথি চটে গেলো।
“মোটেও না।রুদ্রের জন্য ঢাকার স্মার্ট মেয়ে দরকার।এমিন গ্রামের গাইয়া খ্যাত না।”
রিয়ার মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেলো তিথির কথা শুনে।
“এগুলো কোন ধরনের কথা।আর তুই এভাবে বলছিস কেনো? আর রুদ্র আমার ভাই মানে তোর ও ভাই।এমন নাম ধরে ডাকছিস কেনো।”
“রুদ্র তোর ভাই হতে পারে।আমার এতো ভাই বানানোর শখ নেই।” বলেই তিথি আগে আগে হাটা শুরু করলো।
রিয়ার ব্যাপারটা পছন্দ হলোনা।তার মনে খটকা লাগলো।
হঠাৎ প্রভাতি ইটের সাথে বেজে উস্টা খেয়ে পরে গেলো।বেচারির পা মচকে গিয়েছে।সে কি কান্না।
রুদ্র কোনো রকম প্রভাতিকে কোলে নিয়ে আবার বাড়ির দিকে ব্যাক করলো।
তিথির গা জ্বলে যাচ্ছে এটা দেখে।বাড়ির উঠানে রুবি এবং আয়শা বেগম বসে ছিলেন।রুদ্রের কোলে প্রভাতিকে দেখে রুবি বেগমের রাগ উঠলেও সে নিজের রাগকে হজম করলেন।কেনোনা তিথির সামনে সে নিজের ইমেইজ খারাপ করতে চায় না।
রিয়া ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে এসে প্রভাতির পায়ে দিয়ে দিচ্ছে।সেদিন রাতে সবাই খেয়ে যার যার মতো শুয়ে পরলেন।
পরের দিন সকালে তিথি রিয়া আয়াশা বেগম রুদ্রের সাথে বের হলেও রুবি বেগম প্রভাতিকে যেতে দেন নি।রুদ্রও তেমন জোর করেনি কেননা সে জানে কিছু বললেই তার মা প্রভাতিকে মারবে।
সবাই বাসা থেকে যাওয়ার পর রুবি বেগম রান্নাঘরে গেলেন।চুলার পাশে রাখা খুন্তিটা নিয়ে চুলায় দিয়ে গরম করলেন। তারপর সেই গরম খুন্তিটা নিয়ে প্রভাতির রুমে গেলেন।প্রভাতি তখন ঘুমোচ্ছে।তাকে যেতে দেয়নি বলে সে কানতে কানতে ঘুমিয়ে পরেছে।
গরম খুন্তিটা নিয়ে প্রভাতির পায়ে এলোপাথাড়ি বাড়ি শুরু করলেন।
ঘুম থেকে ধরফরিয়ে উঠলো প্রভাতি।সে যেনো কিছু বুঝেই উঠতে পারছে না।সে পুরো শক খেলো। প্রভাতি চিৎকার করতে লাগলো ব্যাথায়।
“চাচি মেরো না আমি মরে যাবো।”
“চুপ।আমার ছেলের কোলে উঠা তাইনা।আমার ছেলের সাথে ঘ্যাসাঘ্যাসি করার শুধু বাহানা লাগবে তোর তাইনা।পা মচকেছিলো? আজকে তোর পা আমি নিজের হাতে ভেঙে দিবো।”বলেই আরো জোরে মারতে লাগলো প্রভাতিকে।
” প্লিজ চাচি আমি কোনোদিন আর কথা বলবোনা রুদ্র ভাইয়ের সাথে। আমি তার থেকে দূরে থাকবো।আমাকে মেরোনা।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।প্লিজ মেরো না আমকে।”
প্রভাতির চিৎকার অনুরোধ কোনো কিছুই তার কানে যাচ্ছে না।একটা সময় থাকতে না পেরে প্রভাতি অজ্ঞান হয়ে গেলো।এটাও রুবি বেগমের চোখে পরলো না।মারতে মারতে এক সময় সে শান্ত হয়ে গেলো। খুন্তি টা রেখে প্রভাতির বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরেই বসে পরলো।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো কেউ কারো জায়গা থেকে নরলো না।প্রভাতির দেহ টা পাথরের মতো বিছানায় পরে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কোনো মূর্তি।
বিকেলে সবাই ফিরে এলো বাসায়।কারো কোনো সারা শব্দ না পেয়ে সবাই কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।রিয়ার মা সাহস করে ঘরে ঢুকলেন।প্রভাতির রুম সামনে থাকায় তার প্রথমে চোখ পরলো প্রভাতির রুমে।কিন্তু লাইট অফ থাকায় কিছু বুঝা যাচ্ছে না।তার মনে কেমন যেনো খচখচ করছে। সে রিয়াকে বললো তিথিকে নিয়ে রুদ্রের রুম্ব যেতে।
রিয়া তিথিকে নিয়ে চলে গেলো। রুদ্র তার খালার দিকে তাকিয়ে আছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
প্রভাতির রুমে ঢুকে আয়শা বেগম লাইট জ্বালালেন। প্রভাতির বিছানায় চোখ পরতেই তারা আৎকে উঠলো।প্রভাতি চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।বিছানার চাদরে রক্ত। রুবি বেগম এখনো মূর্তির মতো সেখা বসে আছে।রুদ্র দৌড়ে প্রভাতির কাছে গেলো।আয়শা বেগম যেয়ে তার বোনকে ডাকছে কিন্তু সে এখনো ঠাই বসে আছে।
“আমাকে মেরো না। আমাকে মেরো না।” প্রভাতি সেই কখন থেকে একই আলাপ বকে যাচ্ছে।রুদ্রের চোখে পানি এসে গেলো প্রভাতির এই অবস্থা দেখে। সে তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে কল দিলো।ডাক্তার এস্ব প্রভাতির পা ব্যান্ডেজ করে দিলো আর কিছু মেডিসিন দিয়ে গেলো।
আয়শা বেগম তার বোনকে উঠিয়ে কোনো রকমে তার রুমে নিয়ে গেলেন।রুদ্র প্রভাতির কাছ থেকে এক পা ও নড়লো না।আয়শা বেগম একটু পর প্রভাতির রুমে এলো।
“তুই তোর ঘরে যা।আমি ওর কাছে আছি।”
রুদ্র যেনো তার খালার কথা শুনতেই পেলো না।সে এক পা ও সেখান থেকে নড়লো না।প্রভাতির মাথার কাছেই বসে রইলো।
আর প্রভাতি সে তো কথা বলাই ভুলে গিয়েছে।এক দৃষ্টিতে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে প্রাণ ছাড়া একটা দেহমাত্র।
রিয়া তিথি রুদ্রের রুমে শুয়েছে।তারা এখনো জানেনা প্রভাতির সাথে কি ভয়ানক কান্ড ঘটে গিয়েছে।তিথি রুদ্রের রুমটা বেশ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।এখানে রুদ্রেএ ছোয়া আছে ভাবতেই ভালো লাগছে তার।
পরের দিন সকালে বাহিরের আলো চোখে প্রায় প্রভাতির ঘুম ভেঙে গেলো।পায়ে তার অসয্য যন্ত্রনা হচ্ছে। তার মনে পরে গেলো কাল রাতের সেই ভয়ানক কাহিনি।পাশে তাকিয়ে দেখলো রুদ্র হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। রুদ্রকে দেখে সে ভয় পেয়ে গেলো৷ ভয়ে চিৎকার করতে লাগলো।
“তুমি যাও তুমি যাও।আমার কাছে থেকো না।চাচি আমাকে মারবে।তুমি যাও তুমি যাও। ”
প্রভাতির চিৎকার শুনে রুদ্র এবং তার খালা ধরফরিয়ে উঠলো।তাদের বুঝতে কিছু সময় লাগলো যে হচ্ছেটা কি।কিন্তু প্রভাতির চিৎকার থামছেইনা।
রুদ্র না পেরে সেখান থেকে চলে গেলো।সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পুকুর পাড়ে যেয়ে বসে আছে। ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙে চুরে ফেলতে।তার মায়ের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।তার মা যে এতটা নিষ্ঠুর জানা ছিলো না তার।
রুদ্র উঠে তার মায়ের রুমে গেলো।
রুদ্র কিছু বলবে তার আগেই রুবি বেগম বললেন,
“তুই এখনি এখান থেকে চলে যা ওদের নিয়ে।তুই ওর হয়ে কথা বলতে আসবিনা। আর যদি ওর কাছে গিয়েছিস তার পরিনাম আরো ভয়াবহ হবে।
। রুদ্র সবার চোখ এড়িয়ে প্রভাতির ঘরে যায়।যেয়ে দেখে প্রভাতি বিছানায় বসে আছে।
“তুমি আবার আমার রুমে এসেছো? কেনো আমাকে মার খাওয়াতে? চলে যাও বলছি।”
“আমাকে মাফ করে দে। ”

“চুপ একদম। এই মার গুলো তুমি খেলে বুঝতে কেমন লাগে।আজ আমার মা বাবা নাই বলে তোমরা আমার উপর এমন অত্যাচার করো তাইনা।আমি এতিম না হলে কি আমাকে এভাতে মারতে পারতো।তোমরা সবাই খারাপ। যাও এখান থেকে।” বলেই প্রভাতি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
রুদ্র আর কিছু বলার পায়না।সেদিন রাতেই তারা ঢাকায় ব্যাক করে।
এর মাঝে কেটে গেলো দুটি বছর। রুদ্র এর মধ্যে ৪ বার বাড়ি গিয়েছে।প্রভাতির পারতোপক্ষে তার সামনে আসেনি।সেইদিনের সেই কষ্ট প্রভাতি আজো ভুলতে পারেনি।সেদিনের পর থেকে সে আর আগের মতো সেই বাচ্চা মেয়েটা নেই।সেই ছোট্ট প্রভাতি এখন ক্লাস ১০এ পড়ে। অনেকটা বড় এবং চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।
“প্রভাতি এই প্রভাতি কই গেলি এইদিকে আয়?”
চাচির ডাক পেয়ে প্রভাতি দৌড় দিলো। না জানি দেড়ি হলে আবার তাকে মার খেতে হয়।
হঠাৎ সে কারো সাথে ধাক্কা খেলো।পরে যাওয়ার ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।কিন্তু না সে পরলো না।কেউ তাকে ধরে আছে।চোখ খুলতেই সে সামনে থাকা মানুষটাকে দেখতে পেলো।প্রভাতি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।চেনার চেষ্টা করছে।তখনি…..
চলবে…..