তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 74

রাদিব সাহেবের বাড়িতে আজ খুশির আমেজ। একমাত্র ছেলের বিয়ে উপলক্ষে দুই মেয়ে আর নাতি-নাতনীরা এসে পাল্টে দিয়েছে বাড়ির পরিবেশ। ফাঁকা বাড়ি আজ বাচ্চাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে ভরপুর। রাদিব সাহেব নাতি-নাতনীদের দেখছেন আর অবাক হচ্ছেন তার কাছে মনে হচ্ছে এইতো সেদিন, ছোট্ট ছোট্ট রোদ-রুহি সারা বাড়ি ছুটে ছুটে খেলতো, উনি অফিস থেকে ফিরলেই উনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো,একটু বকলেই কান্না করে চোখ ফুলাতো।কিন্তু আজ তাদেরই ছেলেমেয়েরা গুটি গুটি পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরের আনাচে কানাচে। ছোট ছোট হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরছে। মেয়েরা যে কেন এতো তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়, কে জানে? রাদিব আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাঞ্জাবির কোণা দিয়ে চশমা পরিষ্কার করেন। চশমাটা চোখে পড়ে নিয়ে ড্রয়িংরুমে খেলারত বাচ্চাদের ডাকেন,
— নানুভাই? এইযে, নানুভাই? এদিকে আসো..

বাচ্চারা তাকায়। নানার ডাকে একছুটে এসে দাঁড়ায় উনার সামনে। রাদিব সাহেবের চোখে- মুখে সুখের হাসি। এই বাচ্চা তিনটির মাঝেই যেন মেয়ে দুটোর প্রতিচ্ছবি দেখতে পান তিনি। দুর্বল হাতে পাঞ্জাবির পকেট থেকে চকলেট বের করে তিনজনের হাতেই দুটো করে চকলেট দেন। বাচ্চারা চকলেট পেয়েই রাদিব সাহেবের গালে চুমু দিয়ে দৌঁড় লাগায়। রাদিব সাহেব হেসে খানিকটা দূরে চেয়ার টেনে বসেন। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বাচ্চাদের খেলা দেখেন। আজ থেকে ২০ বছর আগে এভাবেই ছুটে ছুটে খেলা করতো রোদ,রুহি আর রাহাত। চকলেট পেয়ে নিজের ভাগের থেকে অর্ধেকটা ছোট বোনের দিকে এগিয়ে দিতো দুজনেই। এটা বোনের প্রতি ভালোবাসা বুঝানোর এক অদ্ভুত পদ্ধতি ছিলো তাদের। একের পর এক চেয়ার সাজিয়ে গাড়ি গাড়ি খেলছে বাচ্চারা। খেলার মাঝেই নিজেদের চকলেট থেকে একটা চকলেট শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দেয় আদ্র-রোদ্র। এমনটা করতে কেউ শিখিয়ে দেয় নি তাদের তবু কাজটি প্রায়ই করে তারা। হাতে কিছু পেলে তার অর্ধেকটা বোনকে দেওয়া যেন এক অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। রাদিব সাহেব চমকে উঠেন। পৃথিবীটা ভারি অদ্ভুত! ঘটনার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে মানুষকে চমকে দেওয়াটা যেন এক খেলা। চমকে দেওয়ার খেলা। শুভ্রতার প্রতি বরাবরই খুব দুর্বল রাদিব সাহেব। রোদ যখন ডাক্তারদের হতাশা নিয়ে বিছানায় পড়ে ছিলো তখন রাতের পর রাত এই বাচ্চাটার কথায় ভেবেছেন উনি। মা ছাড়া দু’দিনের এই বাচ্চাটা থাকবে কিভাবে? বাবা হাজার আদর দিলেও কি মায়ের আদর পূরণ হয়? এই চিন্তা থেকেই রোদের মায়ের সাথে শুভ্রর আবার বিয়ে করা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন উনি। বাচ্চাটার জন্য হলেও শুভ্রকে আবার বিয়ে করা উচিত। মেয়ের যে ভরসা নেই। কে জানে প্রাণ ফিরে পাবে কিনা? নাতনীর ভবিষ্যৎটাও তো দেখতে হবে তাদের। এই কথাটাই কিভাবে যে শুভ্রর কানে গিয়েছিলো কে জানে? এই নিয়ে শুভ্রর কি রাগ। শুভ্রতার আশেপাশেও ঘেঁষতে দেয় নি তাদের। মেয়ের জন্য কাউকে চায় না শুভ্র না চায় রোদের জন্য। সে বেঁচে থাকতে এই দুটো মানুষকে কারো দয়ার প্রয়োজন নেই আর না হবে। শুভ্রর রাগ ভাঙতে দু দুটো মাস লেগেছিলো রাদিব সাহেবের। সেদিন তিনি কেঁদেছিলেন। কষ্টে নয় মেয়ের স্বামী ভাগ্য দেখে খুশিতে কেঁদেছিলেন উনি। কিছুক্ষণের মাঝেই রোদদের বাড়িতে এসে পৌঁছালো সাহেল-নাবিলা। সাথে আছে একমাত্র ছেলে সাদাফ। জেনি আর হ্যারিও এসে পৌঁছেছে সেই ভোরে। চিত্রা দু’দিন আগে চলে এলেও শিশির আসে নি। সে আসবে বিয়ের আগের দিন রাতে। রুহুন-সাব্বিরও বিকেলের দিকে পৌঁছে যাবে।
অফিস থেকে ছুটি নিতে গিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তাদের। দু’জনেই এখন বিবাহিত, বউরাও সাথে আসছে তাদের। রাতুল-সাকিব তো আছেই সাথে আছে ভার্সিটি ক্রাশ শ্রেয়া এবং হারের ডাক্তার আহান। শ্রেয়া এখন বিবাহিত। তার স্বামী ডিফেন্সে আছে। ডাক্তার আহানও দু’মাস আগে বিয়ের পিড়িতে বসেছেন। পরশো তার হানিমুনে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু রোদের রিকুয়েষ্ট আর দাওয়াত পেয়ে হানিমুনে যাওয়ার ডেটটাই পিছিয়ে দিয়েছে বেচারা।

বিকেল ৪ টা। মেয়েরা হলুদ শাড়ি আর ছেলেরা লুঙ্গি আর সেন্টো গেঞ্জি পড়েছে। লুঙ্গি পড়া নিয়ে সে কি হাঙ্গামা। শুভ্র কিছুতেই লুঙ্গি পড়বে না। সেন্টো গেঞ্জি পড়ে মেয়েদের সামনে ঘুরে বেড়ানোটাই বিশ্রী লাগছে তার। তারওপর লুঙ্গি, ইম্পসিবল! সাহেল, সাব্বিররা অনেক দস্তাদস্তি করেই শুভ্রকে লুঙ্গি পড়তে রাজি করিয়েছে। কিন্তু ফেসাদে পড়েছে বেচারা হ্যারি। জীবনেও লুঙ্গি পড়ে নি সে৷ লুঙ্গি নামে কোনো পোশাক আছে তা এই বাংলাদেশে এসেই জেনেছে সে। তার কাছে ভারি অদ্ভুত একটি পোশাক হলো লুঙ্গি। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা। সাহেল আর রুহুন মিলে খুব কৌশলে লুঙ্গি পড়িয়েছে হ্যারিকে। লুঙ্গি পড়ার পর থেকেই কোমর চেপে ধরে চেয়ারে বসে আছে হ্যারি। তার ধারনা, দাঁড়ালেই খুলে পড়ে যাবে এই পোশাক। আদ্র-রোদ্রও ছোট ছোট লুঙ্গি পড়েছে। দু’পা এগুতেই লুঙ্গি খুলে পড়ছে নয়তো লুঙ্গিতে পা বেজে নিজেরাই উল্টে পড়ছে। সাদাফ হলুদ ফতুয়া আর সাদা হাফপ্যান্ট পড়ে এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করছে। শুভ্রতা হলুদ ফ্রক পড়ে ভাইদের সাথে পানি ছুঁড়াছুড়িতে মেতে উঠেছে। কিছুক্ষণ পর পর পায়ে ঝুমঝুম শব্দ করা নুপুরের দিকে তাকাচ্ছে। এ বাড়িতে আসার সময় দিদা পড়িয়ে দিয়েছে এই নুপুর। জিনিসটার নাম না জানলেও এর ঝুমঝুম শব্দটা খুব পছন্দ হয়েছে শুভ্রতার। চিত্রা হলুদ শাড়ি পড়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই শিশিরের সাথে তুমুল কথা-কাটাকাটি হয়েছে তার। কথা-কাটাকাটির মূল কারণ “শিশিরের না আসা”। যদিও যা বলার চিত্রাই বলেছে শিশির শুধু চুপচাপ শুনে গিয়েছে তবুও চিত্রার মন মানছে না। হলুদে সবাই রোমান্স করবে আর তার হাজবেন্ট বাসায় বসে ল্যাপটপে কাজ করবে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে।ছেলেরা ইতোমধ্যে গান ছেড়ে দিয়ে নিজেদের ক্রিয়েটিভিটি দেখানো শুরু করে দিয়েছে আর মেয়েরা হলুদের বাকিসব রীতি পালনের আয়োজন করছে। শুভ্রর গায়ে সাদা- সবুজ চেইকের লুঙ্গি আর সাদা সেন্টো গেঞ্জি। গলায় ঝুলছে লাল গামছা। সিল্কি চুলগুলো কপালের অর্ধেকটাই ঢেকে রেখেছে। ভ্রু দুটো কুঁচকে এদিক সেদিক তাকিয়ে রোদকে খুঁজছে সে। বাগানের এককোনায় শুভ্রতাকে পানি দিয়ে খেলতে দেখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে তার মুখে। মেয়ের মাকে খুঁজে না পেলেও মেয়েকে তো খুঁজে পাওয়া গেছে তাতেই রক্ষে। শুভ্র কিছুটা এগিয়ে গিয়ে শুভ্রতাকে ডাকে,
— প্রিন্সেস? বাবা ডাকে, এদিকে এসো। ফাস্ট…
শুভ্রতা বাবাকে দেখে দৌঁড়ে আসে। সারা শরীর ভিজে চুপচুপে তার। মেয়ে সামনে এসে দাঁড়াতেই ভ্রু কুঁচকে তাকায় শুভ্র,
— জামা ভেজা কেন, মা? ঠান্ডা লাগবে তো তোমার আম্মু কোথায়?
শুভ্রতা ভারি পল্লব ঝাঁকিয়ে পিটপিট করে বাবার দিকে তাকায়,
— আম্মু খেয়ছে।
শুভ্র ভ্রু কুঁচকায়। রোদের কেয়ারলেসে খুবই বিরক্ত সে। নিজের কথা নাহয় বাদই দিলো মেয়েটার দিকে খেয়াল রাখার সময়টাও কি নেই তার?শুভ্র মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে জিগ্যেস করে,
— কোথায় খেলছে তোমার আম্মু?
শুভ্রতা একহাতে বাবার গলা জড়িয়ে অন্যহাতে স্টেজের দিকে ইশারা করে বলে,
— ওইতে..
শুভ্র মেয়েকে নিয়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়। চারপাশে তাকিয়ে রোদকে খুঁজে। রোদ স্টেজের এক কোণে কিছু একটা করছিলো। শুভ্রর ডাক কান পর্যন্ত পৌঁছায় না তার। এতো গান বাজনায় না শোনারই কথা। স্টেজে মেয়েদের ভীর থাকায় সেদিন আর পা বাড়ায় না শুভ্র। মেয়েকে নামিয়ে দিয়ে আম্মুকে ডেকে আনতে বলে সে। শুভ্রতা বাবার কথা মতো এগিয়ে যায়। কিন্তু প্রতি পা এগুতেই থামতে হয় তাকে। যার পাশ দিয়েই যায় সে-ই দাঁড় করিয়ে গালে-কপালে চুমু দিয়ে দেয় নয়তো গাল ধরে টানে। শুভ্রতা ঠোঁট উল্টে একবার বাবার দিকে তাকায়। এদের এতো এতো আদরে মেয়ে বিরক্ত আর মেয়ের বাপ মহাবিরক্ত। আদর নামক অত্যাচার সহ্য করে মায়ের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় শুভ্রতা৷ মায়ের আঁচল টেনে ডাকে,
— আম্মু? আম্মু?
রোদ ফিরে তাকায়। মেয়ের ভেজা শরীর দেখেই চমকে ওঠে, না জানি কতক্ষণ যাবৎ ভেজা শরীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে মেয়েটা। মেয়ের গালে কপালে হাত দিয়ে গায়ের তাপ পরিক্ষা করে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। শুভ্রতা মায়ের চুল নিয়ে খেলতে খেলতে মৃদু স্বরে বলে,
— জয় নেই তো। বাবা দাকে তোমায়….ওইতে..
রোদ কপালে চুমু এঁকে দিয়ে শুভ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শুভ্র রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। মেয়ের প্রতি বেখেয়ালিপনা একদমই সহ্য করে না সে। রোদ ইনোসেন্ট মুখে ঠোঁটের ইশারায় সরি বলে শুভ্রতাকে নিয়ে ঝটপট বাসার ভেতরে ঢুকে যায়। শুভ্রও মাথা চুলকাতে চুলকাতে রোদের পিছু নেয়। ওদের সবকিছুই খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করে জেনি। নিজেও ওঠে যায় ওদের পিছু পিছু। রোদ মেয়ের শরীর মুছে দিয়ে কাপড় পাল্টে দেয়। চুল আঁচড়ে কপালে চুমু দিয়ে আদুরে গলায় বলে,
— আম্মু? গায়ে পানি লাগাবে না আর। তাহলে কিন্তু ঠান্ডা লেগে যাবে। ভাইয়াদের সাথে লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে খেলবে। একদম দুষ্টুমি করবে না। তুমি না বাবার প্রিন্সেস? প্রিন্সেসরা সব কথা শুনে। কি মনে থাকবে?
শুভ্রতা মাথা দুলিয়ে মায়ের গালে টুপ করে একটি চুমু দিয়েই দৌড়ে পালায়। শুভ্র এতোক্ষণ দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। শুভ্রতা বেরিয়ে যেতেই খপ করে রোদের কোমর চেপে ধরে সে। দুষ্টু হাসি দিয়ে হাতের মুঠোয় থাকা লাল রঙে রাঙিয়ে দেয় ফর্সা পেটের অনেকটায়। রোদ নড়ে উঠতেই ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে,
— নো নড়াচড়া। চুপচাপ দাঁড়াও । পুরো দু’ঘন্টা ধরে খুঁজেও দেখা পাওয়া যায় না আপনার। এতো কেন বিজি আপনি?
— ভাইয়ের বিয়েতে বিজি থাকবো না?
— না থাকবেন না। আর এতো সুন্দর করে সেজেছেন কেন? আপনার এই সাজে কেউ যদি হার্ট অ্যাটাক করে তার দায়ভার কে নিবে শুনি? আমার কিন্তু অলরেডি বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। এখন আমার চিকিৎসার প্রয়োজন। আর এই চিকিৎসার একমাত্র ঔষধ হলো “রোদপাখি”।
— বাইরে বেশ ভালো রোদ আছে। সেখানে বসে বসে পাখি তাড়ান। তাহলেই হয়ে যাবে রোদ+পাখি= রোদপাখি। এবার আমায় ছাড়ুন। সবাই খুঁজছে হয়তো।
— খুঁজুক। খুঁজতে খুঁজতে শহীদ হয়ে যাক। আগে হার্ট অ্যাটাক থেরাপি নিবো তারপর ছাড়াছাড়ি৷ সিরিয়াসলি রোদপাখি, তোমায় কিন্তু ব্যাপক লাগছে। প্রচুর হটটট….
— অসভ্য!
— অসভ্যই তো হতে চাই। মেয়ে নেই আশেপাশে, অসভ্য হওয়ার এটাই তো সুযোগ রোদপাখি….
কথাটা বলেই চোখ টিপে শুভ্র। রোদ অসহায় চোখে তাকায়। জেনি মুচকি হেসে জানালার পাশ থেকে সরে দাঁড়ায়। আবারও হাঁটা দেয় বাগানে। ডায়েরির প্রতিটি পাতায় লেখা শব্দগুলোকে জীবন্ত দেখতে চায় সে। সেই ভালোবাসা, সেই রাগ,সেই কোমলতা আর সেই মিষ্টি সম্পর্কগুলো.. সব দেখতে চায় সে সব।

আজ রাহাতের বিয়ে। সবাই সাজুগুজু করে হুলস্থুল। জেনিও সেজেছে আজ। সবসময় শার্ট,প্যান্ট পড়া মেয়েটা রোদের রিকুয়েষ্টে লেহেঙ্গা পড়েছে আজ। লেমন কালারের লেহেঙ্গায় একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তাকে। হ্যারির গায়েও লেমন কালারের শেরওয়ানি। সোনালি চুলগুলো সুন্দর করে গোছানো। দৃষ্টি অস্থির। বাংলাদেশ আসার পর থেকেই জেনিকে নব নব রূপে দেখছে সে। কখনো শাড়ি আবার কখনো লেহেঙ্গায় মাতাল করা সৌন্দর্যে পাগল হচ্ছে হ্যারি। যতবার তাকাচ্ছে ততবারই বুকে হালকা পাতলা ব্যাথা করে উঠছে তার। কি অদ্ভুত সেই ব্যাথা! সবাই তৈরি হয়ে নিয়ে দুপুর ২ টো নাগাদ বেরিয়ে পড়লো কনের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে যে যার মতো আনন্দে মেতে উঠলো। হ্যারি মেতে উঠলো ছবি তোলায় আর জেনি চারপাশটা দেখায়। বিয়ে বাড়ির মাঝ বরাবর ফাঁকা জায়গায় রোদ-শুভ্র, নাবিলা-সাহেলসহ সকলেই আড্ডায় মেতে উঠেছে। ওদের থেকে কিছুটা দূরে ডেকোরেশনের ফুল ধরে টানাটানি করছে আদ্র-রোদ্র। গেইটের কাছে সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রতা আর সাদাফ। শুভ্রতা আজ লাল লেহেঙ্গা পড়েছে। ছোট্ট শুভ্রতার জন্য লেহেঙ্গা সামলানোটা কঠিন হলেও মায়ের মতো ড্রেস পড়তে পেরে ভীষন খুশি সে। সাদাফের গায়ে লাল শেরওয়ানি। সাদা ধবধবে শরীরে লাল রঙটা নজরকাড়ছে সবার। স্ট্রেট চুলগুলো সমান হয়ে পড়ে আছে কপালে। জেনি আরেকটু এগিয়ে যেতেই খেয়াল করলো সাদাফ শুভ্রতার ওড়না ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর ভ্রু কুঁচকে অন্যান্য মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছে। জেনি বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকালো, সাদাফের এভাবে মেয়েদের দিকে তাকানোর কারণটা ধরতে চেষ্টা করছে সে। সাদাফ কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা খেয়াল করে হাতে থাকা ওড়নাটির দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে আবারও মেয়েদেরকে দেখে নিয়ে ওড়নাটা শুভ্রতার গলায় জড়িয়ে লম্বা অংশটুকু পেছনদিক থেকে ঘুরিয়ে এনে ধরিয়ে দিলো শুভ্রতার বামহাতে। ওড়না সমস্যা সমাধান হওয়ায় সাদাফের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো শুভ্রতা। সাদাফ শুভ্রতার হাসিকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বিরক্তি ভাব নিয়ে পাশে রাখা সোফায় গিয়ে বসলো। জেনি সাদাফকে যতোবারই দেখছে ততবারই অবাক হচ্ছে। এই বয়সেই সবকিছুই এতোটা ম্যাচিউরিটির সাথে কিভাবে করে সে, বুঝে উঠে না জেনি। শুভ্রতা এদিক ওদিক তাকায়।হয়তো বাবা-মাকে খুঁজছে সে। কিছুক্ষণ অনুসন্ধান চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে সাদাফের পাশে গিয়ে বসে। সাদাফ গম্ভীর মুখে তাকাতেই শুভ্রতা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
— আম্মু যাবো।
সাদাফ ভ্রু কুঁচকায়। বিরক্তি নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজে সে।সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শুভ্রতার হাত ধরে শুভ্রদের দিকে এগিয়ে যায়। জেনি নিজের মনেই হেসে ওঠে বিরবির করে বলে, “ফিউচার লাভ বার্ডস্”
#চলবে…