সবসময় কি এমনই হয়

সবসময় কি এমনই হয় !! Part- 07( সমাপ্তি )

সময় আপেক্ষিক। কোন বিষয়ে এটা দীর্ঘস্থায়ী আবার কোন কোন বিষয়ে ক্ষণস্থায়ী। সুখের মুহূর্ত গুলো খুব দ্রুত কেটে যায়। মনে হয়, ইস!! সময়টা যদি আরো দীর্ঘ হত! আর বিষাদের মুহূর্তগুলো? তখন তো সময় কাটতেই চায় না। একেকটা সেকেন্ড হয়ে যায় মিনিট, আর মিনিট গুলো ঘন্টার মত তিক্ত।

ফারিয়ার বাবা তার মেয়েকে বেআইনিভাবে বিয়ে দিতে চাননি। ফারিয়ার 18 বছর না হাওয়ায় তাদেরকে আরো এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। এই এক বছর খুব দ্রুত কেটে গেছে। কারণ তাদের সঙ্গে ছিল একরাশ ভালোবাসা। এক বছর অপেক্ষার পর এলো সেই বহুল প্রতীক্ষিত দিন……. সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

পার্লার থেকে একজন মহিলা এসে একটু আগেই সাজিয়ে দিয়ে গেছে ফারিয়াকে। ফারিয়া সাজার অনেক শখ। সে কল্পনাও করতে পারিনি তার এই সখটা পূর্ণ হবে। ওকে ঘিরে রেখেছে ওর সব কাজিনরা। ওর সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত সবাই। ফারিয়ার আব্বু এরকম সাজানো-টাজানোর পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু বাধ সেধেছে ফারহান। সে বলেছে, তার বউ পুরোপুরি সাজবে, শাড়ি পরবে। সে দেখতে পারলেই হয়। আর কেউ দেখবে না‌। আর ওর পর্দা রক্ষার পুরো দায়িত্বটাই ফারহান নিয়েছে। লাইফে প্রথম সাজার এক্সপেরিয়েন্স। ফারিয়া অত্যন্ত খুশি। গায়ে হলুদ উদযাপন হয়নি, আর স্টেজ, গান-বাজনা তো দূরের কথা। বিয়ের অনুষ্ঠানে মহিলা আর পুরুষদের আলাদা খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ফারহান এসব হাসিমুখে মেনে নিয়েছে‌। এত তারাতারি…… এত পরিবর্তন! তাও শুধুমাত্র ফারিয়ার জন্য। ওকে কেউ এতটা ভালোবাসে….. এতটা!!.ফারিয়ার সব স্বপ্নের মত লাগে।

কোনরকম বাধা বিপত্তি ছাড়াই রাত 9 টার দিকে বিয়ে পড়ানো হয়ে গেল। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ফারিয়া তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করল। বাবার থেকে দুয়া নিল ফারহান ও নিজে। ওরা যখন গাড়িতে উঠলো তখন প্রায় দশটা বেজে গেছে। শাড়ি, গহনার ওপর একটা ঢোলা বোরকা আর দোপাট্টা নিকাব পড়ে নিয়ে ফারহানের সুদৃশ্য সাজানো গাড়ি উঠে বসলো ও। আর ফারহান তার পাশে।

_কি এখন সব ঠিক তো!
_……………..
_তুমি কি খুশি না??
_দেখুন না! আমার সাজটা কি নষ্ট হয়ে গেছে?
ফারহান হেসে বললো,
_এত তাড়াহুড়োর কি প্রয়োজন! বাড়িতে গিয়ে ভালো করে দেখব। ওকে??
ফারিয়া লজ্জা পায়। কথা বলে না।
_বললা না! তুমি কি হ্যাপি??
_অবশ্যই! না হওয়ার কি আছে!!
_হু।

ফারহানের বাড়ি ওরা পৌঁছে গেল 20 মিনিটের মধ্যেই। বিশাল বড় বাড়ি পুরোটা সাজানো। ফারিয়া কিছুটা অবাক হল। ফারহানের কাজিনরা ফারিয়াকে অপূর্ব সুন্দর করে সাজানো একটা রুমে বসিয়ে দিয়ে গেল। ফারিয়া আবার অবাক হলো। অবাক দৃষ্টিতে চারো দিকে দেখতে লাগলো।সব বাসর ঘর সাজানো হয় রজনীগন্ধা আর লাল গোলাপ দিয়ে। কিন্তু এটা সাজানো লাল গোলাপ আর সাদা গোলাপের সংমিশ্রণে। ধবধবে সাদা বিছানায় লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ শেইপ করা। যেদিকেই চোখ যায় লাল আর সাদা। উফফ……. জাস্ট অসাধারণ!! এটা কি উনার চয়েজ! তাহলে তো ওনার চয়েজের প্রশংসা করতেই হয়।

ফারিয়া মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তখনই ওর খেয়াল হয়, হায়! এটা কি করলো ও। ফারহান ওকে সাজতে বলল। আর ও ফারহানকেই সাজ না দেখিয়ে ধুয়ে ফেলল!

ফারিয়ার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে দরজায় কড়া নাড়লো ফারহান। ফারিয়া চমকে উঠে ঠিক হয়ে বসে। ফারহান ধীর পায়ে হেঁটে ভিতরে প্রবেশ করে। ফারিয়া স্নিগ্ধ শান্ত কন্ঠে ফারহানকে সালাম দেয়। ফারহান জবাব দিয়ে ফারিয়ার কাছে বসে। তারপর ওকে ভালভাবে দেখতে থাকে…….
রক্তলাল বেনারসিতে ফারিয়াকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। লাল শাড়িতে কাউকে এতটা সুন্দর লাগতে পারে!! ফারিয়ার দেহের ধবধবে সাদা রংয়ে লালটা যেন আরো বেশি উজ্জলতা পেয়েছে। ফারিয়া মাথা নিচু করে রেখেছে। ফারহান ওর থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করতেই, ফারিয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
_মেকআপ টা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই…….
ফারহান হেসে বলে,
_তুমি আমাকে ভয় পাও দেখা যায়! মেকআপ দিয়ে কি হবে! তোমাকে মেকআপ ছাড়াই অত্যন্ত সুন্দর লাগছে। আর আমার মেকআপ সুন্দরীদের এমনিতেও পছন্দ না।
_তাহলে আপনি আমায় সাজতে বললেন কেন?
_কজ……আমি জানতাম! তোমার সাজার অনেক শখ।
_সত্যি ভাইয়া!! আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভা……..
ফারিয়া থেমে যায়। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ফারহানের দিকে তাকায়। ছিঃ!! নিজের বরকে ভাইয়া ভাইয়া করছে!
ফারহান কপট রাগ দেখাতে গিয়েও হেসে দেয়।
_এবারও জন্য মাফ। পরেরবার কিন্তু আর হবে না…….
কিছুক্ষন নিস্তব্ধতা। ফারিয়া অস্বস্তি বোধ করছে। তখন ফারহান বলে উঠে,
_এখনই ঘুমিয়ে পড়বা? চলনা! আমরা একটু ছাদে গিয়ে গল্প করে আসি!!
ফারিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। লোকটা তাকে অনেক বুঝে। ফারিয়া মাথা নাড়ে।
ফারহান ওকে নিয়ে ছাদে আসে। ফারিয়া তৃতীয়বারের মতো অবাক হয়। পুরো ছাদ সুন্দর করে সাজানো। আর দোলনাটা……অপূর্ব! অপূর্ব!! লাল সাদা গোলাপ দিয়ে দোলনাটা এমনভাবে আচ্ছাদিত যে মনে হচ্ছে, এটা গোলাপেরই তৈরি কোন দোলনা।

_সবকিছু প্রি প্ল্যানড! কেমন লেগেছে তোমার??
_ভালো! অনেএএক ভালো!!
ফারহান ওকে নিয়ে দোলনায় কে বসে ওর হাতটা নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে,
_আল্লাহর সৃষ্টি সবই সুন্দর। সবারই একটা নিজস্বতা আছে। কিন্তু আমার চোখে তুমিই সবচেয়ে সুন্দর! সবথেকে বেশি!!
ফারিয়ার চুপ করে থাকে।
_আমাকে কখনো কষ্ট দিবে নাতো মায়াবতী!!
_……………….
_দিবে….??
_উহু।
_চুপ করে আছো যে ! আমরা কিন্তু গল্প করতে এসেছি।
_আমি ভাবছি…. সবকিছু কেমন নাটকীয়ভাবে হয়ে গেল তাই না!!
_হ্যাঁ !! আমার অত ভাবাভাবি নেই। তোমাকে পেয়েছি যথেষ্ট।
_আচ্ছা বলুন না……” সব সময় কি এমনই হয়!!”
_এমনই বলতে?
_এই যে… কি থেকে কি হয়ে গেল!! আমি কি ভাবতেও পেরেছি! আপনার সাথে আমার বিয়েটা হবে।
ফারহান মুচকি হেসে বলে,
_নাহহ! সব সময় এমন হয় না। এর জন্য অনেক কিছুর দরকার হয়। প্রবল ভালোবাসা, ইচ্ছাশক্তি। আর দরকার হয় বিচক্ষণ সুন্দর মনের অভিভাবক। লাইক, তোমার আব্বু। যিনি শুধু সন্তানের ভালোই না খুশির দিকটাও খেয়াল রাখেন।
ফারিয়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফারহানের কথাগুলো শুনতে থাকে। ফারহান আবারো বলে ওঠে,
_আচ্ছা!! রিয়া বলতে পারো….? সবকিছুর মূলে কী রয়েছে??
_কি??
_আল্লাহর হুকুম!! এ ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব না। আসো… আসো! আমরা শুকরিয়া স্বরূপ কিছু নফল নামাজ পড়ে নিই……………

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *