তুমি আমার ভালোবাসা

শারীরিক সম্পর্ক- তুমি আমার ভালোবাসা !! Part- 20

.
প্রিয়ার অঝোর চোখের পানি শিহাবের হৃদয় স্পর্শ করতে পারছেনা। শিহাব কিছুই ক্লিয়ার করে বলছেনা। সবকিছুই রাহার সাথে শেয়ার করে ফোন দিয়ে। সব শুনে রাহা বেশ রেগে যায়। এমন করার তো কোনো মানে নেই। কিছু তো একটা ক্লিয়ার করে বলতে পারে। প্রিয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। ফোনের ওপাশ থেকে রাহা বললো,
“একটা সময় আমরা যখন কষ্টে কাঁদতাম তখন তুই আমাদের বুঝাতি। হাসাতি। আর আজ এভাবে ভেঙ্গে পড়ছিস তুই? তুই না অনেক শক্ত মনের মেয়ে? এভাবে কাঁদিস না প্লিজ। আমারও এমন একটা সময় যে, তোর কাছে গিয়ে যে তোকে বুকে জড়িয়ে নিবো সেটাও পারছিনা। আমার শ্বাশুরী খুব অসুস্থ।”
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা রাহা।”
“শোন, তুই আজ ফোন দিয়ে ক্লিয়ারলি জিজ্ঞেস করবি, সে কি চায়। হয় সারাজীবনের মত একসাথে থাকবে নয়তো ছেড়ে দিবে। এভাবে ঝুলিয়ে রাখার তো কোনো মানে হয়না।”
“হুম।”
রাহা আরো অনেক কিছু বুঝালো। প্রিয়াও সিদ্ধান্ত নিলো যা হবার আজ হবেই। ফোনের ওপর ফোন দিতে থাকে কিন্তু রিসিভড করেনা শিহাব। সাথে ম্যাসেজও দেয়,
“প্লিজ শিহাব ফোনটা ধরো। তোমার সাথে ইম্পোর্ট্যান্ট কথা আছে।”
ম্যাসেজ সীন করে কিন্তু রিপলাই করেনা। প্রিয়া আরো ম্যাসেজ দেয় সাথে ফোনও দিতে থাকে। প্রিয়া ভেবে পায়না, যে ছেলে প্রিয়ার একটা ফোনকলের আশায় চাতকপাখির মত বসে থাকতো সেই ছেলে এখন পুরো দমে প্রিয়াকে ইগনোর করছে। তবে কি শিহাবের ভালোবাসা পুরোটাই নাটক ছিল। ভাবতে পারছেনা প্রিয়া। ওপাশ থেকে শিহাবের রিপলে আসে,
“আমি অফিসে ব্যস্ত আছি।”
“শুধু একটাবার কথা বলবো।”
অবশেষে শিহাব কল ধরে।
“তুমি এমন কেন করছো শিহাব? আমায় নিয়ে যেই সমস্যা সেটা তো আমি সমাধান করেই দিলাম। আমি পড়বোনা। তাহলে আর কিসের সমস্যা বলো? কেন ইগনোর করছো আমায়?”
“আমি বুঝতেছিনা আমি কি করবো।”
“এরকম ভাবলেশহীন উত্তর দিয়ো না শিহাব। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। প্লিজ আমায় ছেড়ে যেয়ো না। কেন বুঝো না আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি।”
কথাগুলো বলতে বলতেই প্রিয়া কেঁদে দেয়।
“কান্না করো না প্লিজ। আমি দেখি কি করতে পারি।”
“তোমার কথা সব ছন্নছাড়া। তুমি সত্যিই আমায় ভালোবাসো তো? নাকি সবটা নাটক ছিলো?”
“ভালোবাসি আমি।”
“কেমন ভালোবাসা এটা? যেখানে দিনের পর দিন তুমি আমায় কষ্ট দিচ্ছো। ইগনোর করছো।”
“কি করবো আমি জানিনা।”
“সেই এক কথা। ভালোবাসি অনেক শিহাব।”
“আমি পরে ফোন দিচ্ছি। বস আসতেছে।”
শিহাব ফোনটা রেখে দিলো। প্রিয়া ফ্লোরে বসেই জোরে জোরে কান্না শুরু করলো। বাড়িতে কেউ নেই। লামিয়া আর মা ওর নানির বাসায় গেছে। বাবা অফিসে। পুরো বাড়িতে প্রিয়া একা। কষ্টে দম আটকে আসছে প্রিয়ার। আবারও ডায়াল করে শিহাবের নাম্বারে। এবার কল ওয়েটিং। কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছিলো। শিহাবের বন্ধুকে ফোন দিয়েও কিছুই জানতে পারেনা প্রিয়া। অসহায় হয়ে পড়ে। শেষমেশ শিহাবকে ম্যাসেজ করে,
“অনেক হয়েছে এই অবহেলা। আজ ক্লিয়ার করে একটা কথা বলো তুমি কি চাও? আমাকে কি তুমি সত্যিই ভালোবাসো? ভালোবাসলে ভালোবেসে হাতটা ধরো নয়তো ছেড়ে দাও। তবুও এভাবে কষ্ট দিয়ো না প্লিজ। আমাকে যদি তোমার আর ভালো না লাগে তাহলে সেটা সোজাসুজি বলে দাও। বিশ্বাস করো একটুও কষ্ট পাবো না। যতটা কষ্ট পাচ্ছি তোমার এহেন আচরণে।”
ম্যাসেজটা সেন্ড করে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে চোখের পানি ঝড়ায়। প্রিয়ার বিশ্বাস শিহাব প্রিয়াকে ভালোবাসে, চায়। শিহাব নিশ্চয়ই প্রিয়াকে ছেড়ে দিবেনা। ফোনের ম্যাসেজ টোন বেজে ওঠে। শিহাবের ম্যাসেজ। প্রিয়া তাড়াতাড়ি ম্যাসেজটা ওপেন করে। ম্যাসেজ দেখে প্রিয়ার সব বিশ্বাস মুহুর্তেই ভেঙ্গে যায়। বিশ্বাসই করতে পারছেনা। ম্যাসেজটা ছিল,
“আমায় তুমি ক্ষমা করে দিয়ো প্রিয়া। আমার কিছুই করার নেই। আমি আমার বাবা-মাকে কষ্ট দিতে পারবোনা। আমি নিরুপায়। ভালো থেকো।”
প্রিয়া সাথে সাথে শিহাবকে ফোন দেয়। নাম্বার ব্যস্ত। যতবার ফোন দেয় একই কথা। তার মানে নাম্বারটা ব্লাকলিস্টে ফেলেছে। ম্যাসেজ টাইপ করার মতও শক্তি পাচ্ছেনা প্রিয়া। ফেসবুকে লগিন করে দেখে সব আইডি ব্লক করে দিয়েছে। এমনকি হোয়াটসএপ এবং ইমো থেকেও। সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে শিহাব। কি করে করতে পারলো এটা শিহাব। প্রিয়া এবার চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। এভাবে হারিয়ে যাবে শিহাব, এভাবে ঠকাতে পারে বিশ্বাসই হচ্ছেনা প্রিয়ার। ঐসময়েই প্রিয়ার মা ফিরে আসে। প্রিয়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে তিনি ভয় পেয়ে যান। দৌঁড়ে মেয়ের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে।
“কি হয়েছে মা? এভাবে কাঁদছিস কেন?”
প্রিয়া কান্নার জন্য কথা বলতে পারছেনা। কান্নার শব্দে পাশের ফ্লাট থেকেও লোকজন এসে পড়েছে। মা কোনোরকমে তাদের বুঝ দিলো অন্য কথা বলে। তারা চলে যেতেই মা বললো,
“শিহাবের সাথে কিছু হয়েছে?”
কান্নারত অবস্থায় বললো,
“শিহাব আমায় ঠকিয়েছে মা। শিহাব আমায় ঠকিয়েছে। ও আমায় বিয়ে করবেনা। ওর বাবা-মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবে।”
প্রিয়ার মা স্তব্ধ হয়ে যায়। যেই ছেলে এত ভালোবাসতো সে কি করে এটা করতে পারে। তাহলে কি সবটাই নাটক ছিল। মেয়ের এমন অবস্থা দেখে তিনি কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারেনি। মেয়ের সাথে সাথে কান্না করেন। মেয়েকে বুঝানোর মত মানসিক অবস্থাও তার নেই। এদিকে প্রিয়ার প্রায় পাগল পাগল অবস্থা। কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা খুবই খারাপ। প্রিয়াকে একদমই সামলানো যাচ্ছেনা। ঐমুহুর্তেই লামিয়াকে ফোন দেয় মা। তখনই নানু, খালামনিরা আর লামিয়া ছুটে আসে। প্রিয়ার অবস্থা দেখে কেউই চোখের পানি আটকাতে পারেনি। এভাবে কেউ ভালোবাসতে পারে সেটা প্রিয়াকে না দেখলে কেউ জানতোই না। প্রিয়ার কান্নায় মনে হচ্ছে আকাশ-পাতাল এক হয়ে যাচ্ছে।
সেরাতে আর প্রিয়াকে জোর করেও খাওয়াতে পারেনি কেউ। কি করে খাবে প্রিয়া, ভালোবাসার মানুষটার কাছে যে খুব জঘন্যভাবে ঠকেছে। শিহাব ঠকিয়েছে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা প্রিয়া। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছে । পাশেই নানু আর লামিয়া আপু বসে নিরবে কাঁদছে। প্রিয়া প্রচুর হার্ট হয়েছে। কখন কি পাগলামি করে বসে বলা যায়না। হয়তো নিজেরই কোনো ক্ষতি করে ফেলবে। তাই কেউ প্রিয়াকে একা ছাড়েনি। সেদিনই প্রিয়ার বাবা সব জানতে পারেন। কিন্তু আদরের মেয়েকে কিছুই বলেনি। সারারাত ঐদিন কেউই ঘুমায়নি।
.
দিন যায় দিন আসে। প্রিয়ার খারাপ সময়গুলো আর যায়না। প্রিয়ার সবেচেয়ে বড় সাপোর্ট হয়ে দাঁড়ায় ওর মা। তারপর পরিবার। এই সময়টাতে মানসিক সাপোর্ট সবচেয়ে বেশিই দরকার। ওর ফ্রেন্ডসরাও ওকে প্রচুর সাপোর্ট করে। কিন্তু যে যাই বলুক না কেন, প্রিয়ার অবাধ্য মন সেটা মানতে নারাজ। শিহাবের শূন্যতা কুঁড়েকুঁড়ে খায় প্রিয়া। সবার এত বোঝানো কথাও প্রিয়ার মনকে ধরে রাখতে পারেনা। এদিকে মা প্রতিদিনই কাঁদে। চোখের সামনে মেয়ের এমন অবস্থা সহ্য করতে পারবেনা কোনো মা’ই। কারো সাথেই কথা বলেনা প্রিয়া। নামাজে বসে শুধু চোখের পানিই ফেলে। এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়। কেন এত বিরহ! টেষ্ট পরীক্ষাও চলে আসে। এমন মানসিক অবস্থায় পরীক্ষা দেওয়া কঠিন। কোনো প্রিপারেশনই নেই। কিন্তু পরিবারের দিকে তাকিয়ে পরীক্ষা দেয়। নিজের কষ্টগুলোকে লুকিয়ে সবার সাথেই হেসে কথা বলার চেষ্টা করে। বুকের ভেতর পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও মুখে মিথ্যা হাসি ফোঁটাতে ভুলেনি প্রিয়া।
প্রিয়া ভাবে, নিজের কষ্টের জন্য এতগুলো মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। মাকে কাঁদাচ্ছে। ঠকিয়েছে শিহাব অথচ কষ্ট পাচ্ছে প্রিয়া আর ওর পরিবার! প্রিয়া সিদ্ধান্ত নিলো যত কষ্টই হোক আর কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবেনা। তাই বুকের কষ্টগুলো বুকে রেখেই সবার সামনে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে। নিঁখুত ভালো থাকার অভিনয় কেউ ধরতেও পারেনা। কিন্তু রাত হলেই কষ্টগুলো আর আটকে থাকতে চাইতো না। চোখের পানি হয়ে বেড়িয়ে আসতো। এমন কোনো রাত নেই যে রাতে ও কাঁদেনি।
.
.
আর মাত্র একমাস বাকি আছে প্রিয়ার এইচ.এস.সি পরীক্ষার। মাঝখানে অনেকগুলো দিন অতিবাহিত হয়ে যায় শিহাবের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। এক ঘন্টা যে মানুষটার সাথে কথা না বলে থাকতে পারতো না সেই মানুষটার সাথে এখন কথা না বলেই সময় কেটে যায়। প্রিয়ার ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। মানুষ বদলাতে সত্যিই সময় লাগেনা। গিরগিটিও মানুষের কাছে নিঃসন্দেহে হার মানবে। শিহাবের বন্ধু খবর দিলো মার্চের ১৫ তারিখে শিহাবের বিয়ে। শিহাবের বিয়ে শুনে প্রিয়ার বুক মোচর দিয়ে ওঠলো। মানতেই পারছেনা কথাটা। আজ ১১ তারিখ। তাহলে আর চারদিন বাকি ওর বিয়ের! অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে বুকে। আবার পাগলামি শুরু হয়ে যায়। যেই স্বপ্নগুলো প্রিয়াকে দেখাতো সেই স্বপ্নগুলো অন্য কাউকে নিয়ে পূরণ করবে! আবার সেই আগের মত কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। এবারের কষ্টটা আরো বেশি। নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে কেউই সহ্য করতে পারেনা। সেখানে প্রিয়া পাগলের মত ভালোবাসে শিহাবকে। প্রিয়ার কান্না মা কিছুতেই সহ্য করতে পারেনা। তিনি আর্তনাদ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
“আল্লাহ্ আমার মেয়েটারে আর কত কষ্ট দিবা? ঐ ছেলে তো দিব্যি সুখে আছে। তাহলে আমার মেয়েটারে ক্যান এভাবে কষ্ট দিচ্ছো। ওরে কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা দাও আল্লাহ্। ওর সব কষ্ট তুমি আমায় দাও। তবুও আমার মেয়েটাকে আর কাঁদাইয়ো না।”
.
চৌদ্দ তারিখ গায়ে হলুদের দিন শিহাব প্রিয়াকে ফোন দেয়।
“হ্যালো।”
“ভালো আছেন?”
শিহাবের মুখে আপনি ডাক শুনে তাচ্ছিল্যর হাসি হাসলো প্রিয়া। উত্তরে বললো,
“যেমন রেখেছো।”
“আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কি করতাম বলো? আমার যে কিছুই করার নেই।”
“আজ তোমার গায়ে হলুদ না?”
“হুম।”
“খুব আনন্দ হচ্ছে তাইনা?”
“আমি জানি আমার কেমন লাগছে।”
“মিথ্যা নাটক আর করো না প্লিজ। তুমি অনেক খুশি আমি জানি, অথচ আমার সামনে এমন ভাব ধরছো যে তুমি আমাকেই ভালোবাসো। কেন ঠকালে আমায় শিহাব? কি দোষ ছিল আমার?”
“আমি তোমায় ঠকাইনি। আমি পরিস্থিতির স্বীকার।”
“হাহ্! নিজের দোষগুলো আর পরিস্থিতির ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। তোমার বউ নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর?”
“জানিনা।”
“বলো না। আমিই তো।”
প্রিয়া নিঃশব্দে কাঁদছে। শিহাব সেটা বুঝতে পারছে। প্রিয়ার কথা গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো,
“তোমার অনেক কিছুই করার ছিল শিহাব। তুমি করোনি কারণ তুমি তো আমায় কখনো ভালোইবাসিনি। এভাবে না ঠকালেও হয়তো পারতে। যেই স্বপ্নগুলো তুমি আমায় দেখিয়েছিলে সেই স্বপ্নগুলো কাল থেকে অন্য একটা মেয়ের সাথে পূরণ করবে। যেখানে আমার বউ সাজার কথা ছিল সেখানে অন্য একটা মেয়ে বউ সাজবে। যেই রাতটাকে ঘিরে আমাদের দুজনের স্বপ্ন ছিল সেই রাতের স্বপ্ন অন্য একটা মেয়ে পূরণ করবে। তোমার যেই হাতের স্পর্শ আমার পাওয়ার কথা ছিল সেই স্পর্শে অন্য মেয়ে মোহিত হবে। তবুও বলবো তুমি সুখী হও। আল্লাহ্ তোমাকে অনেক সুখী করুক। ভালো থেকো আমার ভালোবাসা।”
প্রিয়া ফোন কেঁটে বন্ধ করে দেয়। শব্দ করে কাঁদতে থাকে। আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছেনা। একদম না। যেই জীবনে শিহাব নেই সেই জীবন রেখে কি হবে!
মাথার ওপর সিলিং ফ্যানটা ঘুরছে। একবার বিবেকে তাড়া দেয়, শিহাবের জন্য নিজের পরিবারকে কষ্ট দিবে! আবেগে বলে, বেঁচে থাকতে শিহাব অন্য কারো হবে এটা কিছুতেই মানতে পারবেনা। আবেগের তাড়নায় আর কষ্টে মায়ের একটা কাপড় নিয়ে ফ্যানের সাথে বাঁধে। গলায় কাপড় পেঁচিয়ে পায়ের নিচ থেকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে টুলটা সরিয়ে দেয়। তখনই রুমে প্রবেশ করে প্রিয়ার বাবা আর লামিয়া। নিজের চোখে মেয়েকে এভাবে ঝুলে থাকতে দেখে তার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে যায়। লামিয়া সাথে সাথে চিৎকার দেয়। প্রিয়ার মা, খালামনি, নানুরা দৌঁড়ে আসে।…..
.
প্রিয়া অতীত থেকে ফিরে আসে।
সাথে সাথে চোখ মেলে তাকায়। অতীতের কষ্ট এখন প্রিয়ার গলা চেপে ধরেছে। গলাটা শুকিয়ে এসেছে। একটু পানি খাওয়া দরকার। ঘরে ওয়াটার বোতলে পানি নেই। তাই ভেতরের রুমে যেতে হবে। দরজা খুলতেই দেখে ফাহাদ দরজার পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ভোর চারটা বাজে। একটুপরই মা রান্না করতে উঠবে। আর উনি এখানে ঘুমাচ্ছে।
“এইযে শুনছেন!”
এক ডাকেই ফাহাদ ধড়ফড়িয়ে ওঠে। প্রিয়ার দুই বাহু ঝাঁকিয়ে বলে,
“এই তুমি এভাবে চলে আসলে কেন? কি হয়েছে বলো? আমি কত ভয় পেয়েছি জানো?”
প্রিয়া ফাহাদের চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। ধূসর বাদামি চোখগুলো ভয়ের জানান দিচ্ছে। আচ্ছা সব ছেলেই কি এক? ফাহাদও কি কখনো ঠকাতে পারে? ভয় পেয়ে কি নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি? সত্যিই কি ভালোবাসা বলতে কিছু আছে? প্রিয়াকে আলতো করে ধাক্কা দেয় ফাহাদ।
“কি ভাবছো?”
“কিছুনা। বাড়ি যাবেন না?”
“তাড়িয়ে দিচ্ছো?”
“মোটেও না।”
“বিয়েটা শুধু আগে করি তারপর দেখিয়ো পুরো শ্বশুরবাড়িটা কিভাবে দখল করে নিই হুহ। তখন তুমি তোমার শ্বশুরবাড়ি থাকবে আর আমি আমার শ্বশুরবাড়ি।”
ফাহাদের কথা শুনে প্রিয়া হেসে দেয়।
“ইশ! এভাবে হেসো না গো। বুকে লাগে আমার।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। এখন চলেন এগিয়ে দেই।”
মেইন দরজা পর্যন্ত যেতেই ফাহাদ থেমে যায়।
“আর যেতে হবেনা। রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
“হুম।”
ফাহাদ দু পা এগিয়ে আবার ফিরে আসে।
“কিছু বলবেন?”
“একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“শিওর।”
“অতীতের মানুষটাকে এখনো ভালোবাসো?”
“না।”
“তবে কি ঘৃণা করো?”
“তাও না।”
“তাহলে?”
“তাকে আমি ভালোওবাসিনা। ঘৃণাও করিনা। তার প্রতি আমার সব অনুভূতি ফিকে হয়ে গিয়েছে।”
“তার ওপর রাগ হয়না?”
“না।”
“কেন? আমি হলে তো মেরেই ফেলতাম।”
“রাগ করবো কেন? আর আমি মারারই বা কে? যার যার শাস্তি সে সে পাবে। রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার বলতে একটা কথা আছে জানেন তো?”
“হুম।”
“এটাই যথেষ্ট আমার জন্য।”
ফাহাদ প্রিয়ার গালে হাত রেখে বললো,
“অতীতগুলোকে আর হাতছানি দিতে দিয়ো না। অনেক বেশিই ভালোবাসি তোমাকে।”
চলবে……
[যাদের কাছে ফ্লাশব্যাকের পর্বগুলো বোরিং লাগছে তারা প্লিজ ইগনোর করবেন নয়তো স্কিপ করে পড়বেন। অনেকেই হয়তো জানেন না, “রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার” নামে আমি একটা গল্প লিখেছিলাম। যেটার এক পর্ব দেওয়ার পর আর দেইনি। পরে “আমার তুমি” সিজন টু দিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল তখন ঐ গল্পটা আমি ঠিকমত সাজাতে পারিনি। তাই সময় নিয়েছিলাম। তাই অনেক কিছুই যোজনবিয়োজন করতে হয়েছে। লেখার স্বার্থে নাম চেঞ্জ করে দিয়েছি “তুমি আমার ভালোবাসা” কিন্তু থিম একই রেখেছি। গল্পের মূল থিমটাই ছিল প্রিয়ার অতীতকে নিয়ে। কিন্তু কিছুসংখ্যক পাঠক এটাকেই বাদ দিতে বলছে। তাদেরকে বলি, আমি অসংখ্য দুঃখিত আমি সেটা পারবো না। আমার ইচ্ছানুযায়ীই আমি লিখে যাবো। তবে মতামত দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
হ্যাপি রিডিং।]