রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ”বউ বিড়ম্বনা” অথবা “পিচ্চি বউ “ পর্ব–৪
(বি + প্লিজ)
তিথি এই গুলা কি?(আমি)
আমার এক বান্ধবি বলেছে এমন করলে নাকি আপনি খুশি হবেন, চ্চু চ্চু চ্চু চ্চু চ্চু
আপনি খুশি হন নাই? চ্চু চ্চু চ্চু চ্চু চ্চু
(আল্লাহ তুমি আমারে ধৈর্য্য দাও নয়ত এই মেয়েরে একটু আমায় বুঝার মত বুদ্ধি দাও)
কি হল আপনার কি ভাল লাগছে না? চ্চু চ্চু চ্চু
গল্প ”বউ বিড়ম্বনা” অথবা “পিচ্চ বউ “ পর্ব–২
হ্যা ভাল লাগছেনা, খুব ভাল লাগছে, এখন বাদ দাও আমাকে আর খুশি করতে হবেনা, আমি এমনিতেই তোমার উপর অনেক খুশি,
আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে রেখে দেই বলেই ফোন টা রেখে দিল, এভাবেই দিন যাচ্ছিল, দেখতে দেখতে রোজা এসে গেল, আমার এক অফিস কলিগের মাধ্যমে সারা অফিস ছড়িয়ে গেল আমি বিয়ে করেছি, তাই আর কি করার সবাই কে নিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করলাম আর সিদ্ধান্ত হল ঈদের পরদিন সবাই আমার বউ দেখতে, আমার গ্রামের বাড়ি জামালপুর এ যাবে, ঈদের ছুটিও পরছে অনেক, ১০ দিন, নতুন বিবাহিত দেখে অফিস থেকে আমাকে অফিস ছুটির দুইদিন আগেই ছুটি দিল তাই বাড়িতে না জানিয়েই রওনা দিলাম, মাঝ পথে বাড়িতে ফোন দিলাম, মা বল্ল তিথি আজ তাদের বাড়িতে গেছে, তাই আল্লার কাছে হাজার শুক্রিয়া জানিয়ে মাকে বল্লাম আমি আসতেছি, যেতে যেতে রাত আটটার মত বাজল, আমি বাবা মায়ের রুমে ঢুকে সালাম জানিয়ে আমার রুমে ঢুকতেই চিৎকার দিয়ে উঠলাম,
মা বাবা দুজনেই দৌড়িয়ে আসল,
কি হয়েছে নিলয়? (বাবা)
এটা কে?
(ঠাটিয়ে একটা চর দিয়ে) এবার দেখ চিনতে পারবি,(বাবা)
কিন্তু মা ত বলল!!!
হ্যারে বাবা বলেছিলাম, তুই আসবি এটা তর ফুফুকে জানাইছিলাম, তিথি কিভাবে যেন শুনে চলে আসছে, একটা পাগলী ছেলের বউ পাইছি আমি,
(পিছে পিছে দাদীও চলে আসছে, এসেই) নাতনী আমার স্বামী পাগল, স্বামী আসতেছে শুনেই চলে আসছে কত দিন পর বাড়ি গেল কিন্তু একটা দিনও থাকলনা চলে আসল স্বামীর টানে, বলেই হাসতেছে (দাদী)
আপনি এমন কেন?(তিথি)
কেমন? (আমি)
আমাকে না জানিয়েই চলে আসলেন, আমায় ত একবার বললেই পারতেন, আপনি জানেন কতদিন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করতেছি? মা কথা বলার সময় শুনছিলাম না হলে ত জানতেই পারতামনা, আমি শুনেই এসে পরছি,
(আল্লাহ তোমার কাছে হাজার শুক্রিয়া তুমি আমার কথা শুনছ,)(বাবা মা চলে গেল, দাদী হাসতেছে)
কেন?
আসবনা? আপনি বাড়িতে আসতেছেন এতদিন পরে, আমি যদি না থাকি তাহলে চকলেট গুলা কাকে দিবেন নষ্ট হয়ে যাবেনা? আর মা বলেছিল আপনি আসার সময় আমার জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসবেন তাই চলে আসছি। (তিথি)
ওই সতীন স্বামী আসছে এতদিন পর সালাম কর কেমন আছে জিগ্গেস কর আগে, তার পর তর জন্য কি আনছে তা ত দিবেই, মাথায় কি বুদ্ধি হবেনা তর? (দাদী)
ওওওও ভুল হয়ে গেছে, আস্সালামুআলাইকুম, কেমন আছেন? চকলেট গুলা দেন তারাতারি,
(আল্লাহ আবার প্রমান করলে কুত্তার লেজ কখনও সোজা হয়না,) রাগে দুঃখে চকলেট গুলা বের করে দিলাম, ও নিয়ে বিছানায় চলে গেল,
রাতে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম, সেও আগের জায়গায় ঘুমিয়ে পরল, কিছুক্ষণ পরপর একটা করে চকলেট নিচ্ছে আর খাচ্ছে, মাঝ রাত্রিতে তিথির ধাক্কা ধাক্কিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল,
ওগো শুনছেন?
তিথি বিরক্ত করনা ত ঘুমাতে দাও,
শুনেন না একটু, (তিথি)
হ্যা বল,
বলছি কি আপনার ব্যাগ এ ত আরও চকলেট আছে একটু বের করে দিবেন? ওইগুলা শেষ,
শেষ মানে? তুমি কি ঘুমাও নাই? এতক্ষন কি চকলেটই খেলে?
হ্যা খাবনা? দিনে ত খাওয়া যাবেনা, আর রেখে দিলে যদি নষ্ট হয়ে যায়?
কে বলল তোমায় চকলেট নষ্ট হয়ে যায়?
কেউ বলেনি, একবার ছোট কাকা বিদেশ থেকে আমার জন্য অনেক চকলেট আনছিল, এক বছর পর সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছিল,
তিথি একটা কাজ করতে পারবা?
কি?
আমার মাথাটা খেতে পারবা?
যাহ ওখানে কি চকলেট ভরেছে নাকি যে খাব?
তার মানে চকলেট পড়লে আমার মাথা খেতে?
না শুধু চকলেট টা খেতাম জানেন না অপচয় কারি শয়তানের ভাই? তাই কোন জিনিস পড়ে গেলে আমি সেটা নষ্ট হতে দিই না। আচ্ছা মেয়েরাও কি শয়তানের ভাই হয়?
তুমি কি ঘুমাবে না থাপ্পর খাবে?
চকলেট খাব দিন না এনে,
অবশেষে এনে দিতে হল,
(পরদিন সকালে পুকুর পারে বসে আছি)
আপনার কি মন খারাপ?(তিথি)
একটু,
ওওও আচ্ছা দাড়ান আপনার মন ভাল করে দেই, চ্চু চ্চু চ্চু চ্চু চ্চু চ্চু,(তিথি)
বাহ সুন্দর, শব্দ হচ্ছে না আর একটু জোরে শব্দ কর,(আমি)
সে আর জোরে মুখে চ্চুচ্চুচ্চুচ্চু শব্দ করতে লাগল, আমি আর ঠিক থাকতে পারলাম না, ওর পাগলামী দেখে হেসে দিলাম, হইছে থাক আর লাগবেনা, এবার চ্চুচ্চুচ্চুচ্চুচ্চু করা বন্ধ কর,
সেও বিশ্ব জয়ী এক হাসি দিল,
ইফতারের সময় আমি ওর পাশে বসলাম না খাইয়ে দেওয়ার ভয়ে, টেবিলের ঠিক উল্টা দিকে বসলাম, খাবার মাঝে ওর দিকে তাকাতেই মুচকি মুচকি হাসতেছে, তাই সুযোগ বুঝে একবার দিলাম চোখ মেরে,
ওয়াও ওনেক সুন্দর হইছে কেমনে করলেন আবার একটু করেন ত,(তিথি)
কি রে মা? (বাবা)
বাবা বাবা ওনি না খুব সুন্দর করে চোখ কেমনে জানি বন্ধ করছে, এই যে এরকম ভাবে( দুই চোখ বন্ধ করে বাবাকে দেখাচ্ছে) না না হয়নাই আমি পারি না, ওনি একটা দিয়ে করছে, একটু দেখান না বাবাও দেখুক,
আমি আর কারও দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচ করে খেতে লাগলাম, তার পরদিন থেকে ইফতারি আমার ঘরেই পাঠিয়ে দিয়েছে মা,
দেখতে দেখতে ঈদ এসে গেল , ঈদের পরদিন আমার অফিস কলিগরা আসল, তিথি হলুদ রঙ্গের একটা শাড়ী পড়েছে, দেখতে অনেকটা পুতুলের মত লাগছে, সবার সামনে ওকে নিয়ে গেলাম পরিচয় করিয়ে দিতে,
কিন্তু পুরোটা সময় শুধু মাত্র এক ভাবী ছাড়া আর কারও সাথেই কোন ধরনের কথা বলল না, রাগে আমার মাথা দিয়ে আগুন বের হচ্ছে শুধু তাই ওরা চলে যাওয়ার পরেই ঠাস করে গালে একটা চর মারলাম,
দিন দিন কি বেয়াদপ হয়ে যাচ্ছ? ওরা এত কিছু জিগ্গেস করল আর তুমি কিছুই বল্লেনা কেন?(আমি)
(কাদতে কাদতে) আপনি না বলছেন কোন ছেলের সাথে যেন কথা না বলি, তাই বলিনি,(তিথি)
নিজের মাঝে কিছুটা অনুতপ্ত বোধ কাজ করল, এই মেয়েকে দিয়ে আমি কি করে সংসার করব? এর ত বুদ্ধি বলে কিছুই নাই।
মন খারাপ করে শুয়ে আছি বিছানায়, তিথি এসে আমার বুকে শুয়ে পরল, আমি তাকে তুলে দিলাম বলা্লাম আর যেন কখনই এ ভাবে না ঘুমায়, সে রাগ করে চলে গেল, কিছুক্ষন পর বাবাকে ডেকে নিয়ে এসে বিচার দিচ্ছে,
বাবা বাবা ওনি আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না,(তিথি)
কিরে নিলয় ঘুমাতে দিচ্ছিস না কেন?
বাবা আমি ওকে কখন ঘুমাতে দিলাম না? ঘুমাক না আমি কি নিষেধ করছি?
না বাবা আমি ওনার বুকে ঘুমাব, ওনি আমাকে বার বার তুলে দিচ্ছে,
বাবা একটু সংকোচে পরে গেলেন তার পরও বল্লেন ওকে ঘুমাতে দে আমরা গেলাম,
বাবা যাবেন না, আমি আগে শুয়ে পরি তারপর যাবেন, নাহলে আবার তুলে দিবে(তিথি)
তিথি এসে শুয়ে পরল তার পর বাবা দরজা আটকিয়ে চলে গেল,
আচ্ছা আপনি সব সময় মন খারাপ করে থাকেন কেন? আপনার কি কিছু হয়েছে?(তিথি)
নাহ কিছু হয়নায়,
কিছু ত একটা হয়েছে না হলে সব সময় এমন থাকেন কেন?
কি করব বল? আমার যৌবন শেষ হয়ে যাচ্ছে আর আর তুমি ত সেটা বুঝতেই পারতেছ না
(মুখ ফসকে কথাটা বলে দিলাম)
ওওও ডাক্তার দেখান নাই?
হুম দেখাইছি, বলছে ভাল হয়ে যাবে তুমি এখন ঘুমাও, আর কথা বলো না,
পরদিন সকালে সবাই খেতে বসছি, মন খারাপ দেখে বাবা জিগ্গেস করল, নিলয় কিছু হয়েছে তর? কয়দিন থেকে দেখতেছি মন খারাপ,
না বাবা কিছু হয়নাই, হয়েছিল ডাক্তার দেখিয়েছিল, এখন ভাল হয়ে যাচ্ছে।(তিথি)
এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারি না, ছোট থেকেই একটা সমস্যা অসুখ হলে কাউকে বলবেনা, কি হয়েছিল রে নিলয়?(বাবা)
বাবা ওনার না….
তিথি একদম চুপ, কোন কথা বলবেনা (আমি)
এই বলবেনা কেন? তর কি অসুখ সেটা জানতে হবেনা? পরে যদি বড় সমস্যা হয়ে যায়? বল মা কি হয়েছিল নিলয়ের আর তুই কেমনে জানলি?
কাল রাতে যখন আপনারা এসে পরলেন তখন বলেছে, ওনার নাকি যৌবন শেষ হয়ে যাচ্ছে, আর আমি সেটা বুঝতে পারিনাই বলে ওনার মন খারাপ, এখন নাকি ভাল হেয়ে যাচ্ছে।
আমি এক দৌড়ে ঘরের ভিতর, পরের দুই দিন বাবা মা কেউ আমার সামনে আসেনি আমিও না, এ দিকে তিথির ও স্কুল খুলেছে পরীক্ষার জন্য, তাই দিনে একটু শান্তিতেই থাকতে পারি,
একদিন বিকেল বেলা এক কাকা এসেছে তার ছেলেকে নিয়ে চাকরির বিষয়ে কথা বলার জন্য, বাবা মা আর আমি বসে কথা বলতেছি, এরই মাঝে তিথির আগমন,
ওগো একটু এদিকে আসেন না,(তিথি)
আসতেছি একটু পরে,
না এখনই আসেন, শূধু একটা চুমু খাব তার পর চলে যাবেন, আমার ফ্রেন্ড টা না আজ এটা শিখায়ে দিছে, বলছে কারও সামনে যাতে না খাই, চুমু খেলে নাকি আপনি আমাকে অনেক ভালবাসবেন
বাবা আজ তাহলে ওঠি বলেই কাকা চলে গেল, বাবা মাও ওঠে গেল তখন তিথি আমার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতেছে, আমি দৌড়িয়ে বাইরে বের হয়ে গেলাম, পিছে পিছে তিথিও দৌড়ানো শুরু করল,
দাড়ান দাড়ান শুধু একটা খামু (তিথি)
ও যখন দৌড় দিছে আমি তখন দাড়িয়ে গেলাম রাস্তায় গেলে আবার আরেক ঝামেলা, আমি স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছি সে তার কাজ সেরে চলেগেল।
ছুটি শেষে আবার চলে গেলাম ব্যাস্ততম সম্মান যুক্ত পরিবেশে, বেশ কিছুদিন পর রাত দুইটার দিকে তিথির ফোন, রিসিভ করতেই,
হ্যালো নানী…
সাথে সাথেই ফোনটা কেটে দিয়ে বন্ধ করে দিলাম, বিয়ের প্রায় এক বছর হচ্ছে এখনও তার নানী কি বলল তা নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে হবে, মনটা খারাপ করে ঘুমিয়ে পরলাম,
পরদিন সকালে ফোন খূলতেই তিথির ফোন থেকে মেসেজ,
নানী আর নেই, যত দ্রুত পারেন আপনি বাড়ি আসেন, আমি প্রায় পাগল হয়ে গেলাম, তাহলে তিথি রাতে? নিজেকে ক্ষমা করতে পারতেছিনা, আমার হাত থেকে মোবাইল টা পরে গেল, কিভাবে বাড়ি পৌছিলাম আমার ঠিক খেয়াল নেই, পরে জানতে পারলাম আমার ফ্লাটের সাফেদ ভাই আমাকে নিয়ে এসেছে, আমি যাওয়ার পর দাদীর দাফন সমপন্ন করা হয়, এর মাঝে তিথি আমার সাথে কোন কথায় বলেনি, মাটি দেওয়া শেষে সবাই বাড়ি আসলাম, কিন্তু তিথিকে কোথাও দেখতে পেলাম না, পরে দাদীর কবরে গিয়ে দেখি দাদীর পায়ের দিকে বসে তিথি কাদতেছে,
তিথি চল বাড়ি যাবে, তিথি আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে কেদে উঠল, কোন ভাবেই তাকে সেখান থেকে সরাতে পারলাম না, পরে বাবা মা এসে অনেক বুঝিয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে গেল, দাদীর জন্য আমারও অনেক খারাপ লাগতেছে কিন্তু তিথির জন্য তা প্রকাশ করতে পারতেছিনা তাহলে হয়ত ও আরও পাগলামী করবে, রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমিয়ে পরলাম, তিথি আমার বুকে শুয়েই আবার কান্না শুরু করে দিল, আমি ওকে অনেক বুঝিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম, মাঝ রাতে হঠাৎ কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল, উঠে দেখি তিথি পাশে নেই, দৌড়িয়ে দাদীর কবরের পাশে গেলাম, গিয়ে দেখি তিথি একটা লাইট নিয়ে দাদীর কবরের পাশে বসে আছে আর কাদতেছে,
তিথি তুমি এত রাতে এখানে আসছ কেন?
নানী ত অন্ধকারে ভয় পায়, নানী ত বাড়ী ছাড়া কখনও কোথাও থাকেনি, নানী এখানে কিভাবে থাকবে?
(আমি আর কান্না ধরে রাখতে পার লাম না) তিথি তুমি আর পাগলামি করনা, তুমি এমন করলে দাদী কষ্ট পাবে, বাবা মাও কান্নার আওয়াজ পেয়ে চলে আসছে, পরে তাকে আবার বাড়িতে নিয়ে গেলাম।
তিথির এমন অবস্থা দেখে ওকে বাবা মা, আর ফুফু মানে আমার শাশুড়ীও তাকে বাড়ীতে রাখতে চাচ্ছেনা, তাই আর আমারও মনে হল বাড়ী থাকলে ও আরও ভেঙ্গে পরবে, তাই তার স্কুল থেকে টিসি নিয়ে তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসলাম, অফিস থেকে কিছুদিন ছুটি নিয়ে তাকে নিয়ে চট্টগ্রামে ঘুরাঘুরি করলাম, পাহাড় সুমুদ্র ঘুরে সে কিছুটা পরিবর্ত হল, তার পর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ এ আমাদের এমডি স্যার এর মেয়ের সাথে ভর্তি করে দিলাম, সাফেদ ভাইদের সাথে একই ফ্লাটে থাকতে লাগলাম, সাফেদ ভাই এর বউ একজন গৃহিনি, তাদের ৬ বছরের একটা মেয়ে আছে, কিছুদিনের মধ্যেই তিথির সাথে ভাল ভাব জমে গেল, আমি সকালে অফিসে যাওয়ার সময় তিথিকে স্কুলে দিয়ে যাই আবার আসার সময় নিয়ে আসি, এভাবে দিন গুলি ভালই যাচ্ছিল, একদিন তিথির স্কুল আগেই ছুটি হয়ে যায়, তাই আমায় বলে বাসায় চলে আসছে, অফিস শেষে বাসাই ফিরতেই দাড়োয়ান বাড়িওয়ালার সাথে দেখা করতে বলল,
রুমে এসে দেখি তিথি পড়তেছে, আমায় দেখে ওঠে এসেই জড়িয়ে ধরল, প্রতিদিনই এমন করে, যতক্ষন বাসায় থাকি ততক্ষন আমার হাত ছাড়তে চায়না, দাদী নাকি এটা বলে গেছে, অবশ্য দাদী মারা যাওয়ার পর তিথির মাঝে অনেকটাই পরিবর্তন আসছে, আগের মত তেমন বেফাস কথা বলেনা,
কপালে একটা চুমু দিয়ে টেবিলে বসিয়ে বল্লাম যে একটু বাড়িওয়ালার সাথে দেখা করতে হবে আমি দেখা করে আসি
না আপনি যাবেন না, (তিথি)
কেন?
এমনি, না এমনি না আমায় না কয়টা অঙ্ক করে দিতে হবে,(তিথি)
আচ্ছা এসে করে দিচ্ছি,
না আমায় এখনই করে দিতে হবে,
(অঙ্ক করা শেষ হলে) আচ্ছা তুমি বাকি গুলা কর আমি আসতেছি,
ফিজিক্স টাও একটু বুঝিয়ে দেন, এভাবে করতে করতে রাত ৮টা বাজিয়ে ফেলছে প্রায় সব সাব্জেক্ট পড়ানো শেষ তার পরেও যেতে দিচ্ছে না, তার পর ধমক দিয়ে বসিয়ে দেখা করতে গেলাম,
সালাম দিতেই গম্ভির মুখে আমার দিকে তাকাল, আমার হাত টা ধরে টেনে ছাদে নিয়ে গেল
দেখ নিলয় তোমার বউ আমার ছাদের কি অবস্থা করছে, সবগুলা ফুল ছিড়ে ফেলছে, আর এদিকে আস দেখ গাছটার কি অবস্থা করছে, এটা কি কারও ওঠার মত গাছ? তোমার বউ গাছে ওঠে গাছটা ভেঙ্গে ফেলছে(বাড়িওয়ালা)
তার মানে এই জন্যই বাড়িওয়ালার কাছে আসতে দিচ্ছিল না?আমি তারা তারি নিচে নামলাম দেখি তিথি রুমে নাই, বাথরুমে ধাক্কা দিয়ে দেখি সারা বাথরুম ফুলের পাপড়ি দিয়ে ভরা, ভাবীদের রুমে গিয়েও দেখি নাই, রুমে এসে তিথির ফোনে ফোন দিলাম, খাটের নিচ থেকে ফোন বেজে ওঠল, ফোন টা কেটে নিচে তাকালাম দেখি তিথি খাটের নিচে শুয়ে আছে, তিথি ওখানে কি কর বাইরে এস (ধমক দিয়ে)
আমি কিন্তু বাবাকে কল দিব, (তিথি)
বাবাকে কেন কল দিবে?(আমি)
আপনি আমায় মারবেন বলেই চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিল,
কান্না শুনে পাশের রুমের ভাবি চলে আসল,
কিরে নিলয় কি হয়েছে?(ভাবি)
আরে ভাবি কিছুই হয়নাই, আমি ওকে খাটের নিচ থেকে বাইর হইতে কইছি আর ও ওমনি কান্না শুরু করছে, তুমি যাও আমি দেখতেছি,(আমি)
আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি আর কখনই করবনা(তিথি)
আচ্ছা ঠিক আছে এবার বাইরে আস,
আগে বলেন মারবেননা,(তিথি)
আচ্ছা মারবনা বাইরে আস,
কান্না থামিয়ে বাইরে আসল, চোখের পানি মুছে দিয়ে জিগ্গেস করলাম
গাছ ভাংছ কেন?(আমি)
আমি ভাঙ্গিনাই, দিয়া ভাঙ্গছে(ভাবির মেয়ে)
মিথ্যা কথা বলবানা তিথি সত্য বল (ধমক দিয়ে)
অনেক দিন থেকে গাছে উঠিনা তাই ছাদে গাছ দেখে পা কেমন জানি করতেছিল তাই ওঠছিলাম বলেই আবার কান্না শুরু করে দিল,
আচ্ছা কাদতে হবেনা, কান্না করার কি আছে পাগলি আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি, নাকি মেরেছি? কিছু বলবওনা, কান্না থামাও বলে আবার চোখের পানি মুছে দিলাম
আচ্ছা তিথি
হুমমম
আরেকটা কথা জিগ্গেস করি কান্না করবানা কিন্তু,
আচ্ছা (তিথি)
আচ্ছা ফুল কেন ছিড়েছ?
ওওও আমি না টিভিতে দেখছি সাবান দিয়ে গোসল করারর সময় পানিতে ফুল দিতে হয়, তাহলে সুন্দর হওয়া যায় তাই ফুল ছিড়ছি,
তাই বলে সব ফুল কেন?
বারে আপনি দেখেন নাই ওদের গোছলখানা ভর্তি থাকে তাই ত সব ফুল ছিড়ছি, এবার আর না হেসে পারলাম না, আমার হাসি দেখে ও হাসতেছে,
ধুর পাগলি ওরা এমনিতেই ওইভাবে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়, আর তুমি এমনিতেই সুন্দর তোমাকে ফুল দিয়ে গোছল করতে হবেনা, যাদের চেহারা খারাপ তাদের করতে হয়, আর কখনই ছিড়বেনা মনে থাকবে?(আমি)
(খুশি হয়ে) আচ্ছা আর ছিড়বনা,।
তার কিছুদিন পর তিথির টেষ্ট পরিক্ষা শুরু হওয়াই ওকে সারা দিন বাসাতেই থাকতে হত সারাদিন, ভাবি আর দিয়ার সাথেই সময় কাটাত, একদিন বাসায় এসে দেখি ভাবিরা কেউ বাসায় নাই, দিয়া একা একা পড়তেছে, আমি যাওয়ার পর কেমন করে আমার দিকে তাকাচ্ছে, কিন্তু কাছে আসতেছেনা,
তিথি কিছূ হয়েছে?(আমি)
সে কান্না শুরু করে দিছে,
আমি ভয় পেয়ে গেলাম, তিথি তুমি কি একা একা ভয় পেয়েছ?
নাআআআ(কান্না কন্ঠে)
আবার ফুল ছিড়েছ?
নাআআআ
ভাবি কিছু বলেছে? বকেছে?
নাআআআ
তাহলে কাদতেছ কেন?
আমি ইচ্ছে করে করি নাই?
কি করেছ বল,
আপনি আমায় মারবেন, বলেই আরও জোড়ে কাদতে লাগল, আমি বাবাকে বলে দিব আপনি আমায় মারছেন,(তিথি)
আমি কি তোমাকে কখনও মেরেছি?
হুম দুইবার থাপ্পর মারছেন।(তিথি)
কবে?
মনে নাই একদিন সকালবেলা আর ঈদের পর একদিন আপনার বন্ধুদের সাথে কথা না বলার জণ্য মারছিলেন,
আচ্ছা তখন বুঝতে পারিনাই, তার পর ত আর মারিনাই, আর মারবও না বল কি করছ?(আমি)
দিয়া না চকলেট খাইতেছিল আমি চাইছিলাম আমাকে দেয়নাই, পরে আমি ওর কাছ থেকে জোড় করে সেটা কেড়ে নিছি, তার পর সে আমার চুল টেনে ধরছিল তাই আমি ওকে কামড় দিছি, ( তিথি)
কামড় দিছ মানে? দিয়া এখন কোথায়?
ওকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে ওর মা।
(গল্পে লবন কম হলে আমি দায়ি না)
গল্প ”বউ বিড়ম্বনা” অথবা “পিচ্চ বউ “ পর্ব–৫