বউ বিড়ম্বনা” অথবা “পিচ্চি বউ

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ”বউ বিড়ম্বনা” অথবা “পিচ্চি বউ “ পর্ব–২

তিথি এখানেই থাক উঠবিনা, আমি একটু ওই দিকটা দেখে আসি বলে খাবার দিকটা দেখতে গেলাম, কিছু দুর যাওয়ার পরই তিথি চিৎকার করে ডাকতেছে
ওগো শুনছেন……
মাথাটা দিল গরম করে, পিছন ফিরতেই আবার বলতেছে ওগো এই দিকে একটু আসেন না,
( বাড়ির মধ্যে সবাই আমার আর ওর দিকে তাকাচ্ছে আর হাসতেছে,বলির পাঠার মত আমি শুধু দাড়িয়ে আছি আর দাতে দাত কামড়াচ্ছি, এ ছাড়া করার কিছুই নাই কারন ওর চিৎকার শুনে বাবাও চলে আসছে এখন কিছু বলতে গেলেই উল্টা আমারি বিপদ, বাবাও মুচকি হাসছে,
কিরে নিলয় তিথি ডাকতেছে শুনতেছিস না? হা করে গাধার মত দাড়িয়ে আছিস কেন? এই দিকে আয় (বাবা)
হ্যা বল ডাকতেছিস কেন? কি হইছে?
কিরে তুই কি তিথিকে এখন তুই করে বলিস?(বাবা)
হ্যা, ওকে ত আগে থেকেই তুই করে বলি
আগের কথা ভুলে যা, আর একবার যদি তুই করে বলিস তর খবর আছে, তিথি মা তকে যদি তুই করে বলে আমায় বলবি,(বাবা)
ঠিক আছে বাবা(তিথি)
তাহলে কি বলে ডাকব বাবা?(আমি)
বউ কে কেউ তুই বলে ডাকে তুমি করে বলবি,(বাবা)
ঠিক আছে বাবা দরকার হলে আপনি করে বলব তাও তুই বলবনা,
এখন বলেন ডাকতেছেন কেন?
হিহিহিহিহি( তিথি)
কিরে গাধীর মত হাসতেছস কেন?(আমি)
বাবা না আপনাকে তুমি করে বলতে বল্ল? আপনি আপনি আপনি করতেছেন কেন?(তিথি)
ভুল হইছে আমার বইন, বল ডাকতেছ কেন?
ডাকতেছিলাম ভাবি আমারে বলেতেছে রাতে আমাদের কি কি হল? সেটা কি বলব? আপনি ত আবার বেশি কথা বলতে না করছেন তাই আপনাকে জিগ্গেস করলাম।
(বাবা বাবার মত দৌড়, ভাবি ত মুখে কাপড় দিয়ে দৌড়, আমি ত আগেই বলির পাঠা হইছিই সাথে একদিনেই আমি গন্ডারের মত হইছি তাই ওর কথাটা আমার গায়ে লাগল না,)
ভাবি কই যান দাড়ান ওনি বলতে বল্লেই বলব, বলেন না বলব? ভাবি ত চলে যাচ্ছে.(তিথি)
একটু দারা আমি একটা মাইক নিয়ে আসতেছি, তারপর মাইক দিয়ে বলবি, এলাকার সবাই শুনবে,
আব্বাআআআআ,
কিরে বাবাকে ডাকতেছিস কেন?
বাবা না বলল আপনি আমাকে তুই করে বললে জানাতে?
ভুল হইছে আমার,
আচ্ছা আর বলবেন না,
ঠিক আছে এখন তুমি বসে থাক আমি যাই?
আচ্ছা যান তারা তারি আসবেন, না হলে ভাবি আবার বলবে আমি অনেক অহংকারি, একটা কথা জিগ্গেস করছি বলতেছেনা,
(আল্লাহ কি এমন পাপ করছিলাম যে এই ঝামেলা আমার কপালে জুটালে?)
কিছু বলছেন?
না না কি বলব, বলছি তুমি বস আমি যাব আর আসব,
ঠিক আছে,
কিরে নিলয় কই যাস?(চলে যাচ্ছি এমন সময় মা এই কথা বলল)
মা ওনি মাইক আনতে যাচ্ছে,(তিথি)
মাইক!মাইক দিয়ে কি করবে?
কাল রাতে ওনি আমাকে যা যা বলছে ওটা নাকি এলাকার সবাইকে শুনাতে হবে তাই,
আমি এবারও কিছু বললাম না শুধু মায়ের দিকে নিরিহ প্রাণীর মত তাকিয়ে থাকলাম, মাও আমার অসহায়ত্বটা বুঝতে পেরে চোখের ভাষায় বুঝাতে চাচ্ছে একটু ধৈর্য্য ধর বাবা,
মা তিথিকে নিয়ে দিাদীর ঘরে নিয়ে গেল,
আমি পাথরের মত দাড়িয়েই রইলাম, না পারছি চিৎকার করে কাদতে, না পারছি ওকে কিছু বলতে, কিই বা বলব? ও বা বুঝেই কি এমন, মনের দু:খে চলে গেলাম পুকুর পারে, তারপর সারাদিন কোন রকম পার করে রাত আসল, লোকজনও কিছুটা কমছে, তিথি আর আমাকে ফুফু নিয়ে যাবে কিন্তু তিথি যাবেনা, অনেক জুড়া জুড়ি করেও নিতে পারল না, বলে যে কাল সকালে যাবে, আমিও একটু হাফ ছেড়ে বাচলাম, ইজ্জত যা যাওয়ার তা ত গেছেই তা নিজের বাড়িতে অন্য বাড়িতে ত আর গেল না, রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে আমি ঘুমাতে গেলাম, কিছুক্ষন পর দাদি আর তিথি আসল আমার ঘরে,
দাদা ভাই ও ত ছোট মানুষ, কিছু বুঝেনা, কইটা দিন একটু ধৈর্য্য ধর সব ঠিক হয়ে যাবে, তুই কোন চিন্তা করিস না, আমিই ওকে সব শিখিয়ে দিব(দাদী)
হ্যা দাদী ঠিকই বলেছে, আমাকে আজ অনেক কিছুই শিখাইছে, আপনি আমাকে যা বলবেন তা যেন কাউকে না বলি, আপনার বা আমার বিষয়ে কোন কিছু জিগ্গেস করলে তার সাথে কোন কথাই যেন না বলি, আর..
ওই ছেরি থাম তরে কি বলে নিয়ে আসলাম?(দাদী)
কথা বলতে না করছিলে(তিথি)
এবার আমি আর না হেসে পারলাম না,
আমার হাসি দেখে তিথিও খিক খিক করে হেসে উঠল, কি নি:শ্পাপ হাসি, তার পর দাদী আরও অনেক কথা বলল, চলে যাওয়ার আগে একটা খুচা মেরে বলল, যাই করিস সাবধানে, বলেই হাসতে হাসতে চলে গেল,
আমিও অসহায়ের একটা হাসি দিয়ে শুয়ে পরলাম, তিথি কাল রাতের মত আজও এসে আমার বুকে শুয়ে পরল, বালিশে যেতে বললে বাবার ভয় আর চিৎকার করার ভয় দেখিয়ে শুয়ে পরল,
হঠাৎ মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, চোখ খোলে দেখি তিথি কিছুক্ষন পর পর আমার পা ছালাম করতেছে শুয়ে থেকেই,
কিরে সালাম করতেছিস কেন?
আব্বাআআ
আবার বাবা কে ডাকছিস কেন?
বাবা না বলছে তুই করে বললে জানাতে তাই,
ভাই ভুল হইছে সালাম করতেছ কেন?
আমার পা আপনার পায়ের সাথে লাগছে ত তাই, বড়দের শরীরে পা লাগলে সালাম করতে হয়ত তাই করতেছি,
ত পা টান দিলেই ত পারতে,
কি করে দিব আপনার পা ত আমারটার উপর অনেক চেষ্টা করছি পারিনাই, তাই সালাম করতছি,
কখন থেকে করতেছ?
আপনি ঘুমানোর একটু পরেই ত পা তুলে দিলেন,
ত আমাকেডাকতেও ত পারতা তাইনা,
ডাকলে যদি মারেন তাই ডাকিনাই, মনে নাই একদিন আপনার ঘুমের সময় ডাকছিলাম আর ওঠে আপনি আমাকে কি মারটাই না মারছিলেন, তাই ডাকি নাই, আর নানি বলছে আপনার দারা যদি আমার কোন কষ্টও হয় আমি যেন কাউকে ডাকা ডাকি না করি,
ঠিক আছে এখন ঘুমাও, আর যদি হঠাৎ পা লেগেও যায় সালাম করতে হবে না, ঘুমিয়ে পর,
সকাল বেলা ফুফু মানে আমার মাশুড়ী ডাকতেছে,
মা ডাকতেছ কেন? (তিথি)
কি করতেছস আর নিলয় কই?
কিরে কথা বলস না কেন? নিলয় কই?
তিথি?
সকাল বেলা কি থাপ্পর খাওয়ার সাধ জাগছে?
মারবা কেন নানীই ত কাল রাতে বলে গেল ওনার আর আমার কথা কেউ কিছু জিগ্গেস করলে কথা না বলতে,সকাল বেলা কি থাপ্পর খাওয়ার সাধ জাগছে?
মারবা কেন নানীই ত কাল রাতে বলে গেল ওনার আর আমার কথা কেউ কিছু জিগ্গেস করলে কথা না বলতে,
তিথি তুই এমন কেন? তর কি বুদ্ধি শুদ্ধি কিছু হবেনা কখনও?
কেন মা আমি আবার কি করলাম? আর আমার বুদ্ধি না্ই কে বলল? বুদ্ধি না থাকলে কি আমি ক্লাশে সব সময় ১ম হতাম? আর বৃত্তিও ত পাইছি এইটে, তুমিই ত তখন বলছিলে আমার ব্রেইন অনেক ভাল বলনাই?(তিথি)
হুম বুঝতে পারছি ভুল আমারই, তকে যদি সবার সাথে মিশতে দিতাম তাহলে আর আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না, চোখে চোখে রাখলেও দুষ না রাখলেও দুষ, এখন থেকে তর স্কুলে যাওয়া বন্ধ, পড়ালেখাও বাদ, তুই এখন শুধু পাড়ায় পাড়ায় গল্প করে বেরাবি আর দুনিয়া সম্পর্কে জানবি,
ইয়াহুওওওও, আমি আর স্কুলে যাবনা, বলেই নাচতে শুরু করছে, দৌড়িয়ে এসে আমায় বলতেছে ভাইয়া ভাইয়া ধ্যাৎ ওগো ওগো শুনছেন আমার আর স্কুলে যেতে হবে না, আমি এখন সারাদিন ঘুরাঘুরি করমু, আমার যে কি খুশি লাগতেছে বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরল,
এদিকে ওর চিৎকার শুনে বাবা মা দৌড়িয়ে আসছে, এসে দেখে তিথি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে, এটা দেখে বাবা মা আর রুমে ঢুকলনা, হাসতে হাসতে চলে গেল,ফুফুও তাদের সাথে গেল,
এবার আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, ঠাটিয়ে কানের নিচে একটা দিয়ে দিলাম, হঠাৎই তার মুখটা মলিন হয়ে গেল, সে বিছানার এক কোনে বসে পরল, আর গাল ধরে নিরবে কাদতে লাগল, আশ্চর্যের বিষয় কোন শব্দ করতেছেনা, আর বাবার কাছেও কোন নালিশ দিতেছেনা, তার পরেও আমার রাগ কমলনা, ওঠে ফ্রেস হয়ে বাবা মা কে বলে জোড় করে চলে আসলাম আমার কর্মক্ষেত্র চট্রগ্রামে, আসার সময় দাদীকে বলে আসলাম যে তোমার নাতীন কে পারলে কিছু শিখাইও না হলে আমার দ্বারা ওকে নিয়ে চলা সম্ভব না,
পৌছিতে প্রায় ১৬ ঘন্টা লাগল যানজটের কারনে, ফোনটাও বন্ধ রাত্রি তখন ৩টা, ফোনটা চার্জে বসিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম, সকাল ৮টার দিকে ফোন খোলার সাথে সাথেই বাবার ফোন,
নিলয় তুই কই?
বাবা আমি ত বাসায়, অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি,
যত দ্রুত সম্ভব তুই বাড়িতে আয়, তিথি হাসপাতালে বলেই বাবা ফোনটা রেখে দিল,
এই কথা শুনে আমার ভয ঢুকে গেল, যেভাবে ছিলাম সেভাবেই বেরিয়ে পরলাম, চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট এ বন্ধুকে বলে টিকিট এর ব্যবস্থ্যা করলাম তারপর ১২ টার দিকে ঢাকায় পৌছিলাম আর ঢাকা থেকে প্রাইভেট কার ভাড়া করে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম, পৌছিতে প্রায় ৫টা বেজে গেল, হাসপাতালে গিয়ে দেখি তিথি বেডে শুয়ে আছে আর সেলাইন চলতেছে,
বাবা কি হয়েছে?
ঠাসসসসসস! হারামজাদা তর মত একটা স্টুপিড ছেলের বাবা কি করে হলাম সেটাই আমি চিন্তা করতেছি, কি করে তুই ওকে মারতে পারলি? ও একটু চঞ্চল টাইপের সেটা জানিস, আর ওর বয়সই বা কত হইছে? মায়ের ইচ্ছাতেই বিয়েটা হল কই একটু শিখানোর চেষ্টা করবি তা না, তুই ওকে মারলি? তুই জানস তুই না খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিস সে জন্য ও এখনও কিছু খাইনাই, মা নাকি বলেছে স্বামিকে রেখে কখনও খেতে নেই, ওদিকে তর ফোনটাও বন্ধ, যতক্ষন জানতে না পারবে তুই খাসনাই ততখন ও কিছু খাবেনা, আর এভাবে থাকতে থাকতে রাত ৯টার দিকে অজ্ঞান হয়ে যায়, যে মেয়েটা দিনে ৬/৭ বার খেয়েও খাওয়ার জন্য চিল্লাচিল্লী করত সেই মেয়েটা পরশু রাতের পর এখন পর্যন্ত কিছুই খাইনাই, পরে সেলাইন এর মাধ্যমে খাবার দেওয়া হচ্ছে, এখন পর্যন্ত কিছু খাওয়াতে পারিনাই, আর তুই ওেকে?!!!!
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না, সত্যিই কাজটা অন্যায় করেছি, গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছি আরেআমায় দেখে তিথি খিক খিক করে হাসতেছে,
হাসতেছিস কে? সরি হাসতেছ কেন?
আপনাকে বাবা মেরে গাল কেমন লাল করে দিছে হিহিহি,
ওর নিশ্পাপ হাসি দেখে আমিও হাসলাম, পাশে গিয়ে বসতেই ওঠে আমার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরল,
মা, ফুফু ওখান থেকে গায়েব হয়ে গেল, দাদী শুধু মিটমিট করে হাসতেছে,
কি হল তিথি এখন আবার এমন করতেছ কেন? (আমি)
নানী না বলছে আপনার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে? আপনি ত এতখন ছিলেন না, তাই বালিশে শুয়ে আছিলাম, কিন্ত এখন ত আছেন তাই শুয়ে আছি,(তিথি)
দাদী একটু এই দিকে আস ত, (আমি)
বল,(দাদী)
তোমার পা টা একটু উপরে তুলবা?
কেন?
তুমার পা টা ধরে বলি ওকে আর কিছু শিখাইতে যাইও না, যা শিখানোর আমিই শিখামু সময় হলে, আমার ইজ্জত নিয়ে আর লুডু খেইলও না,
আর তুই না না তুমি আমার জন্য নাখেয়ে থাকবে কেন?
স্বামীর আগে খেলে নাকি স্বামির অমঙ্গল হয় তাই,
ধুর পাগলি ওগুলো এমনিই বলে আর কোন দিন এমন করবেনা, আর আমিও তোর সাথে কখনও এমন করবনা, বলেই অতিরিক্ত ভালবাসায় কপালে এটা চুমু দিলাম,
সেও বলল আচ্ছা ঠিক আছে,
পরে বাবা দাদীকে ডেকে কিছু খাবার পাঠিয়ে দিল, আমি ওকে খাইয়ে দিলাম,
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম, মাঝ পথে বাবা আবার আমাকে ঝাড়ি দেওয়া শুরু করল,
বাবা ওনাকে কিছু বইলেন না, ওনি বলছে আর কখনও এমন করবেনা, আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিছে, কিন্ত ভাল করে মাখাইতে পারেনা, আমার কপালে একটা চুমুও দিছে
গল্প ”বউ বিড়ম্বনা” অথবা “পিচ্চি বউ “ পর্ব–৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *