1. নতুন গল্পঃ3. রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলোঃবউ বিড়ম্বনা” অথবা “পিচ্চি বউলেখাঃ মামুনুল হক (নন্দঘোষ)

বউ বিড়ম্বনা {লেখাঃ মামুনুল হক (নন্দঘোষ)}

তিথিকে যখন বিয়ে করি তার বয়স তখন ১৪, সম্পর্কে আমার ফুফাত বোন, আমার দাদীর ইচ্ছায় বিয়েটা হয়েছিল, পরিবারের বড় ছেলে হওয়াই আমাকে এই কুরবানির শিকার হতে হয়েছিল, ওকে যখন বিয়ে করি আমার বয়স তখন ২৬, বুঝতেই পারছেন দুজন দুই গ্রহের বসিন্দা, দাদীও ছিল শেষ পর্যায়ে, কোন রকম হাটতে চলতে পারত, তাই একদিন বাবা আর ফুফুকে ডেকে এই কুরবানির ব্যাবস্থা করে। তার এক কথা নাতবউ দেখে যাবে, আর তিথির সাথেই আমার বিয়ে দিবে, তাইত এক প্রকার জোর করেই তিথির সাথে আমার বিয়েটা হয়েছিল।
অনিচ্ছা সত্তেও দাদীর জোড়া-জোড়িতে বসর ঘরে ঢুকতে হয়েছিল, ঘরে ঢুকতেই রোবটের মত খাট থেকে নেমে সালাম করা শুরু করল, করছে ত করছেই, আমি কিছু বলছিনা, প্রায় দুই মিনিট করার পর ধমক দিয়ে বল্লাম কিরে কি করিস?
তিথি: সালাম করি,
তা ত দেখতেই পারতেছি এতক্ষণ ধরে সালাম করতে হয়?
নানী ত বলছে আপনি যখন আমাকে উঠাবেন তখন সালাম করা বাদ দিতে,
(ওর কথা শুনে ত আমার পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে)
ত আর কি কি বলছে তর নানী?
আরও অনেক কথা বলছে,
কি কি বলছে? (পেটে হাসি চেপে রেখে)
বলছে আপনার বুকে মাথা রেখে রাতে ঘুমাতে, আপনি যদি আমাকে জড়িয়ে ধরেন আমি যেন বাধা না দেই, চিৎকার চেচামেচি যেন না করি, আপ…
হইছে এবার থাম, চল খাটে বসে পর,
নানী বলছে আমাকে কুলে করে নিয়ে যেতে,(তিথি)
কানের নিচে একটা চটকানা দিয়ে দাত ফালায়ে দিমু, ওরে কুলে করে খাটে নিতে হবে? যা খাটে যা,
ওওওও এইবার বুচ্ছি নানী কেন চিৎকার করতে না করছে,
কি বুজছস?(আমি)
এই যে আপনি আমাকে থাপ্পর মারবেন আমি ব্যাথা পাব, তাই যেন চিৎকার না করি, চিৎকার করলে ত মামা এসে আপনাকে মারবে, মনে নাই একদিন আপনি আমাকে মারতেছিলেন আর আমি চিৎকার করতেছিলাম তখন মামা এসে আপনাকে কি দৌড়ানিটা দিছিল, বলেই ফিক করে হেসে দিছে, আপনি মারেন আমি চিৎকার করবনা,
(ওর কথা শুনে আমি হাসব না কাদব ঠিক বুঝতেছিনা,)
কি হল মারেন না হলে কুলে করে বিছানায় নিয়ে যান,
ওই তর ত সাহস একদিনেই বেড়ে গেছে, আমার কথার উপর কথা বলিস? যা বিছানায় (ধমক দিয়ে, ও আবার আমায় খুব ভয় পায়)
(ভয়ে কাপতে কাপতে বিছানায় গেল)
আমিও বিছানায় গিয়ে হাতে থাকা একটা জামা ওর হাতে দিলাম, কিছুদিন আগেই ও আমায় ফোনে বলছিল ভাইয়া এবার আসার সময় আমার জন্য একটা হলুদ কালারের জামা নিয়ে আসবেন।ওটাই আজ দিলাম,
ভাইয়া এটা কি(তিথি)
খুলে দেখ,
ওয়াও অনেক সুন্দর হইছে ভাইয়া, THANK YOU বলেই গালে একটা চুমু দিল, আচ্ছা আপনি এমন কেন?
কেমন?(আমি)
এইযে ড্রেসটা এখন দিলেন আগে যদি দিতেন তাহলে এটা পড়েই আসতাম কি শাড়ী পড়াইছে, আমি পরবই না তারপরেও বলে বিয়েতে শাড়ী পরতে হয়, আচ্ছা ভাইয়া বিয়ে কি?
তর ওত কিছু জানতে হবেনা, শাড়ীটা খুলে এটা পড়ে আয়।শাড়ী পরে ঘুমাতে পারবিনা,
আচ্ছা(বলেই শাড়ী খুলতে লাগল)
ওই কি করিস?
কেন আপনি না বল্লেন এটা পরতে?
বলছি তাই বলে কি এখানে?
কেন কোন সমস্যা?
না কোন সমস্যা নাই, যা বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ওখান থেকে কাপড় পরে আয়।
আচ্ছা(বলেই বাথরুমে চলে গেল)
কিছুক্ষণ পর ড্রেসটা পড়ে এসে বলতেছে ভাইয়া কেমন লাগছে আমাকে?
হুম সুন্দর লাগতেছে,
মামা মামী কে দেখিয়ে আসি?
না এত রাতে যেতে হবেনা, আর আজ থেকে মা বাবা কে আর মামা মামী ডাকবিনা,
কেন? কি ডাকব আঙ্কেল আন্টি?
না, মা বাবা বলেই ডাকবি, বিয়ের পর সব মেয়েরাই তার স্বামীর মা বাবাকে মা বাবা বলেই ডাকে,
যাহ আমি পারবনা, আমার লজ্জা লাগে,
এই দিকে আয়,
কেন মারবেন?
না আয়, শুন তকে কিছু কথা বলি, বিয়ের পর মেয়েদের কিছু জিনিস পরিবর্তন করতে হয়, তার স্বামীর বাবা মাকে মা বাবাই ডাকতে হয়, চঞ্চলতা কমাতে হয়, আর কথা কম বলতে হয়। মনে থাকবে?
হুম থাকবে,
ঠিক আছে এখন ঘুমা,বলেই আমি শুয়ে পরলাম,
(ও শুয়ে পরল, কিন্তু বালিশে না, আমার বুকেই)
কিরে খাটে কি বালিশের অভাব হইছে?
নানী ত বলছে এভাবে ঘুমাতে,
ওর কান্ড কারখানা দেখে আর কিছু বল্লাম না,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়তে গেলাম, নামাজ পড়ে হাটতে হাটতে বাজারে গেলাম চা খেতে, চা খেয়ে বাড়ি এসে দেখি সবাই কেমন কানাঘোসা করতেছে, আমি তোয়াক্কা না করে রুমে গেলাম, কিছুক্সন পর দাদী আসল, এসেই তিথিকে খুজা শুরু করল, আমায় বলতেছে
কি নাতি আমার নাতনিটারে কই রাখলা দেখি একটু কেমন হল,
তোমার নাতনী আগে যেমন ছিল তেমনি আছে,
তা কই আমার নাত বউ টা?
তোমার নাত বউ কে কি আমি পকেটে করে নিয়ে বসে আছি যে আমায় জিগ্গেস করতেছ?
কি বলিস, ও ত বের হইনাই আমরা ত মনে করলাম তুই রুমে তাই এদিকে আসিনাই,
কি বল আমি ত ওকে ঘরে রেখেই নামাজে গেলাম,
(তারপর সারা বাড়িতে ওকে খোজার ধুম পরে গেল, চিৎকার করে ডেকেউ কোন পাত্তা নে, কোথাও পাওয়া গেলনা,)
আমার মনে হঠাৎ সন্দেহ জাগল, ওকি তাহলে?
যেই ভাবা সেই কাজ দৌড়িয়ে পুকুর ঘাটের আম বাগানে গেলাম, যা ভাবছিলাম তাই, গাছ বান্দর গাছে বসে আম খাচ্ছে,
কিরে ওখানে কি করিস?
ভাইয়া আম খাচ্ছি খাবেন?
দারা তর আম খাওয়া বের করতেছি, আজ তর পা ভেঙে দিব, তরে যে এত মানুষ ডাকতেছে শুনিস নাই?(বলেই লাঠি খোজা শুরু করলাম)
শুনছিই ত,
শুনছস কথা বল্লিনা কেন?
আপনিই না কাল বল্লেন কথা কম বলতে।

দারা তর আম খাওয়া বের করতেছি, আজ তর পা ভেঙে দিব, তরে যে এত মানুষ ডাকতেছে শুনিস নাই?(বলেই লাঠি খোজা শুরু করলাম)
শুনছিই ত,
শুনছস কথা বল্লিনা কেন?
আপনিই না কাল বল্লেন কথা কম বলতে।
গাধী কথা কম বলতে বলছি তাইবলে এই না যে কথা বলতে নিষেধ করছি, ছাগলের মত যে সারাদিন ম্যা ম্যা করস সেটা কমাইতে বলছি,
ভূল হয়ে গেছে,
এখন নেমে আয় বলছি,
মারবেন না ত?(অসহায় ভাবে)
(মুচকি হাসি) দিয়ে না মারবনা এবার নেমে আয়,
লাঠিটা তাহলে পুকুরে ফেলে দেন তারপর নামব,,
আচ্ছা ফেলেদিলাম এবার আয়, সাবধানে নাম
একটু সরে দাড়ান,
কেন?
লাফ দিব,
এবার কিন্তু সত্যি সত্যি মাইর খাবি, পরে পা ভাংবে এমনিতেই গাছ বেয়ে নেমে আয়,
না ভাংবেনা, এর আগে কত নামছি, আপনি সরেন আমি নামতেছি,
ওমা গোওওওওওওওওওওওও
বল্লাম লাফ দিসনা, তার পরেও দিলি হল ত এবার?
আপনি মানুষটা খুব খারাপ(তিথি)
আমি!!!! আমি কি করলাম?
আপনি মনে মনে বদ দোয়া দিছেন, তাই আমি পায়ে ব্যাথা পেলাম,
তরে আজ
মামাআআআআআ,. থুক্কু আব্বাআআআআআ
আরে আরে আব্বারে ডাকস কেন?
আপনি আমায় মারতে আসতেছেন ডাকবনা?
কে বল্ল তরে মারতে যাইতেছি তরে বাড়িতে নিয়ে যাব সেটাই বলতেছিলাম, চল বাড়ি চল,
ওওওওও আমি মনে করছিলাম মারবেন তাই, চলেন যাই,
কিরে ছেরি কই গেছিলি এই সকাল বেলা?
কোথাও যাইনাই নানী (তিথি)(বলেই চলে যাচ্ছে)
দাদী তোমার নাতনী মিথ্যা বলতেছে ও পুকুর পাড়ে গেছিল,
(লাঠি দিয়ে গুতা দিয়ে) কিরে ছেরা কিছুই নাকি হইনাই নাতনী আমার ওমনে হাটে কে?
বুড়ি তোমার নাতনী এই সকাল বেলা গাছে উঠছিল, গাছ থেকে নামতেই পায়ে ব্যাথা পায়ছে, তাই এমনে হাটতেছে,
বুঝিরে বুঝি তর দাদাও এমন বাহানা বাইর করত, নাতনীটারে একটু সাবধানে রাখিস বলেই হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে,
ওই বুড়ি ওই..(বলেই দাদীকে ধরে ফেল্লাম)
কিরে নিলয় দিন দিন বেয়াদব হচ্ছিস? কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও শিখিসনি? থাপড়ায়ে দাত ফালায়ে দিমু, বুড়ি কি রে?(বাবা)
বাবা ভূল হয়ে গেছে,
দাদু একটু সরে যা ত, বলেই দাদী সামনে আসল, আব্বাজান আপনে কি বলছেন আমার নাতীরে আবার বলেন ত,(দাদী)
আম্মা ও আপনাকে বুড়ি বলতেছে কেমন বেয়াদব হইছে দেখছেন?
ওই গোলামের বাচ্চা আমার নাতী আমারে বুড়ি বলুক আর ছেরি বলুক তর কী? কোন সাহসে তুই আমার নাতীরে থাপড়াইতে চাইলি? আর তুই কত বড় আদবওয়ারা ব্যক্তি যে আমাদের মাঝে কথা বলতে আইছস?লাঠি দিয়ে বাড়িয়ে পিঠের চামরা তুলে ফালামু,
আম্মা আপনি কিন্তু আমারে অপমান করতেছেন, আর আপনার আশকারা পেয়েই কিন্তু ও এতবড় বেয়াদপ হইছে,(বাবা)
তরে অপমান করতেছি না? কান ধর কান ধরে দশবার উঠবস কর,
(আমি ত হাসি আটকাতে পারতেছিনা বাবার অসহায় মুখ দেখে, যেন বলতেছে বাবা নিলয় আমার ভূল হয়ে গেছে, আমার ইজ্জত বাচা)
দাদী থাক না চল আমরা ভিতরে যাই,(আমি)
তুই চুপ থাক, কিরে কান ধরতে কইছিনা?(দাদী)
(বাবা একবার আমার দিকে চাইছে একবার বাড়ি ভর্তি মানুষের দিকে চাইছে, কি আর করার দাদীকে কোলে করে ঘরে নিয়ে আসলাম, না হলে কান ধরিয়েই ছাড়ত)
(বাড়ির বিতরে এসে পররাম আরেক বিপদে, সবার মুখে এক কথা কি ডাকাত ছেরারে, ছেরিডারে কি করছে,)
অবস্থা বেগতিক দেখে আমি দাদীকে বুঝিয়ে বললাম পরে দাদীই এই লজ্জার হাত থেকে বাচাইল্। বাড়ির মাঝখানে গিয়ে তিথিকে জোরে ডাক দিল, তিথি সামনে আসতেই মাকে বলল বৈামা দেখ তোমার ছেলের বউ এর কান্ড এই সকাল বেলা গিয়ে গাছে উঠে কেমন পা টা ভেঙ্গে আনল,
এটা শুনেই মা দৌড়িয়ে আসল, তরে কত দিন বলছি গাছে উঠবিনা, তারপরও কেন আমার কথা শুনস না? দারা আমি এখন তর মাকে ফোন দিতেছি, বলব তুই গাছে উঠে পা ভাঙছিস।(মা)
হিহিহি (তিথি)
কিরে বেহায়া হাসতেছিস কে?(মা)
আজ থেকে ত তুমিই আমার মা তুমি আবার কাকে বলবা?(তিথি)
(মায়ের মুখে একটা খেুসির রেখা ভেসে উঠল)
তকে কে বল্ল।(মা)
নিলয় ভাইয়া বলেছে, আরও বলেছে আ….
(সাথে সাথে দাদী মুখটা চেপে ধরল আর আমি দৌড়ে ঘরের ভিতর)
মাও মুচকি হেসে চলে গেল,
কিরে তুই নিলয়কে ভাইয়া বলে ডাকিস কেন?>(দাদী)
কি ডাকব তাহলে? ভাইয়া হয় ভাইয়া বলে ডাকবনা?(তিথি)
দুর পাগলী স্বামীকে কি কেউ ভাইয়া বলে ডাকে?
কি বলে ডাকে?
কিছুই ডাকতে হবেনা, আপনি করে বলবি আর বেশি দরকার হলে আকার ইঙ্গিত এ ডাকবি,(দাদী)
কিভাবে?(তিথি)
এইযে শুনছেন, ওগো শুনছেন, এইভাবে,
ওওওও আচ্ছা ঠিক আছে,
তারপর আমাদের গোসল করিয়ে চেয়ারে বসিয়ে রাখছে, বান্দর কি আর সভ্যতা বুঝে তিথিও তেমনি, একবার এই দৌড়াচ্ছে ত আরেকবার ওইদিকে, একবার ত শাড়ী খুলে এসে নাচা নাচী শুরু করছে, মা আবার তাকে ধমকিয়ে শাড়ী পরিয়ে আমার পাশে বসিয়ে দিয়ে গেল,
তিথি এখানেই থাক উঠবিনা, আমি একটু ওই দিকটা দেখে আসি বলে খাবার দিকটা দেখতে গেলাম, কিছু দুর যাওয়ার পরই তিথি চিৎকার করে ডাকতেছে
ওগো শুনছেন……
গল্প ”বউ বিড়ম্বনা” অথবা “পিচ্চি বউ “ পর্ব–২

One thought on “বউ বিড়ম্বনা {লেখাঃ মামুনুল হক (নন্দঘোষ)}

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *