স্যার যখন স্বামী

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৯

জান্নাতুল ফেরদৌস

৬ মাস পর আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা দিলাম।পরীক্ষা ভালোই হয়েছে।আর ভালো হবে বাই না কেন আমাকে উনি তেমনভাবেই পড়িয়েছেন।
রাতে,,
তন্ময়ের মোবাইলে একটা কল আসলো।অনেক্ষণ ধরে কল আসছিলো।জরুরি কল মনে করে তা রিসিভ করলাম
“হ্যালো,”
“হ্যালো মেঘ বলছ।”
“সাগর!”
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৮
“ভয় পেয় না।খারাপ খবর শুনানোর জন্য কল করেনি।ভালোইই হয়েছে কলটা তুমি ধরেছ। আসলে মেঘ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।তোমার সাথে আমি যে ভুল করেছি,হঠাৎ করে তোমার জীবনে আবার এসে তোমার সংসারে আগুন লাগিয়ে আমি যে অন্যায় করেছি জানি তা ক্ষমার যোগ্য না।তারপরও প্লিজ পারলে আমাকে মাফ করে দিও।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।তন্ময় আমার ভুলটা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।তুমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান তন্ময়ের মতন একজন জীবনসঙ্গী পেয়ে।তোমার সংসার জীবনে সুখে থাকো সেই দুয়া করছি।ভালো থেকো।”
এটা কি হল?উনার মোবাইলে সাগর কল দিয়েছে।তার মানে এতদিন ধরে সাগরের সাথে উনার যোগাযোগ ছিল।
.
.
“একটু আগে আপনার মোবাইলে কল এসেছিলো।”
“তাই নাকি?রিসিভ করেছিলে?”
“হ্যা।”
“কে কল দিয়েছিলো।”
“সাগর ”
“সাগর কল দিয়েছিলো।কেন কল দিয়েছিলো সেটা কি জানতে পারি।”
“ও নাকি ওর ভুল বুঝতে পেরেছ আর সেটা আপনার জন্যই নাকি হয়েছে।আপনি কি করে এতসব করলেন।”
“জানতে চাও।”
“হ্যা।”
“তাহলে শুনো।সাগরের ছোট বোনকেতো চিনোই।”
“হ্যা চিনি তো।”
“হুম নূপুরের সাথে একটা ছেলের রিলেশন ছিলো প্রায় একবছরের মতন। এক বছরের সম্পর্কের পর নূপুর জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট।এই কথাটা তার প্রেমিককে বলে আর এও বলে যে তাকে যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে করে। সে নূপুরকে অনেক আজেবাজে কথা শুনিয়ে দিয়ে তাদের রিলেশনটা ব্রেকআপ করে দেয়।এর কিছুদিন পর সাগর জানতে পারে তার বোনের সাথে একটা ছেলের রিলেশন চলছে।সাগর তার দলবল নিয়ে ওই ছেলেকে ইচ্ছেমতন পিটায়।এরপর নূপুরের প্রেমিক ঠিক সাগরের মতন সে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এদিকে নূপুরের মা বাবা নূপুরের বিয়ে ঠিক করে।নূপুর কিছু ভেবে পাচ্ছিলো না সে এই অবস্থায় কি করবে।তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় সে আত্মহত্যা করবে।ওকে সেদিন আমি রেললাইনে দেখেছিলাম।বুঝতে পারছিলাম ও কিছু একটা ভুল করতে যাচ্ছে তাই তাকে আমি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে সেখান থেকে নিয়ে আসি।নুপূরের বিয়ের দিন আমি আমার ফ্রেন্ডকে নিয়ে সেখানে যায়।কারণ আমি জানতাম নূপুরের সে প্রেমিক সেদিন সাগরের হাতে মার খাওয়ার পর চুপ করে থাকবে না।সে ঠিকই একটা অঘটন ঘটাবে।আমার এই ধারণা সত্যি হল। সেই ছেলে বিয়ের দিনে বরকে জানায় নূপুরের অনেক ছেলের সাথে রিলেশন ছিলো আর সে প্রেগন্যান্ট।এই খবর শুনার পর পাত্রপক্ষ এই বিয়ে ভেঙ্গে দেয়।যেই ফ্রেন্ডকে নিয়ে আমি বিয়ের বাড়িতে যায় তাকে নূপরের সম্পর্কে আমি অনেক আগে সব কিছু বলে রেখেছি।সে সব জেনে শুনে নূপুরকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো।কারণ সে জানে এতে মেয়েটার কোন দোষ ছিলোনা। তাছাড়া সে নিজেও নূপুরকে অনেক পছন্দ করে ফেলেছিলো সেজন্য নূপুরকে বিয়ে করার কথাটা আমাকে অনেক আগে বলেছিলো।নূপুরের মা বাবা আর সাগর যখন পাগলের মতো প্রলাপ বকছিলো সেদিন আমি আর আমার ফ্রেন্ড তাদেকে সান্ত্বনা দিই আর আমার ফ্রেন্ডের সাথে নুপূরের বিয়ের প্রস্তাব দিই।সেদিনই সাগর আমার হাত পা ধরে মাফ চাই।আর সে নিজের ভুল বুঝতে পারে।কারণ আরেকটা মেয়ের জীবন আর ভালবাসা নিয়ে সে যে খেলা খেলেছিলো আর সেই খেলার এইরকম প্রতিউত্তর সে এইভাবে পাবে কোনদিন ভাবে নেই।নিজের বোনের চোখের কান্না আর কষ্ট দেখে সে সেদিন তোমার কান্না,কষ্ট অনুভব করেছিলো।আর এইও বুঝতে পেরেছে আমাদের সংসারে আগুন লাগিয়ে সে কতটা জঘণ্য কাজ করেছে।সাগর তোমার সাথে যে অন্যায় করেছিলো সে ভুলের মাশুল তার বোনকে পেতে হয়েছে।সে ভেবেছিলো ওর এই ভুলের জন্য ওকে কোনদিন শাস্তি পেতে হবে না।কিন্তু ও হয়ত একটা কথা ভুলে গেছে উপরে একজন আছেন ওনি সবকিছু দেখছেন।সাগরের পাপের বিচার তিনি করেছেন।”
………
“তোমার সামনে আসার সাহস এখন ওর নেই।তাই আমার মোবাইলে আজকে কল করে তোমার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে।
আমি চেয়েছিলাম ওকে অন্যভাবে শাস্তিটা দিতে কিন্তু পরে ভাবলাম আমি যদি ওর মতন আচরণ করি তাহলে ওর আর আমার মধ্যে পার্থক্য কোথায়।আমি ওর বিপদের দিনে ওকে সাহায্য করে ওর ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছি।আর এটাই হচ্ছে আমার পক্ষ থেকে ওর শাস্তি।সেদিনের সে সাহায্য পেয়ে সে লজ্জিত হয়েছিল ওর বিবেক আর মনের কাছে। ও অনেক অপমানিত হয়েছিল সেদিন । এর থেকে বড় শাস্তি আর কি হতে পারে।”
“এতকিছু হয়ে গেল আর আমি আজকে এইসব জানছি।”
“জ্বী ম্যাডাম।আপনার জন্য এই গুড নিউজটা সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছিলাম।তোমার জন্য একের পর এক সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।সঠিক সময়ে সেগুলো দেখতে পারবে।”
“সারপ্রাইজ…..”(ঘামতে ঘামতে)
“হুম সারপ্রাইজ। এখন আরেকটা সারপ্রাইজ আছে।এই নাও পেপার।এখানে সাইন করে দাও।”
“কিসের পেপার।”
“ওমা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?ডির্ভোস পেপার।”
“ডি…ডির্ভোস পেপার…….”
“আজ্ঞে হ্যা….শর্ত অনুযায়ী ৬মাস শেষ। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে।নাও তাড়াতাড়ি সাইন করো এতে।এরপর তো তুমি মুক্তি পেয়ে যাবে।আর তারপর আমার প্রিয়াকে বিয়ে করে ঘরের বউ করে আনবো।”
…….
“আরে এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন?আচ্ছা বাবা আচ্ছা তোমাকেও দাওয়াত দিবে।খুশিতো।নাও তাড়াতাড়ি শুভ কাজটা শেষ করো।”
ডির্ভোসটা আগে হলে কি এমন হতো।এই ৬ টা মাস উনার সাথে থেকেছি।আগের থেকেও উনাকে বেশি ভালবেসেছে।উনাকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা।উনি কি এটা আদৌও বুঝেন না।তখন যা বলার বলেছি তাই বলে তখনকার কথা মেনে আমাকে এখন ডির্ভোস দেওয়ার মানে হয়।
“আরে কি হল?হাত কাঁপছে কেন?আমি সাহায্য করবো।”
“না, লাগবে না আমি পারবো।সাইন করার আগে একটা কথাই শুধু জিজ্ঞাস করবো আপনি কি প্রিয়া ম্যাডামকে সত্যিই ভালবাসেন।”
“হ্যা অনেক ভালবাসি।আর অনেক আগে থেকেই ভালবাসি।অনেক আগে এই কথা তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারেনি।”
“আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি।এই নিন সাইন করে দিলাম।আপনার বিবাহিত জীবন শুভ হোক।ভালো থাকবেন।”
“আরে কোথায় যাচ্ছ।”
“আপনার সাথে একসাথে থাকার অধিকার হারিয়ে ফেলছি।তাই চলে যাচ্ছি।”
“আরে সেটাতো বুঝেছি। কিন্তু এখন কোথায় যাচ্ছ।”
“মা বাবার কাছে,”
“তোমাকে সেখানে পৌঁছে দিয়ে আসি।”(মুচকি হেসে)
“না থাক লাগবে না, আমি একা যেতে পারবো”
“লাগবে,বেশ লাগবে।এত বেশি বুঝ কেন।চলো বলছি।”
হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন।খুব কান্না পাচ্ছে। উনার সব কিছুর উপর অধিকার আজকে থেকে আমি হারিয়ে ফেলেছি।আমার এত্ত কষ্ট হচ্ছে আর উনি মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছেন।ইচ্ছে করছে উনার গলাটা টিপে ধরি।রাক্ষস একটা।
“আহারে এতো দেখি কেঁদে নাকের পানি চোখের পানি সব এক করে ফেলছে।এইভাবে তোমাকে কাঁদতে দেখলে তোমার মা বাবা খারাপ কিছু ভাববেন।চোখের পানি মুছে ফেলো।এই নাও টিস্যু।”
………
“দেখো তুমি যা চেয়েছো আমি তাই করেছি। সুতরাং এত কান্নাকাটি করার কি আছে বুঝতে পারছি না।”
“সুখে,খুশীতে কাঁদছি। ও আপনি বুঝবেন না।”
“আমি না বুঝলে দুনিয়ার আর কেউ তোমাকে বুঝবে না।বুঝলেন ম্যাডাম।
বাবার বাসায় চলে আসলাম।মনটা ভালো
নেই।
না জানি বাবা মার সাথে কি কথা বলে
বেড়াচ্ছে। যদি ওদেরকে বলে দেয় উনার
আর আমার ডির্ভোস হয়ে গেছে
তাহলে……।আল্লাহ সত্যি সত্যি কি উনি
ওদেরকে সব বলে দিয়েছেন।ভয়ে ঘাম
ঝড়ছে আমার।
“কি ম্যাডাম এত কি ভাবছেন?”
“আপনি কি মা বাবাকে আমাদের
ডির্ভোসের কথা…..”
“মেঘ just relaxed.এইসব নিয়ে তোমার না
ভাবলেও চলবে। তোমার মা বাবাকে
এখনি কিছু বলতে হবে না।যা বলার আমি
বলবো। সেটা সময় আসলে।বুঝতে পারছ।”
উনার সব কথা আমার মাথার উপর দিয়ে
গেল।কিছু বুঝলাম না।
.
.
১ মাস পর আমি নিজেই মা বাবাকে
আমাদের ডির্ভোসের কথা বলে দিলাম।
ওদেরকে বলেছি উনার সাথে সংসার করা
আমার পক্ষে আর সম্ভব না।এই বিষয় নিয়ে
উনারা আমাকে অনেক গালমন্দ করেছেন
প্রথম প্রথম।আমি জানি এই কথা শুনে
উনারা অনেক কষ্ট পেয়েছেন কিন্তু
আমার কিছু করার নেই।আমি কারোর সুখে
বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাই না।আমার জন্য
এতদিন যা করেছেন সে তুলনায় আমার
ভালবাসার এই ত্যাগ খুবই তুচ্ছ। কিন্তু এর
পরে আশ্চর্যজনক ভাবে আমাকে এই বিষয়
নিয়ে তারা আর কিছু বলেন নি।তবে
আমার সাথে রাগ করে যে কথা বলতো না
সেটা ভালোই বুঝতাম।এর ২ মাস, ৩ মাসের
শেষের দিকে আমার পরীক্ষার রেজাল্ট
দিলো।এইরকম ভালো রেজাল্ট আমি
করবো তা কখনো আশা করিনি।সব উনার
কর্তৃত্ব।উনার জন্যই আজকে এত ভালো
রেজাল্ট করলাম।আজকের দিনে উনাকে
খুব মিস করছি।উনার দেওয়া লকেটটা খুলে
উনার আর আমার ছবি দেখছি।আচ্ছা উনি
কি আমার রেজাল্টের খবর নেওয়ার জন্য
একবার হলেও এখানে আসবেন।নাকি
আমার কথায় ভুলে গেছেন যে মেঘ নামে
উনার জীবনে কেউ একজন ছিলো।কতদিন
ধরে উনাকে দেখি না।উনাকেখুব দেখতে
ইচ্ছে করছে।উনাকে ছাড়া ৩টা মাস
থাকতে কি পরিমাণ কষ্ট হয়েছে সেটা শুধু
আমি জানি।
রেজাল্ট দেওয়ার পরেরদিন সকালে
আমার রুমে উনি আসলেন।উনি একা
আসেননি প্রিয়া ম্যাডামকে সহ নিয়ে
আসছেন।
.
.
“আপনি?”
“কেন আসতে পারিনা নাকি?”
“না এইভাবে হঠাৎ আসবেন ভাবতে
পারেনি।ভিতরে আসুন।”
“মেঘ কেমন আছো “(প্রিয়া)
“(আর ভালো থাকা।আপনার জন্যইই এখন
আমাকে তন্ময়কে ছাড়া থাকতে হচ্ছে।
উনাকে ছাড়া আমি ভালো নেই।) হ্যা খুব
ভালো আছি।”
“তাই নাকি এত ভালো আছো। সেটা
তোমাকে দেখলেই বুঝা যায়। শরীরের যা
হাল করেছো” (তন্ময় স্যার)
“তা কি খবর আপনাদের।”
“এইতো ভালো খবর।আমাদের ভালোর জন্য
এতকিছু করলে ভালো না থেকে কি
থাকতে পারি।”(তন্ময় স্যার)
“অনেক ভালো আছি আমরা।আমরা দুজন
বিয়ে করতে চলেছি।আর এই আনন্দে
তোমাকেও শরিক হতে হবে।”(প্রিয়া)
“বি…বি…বিয়ে….”
“হ্যা, বিয়ে। তোমাকে কিন্ত বিয়ের
কয়েকদিন আগে উপস্থিত থাকতে হবে।
তোমাকে ছাড়া আনন্দটা জমবে
না।”(প্রিয়া)
“আমি থাকতে পারবোনা।”
“কেন?”(প্রিয়া)
“আমি একটু ব্যস্ত আছি।”
“কি ব্যস্ততা শুনি?”(তন্ময় স্যার)
…….
“দেখো আমি জানি তোমার কোন
ব্যস্ততা নেই।মিথ্যা বলে লাভ নেই।আমি
জানতাম তুমি এইরকম বাহানা করবে তাই
আজকেই তোমাকে আমাদের সাথে যেতে
হবে।”(তন্ময় স্যার)
.
.
“হায়রে কপাল,, এইদিনও কপালে
ছিলো।”(মনে মনে)
“হুম এইদিনও তোমার কপালে লিখা
ছিলো।”
উনি কেমনে জানেন আমি এই কথা
ভাবছি।
এত ভেবে কাজ নেই।আমার বিয়েতে
তোমার অনেক কাজ। কারণ তোমার জন্যই
এই বিয়েটা হতে যাচ্ছে।আমাদের এই
বিয়ের শুভ কাজে তোমাকে সব দায়িত্ব
নিতে হবে।আমি তোমার মা বাবাকে
বলে রেখেছি।তারা রাজী হয়েছে।
“আমাকে এইসব ঝামেলায় না জড়ালে
হচ্ছে না।”
“না হচ্ছে না,মেঘ তোমার জন্য আমি
তন্ময়কে পাচ্ছি তাই আমরাই এই সিদ্ধান্ত
নিয়েছি তোমাকে এই বিয়ের সব দায়িত্ব
দিবো প্লিজ না করোনা।আমাদের জন্য
এত কিছু করলে প্লিজ আরেকটু হেল্প
করো।প্লিজ……”(প্রিয়া)
“কিন্তু আমাকে মা বাবা সেখানে যেতে
দিবেন না।সব সম্পর্ক তো শেষ করে দিয়ে
আসছি আমি।কিসের ভিত্তিতে সেখানে
যাব।”
“আমার ফ্রেন্ড হিসেবে যাবে। তোমার
মা বাবাকে বুঝিয়ে বলেছি আমরা।তারা
রাজী হয়েছে।তাদের যদি কোন আপত্তি
না থাকে তাহলে তোমার কেন এইসব
আপত্তি।”(প্রিয়া)
“সেটা আপনি বুঝবেন না।বুঝলে কাটা
গায়ে নুনের ছিটা দিতে এখানে আসতেন
না।আচ্ছা, দেখি,”
“কোন দেখাদেখি নাই।না গেলে জোর
করে সেখানে নিয়ে যাব। “(তন্ময় স্যার)
“………..এখনো দেখি উনি আগের মতনই
আছেন।যেটা চান সেটা করেই দেখান।”
“ঠিক বলেছ তন্ময়। দরকার হলে তাই করব।
ওকে ছাড়া আমি বিয়ের পিড়িতে বসবোই
না।”(প্রিয়া)
“দেখছো মেঘ আমাদের জন্য তুমি এতকিছু
করেছ বলে এখন প্রিয়া তোমাকে
আমাদের বিয়ে উপলক্ষে নিয়ে যেতে
চাইছে।ওর মতন ভালো মেয়ে হয়ই না।সব
কিছু ঠিকভাবে চলছিলো এখন শুধু তোমার
জন্য আমাদের এই বিয়ে করাটা ভেস্তে
যাবে।শেষ মূহুর্তে এসে যদি কিছুই না হয়
তাহলে এতকিছু করে কি লাভ হলো।
প্রিয়া আর আমার আমাদের এত দিনের
রিলেশনের কোন নামই দিতে পারলাম
না।”
“প্লিজ আর কোন ব্যাখ্যা দিতে হবে না।
আমি বুঝতে পেরেছি।ওকে আমি যাব।”
“ধন্যবাদ।”(প্রিয়া)
আমার তন্ময়কে আমার কাছ থেকে কেড়ে
নিয়েছে হয় নাই আবার আমাকে ওদের
বিয়ের দায়িত্ব দিয়ে আমার কষ্টটাকে
আরো বাড়াচ্ছে।আবার ধন্যবাদও বলে।
(মনে মনে)
.
.
“প্রিয়া তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো।আমরা
এখনি আসছি।”
“প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো।তোমাকে ছাড়া
এখন একমূহুর্তও ভালো লাগে না।”(প্রিয়া)
“মুচকি হেসে,তাড়াতাড়িই আসছি।
যাও”(তন্ময় স্যার)
হুহ, মুখ ভেঙ্গিয়ে এদের প্রেমের ঢং
দেখলে গা জ্বলে যায়। তোম্মাকে ছাড়া
আমার একমূহুলত ভালো লাগে
না……আজাইরা ফালতো কথা বলতে
আসে।কেন আগে ওরে ছাড়া ভালো ছিলি
না। ন্যাকা…….(মনে মনে)
.
.
“কেউ মনে হয় ভিতরে ভিতরে জ্বলছে।”
“কি…..”
“জ্বী……”
“হুহ……”
“এই যে ম্যাডাম আমার প্রিয় কালো
শার্টটা কোথায়?”
“মানে কি?আমি কি করে বলবো। আপনার
শার্ট দিয়ে আমি কি করবো।”
“সেটা আমার থেকে ভালোতো তুমি
জানো। জানো ওই শার্টটা আমার কত
প্রিয় ছিলো।তুমি যেদিন বাসা থেকে
চলে গেছো সেদিন থেকেই আমার প্রিয়
শার্টটা গায়েব।নিশ্চয় চোর যাওয়ার
আগে দিয়ে আমার প্রিয় শার্টটা চুরি
করে নিয়ে গেছে।”
“কি বলতে চাইছেন আমি চোর।আপনার
শার্ট আমি চুরি করছি।আমাকে আপনার
চোর মনে হয়।”
“হুম……”
“কি…………। একটা সামান্য শার্টের জন্য
তুমি আমাকে চোর বলছো।লাগবে না
তোমার শার্ট।দাঁড়াও এখনি তোমার
শার্টটা আমি বের করে তোমাকে দিয়ে
দিচ্ছি।একটা সামান্য শার্টের জন্য তুমি
আমাকে এত্তবড় কথা বলছো।”(কেঁদে)
“আরে…. আরে…..লাগবে না আমার শার্ট।
ওইটা তোমার কাছে রেখে দাও।কারণ
পরে দিয়ে সেটা তোমার কাজে লাগবে।
আর হ্যা ম্যাডাম এবার চলুন।”
“কোথায়,”
“এখনি ভুলে গেলেন।আমাদের সাথে
যাবেন। আমার বাসায় থাকবে।ভয় নেই
আমার মাও আছে বাসায়।তোমাকে
দেখতে চাইছিলো।”
“আপনার মা কি সব জানেন?”
“হ্যা সব জানেন।মাকে সব খুলে বলেছি।
আমার সাথে তুমি থাকতে চাও না আমিই
আর কি করতে পারি।জোর করেতো আর
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না।”
“আপনি……”
“ওয়েট বলা শেষ করেনি আমি।”
“এরপর মাকে আমার আর প্রিয়ার
ব্যাপারে সব খুলে বলেছি আর তাতে
তিনি রাজী হয়ে গেছেন।”
“ও…..ভালোই বুঝিয়েছেন আপনার মাকে।”
“হ্যা তুমিও তোমার মা বাবাকে আমাদের
ডির্ভোসের কথাটা ভালোভাবে
বুঝিয়েছ।আমি আরো ভাবলাম তোমার মা
বাবাকে কিভাবে এই কথাগুলো বলবো।
আমার আর প্রিয়ার সম্পর্কের কথা না
বলে আমার মান সম্মান তুমি বাঁচিয়েছ।সব
কিছু এতসুন্দর ভাবে সমাধান করবে আমি
ভাবতেই পারিনি।কি বলে যে তোমাকে
ধন্যবাদ দিবো। ”
“ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই।এটা আমার
কর্তব্য ছিলো।”
“আসলেই তোমার এই কর্তব্য দেখে আমি
মুগ্ধ সিরিয়াসলি।কয়জনেই বা এইরকম
কর্তব্য পালন করে।প্লিজ নেক্সট টাইম
এইভাবে আমার জন্য কোন কর্তব্য পালন
করবে না।তোমার এই দায়িত্ব আর
কর্তব্যের গুণে আমাকে আর ঋণী করিও
না।”
“……..”
.
.
“কি ব্যাপার তন্ময় এত দেরি লাগল
যে?”(প্রিয়া)
“সরি প্রিয়া।মুচকি হেসে।”(তন্ময়)
“আমাকে তো জীবনেও সরি বলে না।আর
উনাকে….. ”
“আচ্ছা বিয়ের তারিখ কবে?”
“কার্ডটা তো দিয়েছি। নিজের চোখে
দেখে নিও।”(তন্ময়)
“আর দেখা!দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।
পাশের সিটে কার্ডটা রেখে দিলাম।”
“মেঘ ৫ তারিখে বিয়ে।” (প্রিয়া)
“উনি এমন কাজটা করতে পারলো!? যে
তারিখে আমাদের বিয়ের একবছর পূর্ণ
হতে চলেছে সেই একি তারিখে উনি আর
প্রিয়া ম্যাডাম বিয়ে করতে চলেছেন?
আর কত কষ্ট সহ্য করলে এই কষ্টের জ্বালা
থেকে আমি রেহাই পাবো।”
অবশেষে বাসায় আসলাম।আমার পরিচিত
বাসাটা যেখানে ৮টা মাস উনার সাথে
থেকেছি। অনেক সুন্দর মুহূর্তগুলো আমি
কাটিয়েছি।রাতে শাশুড়ি মায়ের সাথে
ঘুমালাম।আমাকে দেখে অনেক
কান্নাকাটি করলেন।আমি কেন এইরকম
সিদ্ধান্ত নিলাম তা বারবার জানতে
চেয়েছিলেন।কিন্তু এর উত্তর দিতে
পারেনি।রাগে উনি আমার সাথে কথায়
বলেননি।আর তন্ময় উনিতো আমার সাথে
কথায় বলেন না।যখনি কোন বাহানায়
উনার রুমে যায় উনি আমাকে ইগ্নোর
করেন।
আর ৩দিন পর উনার বিয়ে।খুব কষ্ট লাগছে।
জানিনা কিভাবে আমি এই দায়িত্ব
নিবো।তারপরও আমাকে পারতে হবে।
প্রিয় মানুষের খুশির জন্য যদি আরেকটু
কষ্ট করা লাগে তাহলে আমি তা করবো।
.
.
গায়ের হলুদের দিনে উনাকে দেখলাম খুবি
হাসিখুশি।যাক মানুষটা তাহলে প্রিয়া
ম্যাডামকে সারাজীবনের জন্য নিজের
করে পেতে চলেছেন বলে অনেক খুশি।
উনার গালে সবার প্রথমে আমিই হলুদ
লাগিয়ে দিলাম।আর উনিও আমার গালে
হলুদ লাগিয়ে দিলেন।কাউকে আর সে
গালে হলুদ লাগাতে দেয় নি।
রাতে,,
“হ্যালো মেঘ,”
“জ্বী,”
“আমার রুমে একটু আসবে।কাজ আছে।”
“জ্বী আসছি।”
“বসো মেঘ একটা জিনিস দেখাবো।”
একটা পেনড্রাইভ বের করে সেটা
ল্যাপটপে দিলেন।এটা কি দেখছি আমি।
“কি ব্যাপার মেঘ,এত ঘামছো কেন? ”
“আপনি এই ভিডিও কোথা থেকে
পেলেন?”
“সেটা পরে বলবো। আগে বলো এইসবের
মানে কি?”
“আমি কিছু জানি না।এইটা ফেইক
ভিডিও।”
“ওহ রেয়িলি।এই ভিডিও ফেইক।তাহলে
তুমি কি?”
…………
“তাসপিয়াকে, সাগরকে বলে বেড়াচ্ছ
তুমি আমাকে ভালবাসো,বাইরের সবাই এই
কথা জানে একমাত্র আমি ছাড়া।যাকে
এই কথা বলার দরকার তাকেই কিছু না
বললে না।কেন এই মিথ্যা অভিনয়।”
………
“এখন কেন চুপ আছো। যখন কিছু বলার
দরকার কিছুই বলোনা।চুপ মেরে থাকো।
আমি প্রিয়ার সাথে কথা বলি।ওর সাথে
আমার ছবি দেখে ভেবে নিয়েছো ওর
সাথে আমার রিলেশন চলছে।ওই আমার
পছন্দের সেই মেয়ে।যাকে আমি
ভালবাসি তাই না?নিজে নিজে এতকিছু
বুঝে গেছো। Very good.৮টা মাস তুমি
আমার সংসারে ছিলে।এতদিনে আমাকে
এই বুঝলে।আমার প্রতি তোমার বিশ্বাসটা
কোনদিনও ছিলো না।”
“না বিশ্বাস ছিলো।আমি আপনাকে
বিশ্বাস করি।বিয়ের দিন যখন আপনার
বাসায় আসি তখন দেখলাম আলমারি
ভর্তি শাড়ি,ফুলের টব,আরও অনেককিছু।
ভাবলাম এইসব ভালবাসার মানুষের জন্য
করেছেন।আর এইও মনে হল আমি
আপনাদের ভালবাসার মাঝে এসে
পড়েছি। অনেক জানার চেষ্টা করেছি
আপনার ভালবাসার মানুষটা কে?কোন
উত্তর নাতো আমি আপনার কাছে
পেয়েছি নাতো অন্য কারোর কাছে।এরপর
প্রিয়া ম্যাডামের সাথে আপনাকে
সবসময় কথা বলা,ঘুরতে যাওয়া দেখে
বুঝলাম আপনার ভালবাসার মানুষটা আর
অন্য কেউ না বরং প্রিয়া ম্যাডাম।আমি
জানি আপনি মুখ ফুটে আমাকে কিছু
বলবেন না আর আমিও কোন
অপরাধবোধের বোঝা মাথায় নিয়ে
হাঁটতে পারবোনা তাই আমাদের
সম্পর্কের ইতি টানতে চেয়েছি।এরপর
আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনি নাকি
আমাকে কিছু গোপন কথা বলতে চান
সেদিন বুঝতে পেরেছি কি বলতে চান।
কিন্তু সেই কথা শুনার শক্তিটুকু আমার
ছিলো না তাই আপনাকে এড়িয়ে গেছি।
আর তারপরেই আপনার আর প্রিয়া
ম্যাডামের হাত ধরে থাকা ছবি দেখে
আমি একশ ভাগ নিশ্চিত হলাম যে আমার
এই ধারণায় কোন ভুল নেই।আপনি সত্যি
সত্যিইই প্রিয়া ম্যাডামকে……..।
আপনাকে বিব্রত করতে বা অপমান করতে
কখনো চাই নি।জানি আপনার ভালো
লাগার কথা ভালবাসার কথা আপনি
চাইলেও আমাকে বলতে পারবেন না তাই
নিজ থেকেই সব কিছু করেছি।আর রইল
সাগরের কথা,ওর কথাতে আমি খুব ভয়
পেয়ে গিয়েছিলাম।আমার কারণে
তোমার ক্ষতি হোক তা আমি কখনোই
চাইবো না তাই আমি এইসব করতে বাধ্য
হয়েছি।”
“Great.ভালোই ডিসিশন নিয়েছো।নিজেই
নিজে কত কি ভাবো, নিজেই নিজেই সব
ডিসিশন নাও।কোন সমস্যায় পড়লে
নিজের স্বামীকে জানাও না।একবার,
দুইবার না বহুবার বলেছি তোমার কোন
সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারো
আমি সব ঠিক করে দিবো কিন্তু আমাকে
কোন কিছু বলোনি।তোমার ফ্রেন্ড
তাসপিয়া সব জানে অথচ আমি কিছুই
জানি না।আমি আমার স্ত্রীর একজন
ভালো স্বামী একজন ভালো ফ্রেন্ড হতে
চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমার কোন
চাওয়াকে এতদিন পর্যন্ত মূল্য দেও নি।”
“আপনাকে আমি সব বলতাম কিন্তু মনের
ভয় আর আপনি অন্যজনকে ভালবাসেন,
আমাকে না এটা জানার পরও কেন
আপনাকে এইসব বলতে যাব। আমি যা
করেছি আপনার ভালোরর জন্য
করেছি,আপনার খুশির জন্যই করেছি।”
“আচ্ছা।এই বেশি বুঝার কারণটা আজ
আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।আর
তোমাকে ভালবাসি এই কথাটা কি মুখে
বলা এতটা জরুরি। তোমার জন্য এতদিন
এতকিছু যা করে এসেছি তার কাছে এই
মুখে বলা শুধু একটা কথা “ভালবাসি”
শব্দটা এত মূল্যবান হয়ে গেছে।
মেঘ,অনেকেই তো এই কথা মুখে মুখে বলে
বেড়ায় আমি তোমাকে ভালবাসি।এই মুখে
বলা”ভালবাসা”কথাটার দাম কয়জনে
রাখতে পারে।এই দেখো না উদাহরণ
হিসেবে সাগরের কথায় বলি ও তো
দিনের মধ্যে কম করে হলেও একশ বার
বলেছে মেঘ আমি তোমাকে ভালবাসি।
কি বলে নি।”
………
“তারপরও কেন সে তোমাকে বিপদের মুখে
ফেলে চলে গেছে।”
………
“কারণ ভালবাসার জন্য ভালবাসি কথাটা
বলা শুধু মুখ্য নয়।ভালবাসার মানুষের জন্য
কিছু করে দেখানো, নিষ্ঠার সাথে
ভালবাসার মানুষটার জন্য কিছু দায়িত্ব-
কর্তব্য পালন করাও জরুরি হয়ে পড়ে। যা
সবাই পারে না।এখন অনেকেই “ভালবাসি”
কথাটা প্রচার করতে করতে এই শব্দটাকে
অতি সস্তা করে ফেলেছে।আমি সেই দলে
নিজেকে জড়িত করতে চাই নি।আমি
তোমার জন্য এতদিন এত কিছু করেছি
এগুলো কি ভালবাসার মধ্যে কখনো পড়ে
না।মেঘ তোমার চোখ থাকা সত্ত্বেও
তুমি তা দেখো নি।তুমি শুধু তোমার
বিবেকের কথা শুনেছ মনের কথা শুন নি।
তাই তোমাকে আমি এতদিন ধরে যা
দেখাতে চেয়েছি তুমি তা দেখতে
পারোনি।যদি মনের কথা শুনতে
ভালোভাবে আমাকে বুঝার চেষ্টা করতে
তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে
অনেক আগে পেয়ে যেতে আর এইরকম
ফালতো সিদ্ধান্ত নিতে না।”
“আমি…….”
“চুপ আমার বলা শেষ হয় নি।প্রিয়া আর
আমার মধ্যে কোন রিলেশন ছিলো না।ও
শুধু আমার ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড
ছিলো।ভার্সিটি থাকতে আমাকে
প্রপোজও করেছিলো কিন্তু আমি তা
একসেপ্ট করে নি।কেন করেনি সে
কারণটাও আমি ওকে জানিয়েছি।এরপরে
আমরা দুইজনে ঢাকা ভার্সিটিতে একি
ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা পদে ঢুকি।
ফ্রেন্ড হিসেবে কথা বলতাম সেটা
স্বাভাবিক।এর মধ্যে আরও অনেককিছু
ঘটনা আছে যা তোমাকে আমি পরে
বলতাম কারণ সেসব কথা বলার সময় তখনো
আসে নি।কিন্তু তার আগেই তুমি……।এখন
তুমি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছ।
অনেকটা জেদের বশে এখন আমি
প্রিয়াকে বিয়ে করছি।আমার জীবনে
প্রিয়াকে দ্বিতীয় বার ঢুকানোর সুযোগ
তুমিই করে দিয়েছো।আজ তুমি নিজের
পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছ।”
.
.
সারা রাত আর ঘুমাতে পারলাম না।এ
আমি কি করলাম। কেন নিজে বেশি বুঝতে
গিয়ে এত বড় সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম।
উনিতো প্রিয়া ম্যাডামকে ভালোবাসেন
না তাহলে এতকিছু করে কি হল?না আমি
এই বিয়ে কিছুতে হতে দিবো না।কিছুতেই
না।উনাকে আমি এই বিয়ে কিছুতেই করতে
দিবো না।
সারারাত ঘুমাতে পারেনি।সকাল সকাল
ঘুম থেকে উঠে গেছি।উনাকে আমার
অনেক কিছু বলার বাকি আছে।কিন্তু
সকাল থেকেই উনাকে একবারের জন্য
কাছে পায় নি।এদিকে আমি উল্টাপাল্টা
চিন্তা করেই অস্থির।আর কয়েক ঘন্টা পর
বিয়ে।কিছুই ভাবতে পারছি না।আমি
উনার রুমে বসে আছি।
“মেঘ তুমি এইখানে?”
উনাকে দেখামাত্র জড়িয়ে ধরলাম।
“মেঘ কি করছ।একটু পর আমার বিয়ে।
এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরছ কেন?আমার
বউ এখন যদি এই রুমে এসে এইসব দেখে ও
অনেক রেগে যাবে।”
“যাক রেগে। আমার তাতে কিছু যায় আসে
না।”(কেঁদে)
“মেঘ এইভাবে কাঁদছ কেন? কি হয়েছে?”
“আপনি এই বিয়ে করবেন না প্লিজ,”
“কেন?তুমিতো নিজে সব কিছুর ব্যবস্থা
করলে আর এখন বলছ এই বিয়ে না করতে।
তুমি আসলে একসেক্টলি কি চাও
বলোতো?”
…….
“দেখো তোমার কান্না দেখার সময় আমার
নেই।যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।”
“আমি আপনাকে ভালবাসি।”
“কিহ!”
উনার টি-শার্টে নাক আর চোখের পানি
মুছে,”আমি সত্যি বলছি।”
“মেঘ এখন এইসব কথা আমাকে বলে লাভ
নেই।আমি এখন অন্য কাউকে বিয়ে করতে
যাচ্ছি। এই কথা বলার অধিকার তুমি
হারিয়ে ফেলেছ।”
“কিচ্ছু হারায়নি।তবে আপনি কিছু না
করলে সত্যি সত্যি আমাকে সব হারাতে
হবে।আপনিইতো একদিন বলেছেন সময়
থাকতে নিজের প্রিয় জিনিসের উপর
অধিকার প্রয়োগ করে তা নিজের করে
নিতে যাতে অন্য কেউ আমার প্রিয়
জিনিসের উপর হাত বাড়াতে না পারে।
সেই কথার অর্থ আজ বুঝেছি।আমার
সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা হলো আমার
ভালবাসার মানুষটা যাকে আমি খুব
ভালবাসি।কিছু হওয়ার আগে আমি আমার
ভালবাসার মানুষের উপর অধিকার প্রয়োগ
করছি যাতে অন্য কেউ তাকে ছিনিয়ে
নিতে না পারে।আজ সঠিক সময়ে আমি এই
কথা বলেছি। আপনিই আমাকে একদিন
জিজ্ঞাস করেছিলেন আমার কাছে
ভালবাসা শব্দটার মানে কি?আজ আমি
বলছি আমার কাছে ভালবাসার শব্দটির
আরেকটা অর্থ হল মায়া।ভালবাসা মানেই
মায়া। আপনি আমার অভ্যাস হয়ে গেছেন
যাকে ছাড়া আপনি অচল।যাকে ছাড়া
আমি পথ চলার সঠিক রাস্তা খুঁজে পায়
না।প্রতিটি নতুন সকালে নতুন করে বাঁচার
জন্য আমার আপনাকে চায়। আমার
সবটাতে জুড়ে আপনি।আর আপানার
সবকিছুতে আমার মায়া কাজ করে।আর
এইজন্য আপনাকে আমি এত ভালবাসি।”
“আচ্ছা।আমার সব কথা তাহলে তোমার
মনে আছে দেখছি।আরও একটা কথা
বলেছিলাম সেটা কি ভুলে গেছ?”
“কোন কথা”
“মনে করে দেখো”
“ও মনে পড়েছে”
“হুম গুড।সে কথা যদি মনে পড়ে তাহলে
সেইভাবে কথাটা বললে আমি ভেবে
দেখবো কি করা যায়”
“আচ্ছা প্লিজ ১মিনিট।”
“এত টাইম হবে না।
“আচ্ছা আচ্ছা বলছি,তন্ময় আমি তোমাকে
ভালবাসি।”
“মুচকি হেসে,কি বললে আমি শুনে
নি,আরেকবার বলো,”
“আমি তোমাকে ভালবাসি তন্ময়। প্লিজ
আমাকে বিয়ে করে নাও।আমি তোমার বউ
হতে চাই।আমি আমার জায়গা আর অন্য
কাউকে দিতে চায় না।একবার ভুল
করেছি। আর করতে চাই না প্লিজ”
“সত্যি তো”
“হ্যা”
“আচ্ছা যাও তাহলে দেখি কি করা যায়।
একটা কাজ করো মায়ের রুমে যাও।
সেখানে বিয়ের শাড়ি,গয়নাগাটি রাখা
আছে।সেগুলো পড়ে বউয়ের মতন করে
সাজো গিয়ে।”
“আর প্রিয়া,ওর কি হবে,”
“দেখো মাথা খারাপ করবে না।একটু আগে
কি বলেছ? আমাকে ভালবাসো তাই না?
তাহলে অন্য আরেকজনকে কেন মাঝখানে
টেনে আনছো।তুমি কি আবারও ঝামেলা
পাকাতে চাও।যদি মনে এরকম ভাবনা
থাকে তাহলে আমাকে বিয়ে করার
চিন্তা বাদ দাও।আমি প্রিয়াকে বিয়ে
করে নিবো।”
“না, না আমি আর কারোর কথা ভাববো
না।”
“হুম রেডি থাকো।আমি আমার পরিচিত
কয়েকজনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।ওরা সব
সামলে নিবে।তোমাকে গাড়িতে করে
কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যাবে।আর
আমিও রেডি হয়ে যাচ্ছি।
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—১০