রঙধনু-সিজন

রঙধনু !! Part- 08

🍁

লিভিংরুমের পরিবেশ থমথমে ফারিশ হাত মুঠ করে সোফায় বসে আছে..রাগে তার সারা শরীর বারবার কেপে উঠছে..এরকম চুপ থাকা যে কোন তুফানের পূর্বাভাস সেইটা তার বাবা মা বুঝতে পারছে।।

“মা?তুমি এই ছেলেরে চিনো??” মোহর দিকে তাকিয়ে ফারিশ প্রশ্ন করলো..মোহ ত মেঝেতে নখ খুটিয়ে যাচ্ছে ভয়ের ঠেলাতে..বিনা কিছু করাতেই তার অবস্থা করুন হয়ে দাড়িয়েছে..

“হ্যা এই ছেলেটা মোহকে শপিংমলে নাম আর কি কি জিজ্ঞেস করেছিলো..আমি ওরে সেখান থেকে উত্তর দিয়ে টাইনা নিয়ে গেছি” এভ্রিল উত্তর দিলো।।

ফারিশ চোখমুখ শক্ত করে মোহর দিকে তাকালো,মোহ এখনো মাথা নিচু করে আছে..ফারিশ কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো গাড়ি নিয়ে।।

ফারিশের এই স্বভাবের সাথে পরিচিত তার বাবা মা..এইজন্য উনারা আর কিছু বলে নি,কিন্তু মোহর কাছে ফারিশের এই স্বভাবটা নতুন..সে বেশ ভয় পেয়েছে..এভ্রিল বুঝতে পেরে,মোহকে সাথে করে ঘরে নিয়ে গেলো..

“মনোযোগ দিয়ে কিছু কথা শুন,আমি যা বলবো এখন” এভ্রিল বললো

“ফারিশের উপর তোর অভিমান জমে আছে অনেকখানি..এটাও জানি এটা সহজে ভাঙার নয়..আমি আমার ছেলের হয়ে সাফায় গাইতে আসে নি..আমি তোকে আমার মেয়ে ভাবি বিধেয় কথাগুলো বলছি..ফারিশ তোকে ডিভোর্স দিতে আসে নি,বরং তোর উপর এতোবেশি দূর্বল হয়েছে সে,তোর সাথে সংসার করার জন্য এসেছে সে!!” এতটুক বলে এভ্রিল থামলো

সংসার করতে এসেছে শুনে মোহর বুকের উপর মনে অনেক কেজি ওজনের পাথরটা সরে গেলো।।

“জানি তুই হয়তো ভেবেছিস ডিভোর্স দেয়ার জন্য সে এসেছে কিন্তু না,তোর মতো আমিও ভেবেছিলাম এরকম কিছু একটা..এই কথা শোনার পর জানি তুই ওর সাথে ঢ্যাংঢ্যাং করে ক্ষমা করে দিবি..কিন্তু আমি বলছি তুই এটা করবি না” এভ্রিলের সাফ জবাব

“ক্ষমা করতে না করছে তার ছেলেকে??” এই কথা শুনে মোহ কিছুক্ষন তার শাশুড়ী দিকে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকলো।।

“শোন ওকে তোর গুরুত্বপূর্ণ টা আরো বুঝাতে হবে…ক্ষমা করবি,করে দে কিন্তু বুঝতে দিস না..চড়কা কারে তাকে ঘুরা কিছুদিন..” এভ্রিল বললো

“মানে” চোখ বড় বড় করে বললো মোহ

“মানে সোজাসাপটা তাকে তোর পিছে ঘুরা কয়দিন,যেমনটা তুই এতোবছর অপেক্ষা করেছিলি” এভ্রিল চোখ ঘুরিয়ে বললো

“কিন্তু মা” মোহ কিছু বলতে যাবে তার আগের এভ্রিলের ধমক

“চুপ..যা বলছি তাই করবি..ওর সামনে নরম থাকবি কিন্তু বুঝতে দিবি না তুই সব জানোস,মাফ কইরা দিছোস” এভ্রিল বললো

“কিন্তু মা উনি যে রাগী,আজ যেমন ব্যবহার করলো..আমার দিকে যেইভাবে তাকিয়ে ছিলো মনে হচ্ছে আজকে কুরবানী করে দিবে” মোহর জবাব

মোহর কথা শুনে এভ্রিল ফিক করে হেসে দিলো।।

“হ্যা ওদের বংশের সব কয়টা এক লাইনের..রাগী আর বদমেজাজি তবে ফারিশ একটু বেশি..ছোট থেকে ওর যা চায় দিতেই হতো না দিলে কি যে প্রবলেম করতো” এভ্রিল বললো

“কিন্তু মা তুমি যেসব বলছো, আমি কি পারবো করতে?” মোহ ঢোক গিলে বললো।।

“পারবি না মানে,পারতেই হবে..নাইলে ওই ছেলেরে ডেকে এনে তোর বিয়া দিয়ে দিব?” এভ্রিল হাসি আটকে রেখে বললো

“না না না আমি পারবো” মোহ তাড়াহুড়ো করে বললো

এভ্রিল হো হো করে হেসে মোহকে জড়িয়ে ধরলো।।

কলেজ,

কোচিং এ এক পিচ্চির কাছ থেকে ফারিহা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ পেয়ে,সেটা কব্জিতে লাগিয়ে রেখেছে..পিচ্চিকে জিজ্ঞেস করেছিলো কে দিলো??পিচ্চিটা কিছু না বলে দৌড় দিসে।।

কলেজ শেষে ক্লাসমেটদের সাথে ফারিহা দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে।।

দূর থেকে গাড়ির ভিতরে চোখে সানগ্লাস দিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নুহাস ফারিহার দিকে..সকালে দেখার পর থেকে নুহাস ছটফট করছে ফারিহাকে দেখার জন্য,এখন ছুটি শেষে তাকে দেখতে এসেছে।।

কিছু বখাটে ছেলে আশেপাশে ঘুরঘুর করছে আর টিস করছে বাকি মেয়েদের..ফারিহা চুপচাপ খাচ্ছে কিছু বলছে না।।

কিন্তু দূর থেকে নুহাস সব দেখছে,এই কান্ড দেখে সে ভীষণ রেগে গেছে..গাড়ি থেকে নেমে ওদের দিকে এগোতে যাবে কি একটা অনেক জোরে থাপ্পড়ের সাউন্ড আসছে।।

নুহাস এগিয়ে গিয়ে দেখলো ফারিহা একটা ছেলের চুল ধরে একের পর এক থাপ্পর মেরেই চলছে।।

“আর আমার ফুচকার প্লেটে হাত দিবি??তোর সাহস ত কম না আমার ফুচকার প্লেট থেকে ফুচকা তুলে খাস তুই??বাইর কর,এখুনি ফেল” এই বলে আবারো থাপ্পর মার‍তে লাগলো

“আফা মাফ করি দেন,আমি ফুচকা কেন..আমি আজ বাড়ি যেয়ে ভাত ও খাবো না!!ছাইড়া দেন” এই বলে ছেলেটা পা ধরতে আসছে

“লজ্জা করে না মেয়েদের টিস করোস আর আমার ফুচকা খেয়ে,আমারে টিস করার সাহস করার চেষ্টা করছোস”ফারিহা রাগে আবারো মারতে গেলে কেও তার হাত টেনে সামনে নিয়ে আসলো।।

” ইনাফ..যথেষ্ট মেরেছো তাকে,এইবার অফ যাও?? যতটা মেরেছো ওই আর কোন মেয়েকে টিস করার আগে দশবার ভাববে?” নুহাস কথা গুলো বললো

নুহাস ফারিহার হাত ধরেছে বলে ফারিহা নিজের কনুই দিয়ে নুহাসের পেটে দিলো এক গুতা।।

“আউচ” বলে নুহাস পেটে হাত দিলো।।

“নেক্সট টাইম ফারিহা ফাজের হাত ধরার সাহস করবেন মিস্টার ধলা মুরগী..স্টে এওয়ে ফ্রম মি” এইটা বলে ফারিহা সামনে চুল টা উপরের উঠিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।।

“মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকতি ঠিকই তুই কিন্তু মেয়েরা তোর কাছে দূরে থাকতো না..প্রেমে পরলি ত পরলি এমন এক লেডি ডনের প্রেমে পরলি যে প্রথম মিটেই মার দিলো..এতো কড়া?? ডোন্ট ওয়ারি বেবি..একবার সব সেটেল হোক,তখন তোমাকে টাইট দিয়ে পানিশমেন্ট দিব একদম কড়া করে” এই বলে নুহাস বাকা হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে পরলো।।

সন্ধ্যাবেলা,

ফারিশ সকালে যেয়ে এখনো আসছেনা দেখে মোহর টেনশনে দুপুরে খেতে পারে নি..এভ্রিল অনেকবার বললো কিন্তু ওর ভয় লাগছে ফারিশ এখনো আসে নি এইজন্য।।

ফারিহার কব্দিতে স্যাভলন দিয়ে,মলম দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে মোহ..সুলেমান আর এভ্রিলকে স্ন্যাকস দিয়ে,টেবিলে পানি রাখছিলো।।

কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে ফারিশ মোহর এক হাত ধরে উপরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে,এমন আচমকা টানার কারনে মোহর ভিতরটা ভয়ে কুকড়ে যায়।।

কেও কিছু বললো না..তাদের ব্যাপার, তারাই মিটিয়ে নিক।।

ফারিশ মোহকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যেয়ে,ভিতর থেকে লক করে দিলো।।

“স্টে হেয়ার..আমি শাওয়ার নিয়ে আসি?? বের হয়ে না পেলে,তোমাকে কি করবো আমি নিজেও জানি না” এই বলে ফারিশ তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।।

২০মিনিট পর ফারিশ বের হলো ওয়াশরুম থেকে..ফারিশের পরনে শুধু ব্ল্যাক কালারের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট..ফর্সা শরীরে বুকের মাঝে বিন্দু বিন্দু পানি..

মোহর দিকে তোয়ালে এগিয়ে বললো,
“মুছো?”

ফারিশ বেডে বসলো..মোহ দাড়িয়ে কাপা কাপা হাতে ফারিশের চুল মুছে দিতে লাগলো..

ফারিশ মোহর কোমর টা ধরে একটু টেনে সামনে আনলো…এই প্রথম তার স্বামীর স্পর্শ এতো কাছ থেকে পাচ্ছে।।

মোহর এরকম কাপাকাপি দেখে ফারিশ আরেকটু কাছে টেনে মোহর কোমর ধরলো..মোহর সালোয়ারের উপর দিয়ে ফারিশের গরম গরম নিঃশ্বাস ফেলছে..

এদিকে মোহর হাত থেমে গেছে আর মুছতে পারছে না সে ফারিশের চুল..তার কলিজাটা মনে হচ্ছে গলার কাছে এসে আটকে গেছে।।

মোহর সহ্য করতে পারছে না ফারিশের নিঃশ্বাস..পা টাও মনে হচ্ছে চলছে না,কোনরকমে সরে আসতে চাইলে ফারিশ আরো শক্ত করে ধরে টেনে এনে,মোহর পেটে মুখ গুজে দিলো..

“ডোন্ট মুভ?? ডু হোয়াট আই সে??মোহর পেটে মুখ গুজে কথাগুলো বলছিলো ফারিশ..

বুঝতে পেরেছে সে আর সরাতে পারবে না..নিজেকে সামলানো বড় দায় হয়ে গেছে তার আজ..কোনরকম ঢোক গিলে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছলো..

বেশকিছুক্ষন এরকম হওয়ার পর,ফারিশ মোহর পেট থেকে মুখ সরিয়ে মোহর হাত ধরে তার সামনে বসালো।।

“বসো..আমি আসছি?” এই বলে ফারিশ আলমারির দিকে গেলো।।

প্যাকেট নিয়ে মোহর সামনে ধরলো,মোহ প্যাকেটের দিকে তাকাচ্ছে একবার আর একবার ফারিশের দিকে।।

ফারিশ নিজে প্যাকেট খুলে দিলো..প্যাকেটের ভিতরে জিনিস দেখে মোহ অবাক হলো।।

কারন,প্যাকেটের ভিতরে ছিল স্বর্নের চুড়ি,নাকফুল,কানের দুল ছোট করে সিম্পল, আংটি আর চেইন।।

“আমি কি করবো এইগুলো?” মোহ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।।

ফারিশ কোন জবাব দিলো না..চুড়ি গুলো মোহর হাতে পরিয়ে দিলো,নাকফুল আগের টা খুলে নিজের আনা পছন্দমতো বালি সিস্টেম নাকফুল পরালো,কানের দুল পরালো..আংটি পরালো..চেইন পরানোর সময় ফারিশ মোহর ঘাড়ে একটা কামড় দিলো..মোহ এমনিতে শিউরে উঠছিলো যখন এইসব পরাচ্ছিলো,এখন ত মনে হচ্ছে এই কামড়ে মরেই যাবে..

ফারিশ যেখানে কামড় দিয়েছিলো সেখানে ঘনঘন চুমু দিলো কয়েকটা..মোহ ফারিশ হাত খামচে ধরেছে।।

বেশকিছুক্ষন পর ফারিশ সরে আসছে,কিন্তু মোহ চোখ বন্ধ করেই আছে।।

“এইগুলো কখনো খুলতে যেন না দেখি??এইগুলো সবসময় পরার জন্য সিম্পলের মধ্যে এনেছি আমি..কখনো খোলা দেখলে খবর আছে”ফারিশ বললো

মোহ চোখ খুললো ঠিকই কিন্তু তাকাতে পারছে না লজ্জায় সে ফারিশের দিকে।।

ফারিশ মোহর সামনে হাটুর ভরে বসে,মোহর কোলে মাথা দিলো..মোহর হাত টেনে নিয়ে নিজের মাথাতে রাখলো।।

মোহ ত অবাকের উপর অবাক হচ্ছে,একদিনে এতোকিছু??সইবে ত?

“জানি আমি ভুল করেছি..ভুল না অন্যায় করেছি কিন্তু ভুলের শাস্তি তুমি যা দিবা মেনে নিব”কোলে মাথা রেখে বলছে ফারিশ।।

“তুমি যদি ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তাও করো?? তোমাকে মেরে মাটিতে আমি পুতে দিব??যে আলাদা করার বিন্দুমাত্র ট্রাই করবে তাকে দুনিয়া থেকে সরাতে আমি দুই সেকেন্ড সময় নিব না..কিন্তু তুমি যদি আমার কাছ থেকে এখন এই মুহূর্ত থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবো আই প্রমিস টু আল্লাহ,আই উইল কিল ইউ..ডোন্ট ইউ এভার ডেয়ার টু স্টে এওয়ে ফ্রম মি..যত পারো সামনে থেকে শাস্তি দাও,আমি তোমার মুখ দেখে সহ্য করে নিব কিন্তু দূরে গেলে কি করবো বলেই দিয়েছি??তুমি আমার..তোমাকে চাই আমি শুধু..মাইন্ড ইট?? ফারিশ কোলের মধ্যে মাথা রেখে এতো কথা বলে গেলো।।

ফারিশ মাথা তুলে মোহর ঠোটে বেশকিছুক্ষন চুমু খেয়ে বললো,

“যা বললাম মাথায় থাকে যেন?”

এইটা বলে ফোন নিয়ে বারান্দায় গেলো ম্যানেজারকে কল করতে কারন আমেরিকা ত সে আর যাবে না..ব্যবাস সব এখানে সেটেল করবে তাই যত দ্রুত সম্ভব এখানে সব শিফট হোক।।

মোহর হাত আপনা আপনি ঠোটে চলে গেলো..খুশির কারনে,চোখ দিয়ে উপচে জল পরলো।।

“তুমি আমার,তোমাকে চাই শুধু ” এইসব শুধু তার কানে বাজছে।।

চলবে🍁

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *