রঙধনু-সিজন

রঙধনু !! Part- 03

ফারিহা বক্সে জোরে গান দিয়েছে,আর নিজেই উড়াধুরা নাচ করেই যাচ্ছে..সে তার ভাইয়ের মনে ঝটকা দিয়ে পৈশাচিক যে আনন্দ পেয়েছে তা সে নেচে নেচে প্রকাশ করছে..মোহ রুমে আসছে যখন ফারিহা তাকে টেনে নিয়েও নেচে যাচ্ছে..মোহ ফারিহার স্বভাব সম্পর্কে অবগত,যখনি সে খুব খুশি হয় ধুমধাড়াক্কা গান বাজিয়ে নাচবে..আর মিন খারাপ হইলে জোরে জোরে স্যাড সঙ বাজিয়ে শুনবে..

মোহ ফারিহাকে গোসলে পাঠালো ঠেলে সে জানে ওকে এখন ঠেলে গোসলে না পাঠালে ঘেমে যাবে আর রাত ছাড়া গোসল করবে না অতঃপর তার জ্বর বাধাবে।।

ফারিহা বক্সে গান ছেড়ে ওয়াশরুমে যাইয়া উড়াধুরা চিল্লাইয়া গান করে গোসল করতেছে..মোহ মুচকি হেসে ফোন হাতে নিলো..

মোহ ফেসবুক একাউন্ট খুলে ফারিশের প্রোফাইলে রেগুলার ঢু তার প্রতিক্ষনের কাজ..দেখলো কিছুক্ষন আগে স্ট্যাটাস দিসে,

“after seeing someone,feeling hang for the first”

অনেক মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে লাইক কমেন্ট করে ফেলেছে..কেও কান্নার রিয়াক্ট দিচ্ছে আবার কেও এংরি।।

মোহ চোখ ভরে উঠলো..কাকে দেখে সে স্ট্যাটাস দিয়েছে..আর ছবি দেখলো ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেলো..আরে পাগলী যদি জানতি তোরে দেইখা বেচারা হ্যাং মাইরা এরকম স্ট্যাটাস দিসে তার ওয়ালে প্রথবার।।

মোহ নিচে চলে গেলো লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে..এভ্রিল ও নাইট ডিউটি করে ঘুমিয়ে গেছে..তাকেও উঠিয়ে গোসল করতে পাঠালো..সুলেমানের অফিসে লাঞ্চ পাঠালো ড্রাইভারের হাত দিয়ে..মেসেজ করে দিলো,

“বাইরের খাবার খাবা না বাবা নইত মাকে বলে দিবো..লাঞ্চ দিয়েছি সেটাই খাবা”

এরই মধ্যে মায়ের ফোন বাজছে কাছেই গিয়ে দেখলো দিদা ফোন দিয়েছে..কল ধরে মোহ সালাম দিলো..

“কিরে পরি আমারে ফোন দেস নাই কাল তুই” একটু মিথ্যা মিথ্যা রেগে বললো দিদা

“সরি সুন্দরি..কাল একটু জলদি ঘুমিয়ে গেছিলাম তাই তোমাকে কল দিতে পারি নাই” মোহ ও নরম করে বললো

এই নিয়ে নাতবউ আর দিদার মধ্যে কথা চললো টুকটাক..

লাঞ্চে সবাই খেতে আসলে এভ্রিল বললো,

“চল আজকে আমরা শপিং এ যাই..দিয়ে রাতে বাইরে থেকে খেয়ে আসবো…গতকাল আমার নাইট শেষ হয়ে গেছে”

“মা তুমি ত দেবী” ফারিহা খুশির ঠেলাতে বলে উঠলো

ফারিহার মাথাতে একটা গাট্টা মারলো এভ্রিল..

মোহ মুচকি হেসে খেতে আরম্ভ করলো..সে জানে তার চোখ ফুলা দেখে মা বুঝে ফেলেছি যে কাদছি তাই বাইরে নিয়ে যাবে..মা এরকম প্রায় করে যখনি বুঝে আমি কান্না করেছি।।

দুপুরে ফারিহা ওর বাবা কে ফোন করে সব জানালো..তার বাবা ত হেসে কুটিকুটি..সাব্বাশ দিচ্ছে ফারিহা

কিন্তু এর মধ্যে ফারিহা ঘুষ চেয়ে বসেছে নিউ কারের..অগত্যা তার বার্থডে তে গিফট করবে বলে সুলেমান প্রমিস করলো ফারিহাকে..

বিকালবেলা,

ফারিহা ডাটা অন করতে দেখলো ভাইয়ের অসংখ্যা মিসডকল..ফারিহা শয়তানী হাসি দিয়ে বললো,

“তুমি আমার ভাই হইলে আমিও তোমার বইন..এইবার বুঝবা”

“ভাই বিজি আছি পরে কথা হবে” ফারিহা ইচ্ছা করে এমন একটা মেসেজ পাঠালো যেন ফারিশের কিউরিওসিটি আরো বেড়ে যায়..বলেই ডাটা অফ করলো আবার।।

এভ্রিল মোহ আর ফারিহাকে নিয়ে শপিং করতে বের হলো..ফারিহা এটা সেটা দেখছে আর নিব বলছে..আর এভ্রিল বিভিন্ন কুর্তি হাতে নিয়ে মোহকে কোনটাতে ভালো লাগবে তা দেখছে কারন বাইরে এসে মোহ একদম সাইলেন্ট মুডে চলে যায়..কি লাগবে তার তাও বলে না..

একটা ছেলে বেশ অনেকক্ষন যাবত মোহকে খেয়াল করছে..প্লাজো আর কামিজের সাথে সুন্দরভাবে কভার করে হিজাব পরে আছে মোহ..কোন সাজ নাই মুখে..

এভ্রিলের হাসপাতাল থেকে কল আসাতে বাইরে গেলো কল এটেন্ড করতে আর ফারিহা মোহকে নিয়ে ট্রায়াল রুমের সামনে দাড়িয়ে নিজে ভিতরে গেলো..

মোহ ফোন হাতে নিয়ে দেখলো কটা বাজে..সামনে হুট করে কারো উপস্থিত হওয়াতে মোহ চোখ তুলে তাকালো

“নাম?” ছেলেটি জিজ্ঞেস করে উঠলো

এমন উদ্ভট পরিস্থিতিতে মোহ ঘাবড়ে যায় সবসময়.. কাচুমাচু করে দাড়িয়ে আছে..

“হোয়াই ডু ইউ ওয়ান্ট টু নো হার নেইম ডিয়ার?” এভ্রিল পিছন থেকে বলে উঠলো

ছেলেটি ঘাড় কাত করে বললো,

“আপনি উনার কে হোন?ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো

” ওর আম্মা আমি..কি সমস্যা??চিনো কি তুমি আমার মেয়েরে??এভ্রিল জিজ্ঞেস করে উঠলো

“নাহ..জাস্ট পরিচিত হতে চাচ্ছিলাম আন্টি ওর সাথে” ছেলেটি বলে উঠলো

“বাট মাই ডটার ডাজ নট ওয়ান্ট টু ডু দিস..লিভ আস” এই বলে এভ্রিল মোহর হাত ধরে ওইখান থেকে চলে আসলো

ছেলেটি এখনো ঘাড় কাত করে ওদের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো।।

এভ্রিল মোহ আর ফারিহাকে নিয়ে একটু নদীর পারের দিকে গেলো..এরকম খোলা জায়গা আর খোলা বাতাস মোহর অনেক পছন্দ..

ফারিহা মোহকে নিয়ে নদীর পানিতে এসে পা ভিজালো..একটা সুন্দর ছবি ক্যাপচার করলো দুজনের পায়ের।।

এরকম হাসিখেলে যদি ফারিশ আর মোহর সংসারটা সাজানো থাকতো যদি এই ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো এভ্রিল

নদীর পার থেকে ঘুরে এসে তারা রেষ্টুরেন্টে গেলো..

“মা আমি কিন্তু বিরিয়ানি খাবো” ফারিহা নাক কুচকে বললো

“জানি..তুমি এটাই খাবা” এভ্রিল চশমা উপরের তুলে বললো..

এর মধ্যে সুলেমান ও এসে জয়েন দিলো..নিজের রেষ্টুরেন্ট হওয়ার সুবাদে তাদের আপ্যায়ন সেই লেভেলের হলো..

রেষ্টুরেন্টে বসে মোহ আর তার পায়ের ছবি ফারিহা তার কভার ফটোতে দিলো..

কভার ফটো দিয়ে বললো বিড়বিড় করে সুলেমানের কানে,

“এইবার মারলাম ফাকা ফিল্ডে চার”

সুলেমান ফারিহার কথা আগাগোড়া কিছু বুঝলো না..

ফারিশ ওই মুহূর্তে গেলো ফেসবুকে কারন তার নোটিফিকেশন আসছে যে ফারিহা কভার পিক চেঞ্জ করেছে..ওর ওয়ালে যেয়ে দেখলো ফারিহার পায়ের সাথে আরেক জোড়া পা..এমন ভিজা পা দেখে ফারিশ বুকের উপর দিয়ে হালকা ঢেউ খেলে গেলো..

সাথে সাথে ফারিহাকে মেসেজ..

“এই তোর সাথে এটা কে?”

ফারিহা জানে এমন কিছু হইবো..মনে মনে ঢোলা বাজিয়ে মনে মনে নেচে নিলো সে..
“ভাই খাইতে আসছি বাহিরে..পরে নক দিব” টুপ করে মেসেজ দিয়্ব বাইর হয়ে গেলো সে..কারন, সে জানে তার ভাই নজর দিসে এই প্রথম কোন মেয়ের উপর..আরেকটা পোড়ানো যাক তার ভাইকে

“যে মেয়েটার ব্যাকসাইড দেখে (চুল আর পা দেখেছিলো) সারাদিন আমি হাসফাস করেছি..এখন এই ভিজা পা দেখে মনে হচ্ছে ওরে আমার লাগবোই লাগবো ব্যাস যে করেই হোক..কিন্তু কে মেয়ে??ফারিহার কে হয়..নাহ আর ভাবতে পারছি না দ্রুত বাংলাদেশ যাওয়াই লাগবে তার” এই বলে ফ্লাইটের টিকেট বুক করতে লাগলো ফারিশ

রাতে বাড়ি ফিরে এসে খাবারের ছবিগুলো আপলোড সাথে ফ্যামিলির ও..মোহর মুখের উপর স্টিকার মেরে দিলো..

ফারিশ তখন ইন্সটাগ্রামেই ছিলো..ফারিহার আপলোড করা ছবি দেখতে যেয়ে স্টিকার মারা মেয়ের মুখ দেখে বুক ধুক করে উঠলো..

“এতো মায়া ভর্তি কারো চোখ হয়??ফারিশ ভাবছে..

ফারিহাকে মেসেজ দিলো ফারিশ কিন্তু ফারিহা মেসেজ দেখে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো,

” মাত্র ত আজকে দেখে ভাইয়া এরকম করছো??আর ভাবী সে তিনটা বছর তোমার দহনে পুড়ছে??আরেকটু পুড়ো”

সুলেমানকে মেসেজ করলো ফারিহা,

“বাবা ছক্কা মেরে দিয়েছি”

“খেলা দেখে দেখে এই মেয়ের মাথাটা একেবারে গেছে” সুলেমান বিড়বিড় করে বলে শুয়ে পরলো..

“আড়ালে রেখে যেইভাবে পেইন দিচ্ছো তুমি??সামনে আসতে দাও, সব সুদে আসলে বুঝিয়ে ফেলবো!” রাগে গজ গজ করতে বললো ফারিশ

চলবে🍁

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *