যদি তুমি জানতে

যদি তুমি জানতে !! Part- 20 (_শেষপর্ব )

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে যা দেখলাম তা দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ! বাবা সোফায় বসে চা খাচ্ছেন। খালু পাশে বসে। তার মানে আমরা আজ চলে যাব?? এতো তাড়াতাড়ি !! আমাকে দেখে বাবা চায়ের কাপ টেবিলে রেখে বললেন-

-ফিহা উঠে গেছিস মা। যাক ভালো। তোদের নিতে এসেছি। ব্যাগটা গুছিয়ে নে।
-বাবা তুমি না শুক্রবারে আসবা? আজ কীভাবে?
-অফিসের ম্যানেজারকে বলে চলে এসেছি। তোদের বাসায় নামিয়ে চলে অফিসে চলে যাব।
-আজই চলে যাব?
-হ্যাঁ মা। পরে আমি সময় পাব না।

বাবার কথা শুনে আমি ঢোক গিলছি। আজই চলে যাব। এটা কি হয় নাকি!! আমি রান্নাঘরে গিয়ে খালামনিকে বললাম-

-খালামনি বাবা নাকি আজই নিয়ে যাবে। আমি যাব না!!!কিছু কর প্লিজজ!!
-ফিহা আমি নিজেই উপায় খুজছি। কিন্তু তোর খালুর সামনে আমি কিছুই করার সাহস পাই না। মেজর সাহেব সব টোটকা বুঝে যাবে!!
-সাঈদ ভাই কোথায়? উনিকি আবার ভার্সিটিতে?
-হ্যাঁ রে। কি যে করি আমি! তোর মাকে কতো করে বললাম কথাই কানে নিল না!
-আমি যাব না! যাব না !! যাব না!! আমি কোত্থাও যাব না!!!খালামনি কিছু করনা!!
-ভাবছিলাম পেট ব্যাথার এক্টিং করবো! কিন্তু তোর খালু চটাং করে ধরে ফেলবে। কোনো উপায়ন্তর পাচ্ছি না!!ফিহা!!

খালামনির কথা শুনে বুঝলাম কিছুই করার নেই। আজ বাবার সাথে যে করেই হোক বাসায় ফিরে যেতে হবে। আমি রান্নাঘর থেকে একদম কচ্ছপের মতো পা ফেলে রুমের দিকে যাচ্ছি। একমিনিটে এক কদম করে পা ফেলি। উদ্দেশ্য আজ বাবার লেট করিয়ে দেব, পরে উনি আমাদের না নিয়েই অফিসে চলে যাবেন। আমার এমন হাটা দেখে খালু বললেন-
-মা তোমার কিছু হয়েছে? এভাবে হাটছো কেন?
-না মানে হ্যাঁ খালু হয়েছে কি, আমার না পা ঝিমঝিম করছে, এজন্য এভাবে হাটছি।
-এক কাজ করো স্থির হয়ে কয়েক সেকেন্ড সোজা হয়ে দাড়াও। পা ঠিক হয়ে যাবে।
-আচ্ছা খালু।

খালু কিছু বললেন না। উনি আবার বাবার সাথে হাসি-ঠাট্টায় মশগুল হলেন। আমি রুমে গিয়ে সাঈদ ভাইকে ফোন দিলাম। কিন্তু ব্যর্থ কাকের মতো ফলাফল আসলো। ভাই একবারো কল ধরলেন না। কাল রাতের পর আবার কোন কাজে ফেসেছেন ! গড নোউস!!

হঠাৎ মাথায় চমৎকার এক বুদ্ধির ঢেকি দিয়ে উঠছে। আমিও ঝটপট কাজ করতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। যেই প্ল্যান মাথায় ঘুরছে সেটা সাকসেস হলে আজ বাবার সাথে যাওয়া হবে না!!! ইয়াহু!!

আমি রুমের দরজা প্লাস ওয়াশরুমের দরজা খুলে রেখেছি। পাশে আপুর রুম। জোরে কোনো আওয়াজ হলে আপু আসবেনই। এরপর হব্বে খেলা!! আমি গলায় আঙুল ঢুকিয়ে বমি করার চেষ্টায় আছি। কেননা বমি দু একবার হলেই আমি অসুস্থ, দূর্বল হয়ে পড়ব। এরপর বাবা ওই অবস্থায় আমাকে সাথে নিবেন না। যেহেতু রুমের দরজা খোলা “ওয়াক ওয়াক” আওয়াজ আপু ঠিকই পাবেন। এরপর আপু যেয়ে ঢোল পিটিয়ে দিবেন!!

দুই তিনবার ধরে চেষ্টা চালাচ্ছি বমি করার। কিন্তু আজ বমিই হচ্ছেনা, না খুব একটা আওয়াজ গলা দিয়ে বেরুচ্ছে। কী করি কী করি!! বমি না হলে দূর্বল হবো না, দূর্বল না হলে সুস্থ থাকবো, আর সুস্থ থাকলে বাবা নিয়ে যাবেন!!!!! নাহ্হ্হ্!! এ আমি হতে দিব না। বমি আজ করবোই!

রুম থেকে এক সার্ভেন্টকে ডেকে আসতে বললাম। সে রুমে আসলে বললাম-
-শুনুন, আমার জন্য এক্ষুনি ফ্রিজ থেকে ডিম নিয়ে আসুন।
-ম্যাম আপনি ডিম দিয়ে কী করবেন?
-মাথায় দিব। চুলের যত্ন নেই না কতদিন হয়ে গেছে। যান ডিম নিয়ে আসুন।
-কয়টা আনবো?
-দুটা হলেই হবে।

সার্ভেন্ট কথামতো নিচে গিয়ে ফ্রিজ থেকে দুটা ডিম এনে দিলেন। এরপর চলে গেলেন।আমি একটা গ্লাস নিয়ে ডিম দুটো ভেঙে নিলাম। ইয়াক! কী গন্ধ! এটার গন্ধ শুকলে আমার এটোমেটিক বমি চলে আসে!!

ব্যস!! আইডিয়া অনুযায়ী কাচা ডিম গ্লাসের মধ্যে নাক দিয়ে শুকে নিতেই গড়গড় করে বমি করতে লাগলাম। গ্লাসটা বেসিনের ওপর টিস্যু দিয়ে ঢেকে নিলাম যেন কেউ দেখতে না পারে। বমি করেই চলছি, ওমনেই আপু রুমে ঢুকে ওয়াশরুমের দরজা ধরে দাড়িয়ে আছেন। আমার অবস্থা দেখে আবার রুম থেকে চলে গেলেন। সবাইকে ঢোল পিটিয়ে চিল্লিয়ে কথা শুনাচ্ছেন, আমি এখান থেকে কান পেতে শুনছি। আমি আবার টিস্যুটা সরিয়ে ডিমের গন্ধ শুকে নিলাম। টিস্যু দিয়ে একহাতে গ্লাসটা ঢেকে বমি করেই চলছি। ঢোল পিটানো শেষে সবাই হুরহুর করে রুমে ঢুকে আমার যা অবস্থা দেখে, তাতে চোখ কপালে তোলার মতো অবস্থা। খালামনি ওয়াশরুমে ঢুকে বললেন-

-কিরে তোর শরীর এমন খারাপ হলো কি করে??
-………………………………………….
-ইশশ! মেয়েটা আমার অসুস্থ হয়ে গেলো দেখছি।। আজ ফিহাকে পাঠানো ঠিক হবে না গো!!

আমি সুন্দর করে বমিটমি করে অসুস্থতার একটু আকটু অভিনয় করছি। বমি করা থামলে খালামনি খালুকে বললেন-
-মেজর সাহেব ফিহা আজ থাকুক। ও সুস্থ হলে বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিব।
-আচ্ছা তবে আজ থাকুক…..

খালামনির কথা শুনে খালু বাবাকে বললেন-
-আজ আপনাদের না গেলে হয় না? বলছি কি আজ আপনারা বাসায় থাকুন না হয়। কাল সকালে রওনা দিলে ভালো হয়।
-না ভাইজান, সময় পাবো না। অফিসে যেই কাজের চাপ। শুক্রবার ছুটি পাব না। তাই পরে আসতে পারি কিনা তাও জানি না।
-তাহলে আর কী করার আমি তো দেখছি আটকাতেও পারব না…
-না ভাইজান মন খারাপ করবেন না। আমরা আসবো তো!! তখন এসে কিছুদিন থেকেও যাব।তবে আজ যেতে হবে যে..
-তা আর কী করার…যেতে দিতে হচ্ছে।।।

মাও বাবাকে মানানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু বাবা বলে দিলেন সপ্তাহখানিকের মধ্যে তেমন ছুটি পাবেননা। একাএকা থাকাতে বাবার খাওয়া দাওয়াতে বেশ অসুবিধে হচ্ছে।আমার বমি করা শেষ হলে বাবা আমাকে সকালের খাবার খাইয়ে দিয়ে রেডি হতে বলে গেলেন। পরে আর কী করার।। আমিও রেডি হয়ে নিচে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হলাম। কিন্তু যাওয়ার আগে একবার সাঈদ ভাইয়ের রুমে যেয়ে চারপাশটা চোখ ভরে দেখে নিলাম। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ রুমটায়। কয়েকদিনের ব্যবধানে আজ এই রুমটা অনেক পরিচিত….

.
.

নিচে নেমে এসে বাবার সাথে দাড়ালাম। ফিমা আপু, মা রেডি। খালু আর খালামনিকে বিদায় দিলাম। খালামনি অনেক করে বললেন কিন্তু লাভ হয়নি। আজ যেতেই হবে। হঠাৎ দেখি দরজার কলিংবেল বেজে উঠল। খালামনি যেয়ে দরজা খুলে দিলে সাঈদ ভাই ভেতরে ঢুকলেন। আমরা সবাই অনেক অবাক! কারন, ভাইয়ার ভার্সিটিতে থাকার কথা সেই জায়গায় উনি এই সাড়ে এগারোটায় বাসায়!! সাঈদ ভাই ভেতরে ঢুকেই বললেন-

-ছোট খালু আপনারা যেতে পারবেন না। দয়াকরে সব ব্যাগ লাগেজ রুমে যেয়ে রাখুন।
-না বাবা আজ সম্ভব না যে। পরে যে ছুটি পাব না!!
-খালু, আমি নাবিলাকে বিয়ে করব। আজ এবং এক্ষুনি!!

সাঈদ ভাইয়ের কথা শুনে আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি!! কেমন মানুষ উনি! বিয়ের কথা কি কেউ এভাবে বলে? খালুর দিকে তাকালাম উনি লজ্জায় তাকাতে পারছেন না। বাবা তো মুখ টিপে হাসছেন। খালামনি আর মা একে অন্যের দিকে ইশারা ইঙ্গিত করছেন।ফিমা আপু মুচকি হাসছেন। সাঈদ ভাই আবার বললেন-

-প্লিজ খালু। আই হোপ আপনি বাধা দিবেন না। আমি কাজির ব্যবস্থা করে ফেলেছি। কল করলেই চলে আসবেন।

সাঈদ ভাইয়ের কথা শুনে খালু বললেন-

-বাবাজি তোমার কি মাথা আউট হয়ে গিয়েছে?? কখন কীভাবে কথা বলতে জানো না??
-আই নো আব্বু। বাট এট নাও আমি চাইনা আমার জিনিস আমার কাছ থেকে দূরে থাকুক।
-তোমার বিয়ে করার এতোই জলদি থাকলে আমাকে বলতে পারতে ব্যাপারটা আমি দেখতাম নাহয়। এভাবে সবার সামনে না বললেও ভালো হতো মনেকরি।
-বাইরের মানুষ তো কেউ নেই। সব আমরা আমরাই। আর আমি জানি খালু খালামনি আমার প্রস্তাবে নাকোচ করবেন না।

বাবা মায়ের দিকে কী যেন ইশারা করে বলতে বললেন। আমিতো ভয়ে ধুকপুক আওয়াজ টের পাচ্ছি। না জানি কী হয়।। বাবা আর মা একসাথেই বললেন-

-তো কাজি আসতে কতক্ষন????

বাবা, মায়ের এমন কিছু শুনাতে মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটছে!!!! খালামনি তো খুশিতে পারেননা সবার সামনেই নেচে দেন। খালু বেশ খুশির আমেজে বিয়ের কাজে নেমে পড়েন। সাঈদ ভাই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন উনি ধুমধাম করে বিয়ে করবেন না। ছোটখাটো ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা সম্পন্ন করতে চান। কাউকে হাকডাক দিয়ে শতশত মানুষ নিমন্ত্রণ দেয়ার ব্যাপারটা উনি পছন্দ করেন না। তাই সবাই ভাইয়ের কথায় সম্মতি দিয়ে ঘরোয়া বিয়ের আয়োজন করতে থাকেন।

মা আর খালামনি শপিংয়ে ব্যস্ত। ফিমা আপু সার্ভেন্ট নিয়ে বাড়ির ভেতরেই ডেকোরেশন দেখছেন। সাঈদ ভাই তার বন্ধুদের নিয়ে বাকিসব কাজ সামলাচ্ছেন। আর আমি বসে আছি মোবাইল গেমস নিয়ে। সন্ধ্যায় নাকি বিয়ে পড়ানো হবে।কাজিকে তখন আনা হবে।

.

.

সন্ধ্যা। খালামনি পার্লারের মেকআপ আর্টিস্ট বাসায় আনিয়ে আমাকে সাজানোর ব্যবস্থা করেছেন। লাইফে এই ফাস্ট টাইম এতো গর্জিয়াসলি সেজেগুজে বসে আছি। লাল, গোল্ডেনের বেনারসি শাড়ি। এতো ভারি! গায়ে জড়ানোর পর থেকে কেমন নিশ্বাস বন্ধ বন্ধ লাগে। সাথে গহনা তো আছেই। খালামনিকে কত্ত বললাম! আমি এসব পড়ে কমফরটেবল না। আর উনি জবাব দিলেন, উনার একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। ছেলের বউকে করবেন নাতো কাকে করবেন!!

আমিই মনেহয় প্রথম একজন মেয়ে যে কিনা শ্বাশুড়ির হাত থেকে গহনা পড়েছে। মা অন্য কাজে ব্যস্ত, আমার পাশে সার্বক্ষনিক খালামনি থেকেছেন।এটাওটা যা লেগেছে সব খালামনি দৌড়ে দৌড়ে এনে দিয়েছেন।বিয়ের পর যে এই মানুষটার আদর আরো হাজারগুনে বেশি পাব সেটা মেকআপ আর্টিস্ট আপুটা বলে দিয়েছেন। নিচে থেকে আমাকে নিয়ে যাওয়ার ডাক পড়লে খালামনি আর ফিমা আপু এসে রুম থেকে আমাকে নিয়ে যান। আয়নায় আজ নিজেকে নতুনভাবে দেখেছি। জানিনা সাঈদ কি বলবেন। নাকি সবসময়ের মতো “গর্দভ” বলে আখ্যা দিবেন।।

সাঈদ আজ শেরওয়ানিতে চরম ভাবে এসেছেন। ডিপ ব্রাউন কালার। সাথে ব্ল্যাক কালার কম্বাইন। হাতা কনুই পযর্ন্ত উঠানো। হাতে ঘড়ি। মাথায় পাগড়ি। আজ উনি সব ফর্ম কমপ্লিট করে ফেলেছেন। কখনো টিশার্ট কখনো শার্ট কখনো পান্জাবি কখনোবা শেরওয়ানি!!! এই একটা ব্যক্তি যে ফর্মেই আসুক না কেন আমার হার্টবিট বাড়িয়ে ছাড়েন!! ভালোই হয়েছে বিয়েটা ঘরোয়া, নাহলে আমার আগে অন্যসব মেয়েরাই উনার লুক গিলে গিলে খেতো!!

অতঃপর কাজিকে সামনে রেখে বর-কনে উভয়পক্ষ “কবুল” বলার মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়। সাঈদ আমার দিকে একবারো চোখ তুলে তাকাননি। আজ এতো সুন্দর করে সেজেছি। কিন্তু উনি তাকালেনই। খালামনি এসে সাঈদ ভাইয়ের রুমে, বিছানায় বসিয়ে চলে যান। পুরো রুম আজ সাজানো। ফুলে ফুলে পুরো রুমে সুভাস ছড়াচ্ছে। আমি লম্বা এক ঘোমটা টেনে বসে আছি। অপেক্ষা জুনায়েদ সাঈদ কখন আসবেন…

কিছুক্ষন পর কারোর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকার শব্দ পেলাম। মনেহয় জবাব সাঈদ চলে এসেছেন। উনি দরজা লাগিয়ে আমার পাশে এসে বসলেন। আর বললেন-

-আমি তোর ঘোমটা উঠাব না। যেয়ে মুখ ধুয়ে আয়।
-এটা কেমন কথা?
-বাংলা কথা। যেটা বলছি সেটা কর।
-কেন ধুতে বলছো?
-আমি নাবিলাকে দেখতে চাই। এসব ফালতু কিছু লাগানোর ফলে তার স্বাভাবিক সুন্দর মুখখানা ঢেকে আছে।

আমি বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে পুরো মুখ ধুয়ে এলাম। আবার ঠিকমতো ঘোমটা টেনে বিছানায় আগের জায়গায় এসে বসলাম। উনি আবার বললেন-

-আলামারিটা খুলে দেখবি একটা ব্ল্যাক কালার শাড়ি রাখা আছে। ওটা পড়ে আয়।
-শাড়িও চেন্জ করবো?
-ইয়েস। গো এন্ড চেন্জ।
-তুমি নিজে দেখছো বিয়ের শেরওয়ানি কি কালার পড়ছো! কেউ কি এই কালার শেরওয়ানি পড়ে!
-সো হোয়াট! কে কি কালার পড়লো তাতে আমার কি! আমি আমার পছন্দসই কাজ করি। দ্যাটস হোয়াই বলছি তোর এই শাড়ি চেন্জ করে আয়।
-আচ্ছা।

আলমারি খুলে কালো রঙের শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। শাড়ি পড়াটা ভালো করে পারি বলে বেশি সময় লাগেনি। শাড়িটা পড়ে বিয়ের শাড়িটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে দেখি সাঈদ ঘুমিয়ে গিয়েছেন।শেরওয়ানি পাল্টে ব্লু টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়েই ঘুম। আমি শাড়িটা ভাজ করে চেয়ারের উপর রেখে দিলাম। বর্ষাকাল বিধায় আজ রাতেও বৃষ্টি পড়ছে। রুমটা গরম ভাব দেখে বারান্দার দরজা খুলে দিলাম। মিনিটেই রুম ঠান্ডা হয়ে গেল।

লাইট নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। রাতে শীতশীত লাগতে পারে। তাই একটা কাথা বের করে সাঈদের পাশে রাখলাম। আরেকটা কাথা আমি গায়ে জড়িয়ে ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেলাম।

শুয়ে পড়তেই সাঈদ ওপাশ থেকে বলল-
-নাবিলা আমার দিকে ঘুরে ঘুমা।
আমি ওপাশ ফেরতেই সাঈদ জাপটে ধরে কাথার মধ্যে ঢুকে কালকের মতো করে আমার গলায় মাথা লুকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আমি উনাকে বললাম-

-তুমি ঘুমাওনি?
-নো।
-আমিতো ভাবলাম ঘুমিয়ে গিয়েছো।
-নাবিলা,
-হুম,
-বাইরে বৃষ্টি,
-হ্যাঁ কেন?
-চল বাইরে যাই।
-না। এই বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে জ্বর আসবে।
-রুমে কিছু খেয়াল করেছিস?
-নাতো। কেন, কিছু ছিল?
-মেবি।
-উঠে দেখবো?
-নাহ্ এখন শুয়ে থাক।
-জরুরি কিছু?
-হুম।
-তাহলে দেখি?
-আচ্ছা যা। লাইট জ্বালিয়ে দেখে নিস।।
-আচ্ছা।

আমি সাঈদকে ছেড়ে শোয়া থেকে উঠে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। লাইট জ্বালাতেই খুজতে লাগলাম এমন কি হতে পারে!! এরপর চোখ পড়লো দেয়ালে। ওখানে আমার আকানো নেই ছবিটা!! যেটা সাঈদ ভাই চোখ বাধিয়ে আকিয়েছিলেন!! ছবিটা আজ দেয়ালে বাধা!! “আমি খালামনি একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হেসেছি” – তার মানে আমাকে দিয়ে উনি এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত আর্ট করিয়ে রুমে টাঙিয়ে রেয়েছেন!! ছবিটার নিচে লিখা- THE LOVE OF MY LIFE [ Junayed Saeed ]

আমি উনার দিকে তাকালাম। সাহেভ চোখ বন্ধ করে আছেন। আমি রুমের লাইট অফ করে বিছানায় যেয়ে শুতেই আবার সাঈদকে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাথা টেনে নিলেন।। আমি সাঈদের কানে – “Thank you” বলে ঘুমিয়ে পড়লাম। সাঈদ গলায় মাথা লুকিয়ে বলল “Nabila’s Gift”….
উনার কথা শুনে হেসে দিলাম। উনার গিফট আর প্রপোজটা উনার মতোই ইউনিক!!!ছবিটার সাথে আজ আমাকে তিনটে জিনিস উপহার দিয়েছেন, এক. এত্তো এত্তো এত্তো আদরের শ্বাশুড়িস্বরুপ আম্মু, দুই. ভালোবাসার এলান্ , তিন. মিস্টার জুনায়েদ সাঈদ!!!

সাঈদ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছেন। বারান্দা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসাতে এখন সত্যি শীত শীত ভাব। উনি যে একটা বাচ্চা ! এটা উনার ঘুমানো চেহারা দেখেই বুঝা যায়। বাচ্চার মতো আমাকে জড়িয়ে ধরে মুখ লুকিয়েছেন। আমি উনাকে আমার কাথাটা দিয়ে ঠিকমতো ঢেকে দিলাম। এখনো ওভাবেই ঘুম। একটা জিনিস সবসময় খেয়াল করেছি। উনি আমাকে পেলে সবকিছু ভুলে যান। যেন অন্য এক রাজ্যে ডুবে যান। আমি উনাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলাম। উনার মাথার কাছে আমার ঠোট জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম……

ফজরের আযানের কিছু সময় আগে সাঈদ ঘুমের ঘোরেই কিছু বলছেন। আমি চোখ খুলে সাঈদকে ছাড়তে চাইলে সে আরো জোরে জাপটে ধরে। আমি একহাতে দুচোখ কচলিয়ে বুঝার চেষ্টা করি আসলে ঘুমের মধ্যে কি বলছে। উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, কি বলছেন বুঝার ট্রায় করছি। ঠিক এরকম কিছু বলছেন-

-নাবিলা….আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ…মাফ করে দিস…

কি বলছেন এমন আবোলতাবোল!! হয়তো কাল আমাকে খুজে না পাওয়ায় যেমন ছটফট করছিলেন, ঠিক তেমনটাই ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু এতো পাগলামি করার মতো ঘটনা তো কিছুই হয়নি। হয়তো উনি বেশি টেনশনে পড়ে গিয়েছিলেন, তাই হয়তো ঘুমের মধ্যে এমন করছেন!!!

আমি কাথাটা ঠিক করে আবার সাঈদকে ধরে ঘুমাতে নিব তখনই যা শুনলাম আমি হতবাক!!ঘুমিয়ের ঘোরেই বলে চলছেন……সাঈদের দিকে তাকিয়ে আমি…..

-নাবিলা….ফরগিভ মি….আমি আর কক্ষনো মিথ্যে বলবনা……আমি ইচ্ছে করে তোর বাসায় আসিনি…..ইচ্ছে করে তোকে……তোকে ফলো…ফলো করিনি…নাবিলা…………………………..

-Fabiyah_Momo

#বি_দ্র: গল্পটা তার প্রথম লাইন থেকে শুরু হয়েছিল আজ সেই লাইনেই তার সবশেষ। মাঝে ছিল আদর, ভালোবাসা, আর কিছু ধোকার মুখোশধারী। রহস্যজনক গল্পটা রহস্য দিয়েই শেষ হলো। তবে এটার সিজন-টু করবো কিনা সেটা আপনাদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে সিধান্ত নিবো। অনেকেই বলেছেন গল্পটা আরো টানতে আবার অনেকেই বলেছেন ফালতু কাহিনি। তবুও আজ সবাইকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ এতোটা সাথে থাকার জন্য।😇😇😇
পরবর্তী গল্পের জন্য অবশ্যই পাশে থাকুন😍😍😍😇💖
অতঃপর ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। মহামারী মোকাবেলায় সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করুন। ধন্যবাদ😍❤💕

3 thoughts on “যদি তুমি জানতে !! Part- 20 (_শেষপর্ব )

  • সাঈদ বাঁচল কি ভাবে এইটা তো বললেন না

    Reply
  • Mehedi Hasan

    ভাই রহস্য লুকিয়ে রাখতে হয় না তাই যে যাই বলুক সিজন 2 দেন

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *