1. নতুন গল্পঃ2. ছোট গল্প গুলোঃলেখাঃ তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)

আবারো !! লেখাঃ তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

আবারো

সাধারণ সালোয়ার কামিজ পরে, হাতে বাচ্চা নিয়ে শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে আছে নিহিন..জানতো লোকটার বউ মারা গেছে সে জানতো কিন্তু বাচ্চাও আছে জানতো না,অবশ্য জেনেও কি হবে সে নিজেও তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে।।

“সংসার আর বাচ্চা সামলাও বউমা,এখন থেকে এইসবকিছু তোমাকে দেখতে হবে” রুবার উত্তর(নিহিনের শাশুরি)

নিহিন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো,আসলে তার ও কিছু বলার নাই..যেখানে নিজের বাবা মায়ের কাছে বোঝা হয়ে আছে সেখানে পরের বাড়ি অর্থাৎ এই শ্বশুরবাড়ির নামক লোকের কাছে কি বা আশা রাখে।।

রুবা নিহিনের দুই হাতে চুড়ি পরিয়ে দিলো,জানালো যে খাবার পাঠাচ্ছে রুমের ভিতর খেয়ে বাবু নিয়ে ঘুমিয়ে যেতে।।

নিহিন একধ্যানের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আছে,তিন মাসের বাচ্চা আর কতবড় হবে..নিহিনের কোলে কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে..মায়াভরা চোখ তার..আর গায়ের রঙ দুধে আলতা মনে হচ্ছে টোকা দিলে রক্ত বের হবে..নিহিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাচ্চার কপালে চুমু দিলো।।

পুরো নাম সিদরাতুল মাওয়া নিহিন..ক্লাস নাইনে যখন ছিলো তখন বাবা মায়ের জোর জবস্তি করে তার থেকে দ্বিগুন বয়সের লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়..নিহিন পা ধরে বলেছিলো যে বিয়ে না দিতে কিন্তু কেও তার কথা শুনে নি,তার বাবা জানায় সে যদি বিয়ে না করে তার মাকে তার বাবা তালাক দিবে..এইটা শুনে নিহিন স্বব্ধ হয়ে যায়..নিজের বাবা মায়ের সংসার বাচাঁনোর জন্য নিজেকে বলি দিয়ে দেয়..নিহিনের আকদ হওয়াতে সে বাবার বাসায় থাকতো কিন্তু নিহিনের স্বামী(জুবায়ের) সে আসা যাওয়া করতো..জুবায়ের ফাইভ পাশ ও ছিলো না,মাথায় তার চুল ছিল না..একটা ছিল সেইটা ধনী..একদিন রাতে বিয়ের ঠিক তিনদিন পর জুবায়ের এসে নিহিনের বাসায় থাকে কিন্তু নিহিন ওর সাথে থাকতে চায় না..ছোট মানুষ মাথায় অতশত বুদ্ধি নেয় তার..কিন্তু তার চাচাতো বোন নিপা জোর করে পাঠায় ওর ঘরে..পাঠালো ঠিকই,ওইদিন নিহিনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জুবায়ের তার শরীর খুবলে খেয়েছিলো,সকালে সে উঠে দাড়ানোর শক্তি পর্যন্ত ছিলো না..নিহিনের এই বিয়েটা এনেছিলো তার চাচাতো বোন আর তার স্বামী..জুবায়ের ছিলো তার দুলাভাইয়ের বন্ধু..এইভাবে কেটে যেতে লাগলো দিন,নিহিনের সম্মতি ছাড়াই শারীরিকভাবে এটাচ হতো জুবায়ের..নিহিন যখন তার শ্বশুরবাড়ি যেতো, বেড়ানোর নাম করে নিয়ে যেতো জুবায়ের আর তার চাচাতো বোন..নিহিন যখন যেতো তার শাশুড়ি তাকে দিয়ে পুরো বাড়ির কাজ করাতো..যখনি গেছে তাই গেছে,কখনো বাথরুম পরিষ্কার করিয়ে গোসল না করেই ওই কাপড়ে বিকাল চারটায় ভাত খেয়েছে..এইদিকে জুবাইয়ের ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতো,কখনো গলা টিপে ধরতো কখনো নিহিনের বাবা মায়ের কাছে মিথ্যা বলে নিহিনকে মার খাওয়াতো..১৫ বছরের নিহিন এতোকিছু বুঝতে পারতো না,শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতো আর মারতো..একদিন নিহিনকে প্রেগন্যান্ট করানোর উঠে পরে মরিয়ে হয়ে গেছিলো আর জুবায়েরে চেয়েছিলো আর পড়াশোনা না করুক নিহিন..একদিন নিহিনের ডায়রিয়া হয়েছে,ওই সময় জুবায়ের এসে ফিজিক্যালি এটাচ হতে চায়,ঘরে টানতে টানতে চায় কিন্তু নিহিনের চিৎকার দেয়াতে সবার হাজির হয়ে গেছিলো,জুবায়ের সবার সামনে নিহিনকে টেনে থাপ্পড় মেরে ছিলো..জুবায়ের সেদিন বাড়ি থেকে চলে যেয়ে,নিহিনের মাকে অকথ্যা ভাষায় ফোন দিয়ে গালিগালাজ করেছিলো..নিহিনের বংশের লোকদের জুবায়ের মিথ্যা কথা বলে তাদের বিরোধী করে ছিলো..যখন ডিভোর্স দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো তখন জুবায়ের শর্ত দিলো,”সে যদি তার বাবা মাকে সারাজীবনের মতো দাফন দিয়ে আসতে পারে,আর পড়াশোনা একেবারে ছাড়তে পারে তাহলে তাকে নিবে”,এইটা শুনে নিহিনের বাবা রেগে যেয়ে ডিভোর্স ফাইল করে বসলো..ক্লাস নাইনে বিবাহিত নিহিন,এস.এস.সি র পর ডিভোর্স পদ পেয়ে গেলো,নিজের জীবন পুড়ে গেলো..নিহিনের চাচাতো বোন আর তার স্বামী তাদের কে নানান কথা শুনিয়ে,নিহিনের প্রাক্তন স্বামীর সাথে যোগাযোগ রাখলো শুধু তারা না,নিহিনের চাচা আর চাচীরাও..তারা নিহিনদের সাথে চলাচল বন্ধ করে দিলেও,জুবায়েরদের বাড়ির লোকের সাথে ঠিকই চলাচল শুরু করলো।।

এইভাবে নিহিনের জীবনের ৫বছর কেটে গেলো,সংসার জীবনে তার পা দিতে ভয় লাগে..১৬ বছরে ডিভোর্স হয়ে ২১ বছরের আবারো বিয়েতে অবদ্ধ হলো..আজকে দেখতে এসে বিয়ে হয়ে গেছে পরনে ছিলো তার লাল থ্রি পিস..বাবা মায়ের কাছ থেকে বোঝা দূর হলো..বিয়ে না করলে সমাজ জীবন থেকে তার নানান রকম খোটা শুনতে হতো..বিয়েটা সম্ভবত আগে থেকে ঠিক হয়েছিলো নইত দেখতে এসে একদিনে বিয়ে হয়ে যায় কি??

নিহিনের ধ্যান ভাঙলো বাচ্চার কান্নার আওয়াজে..ধড়ফড়িয়ে সামলাতে যেয়ে,বাচ্চাটার ঘাড় উল্টিয়ে যাচ্ছিলো আসলে সে কখনো ত বাচ্চা মানুষ করে নাই..ওই মূহূর্তে অনেক জোরে নিহিনের গালে কেও থাপ্পড় বসিয়ে দিলো আর বাচ্চাটাকে কেড়ে নিলো,নিহিন ছিটকে পরেছে.. চোখে জল চিক চিক করছে।।

“আমার বাচ্চাটা মেরে ফেলতি তুই” লোকটা বলে বাচ্চাটাকে নিয়ে চলে গেলো।।

রুবা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে আসলো,উনি এসে দেখলো নিহিন নিচে পরে আছে..যা আশংকা ছিল তাই হলো..নিহিলের ফর্সা গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে,রুবা দ্রুত নিহিনের কাছে গেলো।।

“উঠো!!আসলে তিতাস বাচ্চা নিয়ে খুব চিন্তিত ত,তাই এরকম করলো..তুমি চিন্তা করো না” রুবা বললো আমতা আমতা করে।।

নিহিন এতোক্ষনে এটা বুঝে গেছে তার স্বামী নামক মানুষটার নাম তিতাস,আর তার যে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয়েছে এটাও বুঝে নিলো।।

“শুনো!!পুরুষ মানুষের মনে জায়গা করে নিতে সময় লাগে না বউদের..তুমিও চেষ্টা করো পারবে,তার বিয়েতে মত ছিলো না আমি জোর করে রাজি করিয়েছি..একদিন দেখো তোমাকে আমার ছেলে খুব ভালোবাসবে” রুবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলো।।

নিহিন ওইভাবে মেঝেতে বসে থাকলো,চিৎকার করে কাদঁতে পারছে না..তার মতো অভাগীর কপালে কি একটু সুখ জুটাতে পারলো না আল্লাহ।।

চলবে🍁

নতুন গল্প…এই বেক্কল অধমের মাথায় খালি কিলবিল করছে লিখার জন্য,কেমন লাগছে জানাবেন..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *