মিশে আছো আমার অস্তিত্বে

মিশে আছো আমার অস্তিত্বে !! Part-10

আজ একমাস হয়েছে আকাশের মা মারা গিয়েছে,,আকাশ নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে।মা কে দাফন করার আগে রিনার সাথে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু প্রতিবারই রিনার ফোন সুইচ অফ আসছে।তারপর থেকে আকাশ আর রিনাকে ফোন দেয়নি,,কিছুটা চাপা অভিমান আর কিছুটা রাগে জন্য‌ই আকাশ রিনাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে।এ কয়দিনে তৃষা এক হাতে নিজের সংসার সামলিয়েছে আর আরেক হাতে আকাশকে সামলিয়েছে।আকাশ এখন আর তৃষার সাথে বাজে ব্যবহার করে না,,তৃষাকে এখন একটু হলেও আকাশ পছন্দ করে।এখন তার একটাই স্বপ্ন নিজের বাবার কোম্পানি টাকে আরও উঁচুতে তুলতে হবে তাকে।
সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে আকাশ অফিসে চলে গেলে আর তৃষা বাসার কাজে লেগে পড়লো।মাঝে মাঝে মায়ের ফাঁকা রুমের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে মায়ের দেওয়া কথা কি শেষমেষ সে রক্ষা করতে পারবে??তৃষার একটা বিষয়ে বেশ অনেকটাই অবাক সেই দিনের পর থেকে রিনাকে সে আর দেখে নি,, কিন্তু রিনা কোথায় যেতে পারে এটা সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না।তার ভাবনায় ছেদ করে ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো,,ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আকাশ বলে উঠলো-;
-:কি করছো??
-:তেমন কিছু না।আপনি অফিসে পৌঁছে গিয়েছেন??
-:হ্যা এই মাত্র এলাম।শোনো তোমাকে যেটা বলার জন্যে ফোন করেছিলাম।
-:হুম বলুন।
-:আজ আমার ফিরতে একটু লেট হতে পারে।
-:সে কি!!কেন??
-:আমার দুটো মিটিং আছে সেটা ক্লিয়ার করেই বাসায় ফিরবো।
-:ওকে সাবধানে থাকবেন।
-: হুম রাখছি।
-:আচ্ছা।
আকাশের সাথে কথা বলার পর তৃষা যেই ফোনটা রাখতে যাবে তখনই ফোনটা আবার বেজে উঠল।তৃষা ভেবেছে আকাশ হয়তো তাকে আবার ফোন করেছে,,তাই ফোনটা রিসিভ করেনিল।ফোনটা রিসিভ করতেই একজন বলে উঠলো-;
-:তৃষা প্লিজ আমাকে বাঁচা ও..ও আমাকে ম..মেরে ফেলবে।
-:কে??(চিন্তিত গলায়)
-:আ..আমি রিনা।
-:আপু তোমার কি হয়েছে??তোমার গলা এমন লাগছে কেন??তুমি ঠিক আছো তো??
-:না বোন আমি ঠিক নেই প্লিজ আমাকে বাঁচা।(কান্না করে)
-:আপু..আপু তুমি কাঁদছো কেন??আমাকে বলো তোমার কী হয়েছে??
-:তুই এক্ষুনি হোটেল ব্লু ম্যানশান এ চলে আয়।
-:হোটেল ব্লু ম্যানশান!!
-:হ্যা এক্ষুনি,, এক্ষুনি আয় প্লিজ ন‌ইলে আমি মরে যাবো।
-:আপু তুমি চিন্তা করো না আমি এক্ষুনি আসছি।
এই বলে তৃষা ফোন কেটে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে হোটেল ব্লু ম্যানশান এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো,, তাড়াহুড়োর চক্করে আকাশকে জানাতেও পারল না।যত‌ই হোক রিনা তার আপন বোন সে যত‌ই তাদের পর ভাবুক না কেন।
হোটেল ব্লু ম্যানশানে গিয়ে রিনাকে কোথাও খুঁজে পেল না,,তৃষা ফোনটা বেড় করে রিনাকে ফোন করলো।
-:আপু তুই কোথায়??
-:এসে গিয়েছিস।
-: হুম।
-:আচ্ছা তুই রুম নাম্বার ২০৭ এ চলে আয় আমি তোর জন্য ওখানে অপেক্ষা করছি কিছুটা চিন্তিত গলায় বলে উঠলো কিন্তু আপু তুমি তো আমার সাথে অন্য কোথায় দেখা করতে পারতে,,এখানে কেন??
-: তৃষা বোন আমার দরকারটা এখানেই তুই প্লিজ সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি চলে আয় নইলে আমি বাঁচবো না।
-: আচ্ছা আপু তুমি চিন্তা করো না আমি এক্ষুনি আসছি।
-:হুম।
এই বলে ফোনটা রেখে তৃষা হোটেলের ম্যানেজারের কাছ থেকে জেনে ২০৭ নম্বর রুমের দিকে হাঁটা দিল।২০৭ নম্বর রুমের সামনে এসে একবার কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে গেল কিন্তু ঘরে ঢুকে দেখল সেখানে রিনা নেই।
তৃষা আশ্চর্য হয়ে গেল কেউ না থাকলে দরজা কী করে খুলে গেল আপনা আপনি?? হঠাৎ দরজা বন্ধ করার আওয়াজে তৃষা পিছনে ঘুরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল।একটা অচেনা ব্যক্তি কে এই রুমের মধ্যে দেখে তৃষা অনেকটাই অবাক আর তার থেকেও বেশি রেগে গিয়েছে।তাই কিছুটা করা গলায় বলে উঠলো-;
-:এটা কি ধরনের অভদ্রতা??অন্যের রুমে বিনা পারমিশনের কি করে ঢুকে গেলেন আপনি??
লোকটা শয়তানী হাসি দিয়ে বলে উঠলো-;
-:আমি আমার রুমে আছি ম্যাডাম।
তৃষা প্রথমে কিছুটা অবাক হল তারপরে ভাবল হয়তো সে ভুল করে অন্য রুমে ঢুকে পড়েছে,,তাই লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল-;
-:সরি আমি মনে হয় ভুল করে রুমে ঢুকে পড়েছি।
-:আপনি ঠিক রুমেই ঢুকেছেন ম্যাডাম।
-:মানে!!
-:মানে টা হলো..
এই বলে লোকটা শয়তানি হাসি দিয়ে তৃষার দিকে এগতে লাগলো,,হঠাৎ লোকটাকে নিজের কাছে আসতে দেখে তৃষা কিছুটা ঘাবড়ে গেল,,লোকটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল-;
-:আপনি আমার দিকে এইভাবে এগিয়ে আসছেন কেন??
লোকটা আবার শয়তানী হাসি দিয়ে বলে উঠলো-;
-:একটু পরেই বুঝতে পারবেন।
তৃষা তাড়াতাড়ি করে পিছনের দিকে ফিরে দরজার দিকে যেতে নিবে ঠিক তখনই লোকটা তৃষার হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।এবার তৃষা প্রচন্ড রেগে গেল,,নিজের হাত বারবার ছাড়াতে চেষ্টা করেছে,,
-: আমার হাত ধরার সাহস আপনাকে কে দিল??
কিন্তু লোকটা তৃষার কথায় পাত্তা দিল না উল্টে হাত ছাড়ার বদলে জড়িয়ে ধরল তৃষা কে,,এবার তৃষা প্রচন্ড রেগে গেল,,নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে লোকটাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে তার গালে ঠাস্ ঠাস্ করে দুটো চড় মারলো,,তারপর বলে উঠলো-;
-:আর এক পা আমার দিকে এগোলে,,আমি আপনার কি অবস্থা করব তা আপনার ধারণার‌ও বাহিরে।আমি কিন্তু পুলিশকে বলতে বাধ্য হব।
এই বলে তৃষা তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।আর সেই লোকটা নিজের গালে হাত রেখে তৃষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে উঠলো-;
-:আমার যা কাজ তা হয়েগিয়েছে ম্যাডাম।
এদিকে তৃষা বের হ‌ওয়া মাত্র রিনা কে ফোন করল কিন্তু রিনা ফোন ধরার বদলে ফোনটা কেটে দিলো,,তৃষা মনে মনে ভাবছে আপু ফোনটা কেটে দিল কেন??আচ্ছা আমি কোন ভুল করিনি তো এখানে এসে?আপুকে ত আমি কোথাও খুঁজে পেলাম না আর তার ওপর আপু ফোনটাও কেটে দিচ্ছে বারবার।
না না আমার একদম উচিত হয়নি আপুকে বিশ্বাস করে এখানে আশা।আর ওই লোকটাই বা কিভাবে আপুর বলে যাওয়া রুমটাই ছিল?সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে আমার কিচ্ছু মাথায় আসছে না,,আমাকে এক্ষুনি বাসায় যেতে হবে।এই বলে তৃষা বাসার উদ্দেশ্যে চলে গেল।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]
.
.
.
.
“”ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।”””